بسم الله الرحمن الرحيم
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলা বলেন-
لقد من الله على المؤمنين اذ بعث فيهم رسولا من انفسهم، يتلو عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب والحكمة، وان كانوا من قبل لفى ضلال مبين
‘আল্লাহ মুমিনদের ওপর বড়ই দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি তাদের থেকেই একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন।’ যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেন। যদিও তারা পূর্বে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।-আলে ইমরান : ১৬৪
দ্বীনী ইলম অর্জনের সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, আলিমগণের নিকট থেকে ইলম অর্জন করা।
হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন-
خُذُوا الْعِلْمَ قَبْلَ أَنْ يَذْهَبَ
‘ইলম অর্জন কর তা বিদায় নেওয়ার আগে’। সাহাবীগণ আরয করলেন-
وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، وَفِينَا كِتَابُ اللَّهِ؟
আল্লাহর নবী! ইলম কীভাবে বিদায় নেবে, আমাদের মাঝে তো রয়েছে আল্লাহর কিতাব?
বর্ণনাকারী বলেন, এ কথায় তিনি রুষ্ট হলেন। এরপর বললেন-
ثَكِلَتْكُمْ أُمَّهَاتُكُمْ أَوَلَمْ تَكُنِ التَّوْرَاةُ وَالْإِنْجِيلُ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَلَمْ يُغْنِيَا عَنْهُمْ شَيْئًا؟ إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ، إِنَّ ذَهَابَ الْعِلْمِ أَنْ يَذْهَبَ حَمَلَتُهُ
তোমাদের মরণ হোক! বনী ইসরাইলের মাঝে কি তাওরাত ও ইঞ্জীল ছিল না, কিন্তু এতে তো তাদের কোনোই উপকার হল না! ইলমের প্রস্থানের অর্থ তার বাহকগণের প্রস্থান। -মুসনাদে আহমদ ৫/২৬৬; আদদারেমী ১/৮৬, হাদীস ২৪৫
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ
যে কেউ ইলমের খোঁজে কোনো পথে চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। -মুসনাদে আহমদ ১৪/৬৬
,
একবার এক নারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আপনার হাদিস তো শুধু পুরুষরা শুনতে পায়। সুতরাং আপনার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একটি দিন নির্দিষ্ট করে দিন, যেদিন আমরা আপনার কাছে আসব, আল্লাহ আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে আপনি আমাদের শেখাবেন।’ তিনি বলেন, ‘তোমরা অমুক অমুক দিন অমুক অমুক জায়গায় একত্র হবে।’ সে মোতাবেক তারা একত্র হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাছে এলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা থেকে তাদের শিক্ষা দেন। (বুখারি, হাদিস : ৭৩১০)
আশ-শিফা বিনতে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, একবার আমি হাফসা (রা.)-এর কাছে ছিলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেন, ‘তুমি কি ওকে (হাফসাকে) যেভাবে লেখা শিখিয়েছ, সেভাবে পিঁপড়া (পোকা) কামড়ের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দেবে না?’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৮৮৭)
রাসুল (সা.) ক্রীতদাসীকেও শিক্ষাদানের ব্যাপারে মুসলিম সমাজকে উৎসাহিত করেন। অথচ তাদের ব্যাপারে কেউ কোনো দিন চিন্তাও করত না। তিনি বলেন, ‘কারো যদি ক্রীতদাসী থাকে, আর সে তাকে উত্তমরূপে বিদ্যা ও শিষ্টাচার শিখিয়ে স্বাধীন করে দেয়। অতঃপর তাকে স্ত্রীরূপে গ্রহণ করে, তাহলে তার জন্য দুটি পুরস্কার আছে।’ (বুখারি, হাদিস : ৯৭)
রাসুল (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক (নর-নারী) মুসলমানের জন্য জ্ঞানার্জন করা ফরজ।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা সুরা বাকারার দুই আয়াতের মাধ্যমে শেষ করেছেন, যা আমাকে আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে প্রদান করা হয়েছে।
অতএব এগুলো তোমরা নিজেরা শেখো ও তোমাদের নারীদের শেখাও।’ (দারেমি, হাদিস : ৩৪৩০)
আনসারি নারীরা দ্বিনের গভীর জ্ঞানার্জনে অনেক আগ্রহ রাখতেন, তাই আয়েশা (রা.) তাদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আনসারি নারীরা কত ভালো! দ্বিনি জ্ঞানার্জনে লজ্জা তাদের প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ৩৩২)
মূলত ইসলাম শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে নর-নারীভেদে ভিন্ন ভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেনি; বরং এটি সবার জন্যই অবধারিত করা হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর মর্যাদা ও শিক্ষা-দীক্ষার উন্নতিকল্পে দৈনন্দিন কাজের মাধ্যমে এমন সব পন্থা ও পদ্ধতি অবলম্বন করতেন, যাতে তা মানুষের অন্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
ইসলামে ধর্মীয় ও পার্থিব শিক্ষা লাভ করার জন্য নারীকে শুধু অনুমতিই দেওয়া হয়নি; বরং পুরুষের শিক্ষা-দীক্ষা যেমন প্রয়োজন মনে করা হয়েছে, নারীদের শিক্ষা-দীক্ষাও তদ্রূপ প্রয়োজন মনে করা হয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে পুরুষগণ যেমন দ্বীনি ও নৈতিক শিক্ষা লাভ করত, নারীগণও তদ্রূপ করত। নারীদের জন্য সময় নির্ধারিত করা হত এবং সেই সময়ে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হতে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে উপস্থিত হত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ, বিশেষ করে আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা শুধু নারীদের নয় পুরুষদেরও শিক্ষয়িত্রী ছিলেন। তাঁর নিকট হতে বড় বড় সাহাবী ও তাবে‘য়ীগণ হাদীস তাফসীর ও ফিকহ্ শিক্ষা করতেন। সম্ভ্রান্ত লোকদের তো কথাই নেই, দাস-দাসীদের পর্যন্ত শিক্ষা দান করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন।
অতএব, মূল শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারে ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। অবশ্য শিক্ষার প্রকারে পার্থক্য আবশ্যক। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর প্রকৃত শিক্ষা এই যে, তদ্বারা তাকে আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মাতা এবং আদর্শ গৃহিনীরূপে গড়ে তোলা হবে। যেহেতু তার কর্মক্ষেত্র গৃহ, সেহেতু তাকে এমন শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন যা এ ক্ষেত্রে তাকে অধিকতর উপযোগী করে তুলতে পারে। এ ছাড়া তার জন্য ঐ সকল বিদ্যা-শিক্ষারও প্রয়োজন যা মানুষকে প্রকৃত মানুষ রূপে গড়ে তুলতে, তার চরিত্র গঠন করতে এবং তার দৃষ্টিভঙ্গি প্রশস্ত করতে পারে। এই ধরনের শিক্ষা-দীক্ষা প্রত্যেক নারীর জন্য অপরিহার্য। এরপর কোনো নারী যদি অসাধারণ প্রজ্ঞা ও মানসিক যোগ্যতার অধিকারিণী হয় এবং এ সকল মৌলিক শিক্ষা-দীক্ষার পরও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে চায়, তাহলে ইসলাম তার পথে প্রতিবন্ধক হবে না। তবে শর্ত এই যে, কোনো অবস্থায়ই সে শরী‘আতে নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করবে না। শরী‘আতের গণ্ডির মধ্যে থেকে তাকে উচ্চ শিক্ষালাভে ব্রতী হতে হবে।
শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করার জন্য নারী জাতিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বহু হাদীসে তাকীদ দিয়েছেন। পুরুষদের জন্য শিক্ষা-দীক্ষাকে যেরূপ জরুরী মনে করা হয়েছে, মহিলাদের জন্যও তেমনি আবশ্যক মনে করা হয়েছে। পুরুষরা যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট তা‘লীম গ্রহণ করতেন, তেমনি করতেন নারীরাও। শুধু সম্ভ্রান্ত মহিলাদেরকেই নয়, বরং দাসীদেরকেও শিক্ষা-দীক্ষা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুখারী শরীফে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার নিকট কোনো দাসী আছে এবং সে তাকে শিক্ষা দান করে, ভালভাবে সুশিক্ষার ব্যবস্থা করে, ভদ্রতা ও শালীনতা শিক্ষা দেয়, এবং মর্যাদা দান করে, তার জন্যে রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান।’’
(বুখারী, হাদীস নং ৯৭।)
পুরুষ সাহাবীগণ যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতেন, তেমনি মহিলা সাহাবীগণও নিঃসংকোচে জ্ঞান অর্জন করতেন। সুতরাং সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে যেমন পুরুষ মুফতী ছিলেন, তেমনি ছিলেন মহিলা মুফতী। উমর, আলী, যায়েদ ইবন সাবিত, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আবদুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ পুরুষ সাহাবীদের ন্যায় আয়েশা সিদ্দীকা, উম্মে সালমা, হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না প্রমুখ মহিলা সাহাবীগণও ফতোয়ার গুরুদায়িত্ব পালন করতেন। মর্যাদাসম্পন্ন বহু পুরুষ সাহাবী তাঁদের নিকট ফতোয়া জিজ্ঞেস করতেন এবং তাঁদের ফতোয়া মেনে নিতেন। তিরমিযী শরীফে আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সূত্রে একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, ‘‘আমাদের মাঝে যখনই কোনো হাদীসের বিষয় নিয়ে সমস্যা দেখা দিত, আমরা তখনই আয়েশা সিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট জিজ্ঞাসা করলে তার সমাধান পেয়ে যেতাম।’’
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
নারীরা বিজ্ঞ নারীদের থেকে জ্ঞানার্জন করবেন। এটিই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবেনা।
তবে এটি বর্তমান যামানায় সব এলাকায় বা সকলের পক্ষে হয়ে উঠেনা।
বিজ্ঞ অনেক জায়গায় বিজ্ঞ আলেমাদের পাওয়া যায়না,আবার কোথাও পাওয়া গেলেও তারা এভাবে খেদমত করেননা।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে কেহ কেহ ইলম অর্জন করে থাকেন।
প্রশ্নের বিবরণ মতে সত্যিই যদি এর দরুন কাহারো ক্ষেত্রে ফিতনা প্রকাশ পায়,কেহ যদি এর দরুন গুনাহে জড়িয়ে পড়ে,সেক্ষেত্রে তার জন্য এভাবে জ্ঞানার্জন পরিত্যাগ করতে হবে।