আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
28 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
আসসালামু আ'লাইকুম৷
আমার দুইটা প্রশ্ন।
আমাদের বাসায় একটা বিড়ালের বাচ্চা এসেছিল। আমার বোন ওটাকে খাবার দিত যত্ন করত ঘরে রাখত, আমার বোন চলে যাওয়ায় তাকে আর ঘরে ঢুকতে দেইনি। শুধু তিনবেলা খাবার দিতাম আর বের করে দিতাম, পরে একদিন কই থেকে যেন মার খেয়ে পা ভেঙে এসেছিল, পরে খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেয়। আমাদের এলাকায় ভালো ডাক্তার নাই আব্বুকে বললে অত গুরুত্ব দেয়নি, বলে ডাক্তার ফোন ধরেনা। যেহেতু আমি বাসায় থাকি পড়াশোনা শেষ তাই বিড়ালটাকে আমার জন্য একটা পরীক্ষা ধরে নিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম বাসা থেকে ১ ঘন্টা দূরে পশু ক্লিনিকে নিব৷ আলসেমি করে নিইনি৷ তখন আবার ধর্ষণের ঘটনা হচ্ছিল নিরাপত্তা শংকা ছিল, একা মেয়েমানুষ যাব(এটা অজুহাতের মত লাগে) এটা ভয় লাগত। ওইদিন আবার সে সুস্থ হয়ে যায় পরে কয়েক সপ্তাহ ভালো থাকলেও আবার মার খায় আরেকটা বড় বিড়ালের হাতে৷ এরপরে আবার অসুস্থ হয়, গায়ে পুঁজ জমে যায় মাছি বসে। সে সবসময় মাছ মাংস ভাত খেলেও অসুস্থ হলে শুধু মাংস খেত। বাসায় আম্মা না থাকায় সবসময় মাংস বা আস্ত মাছ দিতে পারিনি, যা থাকত তাই দিতাম৷ মাঝে একবার দুইদিন না খেয়ে ছিল৷ কালকে সে মরে গেছে।
এখন আমি কি এই পরীক্ষায় ফেল করেছি? আমি চাইলে পরেও ব্যাগে করে ডাক্তারের কাছে নেয়া যেত, আলাদা রান্না করে খাওয়ানো যেত। বিড়াল দেখে গুরুত্ব দেইনি৷ আমার তো বিশাল কোনো দায়িত্ব ছিলনা ফিলিস্তিনিদের মত জীবনের শংকাও ছিলনা যে বিড়ালকে দেখে রাখতে পারবনা, শুধু আব্বু আর আমি দুইটা প্রাণী। আল্লাহ কি মাফ করবেন?
দুই নম্বর প্রশ্ন- প্রাণীগুলোর সাফারিংকে ইসলাম কীভাবে ব্যাখ্যা করে? আমরা নাহয় কষ্ট পেলে ইমান থাকলে তার বিনিময়ে গুনাহ মাফ হয় নাহলে পরীক্ষা। প্রাণীদের তো অনন্তজীবন নাই। এদের যদিও কষ্ট বোঝার ক্ষমতা কম৷ কিন্তু এমন কি হতে পারে আমরা যতটুক দেখি ততটুক তারা আসলে কষ্ট পায়না? পা পেলেও ওগুলোর জন্যে তারা কিয়ামতে ধূলা হয়ে যাওয়ার আগে প্রতিদান পাবে? এটা জানি যে এক প্রাণী অন্য প্রাণীর উপরে অন্যায় করলে ওটা মিমাংস হবে কিয়ামতে৷ কিন্তু প্রাকৃতিক কষ্টগুলোর কী ব্যাখ্যা? কোনো কথা কি আছে ইসলামে এটা নিয়ে?
by (10 points)
বিড়ালটা রুমে পেশাব করে দিত এজন্য ঘরে ঢুকতে দিতামনা৷ বড় বিড়ালটা বেশ কয়েকবার এটাকে মেরেছে, একবার মার খেয়েও পেশাব করে দিয়েছিল

1 Answer

0 votes
by (70,170 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ

**কুকুর নাপাক প্রাণী হলেও দূরত্ব বজায় রেখে তার প্রতি দয়া করা নিষিদ্ধ নয়। ক্ষুধার্ত কুকুরকে খাওয়ানো নিন্দনীয় নয়। হাদিসে এসেছে, কুকুরকে পানি পান করিয়ে এক ব্যভিচারী নারী ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)

আবার বিড়ালকে আটকে রেখে খাবার না দিয়ে শাস্তি দেওয়ার কারণে এক নারীকে আজাব দেওয়া হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮২)

অনেক সাহাবি বিড়াল পালতেন বলে বর্ণিত রয়েছে। শর্ত হলো বিড়ালের যথাযথ যত্ন নিতে হবে, খাবার দিতে হবে। অনাহারে রাখা যাবে না। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلاَ سَقَتْهَا، إِذْ حَبَسَتْهَا، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ.

জনৈক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে বিড়ালটি বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় সেটি মারা যায়। সে এটি বন্দি করে রেখে পানাহার করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি যেন সে নিজে জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে। (সহিহ বোখারি: ৩৪৮২)

এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেঁধে রাখা জায়েজ বলে প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খাবার-পানি দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। (ফাতহুল বারি: ৬/৪১২)

তবে বিড়াল পোষা সুন্নত নয়। অনেকে বিড়াল পোষাকে সুন্নত মনে করেন -এটা ঠিক নয়। নবিজি (সা.) বিড়াল পুষেছেন এ রকম গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। যদিও নবিজির (সা.) ঘরে মাঝে মাঝে বিড়াল আসতো এবং তিনি বিড়াল কাছে এলে তাড়িয়ে দিতেন না তা বোঝা যায় বিভিন্ন বর্ণনা থেকে।

হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন, একবার নবিজি মদিনার বাতহান নামক স্থানে গেলেন, তখন তিনি আমাকে অজুর পানি এনে দিতে বললেন। আমি অজুর পানি এনে দিলাম। নবিজি (সা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে যখন অজু করার জন্য পানির পাত্রটি নিতে যাচ্ছিলেন, তখন একটি বিড়াল এসে পানির পাত্রে মুখ দিয়ে পানি খেতে লাগলো।

নবিজি (সা.) বিড়ালটির পানি খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। আমি প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, বিড়াল ঘরের প্রাণী। বিড়াল মুখ দেওয়ার কারণে পানি নোংরা বা নাপাক হয় না। (নাসবুর রায়াহ)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّمَا هِيَ مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ

বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে।

আয়েশা (রা.) আরও বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে অজু করতে দেখেছি। (সুনানে আবু দাউদ: ৭৬)

এ দুটি বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি সাধারণ অবস্থায় নাপাক নয়। তবে বিড়ালের মুখে কোনো নাপাকি লেগে থাকলে বিড়ালের মুখ দেওয়া পানি নাপাক হবে।

** ইসলামে সব ধরনের প্রাণীর প্রতি সদাচারের নির্দেশনা রয়েছে। প্রাণীদের নানা সেবার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার রয়েছে এবং তা থেকে তোমরা আহার করে থাকো। তোমরা যখন তাদের সন্ধ্যাবেলা চারণভূমি থেকে গৃহে নিয়ে আসো এবং সকালবেলা তাদের চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করো। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেখানে তোমরা অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া পৌঁছা সম্ভব নয়। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫-৭)

প্রাণীদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। শুধু মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে বিষয়টি মোটেও এমন নয়; বরং পশু-পাখি ও জীব-জন্তুসহ সব প্রাণীর প্রতি সদাচার করা উচিত। সাহল ইবনুল হানজালিয়া (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রাসুল (সা.) এমন একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন; অনাহারে উটটির পেট পিঠের সঙ্গে লেগেছিল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা এসব বাকশক্তিহীন পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।

সুস্থ সবল পশুর পিঠে আরোহণ করবে এবং এদের উত্তমরূপে আহার করাবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)

হাদিসে পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে ক্ষমা লাভের কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘এক ব্যক্তি হাঁটছিল। পথিমধ্যে সে পিপাসার্ত হয়ে একটি কূপে নামে।

পানি পান করে সেখান থেকে বের হয়। এমন সময় সে দেখে, একটি কুকুর পিপাসায় অতিষ্ঠ হয়ে হাঁপাচ্ছে এবং মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে ভাবছিল, একটু আগে আমার যে অবস্থা ছিল এরও তেমনি হয়েছে। অতঃপর লোকটি কূপে নেমে মোজা পানি দিয়ে ভর্তি করে এবং তা মুখ দিয়ে আঁকড়ে ধরে ওপরে ওঠে আসে। এরপর পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করায়।

মহান আল্লাহ তার এই কাজ কবুল করেন এবং তার গুনাহ ক্ষমা করেন। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, চতুষ্পদ জন্তুর উপকারের জন্য কি আমরা প্রতিদান পাব?  তিনি বলেন, ‘সব প্রাণীর উপকার করলে প্রতিদান রয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)

আরেক হাদিসে ব্যভিচারী নারীর ক্ষমা লাভের কথাও এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তখন প্রচণ্ড গরমের দিন ছিল। এমন সময় একটি কূপের আশপাশে এক ব্যভিচারী নারী একটি কুকুরকে ঘুরতে দেখে। কুকুরটি পিপাসায় কাতর হয়ে হাঁপাচ্ছিল। অতঃপর সেই নারী (মোজা দিয়ে কূপ থেকে পানি তুলে) কুকুরকে পানি পান করায়। অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল স্থানে ভ্রমণ করবে তখন উটকেও এর অংশ দাও। অর্থাৎ তাকে সেই স্থানে কিছুক্ষণ চরতে দাও। আর শুষ্ক স্থানে সফর করলে দ্রুত চলো এবং এর শক্তি শেষ হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাও। তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোনো স্থানে অবতরণ করলে সাধারণ রাস্তা পরিহার কোরো। কারণ রাতে তা জীব-জন্তুর চলার পথ এবং পোকামাকড়ের আশ্রয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৫)

যেকোনো প্রাণী বেঁধে রেখে খাবার না দেওয়া গুরুতর পাপ। এক নারী এমন কাজ করে জাহান্নামি হয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক নারীকে বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালকে বেঁধে রাখলে তা মারা যায়। ফলে বিড়ালের কারণে সেই নারী জাহান্নামে প্রবেশ করে। সে বিড়ালকে বেঁধে রেখে কোনো খাবার ও পানীয় দিত না। আবার জমিনের কীট-পতঙ্গ খাওয়ার জন্য বিড়ালকে ছেড়েও দেয়নি। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮২)

 প্রশ্নকারী সম্মানিত দ্বীনি ভাই/ বোন!

১. যেহেতু আপনি বিড়ালটি মারেননি বিধায় আপনার গুনাহ হবে না বলে আশা করা যায়। তবে সতর্কতামূলক ভাবে আপনার জন্য তাওবা করা উচিত। আগামীতে আপনার মাধ্যমে যেন কোন প্রাণীর প্রতি জুলুম না হয় সেবিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

২. এই বিষয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...