আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
ago in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (9 points)
প্ৰিয় মুফতি সাহেব
১) একজন আলেম বলেছেন বর্তমানে বাংলাদেশের যদি বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ একাধিক বিয়ে না করলে প্রত্যেকেই নারীর হক নষ্টের ব্যাপারে দায়ী থাকবেন। এ ব্যাপারে আপনার মতামত জানতে চাই।
২) বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পুরুষদের কি একাধিক বিয়ে করা জরুরি?

৩) একজন মহিলা তার স্বভাবগত কারণেই তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে করতে দিতে চান না। সে ক্ষেত্রে করণীয় কি?

৪) কোন মহিলা বিয়ের পূর্বে তার স্বামীকে দ্বিতীয় বিয়ে না করার শর্ত দিতে পারবে কিনা? এবং এটি তার জন্য জায়েজ হবে কিনা?

1 Answer

0 votes
ago by (618,930 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/6683 নং ফাতওয়ায় বর্ণিত রয়েছে ,
শরীয়তের বিধান মতে একাধিক স্ত্রীর মাঝে যদি ইনছাফ করতে পারে,তাহলে প্রয়োজনের স্বার্থে একাধিক বিবাহ করতে পারবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন
فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلاث ورباع 
তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)।(সুরা : নিসা, আয়াত-৩)

দ্বিতীয় বিয়ে করার ইসলামী শর্ত বেশ কঠিন অনেক কড়া। আগের স্ত্রীর সব ধরনের হক আদায়ের পর নতুন বিয়ের পরেও সমান তালে সব অধিকার পালন করার আত্মবিশ্বাস থাকলেই কেবল যৌক্তিক কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়।
قال اللہ تعالی:فإن خفتم ألا تعدلوا فواحدة الآیة (سورہ نسا، آیت:۳)
 আল্লাহতায়ালা বলেন, একাধিক বিয়ের সুবিধা যাদের আছে, তারা যদি সম অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভীত হও, তাহলে এক বিয়ে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক। 
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/6683

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلَابَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْخَطْمِيِّ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْسِمُ فَيَعْدِلُ، وَيَقُولُ: اللَّهُمَّ هَذَا قَسْمِي، فِيمَا أَمْلِكُ فَلَا تَلُمْنِي، فِيمَا تَمْلِكُ، وَلَا أَمْلِكُ.

’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীগণের মাঝে ন্যায়-নিষ্ঠার সাথে পালা বণ্টন করতেন এবং বলতেন, ’’হে আল্লাহ! আমার সাধ্যমত (এই বিষয়ের) বণ্টন করলাম, আর যে ব্যাপারে তোমার আয়ত্তে ও আমার সাধ্যাতীত (মনের দুর্বলতা ও ভালোবাসার দরুন), সে বিষয়ে তুমি আমাকে অপরাধী করিও না’’।
(আবূ দাঊদ ২১৩৪, নাসায়ী ৩৯৪৩, তিরমিযী ১১৪০, ইবনু মাজাহ ১৯৭১, দারিমী ২২৫৩, মিশকাত ৩২৩৫।)

ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল বিষয়েই তার স্ত্রীদের মধ্যে সমবণ্টন করতেন, বিশেষ করে রাত্রি যাপনের পালা নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি পূর্ণরূপে ইনসাফভিত্তিক ফায়সালা করতেন। কোনো ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের কারো বিশেষ কিছু গুণাবলীর কারণে তার প্রতি স্বামীর অধিক ভালোবাসা থাকা স্বাভাবিক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। এটা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আর এটা ইনসাফের পরিপন্থীও নয়। তবু তিনি এ বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করতেন এবং নিজের অপারগতা প্রকাশ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর কাছে এই বলে প্রার্থনা করতেন, ‘‘হে আল্লাহ! স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ করা বা বাহ্যিক সমতা রক্ষা করা যেহেতু আমার আয়ত্তাধীন, আমি তা করছি, কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি হৃদয়ের টান বা অধিক ভালোবাসা এটা আমার আয়ত্তের বাহিরে। হে আল্লাহ! তুমিই তো মানুষের কলব বা হৃদয় পরিবর্তনের মালিক, সুতরাং তুমি যে বিষয়ের মালিক সে বিষয় তুমি আমার অপরাধ ধরো না এবং আমাকে তিরস্কার ও ভৎর্সনা করো না।’’

ইবনুল হুমাম (রহঃ) বলেনঃ প্রকাশ্য হাদীসের দ্বারা বুঝা যায় যে, স্ত্রীদের কারো প্রতি অধিক ভালোবাসা বা হৃদয়ের টান ছাড়া অন্যান্য বিষয় ইনসাফ করা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আয়ত্তের এবং ক্ষমতার মধ্যে ছিল। সুতরাং সেগুলোর মধ্যে ইনসাফ ও সমতা বিধান তার জন্যও আবশ্যক ছিল। তবে মেলামেশা ও আলিঙ্গনে সমতা বজায় (সর্বসম্মতভাবে) আবশ্যক নয়। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩য় খন্ড, হাঃ ১১৪০; ফাতহুল কাদীর ৩য় খন্ড, ৩০০পৃঃ; মিরকাতুল মাফাতীহ)

একাধিক স্ত্রীর মাঝে দুই বিষয়ে সমতা রক্ষা করা অতীব প্রয়োজন। স্ত্রীদের সঙ্গে রাতযাপন ও ভরণ-পোষণ। 

এ দুই অধিকার সব স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমানভাবে স্বামীকে পালন করে যেতে হবে। কোন স্ত্রী সুন্দর বা অসুন্দর, আর কোনটি কুমারী বা বিধবা তা পার্থক্য করা যাবে না। 

কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি মনের ভালোবাসা বেশি হওয়া, আবার অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হওয়া তা সমতার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, এটি মনের বিষয়, আর মনের ওপর কারও কোনো অধিকার নেই। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে শুধু রাতযাপন ও খরচাপাতি এ দুই বিষয়ে সমতা ধর্তব্য। এটাই হলো একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষার ইসলামি শরিয়তের বিধান। 

হাদিসে আছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করো না। (তিরমিজি : ১১৭০, আবু দাউদ : ২১৩৬)।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই,
(১-২)
একাধিক স্ত্রীর মাঝে সমতা বজায় রেখে চলতে পারলে, যাবতীয় খরচ,ভরনপোষণ , আর রাত যাপনের ক্ষেত্রে সমতা কায়েম করতে পারলে,সেক্ষেত্রে তার জন্য একাধিক বিবাহের সুযোগ রয়েছে।

তবে এটি ফরজ/ওয়াজিব বিধান নয়।

(০৩)
সেক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান তাকে বুঝাতে হবে।
নিজের একাধিক বিবাহের জরুরত তাকে বুঝাতে হবে।

(০৪)
এমন শর্ত শরীয়ত সমর্থন করে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...