আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
22 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (15 points)
শায়েখ, আমি পূর্বে গোপনে ৫লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করি। তখন পরিবার জানতো না। এখন পারিবারিক ভাবে একই পাত্রীকে বিবাহ করার সময় যদি মোহরানা মিল না থাকে তবে কি বিবাহ শুদ্ধ হবে? আমার জাপানে চাকুরী হয়েছে, সামনের মাসের ১০ তারিখে ফ্লাইট। মেয়ের পরিবার চায় আমি বিদেশ যাবার আগে বিয়ে করে যাই। আর আমার পরিবার চায় আমি যেন বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করি। বলে রাখা ভালো, আমি যাকে পছন্দ করি তার জন্মদাতা পিতা নেই, তার মা দ্বিতীয় বিবাহ করলে, যখন এ বিষয় আমার পরিবার জানতে পারে তখন তারা আমার বিয়ের প্রতি অনেক অনীহা দেখায়। যাইহোক, এখন বিবাহ না করলে মেয়ের পরিবার মেয়েকে বসিয়ে রাখবে না আর। আমার মা আর মামা যাবে সে বিয়েতে। আমার বাবা, ভাই যেতে পারবে না, যতদিন না আমি দেশে ফিরে সামাজিকভাবে ওয়ালিমা করে অনুষ্ঠান করছি।
এখন আমার কি করনীয়?

1 Answer

0 votes
by (604,290 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

মোহরানা আদায় করা ফরজ।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤] 

অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪] 


মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

واتوا النساء صدقاتهن نحلة فان طبن لكم عن شيئ منه نفسا فكلوا هنيئا مرئيا

এবং তোমরা নারীদেরকে দাও তাদের মোহর খুশিমনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় স্বাগ্রহে ছেড়ে  দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ কর।-সূরা নিসা : ৪

এই আয়াতের প্রধান কয়েকটি শিক্ষা ও বিধান এই :

১. মোহর আদায় করা ফরয। স্বয়ং আল্লাহ তাআলা মোহর আদায়ের আদেশ করেছেন।

২. মোহর সম্পূর্ণরূপে নারীর প্রাপ্য। তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া অন্য কারো তাতে হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। সুতরাং স্বামী যেমন স্ত্রীকে মোহর থেকে বঞ্চিত করতে, কিংবা পরিশোধ করার পর ফেরত নিতে পারে না তেমনি পিতা-মাতা, ভাইবোন বা অন্য কেউ নিজ কন্যার, বোনের বা আত্মীয়ার মোহর তার স্বতঃস্ফূর্ত সম্মতি ছাড়া নিতে পারে না। নিলে তা হবে কুরআনের ভাষায় ‘আক্ল বিল বাতিল’ তথা অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করা।

৩. মুমিনের কর্তব্য খুশিমনে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে স্ত্রীর মোহর আদায় করা। কারো অনুরোধ-উপরোধ বা জোর-জবরদস্তির অপেক্ষায় থাকা কুরআনী শিক্ষার পরিপন্থী ও অতি নিন্দনীয় প্রবণতা।

৪. স্ত্রী যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দেয় কিংবা গ্রহণ করার পর স্বামীকে উপহার দেয় তাহলে স্বামী তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করতে পারবে।

৫. পূর্ণ মোহর ছেড়ে দেওয়ার বা পূর্ণ মোহর স্বামীকে উপহার দেওয়ারও অধিকার স্ত্রীর রয়েছে, তবে সাধারণ অবস্থায় পূর্ণ মোহর না দিয়ে কিছু অংশ দেওয়াই ভালো।

৬. স্বামী যদি চাপ দিয়ে বা কৌশলে পূর্ণ মোহর বা কিছু অংশ মাফ করিয়ে নেয় তাহলে আল্লাহর বিচারে তা মাফ হবে না।

মোহরানা স্ত্রীর অধিকার।
সর্বনিম্ন মোহর ১০ দিরহাম,আর সর্বোচ্চ কোনো নির্দিষ্ট নেই।
এটি স্বামী ও তার অভিভাবক, এবং স্ত্রীর অভিভাবকগন স্ত্রীর অনুমতি স্বাপেক্ষে সন্তুষ্টি চিত্তে নির্ধারন করবেন।
,
যাহা নির্দিষ্ট হবে,স্বামীকে তাহা আদায় করতেই হবে।
স্বামী দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে তার জিম্মায় বাকি থেকে যাবে।

স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ    

وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥] 

তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫] 

وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ  [٦٠:١٠] 

তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]

বিস্তারিত জানুনঃ- 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
শরীয়তের বিধান হলো মোহরানা বিবাহের সময় যদি ঠিক করা হয়,তাহলে সেটাই নির্দিষ্ট থাকে,নতুন করে আবার মোহরানা ধার্য করা যায়না।

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে পূর্বে আপনারা গোপনে যে ৫ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করেছিলেন,
এখন পারিবারিক ভাবে একই পাত্রীকে বিবাহ করার সময় যদি মোহরানা মিল না থাকে তবুও বিবাহ শুদ্ধ হবে।

তবে মোহরানা আগেরটাই (৫ লক্ষ টাকা) সেটিই নির্দিষ্ট থাকবে। 

নতুনভাবে বিবাহ পড়ানোর সময় যে মোহরানা আপনারা ধার্য করবেন,শরীয়তে এর কোন ধর্তব্য নেই।

কারণ নতুন ভাবে যে বিবাহ পড়াতে চাচ্ছেন,এ বিবাহ তো শুধুমাত্র পরিবারকে দেখানোর জন্য মাত্র, এটা তো শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ নয়, কারণ আপনারা আগেই বিবাহ করে ফেলেছেন। আগের বিবাহ টাই শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহ।

ওই সময়ের মোহরানাই নির্দিষ্ট থাকবে।

পরের বিবাহটি এটা শুধুমাত্র অভিনয় মাত্র, এটা মূলত বিবাহ নয়,তাই এই সময়কার মোহরানা এটা কোন ভাবেই শরীয়তের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

তাই এ সময়ের মোহরানা পাঁচ লক্ষ টাকা বেশি ধার্য করা হোক বা ৫ লক্ষ থেকে কম ধার্য করা হোক শরীয়তের কাছে তার কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...