কুরবানি হয়েছে কিনা

Question

আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ। বিগত প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে জানতে পেরেছিলাম যে আমার উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়েছে।বাসায় জানানোর হলে আমার বাবা যেহেতু দ্বীনের সঠিক বুঝ প্রাপ্ত না তাই তিনি বলেছিলেন যে বিয়ে না হলে কিসের কুরবানি ওয়াজিব হয়।তুমি তো আমার টাকা থেকেই খরচ করো।নিজের আর্নিং সোর্স নেই। তোমার ভরনপোষণ আমি চালাই।তোমার কিভাবে কুরবানি হয়।

আমি তাকে বুঝাতে পারি নি পরে মামাকে বলেছিলাম আপনি আমাকে একটা বকরি কিনে দেন আমি আমার জমানো টাকা দিচ্ছি( ঈদের আগের দিনের কথা) তো অইসময় তারা বলেছে এখন তো আর কেনা যাবে না হাট নাকি ছিলো না।  পরে আম্মু, মামা আব্বুকে আবার বুঝায়  এবং আমি ঈদের দিন সকালে উঠে জানতে পারি আমাদের নানু বাড়িতে আমার আম্মুর বামে যে কুরবানি দেয়ার কথা ছিলো অইটা আমার নামে দিচ্ছে  আর দেশের বাড়িতে বাবার নামে দিচ্ছে। এই ডিসিশন ঈদের আগের দিনই নাকি হয়েছিলো।উল্লেখ্য এই কুরবানির গরু কেনার টাকা আগেই আব্বু দিয়ে দিয়েছিলো মানে আগেই কেনা হয়ে গিয়েছিলো। আর দেশের বাড়িতে আব্বুর নামে যে কুরবানির জন্য যে ভাগে গরু কেনা হয়েছে সেটা এক কাকা পুরো টাকা নিজে দিয়ে কিনেছে এখন সব কাকারা ফুফুরা টাকা পরিশোধ করে দিচ্ছে।


এভাবে তো গেলো।গতকাল রাতে আব্বু আমাকে ডেকে বলেছেন তোমার তো কুরবানি হয়েছে তুমি বলেছে, দিতে চাচ্ছিলে তোমার নামে নানু বাড়িতে কুরবানি দেয়ানো হয়েছে। তাইলে এখন তুমি কত টাকা দিতে পারবে। তুমি যতটা দিতে পারো দাও বাকি যা থাকে সেটা আমি দিয়ে পরিশোধ করে দিচ্ছি (দেশের বাড়ির গরুর কেনা টাকা পরিশোধ করবেন এভাবে ,আর আমার নামে তো নানু বাড়িতে কুরবানি দেয়া হয়েছে।)

১. এভাবে কি আমার কুরবানী আদায় হয়েছে? আমার নামে কুরবানি দিয়েছে এক জায়গায় যেখানে আগেই আব্বু টাকা পরিশোধ করে দিয়েছিলেন আম্মুর নামে কুরবানি করার জন্য পরে ডিসিশন বদলে ঈদের আগের দিন আমার নামে কুরবানি করবেন বলেছেন এবং ঈদের দিন হুজুর এর কাছে আমার নামই কাগজে লিখে দিয়েছিলে৷ কিন্তু আমি তো টাকা দিচ্ছি দেশের বাড়িতে যেখানে আব্বু নিজের নামে কুরবানি করেছে অই পশু কিনতে। এভাবে কি হবে।

২. আমি যতটাকা পারি দিয়ে বাকি টাকা আব্বু দিয়ে দিলে কি আমার কুরবানী হবে?  এভাবে কি টাকা পরিশোধ করা যায়?


৩.একজন কুরবানি ওয়াজিব হওয়া ব্যক্তি আমার আম্মি আব্বুর কারনে কুরবানি করতে পারে নি এখানে কি আমার গুনাহ হবে।যেহেতু আব্বু প্রথমে আম্মির নামে নানু বাড়িতে কুরবানি দিবেন এই বলে টাকা দিয়ে পশু কিনেছিলেন। আর আম্মি যেহেতু কুরবানি করতে পারলেন না এ অবস্থায় যে কিভাবে কি করবে।

সাদাকা আদায় করতে হয় দেখেছিলাম এক প্রশ্নের উত্তরে এক বছর বয়সী ছাগলের।তো বাজার সম্পর্কে আইডিয়া না থকায় জানি না দাম কত হবে।এক বছর বয়সী ছাগলের দাম সাদাকা করতে হলে অইটাকা টা কত আসে জানাবেন মিন ফাদ্বলিক।
জাযাকুমুল্লাহু খইরন উস্তাদ।
মেহেরবানি করে দ্রুত জানাবেন খুবই আর্জেন্ট আব্বু টাকা চায়। এভাবে কুরবানি হবে  কিনা, বা হয়েছে কিনা জানা দরকার।

Answer 1

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!

কুরবানি দেওয়া ওয়াজিব।কার উপর ওয়াজিব?এ সম্পর্কে ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,

مِنْهَا الْيَسَارُ وَهُوَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبِ صَدَقَةِ الْفِطْرِ دُونَ مَا يَتَعَلَّقُ بِهِ وُجُوبُ الزَّكَاةِ،

এই পরিমাণ ধনবান ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব,যে পরিমাণ ধনসম্পত্তি থাকার কারণে কারো উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়।যাকাত ওয়াজিব হওয়ার নেসাব পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হওয়া শর্ত নয়।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-৫/২৯২,কিতাবুল-ফাতাওয়া-৪/১৩১) এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1642

শুধু স্বর্ণ হলে কারো নিকট ৭.৫ ভড়ি স্বর্ণ থাকলেই কেবল কুরবানি ওয়াজিব হবে। যেভাবে যাকাতের বিধান। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/121

কুরবানি ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/1988

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

(১) আপনার নিকট যদি কুরবানির নেসাব পরিমাণ মাল থাকে, তাহলে বিয়ের আগে হোক বা পরে সর্বাবস্থায়-ই কুরবানি ওয়াজিব হবে। আপনার মায়ের কুরবানির জন্য ক্রয়কৃত পশু দ্বারা আপনার কুরবানি তখনই বিশুদ্ধ হবে যখন আপনার মায়ের নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে। যদি আপনার মায়ের উপর কুরবানি ওয়াজিব না থাকে, তাহলে মায়ের জন্য ক্রয়কৃত পশু দ্বারা আপনার কুরবানি হবে না। কেননা যার নেসাব পরিমাণ মাল নেই, তার জন্য পশু ক্রয় দ্বারা উক্ত পশু কুরবানি নির্দিষ্ট হয়ে যায়।

(২)  আপনি যতটাকা পারেন, দিয়ে দিবেন, বাকী টাকা আপনার আব্বু দিবেন। এভাবে করলেও কুরবানী আদায় হবে। এভাবে টাকা পরিশোধ করা যাবে।

(৩) যেহেতু আপনার আম্মুর নামে কুরবানির পশু ক্রয় করা হয়েছে, তাই সর্বাবস্থায়-ই আপনার আম্মুর উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে। তবে আপনার কোনো গোনাহ হবে না।

(৪) কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার পর যদি কোনো কারণে কুরবানি আদায় করা না হয়, তাহলে এক বৎসর বয়সের একটি বকরির মূল্য সদকাহ করতে হবে। ১ বৎসর বয়সের একটি বকরির মূল্য  ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যেই হবে। কোনো কওমী মাদরাসার লিল্লাহ বোর্ডিংয়ে সদকাহ করে দিবেন।

Comments

উস্তাদ এক নাম্বার প্রশ্নের উত্তরটা বুঝতে পারি নি একটু বিস্তারিত বুঝিয়ে বললে মুনাসিব হতো। 

১.আমার আম্মুর  উপর ও কুরবানি ওয়াজিব, আমার উপর ও এবার ওয়াজিব হয়েছে।

নানু বাড়িতে আম্মুর নামে কুরবানি দেয়ার জন্য পশু কিনতে আব্বু টাকা দিয়েছেন। পরে আব্বু যখন যানতে পারে আমার ও কুরবানি ওয়াজিব হয়েছে  শুরুতে না মানলেও মামা আম্মু বুঝানোর পরে আব্বু বলেছেন তাহলে আম্মুর নামে যে কুরবানি করার জন্য পশু কেনা হয়েছিলো অইটা আমার নামে কুরবানি দিতে। এবার আম্মুর নামে আব্বু কোনো কুরবানি দেয় নি। আমার আর তার নিজের নামে দিয়েছে। 

আম্মুর নামে কুরবানি দিবে বলে যে পশু কিনেয়েছিলেন মত পালটে সেই পশুকে আমার নামে কুরবানি করেন এভাবে কি আমার কুরবানী আদায় হয়েছে নাকি আম্মুর নামেই কুরবানি আদায় হয়েছে?

২. আমার নামে কুরবানি করা হয়েছে নানু বাড়িতে যার টাকা আব্বু আগেই পরিশোধ করেছেন। আর আব্বু আমার কাছে টাকা চাচ্ছেন দাদু বাড়িতে তার নামে যে কুরবানি হয়েছে সেখানে দেয়ার জন্য। এখন কথা হচ্ছে টাকা দুই কুরবানির টাই আব্বুই দিচ্ছে আমাকে বলেছে আমি যতটা পারি দিতে। সেক্ষেত্রে আমার কুরবানি যে পশুতে হয়েছে আমার দেয়া টাকা সেই পশু কেনায় তো গেলো না আব্বুর কুরবানি করতে যে পশু  কিনেছে সেখানে গেলো এভাবে করলে কি আমার কুরবানীর টাকা দেয়া হলো? আমার কুরবানি কি এভাবে আদায় হয়েছে৷ 

আমাকে একটু বুঝিয়ে বলুন উস্তাদ আমি বুঝতে পারছি না আর অনেক দুশ্চিন্তাগ্রস্থ জিবনের প্রথম এবার কুরবানী ওয়াজিব হয়েছিলো জমানো টাকা+ স্বর্ন মিলিয়ে সেটা আদায় করা নিয়ে এইসব ঝামেলার পর কুরবানি হলো কিনতি আদায় হয়েছে কিনা বুঝতে পারছি না। 

৩. উক্ত সুরতে যদি আমার নামে কুরবানি আদায় হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে আমার আম্মু যে এবার কুরবানি করতে পারলেন না সে কি সাদাকা করে দিবেন নাকি কি করবেন তার ও কুরবানি ওয়াজিব ছিলো।

---

উস্তাদ আমার প্রশ্নের উত্তরটা জানালে খুবই মুনাসিব হতো।