আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (1 point)
আসসালামু আলাইকুম। আমি নবীর স্ত্রী সংখ্যা সঠিকভাবে জানতে চাইছি। রেইনড্রপসের সিরাত বইয়ে পড়েছি ১৩ জন। তবে গুগলে দেখলে কোথাও ১১ আবার কোথাও ১২ জন। এখণ সঠিক কোনটি? আর এই সম্পর্কে এতো মতপার্থক্যের কারণসহ বললে ভালো হতো।

জাযাকাল্লাহু খাইরান

1 Answer

0 votes
ago by (69,600 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

জবাব,

বিভিন্ন সময়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবনে মোট ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। তন্মধ্যে হযরত খাদীজা ও যয়নব বিনতে খুযায়মা (রাঃ) রাসুল (সা.)-এর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন। বাকী ৯ জন স্ত্রী রেখে মারা যান রাসুল (সা.)। যারা হলেন যথাক্রমে হযরত সওদা, আয়েশা, হাফছাহ, উম্মে সালামাহ, যয়নব বিনতে জাহশ, জুওয়াইরিয়াহ, উম্মে হাবীবাহ, ছাফিইয়াহ ও মায়মূনা বিনতুল হারেছ (রাঃ)।

এ ছাড়া আরও দু’জন নারীর সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু সহবাসের পূর্বেই তারা পরিত্যক্ত হন। প্রথমজন আসমা বিনতে নু‘মান আল-কিনদিয়াহ। যিনি ‘জাউনিয়াহ’ (الْجَوْنِيَّةُ) বলেও পরিচিত (ফাৎহুল বারী হা/৫২৫৫-এর ব্যাখ্যা)। তাকে কিছু মাল-সম্পদ দিয়ে দেয়া হয়। দ্বিতীয়জন ‘আমরাহ বিনতে ইয়াযীদ আল-কিলাবিয়াহ। (বুখারী হা/৫২৫৪-৫৫; ইবনু হিশাম ২/৬৪৭)

এছাড়াও তাঁর দু’জন দাসী ছিল। একজন খ্রিষ্টান কন্যা মারিয়া ক্বিবত্বিয়াহ। যাকে মিসররাজ মুক্বাউক্বিস হাদিয়াস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। অন্যজন ইহূদী কন্যা রায়হানা বিনতে যায়েদ আল-কুরাযিয়াহ। ইনি বনু কুরায়যার যুদ্ধে বন্দী হন। আবু ওবায়দাহ আরও দু’জন দাসীর কথা বলেছেন। যাদের একজন জামীলা। যিনি কোন এক যুদ্ধের বন্দীনী ছিলেন। অন্যজন তাঁর স্ত্রী যয়নব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) কর্তৃক হেবাকৃত। (আর-রাহীক্ব ৪৭৩-৭৫ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ১/১০২)

তাঁর স্ত্রীগণের মধ্যে কুরায়শ গোত্রের ছিলেন ৬ জন। যেমন খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ আল-আসাদী, আয়েশা বিনতে আবুবকর আত-তামীমী, হাফছাহ বিনতে ওমর আল-‘আদাভী, উম্মে হাবীবাহ রামলাহ বিনতে আবু সুফিয়ান আল-উমুভী, উম্মু সালামাহ বিনতে আবু উমাইয়া মাখযূমী ও সাওদা বিনতে যাম‘আহ আল-‘আমেরী (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুন্না)। (ইবনু হিশাম ২/৬৪৮।)

 স্ত্রীদের মধ্যে একমাত্র ইহূদী কন্যা ছিলেন ছাফিইয়াহ বিনতে হুয়াই বিন আখত্বাব। ইহূদী ও খ্রিষ্টান কন্যারা সবাই ইসলাম কবুল করেন।

এক নযরে উম্মাহাতুল মুমিনীন (أمهاة المؤمنين فى لمحة)

১. খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ : বিবাহকালে রাসুল (সা.)-এর বয়স ছিল ২৫ ও তাঁর বয়স ৪০; মৃত্যুসন- রামাযান ১০ম নববী বর্ষ; দাফন- মক্কার ‘হাজূনে’; মৃত্যুকালে বয়স ৬৫। রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে তাঁর দাম্পত্যকাল- ২৪ বছর ৬ মাস বা প্রায় ২৫ বছর। তিনি বেঁচে থাকা অবধি রাসূল (ছাঃ) দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।

২. সওদা বিনতে যাম‘আহ: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫০, তাঁর বয়স ৫০, বিবাহ সন- শাওয়াল ১০ম নববী বর্ষ, মৃত্যুসন- ১৯ হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৭২। রাসুল (সা.)-এর সাথে দাম্পত্য জীবন- ১৪ বছর। রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পর স্ত্রীদের মধ্যে তিনিই প্রথম মৃত্যুবরণ করেন।

৩. আয়েশা বিনতে আবুবকর: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৪, বিবাহ সন- শাওয়াল ১১ নববী বর্ষ। বিয়ের সময় বয়স ৬, স্বামীগৃহে আগমনের বয়স ৯, শাওয়াল ১ হিজরী, মৃত্যুসন- ৫৭ হি.; দাফন- মদীনা; বয়স- ৬৩। দাম্পত্য জীবন-১০ বছর। ইনিই একমাত্র কুমারী স্ত্রী ছিলেন।  নবীপত্নীগণের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বাধিক জ্ঞানী, বুদ্ধিমতী ও হাদীছজ্ঞ মহিলা।

৪. হাফছাহ বিনতে ওমর: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৫, তাঁর বয়স ২২, বিবাহ শা‘বান ৩ হিজরী; মৃত্যুসন-৪১হি.; দাফন- মদীনা; বয়স-৫৯। দাম্পত্য জীবন- ৮ বছর। প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) ছিলেন তাঁর সহোদর ভাই।

৫. যয়নব বিনতে খুযায়মা: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৫; তাঁর বয়স প্রায় ৩০; বিবাহ সন ৩ হিজরী; মৃত্যুসন ৩ হি., বয়স ৩০; দাফন- মদীনা; দাম্পত্য জীবন ২ অথবা ৩ মাস। অধিক দানশীল ও গরীবের দরদী হিসাবে তিনি উম্মুল মাসাকীন’ বা ‘মিসকীনদের মা’ নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি কোন হাদীছ বর্ণনা করেননি।

৬. উম্মে সালামাহ হিন্দ বিনতে আবু উমাইয়াহ : রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৬; তাঁর বয়স ২৬; বিবাহ সন ৪ হি.; মৃত্যুসন ৬০ হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৮০ বছর। দাম্পত্য জীবন- ৭ বছর। স্ত্রীদের মধ্যে তিনি সবশেষে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর দূরদর্শিতাপূর্ণ পরামর্শ হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে খুবই ফলপ্রসু প্রমাণিত হয় (বুখারী হা/২৭৩২)। তাঁর বর্ণিত হাদীছের সংখ্যা ৩৭৮।

৭. যয়নব বিনতে জাহশ: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৭; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ সন ৫হি. মৃত্যুসন ২০হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৫১ বছর। দাম্পত্য জীবন- ৬ বছর। রাসুল (সা.)এর ফুফাতো বোন ছিলেন। তিনি মোট ১১টি হাদীছ বর্ণনা করেন।

৮. জুওয়াইরিয়া বিনতুল হারেছ : রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৭; তাঁর বয়স ২০; বিবাহ শা‘বান ৫হি.; মৃত্যু সন ৫৬হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৭১। দাম্পত্য জীবন- ৬ বছর। ৫ম হিজরীতে বনু মুছত্বালিক্ব যুদ্ধে বন্দী হয়ে রাসুল (সা.)-এর সাথে বিবাহিতা হন। তিনি মোট ৭টি হাদীছ বর্ণনা করেন। তন্মধ্যে বুখারী ২টি, মুসলিম ২টি। বাকী ৩টি অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে।

৯. উম্মে হাবীবাহ রামলাহ বিনতে আবু সুফিয়ান : রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৮; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ মুহাররম ৭হি.; মৃত্যু সন- ৪৪হি.; দাফন- মদীনা; বয়স ৭২। দাম্পত্য জীবন- ৪ বছর। কুরায়েশ নেতা আবু সুফিয়ানের কন্যা ছিলেন। তিনি ৬৫টি হাদীছ বর্ণনা করেন।

১০. ছাফিইয়াহ বিনতে হুয়াই বিন আখত্বাব: রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৯; তাঁর বয়স ১৭; বিবাহ ছফর ৭হি.; মৃত্যুর সন ৫০ হি.; বয়স ৬০; দাফন- মদীনা; দাম্পত্য জীবন- ৪ বছর।  খায়বর যুদ্ধে বন্দী হওয়ার পরে ইসলাম কবুল করে রাসুল (সা.)-এর সাথে বিবাহিতা হন। রাসুল (সা.) এর স্ত্রীদের মধ্যে ইনিই ছিলেন একমাত্র ইহূদী কন্যা।

১১. মায়মূনা বিনতুল হারেছ : রাসুল (সা.)-এর বয়স ৫৯; তাঁর বয়স ৩৬; বিবাহ যুলক্বা‘দাহ ৭ হি.; মৃত্যুর সন ৫১ হি.; দাফন মক্কার নিকটবর্তী ‘সারিফে’; বয়স ৮০। দাম্পত্য জীবন- সোয়া তিন বছর। ইনি উম্মুল মুমিনীন হযরত যয়নবের সহোদর বৈপিত্রেয় বোন ছিলেন। এটিই ছিল রাসুল (সা.)-এর সর্বশেষ বিবাহ। তিনি মোট ৭৬টি হাদীছ বর্ণনা করেন। (সংগৃহীত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...