আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
24 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওস্তাদ একটা প্রশ্ন ছিল হায়াত এবং মৃত্যু এই দুইটা কি লিপিবদ্ধ নাকি কোন কারনে পরিবর্তন করা হয় যেমন অনেক সময় অনেকে বদদোয়া করে কিংবা অনেকের মৃত্যু কামনা করে তাহলে কি সে মারা যাবে। যেমন এক আত্মীয়কে দেখেছি তার নিজের সন্তানের জন্যই অনেক সময় এরকম কথা বলে যে তুই মরছ‌ন না কেন। তাহলে কি সে মারা যাবে। কারণ দোয়া করো নাকি ভাগ্য পরিবর্তন হয় উত্তরটা আশা করি দিবেন ওস্তাদ

1 Answer

0 votes
by (607,050 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

أَبُو الْوَلِيدِ هِشَامُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ أَنْبَأَنِي سُلَيْمَانُ الأَعْمَشُ قَالَ سَمِعْتُ زَيْدَ بْنَ وَهْبٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ قَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا ثُمَّ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ يَبْعَثُ اللهُ مَلَكًا فَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعٍ بِرِزْقِهِ وَأَجَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ فَوَاللهِ إِنَّ أَحَدَكُمْ أَوْ الرَّجُلَ يَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ بَاعٍ أَوْ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا غَيْرُ ذِرَاعٍ أَوْ ذِرَاعَيْنِ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا قَالَ آدَمُ إِلاَّ ذِرَاعٌ

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী স্বীকৃত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (শুক্র হিসেবে) জমা থাকে। তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন রক্তপিন্ড, তারপর ঐরকম চল্লিশ দিন মাংস পিন্ডাকারে থাকে। তারপর আল্লাহ্ একজন ফেরেশতা পাঠান এবং তাকে রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য- এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর কসম! তোমাদের মাঝে যে কেউ অথবা বলেছেন, কোন ব্যক্তি জাহান্নামীদের ’আমল করতে থাকে। এমনকি তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র একহাত বা এক গজের তফাৎ থাকে।

এমন সময় তাক্দীর তার ওপর প্রাধান্য লাভ করে আর তখন সে জান্নাতীদের ’আমল করা শুরু করে দেয়। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে। আর এক ব্যক্তি জান্নাতীদের ’আমল করতে থাকে। এমন কি তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত বা দু’হাত তফাৎ থাকে। এমন সময় তাক্দীর তার উপর প্রাধান্য লাভ করে আর অমনি সে জাহান্নামীদের ’আমল শুরু করে দেয়। ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবূ ’আবদুল্লাহ্ [বুখারী (রহ.)] বলেন যে, আদম তার বর্ণনায় কেবল ذِرَاعٌ (এক গজ) বলেছেন।
(বুখারী [৩২০৮] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬১৩৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬১৪২)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আল্লাহ তাআলা তাকদীরে যার মৃত্যু যখন লিখে রেখেছেন, যার হায়াত যত বছর লিখে রেখেছেন সে তত বছরই হায়াত পাবে। তার মৃত্যু তখনই হবে।

তার আগেও না তার পরেও না। কোন দোয়ার কারণে তার হায়াত বৃদ্ধি পাবে না, অন্য কোন কারণে তার হাত কমবেও না, তার হায়াত নির্দিষ্ট সেই সময় পর্যন্তই হবে।

কিছু হাদীসে যে বয়স বৃদ্ধির কথা এসেছে,যেমন তিনি বলেন,

صِلَةُ الرَّحِمِ تَزِيدُ فِي الْعُمُرِ

‘‘আত্মীয়দের সাথে সদ্ব্যবহার বয়স বাড়িয়ে দেয়’’। অর্থাৎ আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা বয়স বৃদ্ধির উপায়।

এর ব্যখ্যাঃ- 

আল্লাহ তা‘আলা আগেই জানতে পেরেছেন এবং নির্ধারণ করেছেন যে, এ ব্যক্তি তার আত্মীয়ের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। এ কারণে সে এ সময়সীমা পর্যন্ত হায়াত পাবে। এ আমলটি না করলে, সে এ সময়সীমা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা জেনেছেন যে, সে এ আমলটি করবেই। তাই তিনি উহাকে তার জন্য নির্ধারণ করেছেন। এমনি তিনি আগে থেকেই জানতে পেরেছেন যে, অমুক ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করবেই। সুতরাং এ কারণে সে এ বয়োসীমা পর্যন্ত অর্থাৎ কম বাঁচবে। 

বয়স বাড়া বা কমার ক্ষেত্রে দু‘আর প্রভাব পড়ে না। কেননা নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মে হাবীবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন, ‘‘তুমি কেবল আল্লাহর কাছে নির্ধারিত সময়সীমাই প্রার্থনা করেছো’’। 

মূলত সকল সৃষ্টির বয়স পূর্বেই নির্ধারিত হয়ে গেছে।

সুতরাং উহা পরিবর্তনের জন্য দু‘আ করাকে কেহ কেহ নাজায়েজ বলেন। 

তবে জাহান্নামের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার দু‘আ করার কথা ভিন্ন।

এ জন্য যে, দু‘আ করা শরীয়াত সম্মত একটি উত্তম আমল। এটি উপকারীও বটে।

মুহাক্কীক উলামায়ে কেরামগন বলেন,
বয়স বৃদ্ধির দু‘আর মধ্যে যদি আখেরাতের কল্যাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাহলে বয়স বৃদ্ধির দু‘আ করা জায়েয আছে। 

যেমন নাসায়ী শরীফে আম্মার বিন ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«اللَّهُمَّ بِعِلْمِكَ الْغَيْبَ وَقُدْرَتِكَ عَلَى الْخَلْقِ، أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي»

‘‘হে আল্লাহ! অদৃশ্যের প্রতি তোমার ইলমের উসীলায় এবং সৃষ্টির উপর তোমার ক্ষমতার উসীলায় আমি তোমার কাছে এ প্রার্থনা করছি যে, বেঁচে থাকা আমার জন্য যতদিন কল্যাণকর হয়, ততদিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখো এবং মৃত্যু বরণ করা যখন আমার জন্য উপকারী হবে, তখনই আমাকে মৃত্যু দান করো’’। এভাবে দু‘আটি শেষ পর্যন্ত।
(নাসায়ী ১৩০৬)

ছাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম হাকেম তার ছহীহ গ্রন্থে এ মর্মে যে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন তা উপরোক্ত বর্ণনাকে সমর্থন করে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

«لَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ، وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلَّا الْبِرُّ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ»

‘‘দু‘আই কেবল তাকদীরের অকল্যাণকে প্রতিহত করতে পারে এবং সৎকাজ ছাড়া অন্য কিছুই বয়স বাড়াতে পারে না। আর মানুষ স্বীয় পাপের কারণে তার রিযিক থেকে মাহরুম হয়’’।

আর আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী:

وَمَا يُعَمَّرُ مِن مُّعَمَّرٍ وَلَا يُنقَصُ مِنْ عُمُرِهِ إِلَّا فِي كِتَابٍ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسِيرٌ

‘‘কোনো আয়ু লাভকারী আয়ু লাভ করলে এবং তার আয়ু থেকে কিছু কম করা হলে তা অবশ্যই একটি কিতাবে লিখা থাকে। আল্লাহর জন্য এসব একদম সহজ’’। (সূরা ফাতির: ১১)

এখানে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: من عمره এর যমীর বা সর্বনামের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, এটি হলো আরবদের এ কথার মতই عندي درهم ونصفه ‘‘আমার কাছে এক দিরহাম এবং তার অর্ধেক আছে। অর্থাৎ আরেক দিরহামের অর্ধেক আছে। সুতরাং আয়াতের অর্থ হবে যে, কোনো আয়ু লাভকারীর আয়ু বাড়ানো হলে এবং অন্য কারো আয়ু কমানো হলে, অবশ্যই তা কিতাবে লিখা থাকে।

কেউ কেউ বলেছেন, বয়স বাড়ানো বা কমানো ঐ কিতাবে হয়ে থাকে, যা ফেরেশতাদের হাতে রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ

‘‘প্রত্যেক বিষয়ের জন্য একটি লিখিত কিতাব (সময়সীমা) রয়েছে। আল্লাহ যা চান নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং যা চান কায়েম রাখেন। উম্মুল কিতাব তার কাছেই রয়েছে’’। (সূরা রা’দ: ৩৮-৩৯)

এখানে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া এবং বহাল রাখার যে কথা বলা হয়েছে, তা কেবল ঐ কিতাবসমূহের মধ্যেই হয়ে থাকে, যা রয়েছে ফেরেশতাদের হাতে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ

‘‘উম্মুল কিতাব তার কাছেই রয়েছে’’ এর দ্বারা লাওহে মাহফুয উদ্দেশ্য। আয়াতের বর্ণনা প্রসঙ্গ এ কথাই প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ

‘‘প্রত্যেক বিষয়ের জন্য একটি লিখিত কিতাব (সময়সীমা) রয়েছে’’। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ

‘‘আল্লাহ যা চান নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং যা চান কায়েম রাখেন’’। অর্থাৎ সে কিতাব থেকে যা ইচ্ছা তিনি মিটিয়ে দেন এবং যা ইচ্ছা বহাল রাখেন। আর মূল কিতাব তার নিকটেই রয়েছে। আর সেটি হলো লাওহে মাহফুয।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...