আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
56 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (17 points)
আস-সালামু আলাইকুম। অনেকদিন মাযহাব নিয়ে বিভ্রান্তি/ সংশয়ে থাকার পর আমি এটা নিয়ে জ্ঞান অর্জন করি। তারপর কিছু আলেম এবং সাধারণ মানুষকে বলি আমি এতদিনে যা বুঝলাম ওগুলো ঠিক আছে কিনা দেখেন একজন মুফতি ছাড়া সবাই বললো ঠিক আছে। আমি যা বুঝলাম তার প্রশ্ন এবং উত্তর সহ এখানে জানাচ্ছি ভুল হলে সেটা বুঝিয়ে দিয়েন।


আল্লাহর রজ্জু শক্ত করে ধরো আর বিছিন্ন হয়োনা।
(কুরআন সূরা আল ইমরান ১০৩)

জাকের নায়েক স্যার বলেন আল্লাহর রজ্জু হলো পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদিস।

যারা দ্বীন সম্পর্কে বিভিন্ন মত সৃষ্টি করে হে রাসূল তাদের দায়িত্ব তোমার নয়।
(সূরা আল আনাম ১৫৯)


প্রশ্নঃ ১) এখানে বলেছে আল্লাহর রজ্জু মানে কুরআন আর সহিহ হাদিস মানতে আর ৪ মাযহাব কুরআন ও সহিহ হাদীস সহ যেই হাদিস সহীহ না ওগুলো মানে কেন? যেটা এখানে মানতে বলেনি?

জবাবঃ সহীহ ছাড়া অন্যান্য বিশুদ্ধ হাদিস ইসলামে গ্রহণযোগ্য।


উত্তরঃ সহীহ ছাড়া অন্যান্য বিশুদ্ধ হাদিস ইসলামে গ্রহণযোগ্য।


প্রশ্নঃ ২) মাযহাব মানি ও তো মত এখানে তো আল্লাহ বলেছে মত সৃষ্টি না করতে?


যারা নিজদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। আল-বায়ান

(সুরা রুম, আয়াত ৩২)

এই আয়াতে ইসলামের বাইরে আল্লাহ মত সৃষ্টি করা নিষেধ করেছে।


বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে। আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। তাদের সকলেই জাহান্নামী, একটি দল ছাড়া। তারা কারা? যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান রাখবে এবং তাদেরকে যা আদেশ দেওয়া হয়েছে তা পালন করবে।"

[সহীহ তিরমিযী, হাদিস নংঃ 2641]


প্রশ্নঃ ৩) এই হাদিসে মাযহাব এর কথা না বলে কিসের কথা বলেছে বুঝিয়ে বলেন?


উত্তর:

হাদিসে সরাসরি "মাযহাব" শব্দ নেই, তবে এর ব্যাখ্যায় উলামাগণ বলেন, নাজাতপ্রাপ্ত দল হলো "আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত", যারা কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবীদের মত ও পথ অনুসরণ করে।
চার মাযহাবের প্রতিটি ইমাম সাহাবিদের অনুসারী এবং কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতেই তাঁদের ফিকহ গঠন করেছেন।
তাই চার মাযহাবের অনুসরণ নাজাতপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত।

আর জান্নাতি দল হলো আহলে সুন্নত ওয়াল জামা আত।


যারা নিজদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং যারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে (তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না)। প্রত্যেক দলই নিজদের যা আছে তা নিয়ে আনন্দিত। আল-বায়ান

(সুরা রুম, আয়াত ৩২)


প্রশ্নঃ ৪) মাযহাব ও তো দলে দলে বিভক্ত হওয়া এই আয়াতে এটা কি নিষিদ্ধ নয়?/ মাযহাব অনুসরণ করা কি দলবাজি ও বিভক্তির অন্তর্ভুক্ত?
উত্তর:

না, মাযহাব অনুসরণ করা বিভক্তির অন্তর্ভুক্ত নয়।
বিভক্তি তখন হয়, যখন মানুষ দলগতভাবে সত্যের বিরোধিতা করে। কিন্তু চার মাযহাব একে অপরের বিরোধিতা করে না; বরং কুরআন ও সুন্নাহর আলোকেই মতামত প্রদান করে।
আয়াতটি তাদের সম্পর্কে যারা মূল দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়ে বিভিন্ন নতুন আকিদা তৈরি করেছে (যেমন—খারেজি, শিয়া, কাদিয়ানী ইত্যাদি)।


প্রশ্নঃ ৫) নিচের হাদিস গুলো বুঝিয়ে দিন?


রাসুলুল্লাহ সা: থেকে ৩ টি বক্তব্য এসেছে:

১) যে দলটি জান্নাতে যাবে তাদের পরিচয় সম্পর্কে রাসূল সা: বলেন, কেবলমাত্র ১ টি দল ( যারা জান্নাতি), সাহাবীগণ বলেন, হে আল্লাহর রাসূল তারা কারা? ( যারা জান্নাতি) উত্তরে তিনি বললেন যার উপরে আমি এবং আমার সাহাবীগণ আছি।

[ আত তিরমিযী ২৬৪১ ]

অন্যত্র রাসূল সা বলেন

আজজের দিনে আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি

(হাকেম ১/১২৯)।

অর্থাৎ এখানে রাসূল সা কেবল তরীকা ও বৈশিষ্টের কথা বলেছেন, কোনো দলের নাম বলে যাননি।

২) সেটি হলো আল- জামা আত।

[ ইবনু মাজাহ হ/ ৩৯৯২; আহমদ, আবু দাঊদ হা/৪৫৯৭; মিশকাত হা/১৭২।]

যার অর্থ ছাহাবীগণের জামা আত।

তারা হল [ আল জামা আত] একটি দল


উত্তরঃ এখানে আহলে সুন্নত ওয়াল জানা আত জান্নাতি বুঝিয়েছে।


৬) কোন দল জান্নাতে যাবে?


উত্তরঃ আহলে সুন্নত ওয়াল জামা আত।


প্রশ্ন ৭:
যেকোনো মাযহাব কুরআন, হাদিস, সাহাবীদের দলিল মানলে কি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত হবে?
উত্তর:

হ্যাঁ, যদি একটি মাযহাব কুরআন, হাদিস, সাহাবা, তাবেয়ীদের দলিল অনুসারে চলে, তবে সেটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের অন্তর্ভুক্ত হবে।


প্রশ্ন ৮:
চার মাযহাব কি শুধু নবীজি ﷺ ও সাহাবিদের মত অনুসরণ করে? অন্য কিছু অনুসরণ করে কি?
উত্তর:

চার মাযহাব কেবল কুরআন, সুন্নাহ, সাহাবিদের আমল ও তাবেয়ীদের ব্যাখ্যা অনুসরণ করে। এর বাইরে কিছু অনুসরণ করে না।
তবে, ইজতিহাদী বিষয়ে কিয়াস, ইজমা, উরফ (প্রচলিত প্রথা) ইত্যাদি গ্রহণ করা হয়, যা কুরআন-সুন্নাহর অনুমোদিত নীতির অংশ।


প্রশ্ন ৯:
মাযহাব কেন মানবো? দলিলসহ বুঝিয়ে দিন?


উত্তর:

১. কুরআনের নির্দেশ:
﴿فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ﴾ (সূরা নাহল ১৬:৪৩)

অর্থাৎ, আলেমদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।


২. সাহাবাদের পদ্ধতি:
সাহাবারা নবীজি ﷺ এর যুগে সরাসরি প্রশ্ন করতেন, কিন্তু পরবর্তী যুগে ইজতিহাদ ছাড়া দ্বীন বোঝা কঠিন হয়ে যায়।


৩. ইমামগণ বিশেষজ্ঞ:
চার ইমামই কুরআন, হাদিস, সাহাবা ও তাবেয়ীদের বক্তব্য বিশ্লেষণ করে ফিকহ গঠন করেছেন।


প্রশ্ন ১০:
হানাফি মাযহাবের ৫ ভাগে বিভক্তি কি নিষিদ্ধ?
উত্তর:

না, কারণ এটি মূলনীতি ও আকিদার মধ্যে বিভক্তি নয়; বরং ইজতিহাদী বিষয়ে বিভিন্ন মতপার্থক্য।
যদি বিভক্তি সত্যের বিরোধিতা করে করা হয়, তবে তা নিষিদ্ধ।
কিন্তু, যদি মতপার্থক্য কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যার জন্য হয়, তবে তা গ্রহণযোগ্য।


প্রশ্ন ১১ঃ নবীজী বলেছে ৭২ দলের একদল হবে জান্নাতী। ওই ১ টা কি দল নয়?


উত্তরঃ হ্যাঁ,আংশিক বিবেচনায় দল।

সার্বিক বিবেচনায় দল নয়। যারা কুরআন ও হাদিস মেনে চলবে তারাই জান্নাতে যাবে।

যে মাযহাব থেকেই হোক! মাযহাবগুলো হলো কোর'আন ও হাদিসের সারনির্যাস,

যা মুজতাহিদ ইমামগন আমাদের জন্য কুরআন ও হাদিস মানা সহজ করে দিয়েছেন। জান্নাতি দল তারাই যারা কোর'আন ও হাদিস অনুযায়ী আমল করবে। চার'ও মাযহাব কোর'আন ও হাদিসের উপর'ই আমল করেন। আমরা যারা কোর'আন ও হাদিস থেকে সরাসরি আহকাম বের করতে সক্ষম নই,তাদের জন্য মাযহাব। যিনি স্বয়ং মুজতাহিদ,তার জন্য মাযহাব জরুরি নয়।

1 Answer

0 votes
by (641,250 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ
আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর; পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমরা সে নেয়ামতের কথা স্মরণ কর, যা আল্লাহ তোমাদিগকে দান করেছেন। তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের মনে সম্প্রীতি দান করেছেন। ফলে, এখন তোমরা তাঁর অনুগ্রহের কারণে পরস্পর ভাই ভাই হয়েছ। তোমরা এক অগ্নিকুন্ডের পাড়ে অবস্থান করছিলে। অতঃপর তা থেকে তিনি তোমাদেরকে মুক্তি দিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ নিজের নিদর্শনসমুহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হেদায়েত প্রাপ্ত হতে পার। (সূরা আলে ইমরান-১০৩)

তাফসীরে জ্বালালাইন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে,
{واعتصموا} تمسكوا {بحبل الله} أي دينه {جميعا ولا تفرقوا} بعد الإسلام 
মর্মার্থঃ
আল্লাহর রজ্জু/রশি মানে সম্পূর্ণ দ্বীন। 

ইবনে কাসির রাহ বলেন,
وقوله : ( واعتصموا بحبل الله جميعا ولا تفرقوا ) قيل ( بحبل الله ) أي : بعهد الله ، كما قال في الآية بعدها : ( ضربت عليهم الذلة أينما ثقفوا إلا بحبل من الله وحبل من الناس ) [ آل عمران : 112 ] أي بعهد وذمة وقيل : ( بحبل من الله ) يعني : القرآن ، كما في حديث الحارث الأعور ، عن علي مرفوعا في صفة القرآن : " هو حبل الله المتين ، وصراطه المستقيم " .
وقد ورد في ذلك حديث خاص بهذا المعنى ،

ইমাম তাবারি রাহ বলেন, আল্লাহর রজ্জু দ্বারা কেউ দ্বীন, এবং কেউ আল্লাহর হুকুম আহকাম এবং কেউ জামাত এবং কেউ কুরআনকে উদ্দেশ্য করে থাকেন। তারপর তিনি সনদ সহকারে তাদের আলোচনা নিয়ে আসেন, যারা আল্লাহর রজ্জু দ্বারা কুরআনকে উদ্দেশ্য করে থাকেন।
وقال آخرون: عنى بذلك القرآنَ والعهدَ الذي عَهِدَ فيه.
*ذكر من قال ذلك:
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
আল্লাহর রজ্জু দ্বারা পবিত্র কুরআন উদ্দেশ্য নিলে ভুল হবে না। তাছাড়া সহীহ হাদীস সেটাকেও উদ্দেশ্য নেয়া যেতে পারে। 

إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ তা'আয়ালার নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি বলে দেবেন যা কিছু তারা করে থাকে।(সূরা আন'আম-১৫৯)

বাদবাকী উত্তর ঠিকই আছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (17 points)
edited ago by
আস-সালামু আলাইকুম। প্রশ্ন করার পর কমেন্টে কারেকশন করে আরেকটু সুন্দর করে প্রশ্ন করেছিলাম ২ টাই সেম প্রশ্ন ছিল আপনি কী বুঝতে পারছিলেন?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...