ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ
**কুকুর নাপাক প্রাণী হলেও দূরত্ব বজায় রেখে
তার প্রতি দয়া করা নিষিদ্ধ নয়। ক্ষুধার্ত কুকুরকে খাওয়ানো নিন্দনীয় নয়। হাদিসে এসেছে,
কুকুরকে পানি পান করিয়ে এক ব্যভিচারী নারী ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)
আবার বিড়ালকে আটকে রেখে খাবার না দিয়ে শাস্তি
দেওয়ার কারণে এক নারীকে আজাব দেওয়া হয়েছে। (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮২)
অনেক সাহাবি বিড়াল পালতেন বলে বর্ণিত রয়েছে।
শর্ত হলো বিড়ালের যথাযথ যত্ন নিতে হবে, খাবার দিতে হবে। অনাহারে রাখা যাবে না। আবু
হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
বলেছেন,
عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ، فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ، لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَلاَ سَقَتْهَا، إِذْ حَبَسَتْهَا، وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ.
জনৈক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া
হয়েছে। সে বিড়ালটি বন্দি করে রাখে, এ অবস্থায় সেটি মারা যায়। সে এটি বন্দি করে রেখে
পানাহার করায়নি এবং তাকে ছেড়েও দেয়নি যেন সে নিজে জমিনের পোকা-মাকড় খেতে পারে। (সহিহ
বোখারি: ৩৪৮২)
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.)
বলেন, কুরতুবি (রহ.) বলেছেন, এ হাদিস থেকে বিড়াল পালা ও বিড়ালকে বেঁধে রাখা জায়েজ বলে
প্রমাণিত হয়, যদি তাকে খাবার-পানি দেওয়ার ব্যাপারে ত্রুটি না করা হয়। (ফাতহুল বারি:
৬/৪১২)
তবে বিড়াল পোষা সুন্নত নয়। অনেকে বিড়াল পোষাকে
সুন্নত মনে করেন -এটা ঠিক নয়। নবিজি (সা.) বিড়াল পুষেছেন এ রকম গ্রহণযোগ্য কোনো বর্ণনা
পাওয়া যায় না। যদিও নবিজির (সা.) ঘরে মাঝে মাঝে বিড়াল আসতো এবং তিনি বিড়াল কাছে এলে
তাড়িয়ে দিতেন না তা বোঝা যায় বিভিন্ন বর্ণনা থেকে।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি
বলেন, একবার নবিজি মদিনার বাতহান নামক স্থানে গেলেন, তখন তিনি আমাকে অজুর পানি এনে
দিতে বললেন। আমি অজুর পানি এনে দিলাম। নবিজি (সা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজন সেরে এসে যখন
অজু করার জন্য পানির পাত্রটি নিতে যাচ্ছিলেন, তখন একটি বিড়াল এসে পানির পাত্রে মুখ
দিয়ে পানি খেতে লাগলো।
নবিজি (সা.) বিড়ালটির পানি খাওয়া শেষ হওয়ার
জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। আমি প্রশ্ন করলে তিনি বললেন, বিড়াল ঘরের প্রাণী। বিড়াল
মুখ দেওয়ার কারণে পানি নোংরা বা নাপাক হয় না। (নাসবুর রায়াহ)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত রয়েছে, আল্লাহর
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّهَا لَيْسَتْ بِنَجَسٍ إِنَّمَا هِيَ مِنَ الطَّوَّافِينَ عَلَيْكُمْ
বিড়াল অপবিত্র নয়। এরা তোমাদের আশেপাশেই
ঘোরাফেরা করে।
আয়েশা (রা.) আরও বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দিয়ে অজু করতে দেখেছি। (সুনানে
আবু দাউদ: ৭৬)
এ দুটি বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, বিড়ালের মুখ
দেওয়া পানি সাধারণ অবস্থায় নাপাক নয়। তবে বিড়ালের মুখে কোনো নাপাকি লেগে থাকলে বিড়ালের
মুখ দেওয়া পানি নাপাক হবে।
** ইসলামে সব ধরনের প্রাণীর প্রতি সদাচারের
নির্দেশনা রয়েছে। প্রাণীদের নানা সেবার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘তিনি চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, তোমাদের জন্য তাতে শীত নিবারক উপকরণ ও বহু উপকার
রয়েছে এবং তা থেকে তোমরা আহার করে থাকো। তোমরা যখন তাদের সন্ধ্যাবেলা চারণভূমি থেকে
গৃহে নিয়ে আসো এবং সকালবেলা তাদের চারণভূমিতে নিয়ে যাও তখন তোমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ
করো। তারা তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় এমন দেশে, যেখানে তোমরা অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া
পৌঁছা সম্ভব নয়। ’ (সুরা নাহল, আয়াত : ৫-৭)
প্রাণীদের অহেতুক কষ্ট দেওয়া অত্যন্ত গর্হিত
কাজ। শুধু মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করতে হবে বিষয়টি মোটেও এমন নয়; বরং পশু-পাখি ও
জীব-জন্তুসহ সব প্রাণীর প্রতি সদাচার করা উচিত। সাহল ইবনুল হানজালিয়া (রা.) বর্ণনা
করেন, একদা রাসুল (সা.) এমন একটি উটের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন; অনাহারে উটটির পেট পিঠের
সঙ্গে লেগেছিল। তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমরা এসব বাকশক্তিহীন পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে
ভয় করো।
সুস্থ সবল পশুর পিঠে আরোহণ করবে এবং এদের
উত্তমরূপে আহার করাবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৪৮)
হাদিসে পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে
ক্ষমা লাভের কথা বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন,
‘এক ব্যক্তি হাঁটছিল। পথিমধ্যে সে পিপাসার্ত হয়ে একটি কূপে নামে।
পানি পান করে সেখান থেকে বের হয়। এমন সময়
সে দেখে, একটি কুকুর পিপাসায় অতিষ্ঠ হয়ে হাঁপাচ্ছে এবং মাটি চাটছে। লোকটি মনে মনে ভাবছিল,
একটু আগে আমার যে অবস্থা ছিল এরও তেমনি হয়েছে। অতঃপর লোকটি কূপে নেমে মোজা পানি দিয়ে
ভর্তি করে এবং তা মুখ দিয়ে আঁকড়ে ধরে ওপরে ওঠে আসে। এরপর পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান
করায়।
মহান আল্লাহ তার এই কাজ কবুল করেন এবং তার
গুনাহ ক্ষমা করেন। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল, চতুষ্পদ জন্তুর উপকারের জন্য কি
আমরা প্রতিদান পাব? তিনি বলেন, ‘সব প্রাণীর
উপকার করলে প্রতিদান রয়েছে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩৬৩)
আরেক হাদিসে ব্যভিচারী নারীর ক্ষমা লাভের
কথাও এসেছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তখন প্রচণ্ড
গরমের দিন ছিল। এমন সময় একটি কূপের আশপাশে এক ব্যভিচারী নারী একটি কুকুরকে ঘুরতে দেখে।
কুকুরটি পিপাসায় কাতর হয়ে হাঁপাচ্ছিল। অতঃপর সেই নারী (মোজা দিয়ে কূপ থেকে পানি তুলে)
কুকুরকে পানি পান করায়। অতঃপর তাকে ক্ষমা করা হয়। (বুখারি, হাদিস : ৩৩২১)
অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে
বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল স্থানে ভ্রমণ করবে তখন উটকেও এর
অংশ দাও। অর্থাৎ তাকে সেই স্থানে কিছুক্ষণ চরতে দাও। আর শুষ্ক স্থানে সফর করলে দ্রুত
চলো এবং এর শক্তি শেষ হওয়ার আগেই গন্তব্যে পৌঁছে যাও। তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোনো
স্থানে অবতরণ করলে সাধারণ রাস্তা পরিহার কোরো। কারণ রাতে তা জীব-জন্তুর চলার পথ এবং
পোকামাকড়ের আশ্রয়ের স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৫২৫)
যেকোনো প্রাণী বেঁধে রেখে খাবার না দেওয়া
গুরুতর পাপ। এক নারী এমন কাজ করে জাহান্নামি হয়েছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ
বিন ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক নারীকে বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া
হয়েছিল। সে বিড়ালকে বেঁধে রাখলে তা মারা যায়। ফলে বিড়ালের কারণে সেই নারী জাহান্নামে
প্রবেশ করে। সে বিড়ালকে বেঁধে রেখে কোনো খাবার ও পানীয় দিত না। আবার জমিনের কীট-পতঙ্গ
খাওয়ার জন্য বিড়ালকে ছেড়েও দেয়নি।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৪৮২)
প্রশ্নকারী সম্মানিত দ্বীনি ভাই/ বোন!
১. যেহেতু আপনি বিড়ালটি মারেননি বিধায় আপনার
গুনাহ হবে না বলে আশা করা যায়। তবে সতর্কতামূলক ভাবে আপনার জন্য তাওবা করা উচিত। আগামীতে
আপনার মাধ্যমে যেন কোন প্রাণীর প্রতি জুলুম না হয় সেবিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
২. এই বিষয়ে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।