আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (20 points)

আসসালামু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহ্

উস্তায, আপনাদের সবাইকে আমরা ভীষণরকম শ্রদ্ধার চোঁখে দেখি। আল্লাহ'র জন্য মুহাব্বাত করি। ভয়ে, সম্মানে অনেক সময় ক্যামেরা অন থাকলেও আমি উস্তাযের দিকে তাকাতে পারিনা। মাদ্রাসার উস্তাযদের সাথে ত্বলিবাদের সম্পর্ক তো ইউনিভার্সিটির টিচার-স্টুডেন্ট সম্পর্কের মতো না!  কোন কোন উস্তায আমার দাদার বয়সী,  কেউ বাবার বয়সী কেউ ভাইয়ের বয়সী। এতোবছর ধরে অনলাইনে যাদের ক্লাস করে এসেছি, কখনো যদি অফলাইন মাদ্রাসায় যাওয়ার সুযোগ হয় এবং সেসব সম্মানিত উস্তাযদের সাথে একবার কথা বলার সুযোগ হয়। আমি আপনাদের সাথে কথা বললেএকবার চোঁখ তুলে তাকিয়ে সেই নূরানী চেহারাগুলো দেখলে কি আমার গুনাহ হবে? আমার কি নজরের খেয়ানত হবে? উস্তাযগন তো আমাদের জন্য নন-মাহরাম।

ছেলে না হওয়াতে বেশিরভাগ সময় আমরা মেয়েরা 'আলেমদের সোহবত থেকে বঞ্চিত থাকি। আলহামদুলিল্লাহ দুনিয়াতে আল্লাহ তা‘য়ালা মেয়ে হিসেবে পাঠিয়েছেন। আমি সন্তুষ্ট। 

কিছুদিন আগে একজন উস্তাযের মাসিক দারসে গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে একদম শেষদিকে একটু সময় পেয়েছিলাম বলার জন্য। এতোবছর ধরে তার দারস নিয়েছি কিন্তু তাকে কখনো সামনাসামনি দেখিনি। তার দিকে তাকানো কি আমার জন্য গুনাহ হয়েছে উস্তায? আমার অন্তরে তো কোন খারাপ চিন্তা আসেনি, উস্তাযদের নিয়ে এরকম চিন্তাভাবনা কতই-না জঘন্য! আ'উযুবিল্লাহ্। আল্লাহ মাফ করুন।

 এই ঘটনা শুনে কিছু বোন আমাকে নেগেটিভ ইঙ্গিত করে বললো- উস্তাযদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করা উচিত না"। তারা তো জানেনা তারা যেভাবে কলেজের প্রফেসরকে ট্রিট করে আমরা তো আমাদের উস্তাযদের ঐ চোঁখে দেখার, ঐসব চিন্তাভাবনা করার ধৃষ্টতা-ও দেখাই না। পারলে উস্তাযদের পা ধুয়ে দেই। এটা তো তারা বুঝবেনা। তারা মনে করে তাদের মতো নোংরা চিন্তা-ভাবনা বুঝি মাদ্রাসার ত্বলিবারাও করে। তারা দৈনিক কতইনা ভার্সিটির প্রফেসর, কোচিংয়ের ভাইয়া, রিকশাওয়ালা, বোটওয়ালা, ফুচকাওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালার সাথে কথা বলে তার হিসেব নেই। আমার উস্তাযকে নিয়ে বলা তাদের এমন কথায় আমি ভীষন কষ্ট পেয়েছি উস্তায। ভবিষ্যতে হঠাৎ করে কোন উস্তাযের সাথে দেখা করতে গেলে আমি কি তার সাথে কথা বলতে পারবো? তার দিকে একটু তাকাতে পারবো?

1 Answer

0 votes
by (644,610 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

শরীয়তের বিধান হলো মহিলাদের জন্য পর পুরুষের চেহারা দেখা, যদি আকৃষ্ট হবার শংকা না থাকে,ফেতনার আশংকা না থাকে,তাহলে জায়েজ আছে।

কিন্তু আকৃষ্ট হবার শংকা থাকলে জায়েজ নয়,হারাম।
তবে শংকা না থাকলেও দেখা অনুত্তম।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَقُل لِّلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ [٢٤:٣١

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে। [সূরা নূর-৩১]

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ كَانَ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم، فَقَالَ: أَيُّ شَيْءٍ خَيْرٌ لِلْمَرْأَةِ؟ فَسَكَتُوا، فَلَمَّا رَجَعْتُ قُلْتُ لِفَاطِمَةَ: أَيُّ شَيْءٍ خَيْرٌ لِلنِّسَاءِ؟ قَالَتْ: أَلَّا يَرَاهُنَّ الرِّجَالُ، فَذَكَرْتُ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «إِنَّمَا فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّي» رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত সাহাবাগণকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, মহিলাদের জন্য সবচে’ উত্তম কী? তখন সকলেই চুপ ছিল। তারপর যখন আমি বাড়ীতে ফিরলাম। তখন ফাতিমা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করলামঃ মহিলাদের জন্য সবচে’ উত্তম কী? তখন ফাতিমা রাঃ বললেন, পর পুরুষকে না দেখা। তারপর এটি আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয় ফাতিমা আমারী শরীরের অংশ। [মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-৫২৬]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ قَالَ كَانَ الْفَضْلُ رَدِيفَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَجَاءَتْ امْرَأَةٌ مِنْ خَشْعَمَ فَجَعَلَ الْفَضْلُ يَنْظُرُ إِلَيْهَا وَتَنْظُرُ إِلَيْهِ وَجَعَلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصْرِفُ وَجْهَ الْفَضْلِ إِلَى الشِّقِّ الآخَرِ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফযল ইবনু ‘আববাস (রাঃ) একই বাহনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর পিছনে আরোহণ করেছিলেন। এরপর খাশ‘আম গোত্রের জনৈক মহিলা উপস্থিত হল। তখন ফযল (রাঃ) সেই মহিলার দিকে তাকাতে থাকে এবং মহিলাটিও তার দিকে তাকাতে থাকে। আর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফযলের চেহারা অন্যদিকে ফিরিয়ে দিলেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫১৩]

عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ الْحَبَشُ يَلْعَبُونَ بِحِرَابِهِمْ فَسَتَرَنِي رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَنَا أَنْظُرُ فَمَا زِلْتُ أَنْظُرُ حَتّٰى كُنْتُ أَنَا أَنْصَرِفُ فَاقْدُرُوا قَدْرَ الْجَارِيَةِ الْحَدِيثَةِ السِّنِّ تَسْمَعُ اللَّهْوَ
‘আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একদিন হাবশীরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পেছনে দাঁড় করিয়ে ছিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম। যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল ততক্ষণ আমি দেখছিলাম। এরপর আমি স্বেচ্ছায় সে স্থান ত্যাগ করলাম। সুতরাং তোমরা অনুমান করতে পার কোন্ বয়সের মেয়েরা আমোদ-প্রমোদ পছন্দ করে। [বুখারী, হাদীস নং-৫১৯০]

বিস্তারিত জানুনঃ- 


★অনেক ফুকাহায়ে কেরামগন বলেছেন,মহিলারা যদি বাজারে যায় বা বাহিরে যায়,সেক্ষেত্রে চেহারা নত রাখবে।
গায়রে মাহরাম পুরুষদের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে নজর দিবেনা।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে নজর দেয়,সেক্ষেত্রে এর দরুন গুনাহ হবে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاَءِ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ يُونُسَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ حَدَّثَنِي نَبْهَانُ، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ كُنْتُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَعِنْدَهُ مَيْمُونَةُ فَأَقْبَلَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ وَذَلِكَ بَعْدَ أَنْ أُمِرْنَا بِالْحِجَابِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " احْتَجِبَا مِنْهُ " . فَقُلْنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ أَلَيْسَ أَعْمَى لاَ يُبْصِرُنَا وَلاَ يَعْرِفُنَا فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " أَفَعَمْيَاوَانِ أَنْتُمَا أَلَسْتُمَا تُبْصِرَانِهِ " .
মুহাম্মদ ইবন আলা (রহঃ) .... উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা আমি এবং মায়মূনা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ছিলাম। তখন সেখানে আবদুল্লাহ ইবন উম্মু মাকতুম (রাঃ) আসেন। আর এটি ছিল পর্দার আয়াত নাযিলের পর। তখন তিনি বলেনঃ তোমরা দু’জন এর থেকে পর্দা কর। তখন আমরা বলিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে কি অন্ধ নয়? সে তো আমাদের দেখতে পায়না, চিনতেও পারেনা। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরাও কি অন্ধ, তোমরা দু’জন কি তাকে দেখছো না?
মিশকাত ৩১১৬, ইরওয়া ১৮০৬, আবু  দাউদ ৪০৬৬, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২৭৭৮ [আল মাদানী প্রকাশনী]

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরন মতে এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হয়নি।

তবে বিনা প্রয়োজনে এভাবে তাকাবেননা,কেননা অনেক ফুকাহায়ে কেরামদের মতে বিনা ওযরে ইচ্ছাকৃতভাবে গায়রে মাহরাম পুরুষকে দেখা নাজায়েজ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 286 views
...