আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
22 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
পালক সন্তান সম্পর্কিত প্রশ্ন:
আসসালামু আলাইকুম

আমি একজন ২৩ বছর বয়সী মেয়ে।

আমি আমার বাবা মায়ের পালক কন্যা। এবং এটা আমি জানি বড় হওয়ার পর। আসে পাশের মানুষ থেকে। আমার কাগজ কলম সব জায়গায় তাদের নাম।
আমি তাদের এটা কিছুদিন আগে জিজ্ঞাসা করছি কে আমার আসল বাবা মা। কি তাদের পরিচয়। তারা জানে না। তারা নাকি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এবং আমাকে তাদের কাছে এনেছে ১৫/২০ দিন বয়সে।

এখন আমার প্রশ্ন আমি তো কাগজে কলমে আমার পালক বাবা মায়ের সন্তান। বাইরে মানুষ জানে আমি তাদের পালক সন্তান।

আমার বিয়ের সময় আমাকে কার কন্যা হিসেবে সম্বোধন করবে যেহেতু বাবার নাম জানা নেই।

এর আগে এই বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উত্তর হয়েছে কিন্তু সেখানে আমার এই প্রশ্নের উত্তর নেই। আমি বড় হওয়ার পর জেনেছি।

যেহেতু আসল বাবা মায়ের পরিচয় কারোই জানা নেই সেহেতু আইডি কার্ড পরিবর্তন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি। কি করলে আমার গুনাহ হবে না। আর আমার পালক  বাবা মায়ের গুনাহ মাফ হবে?

1 Answer

0 votes
by (604,290 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

সন্তান দত্তক নেওয়া মানে কোনো সন্তানের লালন-পালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা, অভিবাবকত্ব গ্রহণ করা ও জিম্মাদারি নেওয়া।তা ইসলামে সমর্থিত একটি বিষয়।

ইসলামে অন্য কারো সন্তান লালন-পালন ও তার অভিভাবকত্ব নেওয়ার অনুমতি রয়েছে। যদি কোনো এতিম, গৃহহীন বা অবহেলিত শিশুকে নিজের সন্তানের ন্যায় অন্ন-বস্ত্র ও সব ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমে লালন-পালন করে অথবা নিঃসন্তান দম্পতি কোনো শিশুকে স্নেহ করে লালন-পালন করে তাকে স্বেচ্ছায় কিছু দান করে, তাহলে শরিয়তে তা নিষিদ্ধ নয়। এতিম-অনাথ ও গরিব শিশুর অভিভাবকত্ব নিয়ে তার দেখাশোনার দায়িত্ব গ্রহণ করে তাকে যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাকে ইসলাম উত্সাহিত করে। ইসলাম এ ধরনের কাজকে অনেক বেশি সওয়াবের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। 

হাদীস শরীফে এসেছে
নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমি ও এতিমের অভিভাবক জান্নাতে দুই আঙুলের ন্যায় অতি কাছাকাছি থাকব।’ (বুখারি : ৬০০৫)
নবী করিম (সা.) আরো ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি এতিমের খোরপোশ ও লালন-পালনের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাত দান করবেন।’ (তিরমিজি : ১৯১৭)

পালিত সন্তান কখনো নিজ সন্তান হবে না, পালিত সন্তান ওরাছতের মালিক ও হবে না।
সুতরাং পালিত মেয়ে সন্তান উক্ত ব্যক্তির গায়রে মাহরাম থাকবে।যাকে উক্ত ব্যক্তি প্রয়োজনে বিবাহ ও করতে পারবে।ঠিকতেমনিভাবে পালিত পুত্র সন্তান উক্ত ব্যক্তির স্ত্রী বা মেয়ের গায়রে মাহরাম।যাদের মধ্যকার বিবাহ বৈধ।সুতরাংতাদের মধ্যকার শরয়ী পর্দার বিধান আপতিত হবে।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

বাচ্চা দত্তক নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু মাসয়ালা লক্ষ্য রাখতে হবে,তাহা হলোঃ-
 
★পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা অবৈধ।
দত্তক নেওয়ার সময় স্মরণ রাখতে হবে, চুক্তিপত্রে সই করে সন্তানের পিতৃপরিচয়স্বত্ব ত্যাগ করে এমনভাবে দেওয়া যাবে না যে মা-বাবা আর কখনো ওই শিশুর মা-বাবা হিসেবে পরিচয় প্রকাশ করতে পারবে না। ইসলাম এ কাজ কখনো সমর্থন করে না। কেননা ইসলাম সওয়াবের নিয়তে অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে বলেছে, কিন্তু সন্তান দখল করা কিংবা তার প্রকৃত পরিচয় বিলুপ্ত করার অনুমতি দেয়নি। অনেক সময় দেখা যায়, টাকার বিনিময়ে গরিব মা-বাবা সন্তান দত্তক দেন। এটাকে এক ধরনের সন্তান বেচাকেনাও বলা যেতে পারে। এটি কেবল অমানবিকই নয়, ঘৃণ্যও বটে। ইসলামে এ ধরনের স্বাধীন মানুষ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ হারাম। 
,
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিপক্ষ হব—এক. ওই ব্যক্তি, যে কোনো কাজে আমার নামে কারো সঙ্গে কসম করার পর তা ভঙ্গ করেছে। দুই. যে ব্যক্তি কোনো স্বাধীন মানুষ বিক্রি করে সম্পদ অর্জন করেছে। তিন. আর যে ব্যক্তি কোনো লোক দিয়ে কাজ করিয়ে তার বিনিময় দেয়নি।’ (বুখারি : ২২২৭)
,
★লালন-পালনকারীর সঙ্গে পালিত সন্তান পর্দার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি ইসলামের বিধান রক্ষা করে চলতে হবে। নিজ হাতে লালন-পালন করেছি বলে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাত্ পালক নেওয়া শিশুটি ছেলে হলে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে পালক নেওয়া মায়ের সঙ্গে পর্দা করতে হবে। অন্যদিকে পালক নেওয়া শিশুটি মেয়ে হলে তাকে পালক নেওয়া বাবার সঙ্গে পর্দা রক্ষা করে চলতে হবে। কেননা ইসলামী শরিয়ত মতে, দত্তকসংক্রান্ত সম্পর্ক কখনো বংশীয় সম্পর্কে পরিণত হয় না। এমনকি তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কও অন্য সাধারণ মানুষের ন্যায়ই বৈধ। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। (তুহফাতুল ফুকাহা : ২/১২৩)

বিস্তারিত জানুনঃ   

কোনো ব্যাক্তি শরীয়তের নিয়ম কানুন মেনে কাউকে দত্তক নিতে চাইলে নিতে পারে।

তবে সমাজে,জন্ম সনদে,ভোটার আইডি কার্ড সহ যাবতীয় কার্যক্রমে বাচ্চার পিতৃপরিচয় ছিন্ন করা যাবেনা।
তার আসল পিতৃপরিচয় দিতে হবে।
তার আসল পিতৃপরিচয় দিয়েই সমাজে তাকে পরিচিত করে তুলতে হবে।

তার সামনে পর্দার ক্ষেত্রেও পুরোপুরি ইসলামের বিধান রক্ষা করে চলতে হবে।
সে আপনাদের গায়রে মাহরাম, তাই সে বালেগ হয়ে গেলে তার সামনে পূর্ণ পর্দার বিধান রক্ষা করে চলতে হবে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনি নিজের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন নিজের আসল বাবা-মার পরিচয় জানার জন্য। এরপর জন্ম সনদ,ভোটার আইডি কার্ড সহ যাবতীয় কাগজপত্র ঠিক করে নিবেন।

আপনি যথাসম্ভব চেষ্টা করেও বিষয়টি যদি জানতে না পারেন, সেক্ষেত্রে আপনার বাবা-মার স্থলে পালক বাবা-মার নাম দেওয়াতে আপনার গুনাহ হবেনা।

আর এর দরুণ বিবাহের ক্ষেত্রে আপনার সমস্যা হবে না, এভাবে পালক বাবার নাম দেয়ার পরেও আপনার বিবাহ বৈধ হয়ে যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...