بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব, আশা করি আপনি আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমি একজন মেয়ে, সদ্য এইচএসসি পাস করেছি। আল্লাহ তাআলার অশেষ অনুগ্রহে তিনি আমাকে কিছুটা দ্বীনের বুঝ দান করেছেন। আগে কুরআন পড়াও জানতাম না, দ্বীনের ব্যাপারেও ছিলাম অসচেতন। কিন্তু এখন উপলব্ধি করছি, একজন মুসলিম নারীর জন্য দ্বীন শেখা, পর্দা করা এবং শরীয়তের সীমার মধ্যে থাকা কতটা জরুরি।
আমার পরিবার দ্বীন সম্পর্কে গাফেল। তারা মনে করে, শুধু নামাজ পড়লেই,রোজা রাখলেই যথেষ্ট;দ্বীন শেখা বা শরয়ি পর্দা মানা অতিরিক্ত কিছু, যা করা দরকার নেই। আমি সহশিক্ষা ও পর্দাহীন পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাই, কারণ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কলেজ ভার্সিটিগুলো পর্দাবান্ধব নয়,এখানে পর্দা মেনে চলা যায় না। নারী কিংবা পুরুষ শিক্ষকদের মধ্যে পর্দাহীনতা, পর্দাবিরোধী মনোভাব এবং ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ সর্বত্র বিরাজমান। (আমি আগে এক মহিলা কলেজে এর ছাত্রী ছিলাম, তখন দ্বীন ও পর্দার বুঝ ছিলো না কিন্তু শিক্ষকদের হিজাব বিদ্বেষ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি)। এই সেক্যুলার কুফরি শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ইসলামকে অবমাননা করা হয়। আমি চাই না ,আমার কারণে আল্লাহর প্রদত্ত ফরজ বিধান কে নিয়ে কেউ কটাক্ষ করুক,হেনস্থা করুক।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর অশেষ রহমতে আমি আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ার সহযোগিতায় দ্বীন শেখা ও দ্বীনের দা'য়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে অনলাইনে IOM-এর আলিমা কোর্সে ভর্তি হয়েছি। মহান আল্লাহ্ তাকে উত্তম জাযা দান করুন।আর আমাকেও দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুক।
কিন্তু আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন, বাবা, মা , ভাই সকলে আমার এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তারা দ্বীনি পড়ালেখাকে তুচ্ছ মনে করে এবং বলে, এতে জীবনে কিছুই হবে না, এসবের কোনো মূল্য নেই। আর আলেমদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত নেতিবাচক। উল্লেখ্য, তারা সবাই আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক। পুরুষরা মসজিদে সালাত আদায় করেন না। জুম্মার দিনে খুতবায় জালেম হাসিনার বিরুদ্ধে বয়ান হওয়ায় তারা জুম্মা পরিত্যাগ করারও পরিকল্পনা করেন।
তাদের সামনে কুরআন-হাদীস থেকে কিছু বললে তারা বলে, এসব মেনে চললে সমাজে টিকে থাকা যাবে না। আমরা তো বাপ-দাদার আমল থেকে যা দেখে এসেছি তাই করি। তুমি অতিরিক্ত করে ফেলছো, এসব মিথ্যা ও বানোয়াট।হাদিসে পড়ালেখার জন্য সুদূর দেশ এ যাওয়ার ও হুকুম আছে।
এখন তারা চাচ্ছেন, আমি যেন জেনারেল লাইনে কোথাও ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। আমার বড় ভাই ও তার স্ত্রী; উভয়েই সরকারি কর্মকর্তা। আমার ভাই আমাকে বলছেন, আমি যেভাবে চলছি, তাতে আমার সাথে একজন পিয়নেরও বিয়ে হবে না। তারা বলেন, ডিগ্রি না থাকলে ভালো পাত্র পাওয়া অসম্ভব এবং আমি নিজের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নষ্ট করছি। আমার দায়ভার কেউ নেবে না।
আমি তাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি, আমি যা করছি, তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তিনি যাকে আমার জন্য উত্তম মনে করবেন, তাকেই আমার জন্য নির্ধারণ করবেন ইন শা আল্লাহ। আর আমি এমন গায়রতহীন ছেলেকে বিয়ে করবো না, যে পর্দার গুরুত্ব বুঝে না। এমন বিয়েতে দ্বীনহীন পরিবেশে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, দাম্পত্য কলহের সম্ভাবনা থাকে, এমনকি সংসারও ভেঙে যেতে পারে।
আমি বলেছি, তারা যদি এমন পরিবেশে দ্বীনের উপর টিকে থাকার নিরাপত্তা দিতে পারেন, তবে আমি তাদের সিদ্ধান্তে রাজি হতে পারি।
তখন তারা বলেন, তোর কেন বাসাতেও পর্দা করতে হবে? নামাজ পড়, বাইরে গেলে বোরকা পড়ে যা, কিন্তু এত বাড়াবাড়ি কেন? দুনিয়ার সবাই তো এমন করে না। জান্নাত এতো সহজ না,ঘরে বসে থাকলে জান্নাত আসবে না,তুই ভণ্ডামি শুরু করেছিস, হুজুরদের লেবাস ধরেছিস, বাবা-মায়ের কথা শুনছিস না, অবাধ্য হচ্ছিস তুই যতই আমল করিস না কেন, তুই জান্নাতে যেতে পারবি না।
আমার মা সারাদিন কান্নাকাটি করেন, বকাবকি করেন। বাবা ও ভাই বিরক্ত ও রাগান্বিত। তারা মনে করেন, আমি জামাত শিবিরের পাল্লায় পড়েছি।জঙ্গি মনোভাব পোষণ করছি। কেউ আমার ব্রেইন ওয়াশ করাচ্ছে। আমি নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি, এবং সামনে আমার জীবন হবে দুর্বিষহ।
সম্মানিত উস্তাজ,আপনার নিকট আমার প্রশ্ন হলোঃ
আমার এই সিদ্ধান্ত কি শরীয়তের দৃষ্টিতে সঠিক? আমি কি পিতা-মাতার অমান্যকারিণী হিসেবে গোনাহগার হবো? এমন পরিস্থিতিতে আমার জন্য শরয়ি করণীয় কী? আমি কিভাবে দ্বীনের উপর স্থির থাকতে পারি এবং একই সঙ্গে পিতা-মাতার হক্বও আদায় করতে পারি?
আপনার সদয় উত্তর আমার জন্য দিকনির্দেশনামূলক হবে ইন শা আল্লাহ। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে আমাকে সঠিক সমাধান দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আমার এবং আমার পরিবারের হেদায়েতের জন্য দুআ করবেন। যত যাই হোক আল্লাহ যেনো আমৃত্যু দ্বীনের উপর অবিচল রাখেন,ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করেন।
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।