আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
43 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
reshown by
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।

শ্রদ্ধেয় মুফতি সাহেব, আশা করি আপনি আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে ভালো আছেন। আমি একজন মেয়ে, সদ্য এইচএসসি পাস করেছি। আল্লাহ তাআলার অশেষ অনুগ্রহে তিনি আমাকে কিছুটা দ্বীনের বুঝ দান করেছেন। আগে কুরআন পড়াও জানতাম না, দ্বীনের ব্যাপারেও ছিলাম অসচেতন। কিন্তু এখন উপলব্ধি করছি, একজন মুসলিম নারীর জন্য দ্বীন শেখা, পর্দা করা এবং শরীয়তের সীমার মধ্যে থাকা কতটা জরুরি।

আমার পরিবার দ্বীন সম্পর্কে গাফেল। তারা মনে করে, শুধু নামাজ পড়লেই,রোজা রাখলেই যথেষ্ট;দ্বীন শেখা বা শরয়ি পর্দা মানা অতিরিক্ত কিছু, যা করা দরকার নেই। আমি সহশিক্ষা ও পর্দাহীন পরিবেশ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাই, কারণ বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় কলেজ ভার্সিটিগুলো পর্দাবান্ধব নয়,এখানে পর্দা মেনে চলা যায় না। নারী কিংবা পুরুষ শিক্ষকদের মধ্যে পর্দাহীনতা, পর্দাবিরোধী মনোভাব এবং ফ্রি মিক্সিং পরিবেশ সর্বত্র বিরাজমান। (আমি আগে এক মহিলা কলেজে এর ছাত্রী ছিলাম, তখন দ্বীন ও পর্দার বুঝ ছিলো না কিন্তু শিক্ষকদের হিজাব বিদ্বেষ স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছি)। এই সেক্যুলার কুফরি শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ইসলামকে অবমাননা করা হয়। আমি চাই না ,আমার কারণে আল্লাহর প্রদত্ত ফরজ বিধান কে নিয়ে কেউ কটাক্ষ করুক,হেনস্থা করুক।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর অশেষ রহমতে আমি আমার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ার সহযোগিতায় দ্বীন শেখা ও দ্বীনের দা'য়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে অনলাইনে IOM-এর আলিমা কোর্সে ভর্তি হয়েছি। মহান আল্লাহ্ তাকে উত্তম জাযা দান করুন।আর আমাকেও দ্বীনের খেদমতের জন্য কবুল করুক।

কিন্তু আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন, বাবা, মা , ভাই সকলে আমার এই সিদ্ধান্তে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তারা দ্বীনি পড়ালেখাকে তুচ্ছ মনে করে এবং বলে, এতে জীবনে কিছুই হবে না, এসবের কোনো মূল্য নেই। আর আলেমদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত নেতিবাচক। উল্লেখ্য, তারা সবাই আওয়ামী লীগের অন্ধ সমর্থক। পুরুষরা মসজিদে সালাত আদায় করেন না। জুম্মার দিনে খুতবায় জালেম হাসিনার বিরুদ্ধে বয়ান হওয়ায় তারা জুম্মা পরিত্যাগ করারও পরিকল্পনা করেন।

তাদের সামনে কুরআন-হাদীস থেকে কিছু বললে তারা বলে, এসব মেনে চললে সমাজে টিকে থাকা যাবে না। আমরা তো বাপ-দাদার আমল থেকে যা দেখে এসেছি তাই করি। তুমি অতিরিক্ত করে ফেলছো, এসব মিথ্যা ও বানোয়াট।হাদিসে পড়ালেখার জন্য সুদূর দেশ এ যাওয়ার ও হুকুম আছে।

এখন তারা চাচ্ছেন, আমি যেন জেনারেল লাইনে কোথাও ভর্তি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাই। আমার বড় ভাই ও তার স্ত্রী; উভয়েই সরকারি কর্মকর্তা। আমার ভাই আমাকে বলছেন, আমি যেভাবে চলছি, তাতে আমার সাথে একজন পিয়নেরও বিয়ে হবে না। তারা বলেন, ডিগ্রি না থাকলে ভালো পাত্র পাওয়া অসম্ভব এবং আমি নিজের ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নষ্ট করছি। আমার দায়ভার কেউ নেবে না।

আমি তাদের পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি, আমি যা করছি, তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। তিনি যাকে আমার জন্য উত্তম মনে করবেন, তাকেই আমার জন্য নির্ধারণ করবেন ইন শা আল্লাহ। আর আমি এমন গায়রতহীন ছেলেকে বিয়ে করবো না, যে পর্দার গুরুত্ব বুঝে না। এমন বিয়েতে দ্বীনহীন পরিবেশে পথভ্রষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে, দাম্পত্য কলহের সম্ভাবনা থাকে, এমনকি সংসারও ভেঙে যেতে পারে।
আমি বলেছি, তারা যদি এমন পরিবেশে দ্বীনের উপর টিকে থাকার নিরাপত্তা দিতে পারেন, তবে আমি তাদের সিদ্ধান্তে রাজি হতে পারি।

তখন তারা বলেন, তোর কেন বাসাতেও পর্দা করতে হবে? নামাজ পড়, বাইরে গেলে বোরকা পড়ে যা, কিন্তু এত বাড়াবাড়ি কেন? দুনিয়ার সবাই তো এমন করে না। জান্নাত এতো সহজ না,ঘরে বসে থাকলে জান্নাত আসবে না,তুই ভণ্ডামি শুরু করেছিস, হুজুরদের লেবাস ধরেছিস, বাবা-মায়ের কথা শুনছিস না, অবাধ্য হচ্ছিস তুই যতই আমল করিস না কেন, তুই জান্নাতে যেতে পারবি না।

আমার মা সারাদিন কান্নাকাটি করেন, বকাবকি করেন। বাবা ও ভাই বিরক্ত ও রাগান্বিত। তারা মনে করেন, আমি জামাত শিবিরের পাল্লায় পড়েছি।জঙ্গি মনোভাব পোষণ করছি। কেউ আমার ব্রেইন ওয়াশ করাচ্ছে। আমি নিজের ভবিষ্যৎ নষ্ট করছি, এবং সামনে আমার জীবন হবে দুর্বিষহ।

সম্মানিত উস্তাজ,আপনার নিকট আমার প্রশ্ন হলোঃ
আমার এই সিদ্ধান্ত কি শরীয়তের দৃষ্টিতে সঠিক? আমি কি পিতা-মাতার অমান্যকারিণী হিসেবে গোনাহগার হবো? এমন পরিস্থিতিতে আমার জন্য শরয়ি করণীয় কী? আমি কিভাবে দ্বীনের উপর স্থির থাকতে পারি এবং একই সঙ্গে পিতা-মাতার হক্বও আদায় করতে পারি?

আপনার সদয় উত্তর আমার জন্য দিকনির্দেশনামূলক হবে ইন শা আল্লাহ। কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে আমাকে সঠিক সমাধান দিলে আমি কৃতজ্ঞ থাকব। আমার এবং আমার পরিবারের হেদায়েতের জন্য দুআ করবেন। যত যাই হোক আল্লাহ যেনো আমৃত্যু দ্বীনের উপর অবিচল রাখেন,ঈমানের সহিত মৃত্যু দান করেন।

জাযাকুমুল্লাহু খাইরান। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্।
closed

1 Answer

0 votes
by (641,250 points)
selected by
 
Best answer
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আলহামদুলিল্লাহ!
জেনারেল শিক্ষা অর্জন সম্পর্কে আমরা ইতি পূর্বে বলেছিলাম যে, 
বলা যায় মুসলিম দেশের মুসলিম সরকারের জন্য ওয়াজিব যে,অচিরেই পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা।
প্রয়োজনে এ জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করা সমস্ত মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব ও কর্তব্য।
কিন্তু যতদিন পর্যন্ত এই পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ,ততদিন প্রয়োজনের তাগিদে নিম্নোক্ত শর্তাদির সাথে কলেজ-ভার্সিটিতে শিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ দেয়া যেতে পারে।

১/শিক্ষা অর্জন দেশ ও মুসলিম জাতীর খেদমতের উদ্দেশ্যে হতে হবে।
২/চোখকে সব সময় নিচু করে রাখতে হবে,প্রয়োজন ব্যতীত কোনো শিক্ষক/শিক্ষিকার দিকে তাকানো যাবে না।মহিলা/পুরুষ তথা অন্য লিঙ্গের  সহশিক্ষার্থীদের সাথে তো কোনো প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবেই না।সর্বদা অন্য লিঙ্গর শিক্ষার্থী থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে।(ফাতাওয়া উসমানী ১/১৬০-১৭১)(শেষ)
এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/434


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
যদি আপনি মনে করেন, সহশিক্ষাতে গেলে আপনার পর্দা পুশিদা কিছুই রক্ষা হবে না। দ্বীন পালন সম্ভব হবে না, তাহলে তখন আপনার জন্য সহশিক্ষাতে যাওয়া জায়েয হবে না। 

আমাদের পরামর্শ থাকবে, আপনি নিজ পর্দা পুশিদাকে রক্ষা করে কলেজ ভার্সিটিতে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, এবং IOM এর আলিম কোর্সকেও চালিয়ে যাবেন। এতেকরে আপনার পরিবারও হয়তো আপনার উপর সন্তুষ্ট থাকবে। তবে পর্দা পুশিদাকে কখনো বিসর্জন দেওয়া যাবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...