বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি
ওয়া বারাকাতুহু
জবাব,
এতে কোনো সন্দেহ
নেই যে, উম্মাহর সকল দলের মধ্যে সিরাতে মুসতাকীমের উপর অবিচল দলটি হল ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামাআহ’। এবং একমাত্র এই দলটিই ‘ফিরকায়ে নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত দল) ও ‘ত্বায়েফায়ে
মানসুরাহ’ (সাহায্যপ্রাপ্ত জামাত) যাদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে মুক্তির অঙ্গিকার
এবং কিয়ামত পর্যন্ত খোদায়ী মদদ ও নুসরত শামেলে হাল হওয়ার সুসংবাদ।
নাজাতপ্রাপ্ত
দলের এই নাম মূলত নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ থেকে গৃহীত-
এক.
أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ
مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً،
وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ
وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ .
জেনে রেখো,
তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব বায়াত্তর
দলে বিভক্ত হয়েছে । আর এ উম্মত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে। বায়াত্তর দল জাহান্নামী
হবে আর একটি দল জান্নাতী হবে। সেই দলটি হচ্ছে ‘আলজামাআহ’। -সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস ৪৫৯৬;
মুসনাদে আহমদ,
হাদীস ১৬৯৩৭,
হাদীসটির সনদ সহীহ।
দুই.
إِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ
عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ
وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا:
وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.
قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ
مُفَسَّرٌ غَرِيبٌ، لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.
বনী ইসরাঈল
বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া
আর সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ করলেন, যারা আমার ও আমার সাহাবীগণের পথে অবিচল থাকবে।’ -জামে তিরমিযী,
হাদীস ২৬৪১,
কিতাবুল ঈমান
তিন.
إِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ
بَعْدِي فَسَيَرى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ
الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا
عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ
مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.
তোমাদের যারা
আমার পরে বেঁচে থাকবে তারা অবশ্যই বহু মতভেদ দেখবে। তখন আমার সুন্নাহ ও আমার পরের খোলাফায়ে
রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা মজবুতভাবে ধারণ করো এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে
রেখো। আর নবআবিষ্কৃত বিষয়াদি থেকে অবশ্যই বেঁচে থেকো। কারণ (দ্বীনের নামে আবিষ্কৃত)
সকল নতুন বিষয় বিদআত আর সকল বিদআত গোমরাহী। -মুসনাদে আহমাদ,
হাদীস ১৬৬৯২;
সুনানে আবু দাউদ,
হাদীস ৪৬০৭;
জামে তিরমিযী,
হাদীস ২৬৭৬ হাদীসটির সনদ সহীহ।
এই হাদীসগুলো
থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যখন উম্মতের মধ্যে বহু মত ও পথের উদ্ভব ঘটবে তখন সিরাতে মুসতাকীমের উপর দৃঢ়পদ
থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের
সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। সেই নাযুক মুহূর্তে তারাই হবে নাজাতপ্রাপ্ত যারা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অটল
থাকবে এবং একই সাথে নিজেকে ‘আল জামাআহ’-এর অন্তর্ভুক্ত রাখবে। বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন
করবে না।
যেহেতু নাজাতপ্রাপ্তদের
মূল বৈশিষ্ট্য হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের
সুন্নাহর উপর অবিচলতা ও ‘আল জামাআহ’ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া,
এজন্য তাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল
জামাআহ’ অর্থাৎ ‘সুন্নাহ ও জামাআহ ধারণকারী’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর বিপরীতে
যারা সুন্নাহ ত্যাগ করে বিদআত অবলম্বন করে এবং মুসলমানদের জামাআত থেকে বিচ্ছিন্নতা
অবলম্বন করে উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করে তাদের নাম ‘আহলুল বিদআতি ওয়াল
ফুরকাত’ অর্থাৎ বিদআত ও বিচ্ছন্নতা অবলম্বনকারী।
সূরা আলে ইমরান
১০৬ ও ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা আখেরাতের প্রসঙ্গে বলেছেন,
যেদিন এক দলের চেহারা উজ্জ্বল হবে
আর অপর দলের চেহারা কালো হবে।’ এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,
يَعْنِي: يَوْمَ الْقِيَامَةِ،
حِينَ تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوهُ
أَهْلِ البِدْعَة وَالْفُرْقَةِ.
অর্থাৎ ‘আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামাআতের’ চেহারা উজ্জ্বল হবে আর ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাতের’ চেহারা
কালো হবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪১৯; আদদুররুল মানসূর ফিত তাফসীরি বিল মা’সূর,
সুয়ূতী ৪/৬৩;
শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি
ওয়াল জামাআহ, লালিকায়ী ১/৭৯ প্যারা নং ৭৪
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১). রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেলাফতে নবুওয়াতকে ত্রিশ বছরের মধ্যে সীমিত করেছেন। আর তা ত্রিশ
বছর পর্যন্তই বহাল ছিল।
(২). আবু দাউদ
ও অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,
জনৈক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল!
আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আকাশ থেকে একটি বালতি নামানো হয়েছে। আবু বকর (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরে
তা হতে সামান্য পানি পান করলেন। তারপর উমার (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরে তা হতে
তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলেন। তারপর উছমান (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরে তৃপ্তিসহকারে
পানি পান করলেন। তারপর আলী (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরলেন। কিন্তু বালতি কাঁপতে
শুরু করল এবং তা থেকে কিছু পানি ছিটে তাঁর শরীরে লাগল।আবু দাউদ,
অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ।
(৩). সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে এই চারজন খলীফার
খেলাফতের ব্যাপারে উম্মতের আলেমদের ইজমা বা ঐকমত্য সংঘটিত হয়েছে। শুধু বিদআতী ও গোমরাহ
লোক ব্যতীত কেউ তাদের কারো খেলাফত অস্বীকার করতে পারে না।