আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
edited by
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, " ... তোমরা আমার সুন্নাত ও হিদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশিদ্বীনের সুন্নাত অবশ্যই অবলম্বন করবে, তা দাঁত দিয়ে শক্তভাবে কামড়ে ধরবে। ... " রাসুলুল্লাহ (সাঃ) খুলাফায়ে রাশেদা বলতে আবু বকর, ওমর, উসমান এবং আলীকে (রাদিআল্লাহু তাআ'লা আনহুম) বুঝিয়েছেন আমরা তা কীভাবে জানতে পারি? এ সম্পর্কে সহীহ সনদে কোনো হাদিস আমাদের কাছে পৌঁছেছে কি?

1 Answer

0 votes
by (70,170 points)
edited by

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

জবাব,

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, উম্মাহর সকল দলের মধ্যে সিরাতে মুসতাকীমের উপর অবিচল দলটি হল ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’। এবং একমাত্র এই দলটিই ‘ফিরকায়ে নাজিয়াহ’ (মুক্তিপ্রাপ্ত দল) ও ‘ত্বায়েফায়ে মানসুরাহ’ (সাহায্যপ্রাপ্ত জামাত) যাদের সম্পর্কে হাদীস শরীফে আছে মুক্তির অঙ্গিকার এবং কিয়ামত পর্যন্ত খোদায়ী মদদ ও নুসরত শামেলে হাল হওয়ার সুসংবাদ।

নাজাতপ্রাপ্ত দলের এই নাম মূলত নিম্নোক্ত হাদীসসমূহ থেকে গৃহীত-

এক.

أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ .

জেনে রেখো, তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাব বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে । আর এ উম্মত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে। বায়াত্তর দল জাহান্নামী হবে আর একটি দল জান্নাতী হবে। সেই দলটি হচ্ছে ‘আলজামাআহ’। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৯৬; মুসনাদে আহমদ, হাদীস ১৬৯৩৭, হাদীসটির সনদ সহীহ।

দুই.

إِنَّ بني إسرائيل تَفَرَّقَتْ عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، كُلُّهُمْ فِي النَّارِ إِلاَّ مِلَّةً وَاحِدَةً، قَالُوا: وَمَنْ هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: مَا أَنَا عَلَيْهِ وَأَصْحَابِي.

قال الترمذي: هَذَا حَدِيثٌ مُفَسَّرٌ غَرِيبٌ، لاَ نَعْرِفُهُ مِثْلَ هَذَا إِلاَّ مِنْ هَذَا الْوَجْهِ.

বনী ইসরাঈল বায়াত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে আর আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। একটি দল ছাড়া আর সবাই জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, যারা আমার ও আমার সাহাবীগণের পথে অবিচল থাকবে।’ -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৪১, কিতাবুল ঈমান

তিন.

إِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ.

তোমাদের যারা আমার পরে বেঁচে থাকবে তারা অবশ্যই বহু মতভেদ দেখবে। তখন আমার সুন্নাহ ও আমার পরের খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করো। তা মজবুতভাবে ধারণ করো এবং মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রেখো। আর নবআবিষ্কৃত বিষয়াদি থেকে অবশ্যই বেঁচে থেকো। কারণ (দ্বীনের নামে আবিষ্কৃত) সকল নতুন বিষয় বিদআত আর সকল বিদআত গোমরাহী। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৬৯২; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৬০৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৭৬ হাদীসটির সনদ সহীহ।

এই হাদীসগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে গেল যে, যখন উম্মতের মধ্যে বহু মত ও পথের উদ্ভব ঘটবে তখন সিরাতে মুসতাকীমের উপর দৃঢ়পদ থাকার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করতে হবে। সেই নাযুক মুহূর্তে তারাই হবে নাজাতপ্রাপ্ত যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অটল থাকবে এবং একই সাথে নিজেকে ‘আল জামাআহ’-এর অন্তর্ভুক্ত রাখবে। বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করবে না।

যেহেতু নাজাতপ্রাপ্তদের মূল বৈশিষ্ট্য হল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাহর উপর অবিচলতা ও ‘আল জামাআহ’ থেকে বিচ্ছিন্ন না হওয়া, এজন্য তাদেরকে ‘আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ’ অর্থাৎ ‘সুন্নাহ ও জামাআহ ধারণকারী’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এর বিপরীতে যারা সুন্নাহ ত্যাগ করে বিদআত অবলম্বন করে এবং মুসলমানদের জামাআত থেকে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করে উম্মাহর মাঝে বিভেদ ও অনৈক্য সৃষ্টি করে তাদের নাম ‘আহলুল বিদআতি ওয়াল ফুরকাত’ অর্থাৎ বিদআত ও বিচ্ছন্নতা অবলম্বনকারী।

সূরা আলে ইমরান ১০৬ ও ১০৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা আখেরাতের প্রসঙ্গে বলেছেন, যেদিন এক দলের চেহারা উজ্জ্বল হবে আর অপর দলের চেহারা কালো হবে।’ এর তাফসীরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত,

يَعْنِي: يَوْمَ الْقِيَامَةِ، حِينَ تَبْيَضُّ وُجُوهُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ، وَتَسْوَدُّ وُجُوهُ أَهْلِ البِدْعَة وَالْفُرْقَةِ.

অর্থাৎ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের’ চেহারা উজ্জ্বল হবে আর ‘আহলুল বিদআত ওয়াল ফুরকাতের’ চেহারা কালো হবে। -তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৪১৯; আদদুররুল মানসূর ফিত তাফসীরি বিল মা’সূর, সুয়ূতী ৪/৬৩; শরহু উসূলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ, লালিকায়ী ১/৭৯ প্যারা নং ৭৪

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

(১). রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খেলাফতে নবুওয়াতকে ত্রিশ বছরের মধ্যে সীমিত করেছেন। আর তা ত্রিশ বছর পর্যন্তই বহাল ছিল।

(২). আবু দাউদ ও অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, জনৈক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আকাশ থেকে একটি বালতি নামানো হয়েছে। আবু বকর (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরে তা হতে সামান্য পানি পান করলেন। তারপর উমার (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরে তা হতে তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলেন। তারপর উছমান (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরে তৃপ্তিসহকারে পানি পান করলেন। তারপর আলী (রাঃ) এসে সেই বালতির কিনারায় ধরলেন। কিন্তু বালতি কাঁপতে শুরু করল এবং তা থেকে কিছু পানি ছিটে তাঁর শরীরে লাগল।আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ।

 (৩). সবচেয়ে শক্তিশালী দলীল হচ্ছে এই চারজন খলীফার খেলাফতের ব্যাপারে উম্মতের আলেমদের ইজমা বা ঐকমত্য সংঘটিত হয়েছে। শুধু বিদআতী ও গোমরাহ লোক ব্যতীত কেউ তাদের কারো খেলাফত অস্বীকার করতে পারে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...