ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
জবাব,
بسم الله
الرحمن الرحيم
https://ifatwa.info/35994/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
মহিলাদের ‘হায়েজ’ তথা মাসিক রক্তস্রাবের
ওপর শরয়ি বিধানের ক্ষেত্রে সর্বনিম্নে তিন দিন আর ঊর্ধ্বে ১০ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছে,
أقل الحیض للجاریۃ البکر والثیب
ثلاثۃ أیام ولیالیہا وأکثرہ عشرۃ أیام
রাসুল সাঃ বলেন মহিলাদের হায়েজের সর্বনিম্ন সীমা হলো ৩ দিন ৩ রাত,সর্বোচ্চ সীমা হলো ১০ দিন ১০ রাত।
উল্লিখিত দুই সংখ্যার প্রথমটির কম হলে কিংবা দ্বিতীয়টির
বেশি হলে তখন তা ‘ইস্তিহাজা’ বা রোগ হিসেবে ধর্তব্য হয়। আর দুই স্রাবের মাঝখানে ১৫
দিন পবিত্র থাকা আবশ্যক। কারো যদি স্রাবের নির্দিষ্ট অভ্যাস থাকে, আর সে কোনো মাসে অভ্যাসের বিপরীত ১০ দিনের পরও
রক্ত দেখতে পায়, তাহলে অভ্যাসের ভেতরে আসা রক্তগুলোকে হায়েজ ধরতে
হবে এবং অতিরিক্তগুলোকে ইস্তিহাজা।
অনুরূপ কারো যদি এক হায়েজ শেষ হওয়ার
পর ১৫ দিনের আগেই আবার রক্ত দেখা দেয়, আর এভাবে কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে, তাহলে
তার এই অনিয়ম চালু হওয়ার আগের হায়েজের অভ্যাস হিসাব করে ঠিক তার ১৫ দিন পরেই দ্বিতীয়
হায়েজের সময় শুরু হবে, মাঝে আসা রক্তগুলোকে ইস্তিহাজা ধরতে হবে।
(রদ্দুল মুহতার : ১/২৮৯)
اذا عاودها الدم في العشرة بطل
الحكم بطهارتها مبتدأة كانت او معتادة و كأنها لم تطهر اصلا
হায়েয বন্ধ হওয়ার পর দশ দিনের ভিতর
আবার যদি হায়েয চলে আসে,তাহলে
পূর্বের পবিত্রতার বিধান খতম হয়ে যাবে।চায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ঐ মহিলা প্রথমবার
হোক বা এ ব্যাপারে অভ্যস্ত থাকুক।যেমন ঐ মহিলা পূর্বে পবিত্রই হয়নি। (ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া-১/৪৮৫,
যাকারিয়া)
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
فَإِنْ
لَمْ يُجَاوِزْ الْعَشَرَةَ فَالطُّهْرُ وَالدَّمُ كِلَاهُمَا حَيْضٌ سَوَاءٌ
كَانَتْ مُبْتَدَأَةً أَوْ مُعْتَادَةً
মাঝেমধ্যে হায়েয হওয়া আবার মাঝেমধ্যে
বন্ধ হওয়া, দশ দিনের
ভিতর সবকিছুই হায়েয হিসেবে গণ্য হবে।চায় এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন ঐ মহিলা প্রথমবার
হোক বা এ ব্যাপারে অভ্যস্ত থাকুক।(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/৩৭ কিতাবুল-ফাতাওয়া-২/১০৮ কিতাবুন-নাওয়াযিল-৩/১৭২)
(وأما) صاحبة العادة في الحيض إذا كانت
عادتها عشرة فزاد الدم عليها فالزيادة استحاضة، وإن كانت عادتها خمسة فالزيادة
عليها حيض معها إلى تمام العشرة لما ذكرنافي المبتدأة بالحيض، وإن جاوز العشرة
فعادتها حيض، وما زاد عليها استحاضة
সাহেবে আদত তথা যার হায়েয সারা বৎসর
একি নিয়মে হয়। কোনো সাহেবে আদত মহিলার যদি ১০দিন হায়েয হওয়ার আদত থাকে।কিন্তু এখন যদি
দশকে ছাড়িয়ে যায়,তাহলে
১০ এর অতিরিক্ত দিনগুলোকে ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করা হবে।
আর যদি কোনো সাহেবে আদত মহিলার ৫দিন
হায়েয হওয়ার আদত থাকে।কিন্তু এখন ৫দিন কে ছাড়িয়ে যায়,তাহলে হায়েযের সর্বোচ্ছ মেয়াদ ১০দিন পর্যন্ত
হায়েযই গণ্য হবে।তবে যদি ১০কেও ছাড়িয়ে যায়,তাহলে ৫দিন পর্যন্তই
হায়েয হবে। এবং পাঁচের অতিরিক্ত দিনগুলোকে ইস্তেহাযা হিসেবে গণ্য করা হবে।(বাদায়ে সানায়ে-১/৪১)
★★★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি দশ দিনের অতিরিক্ত যেই রক্ত আসে, তা ইস্তেহাযার রক্ত। সুতরাং গোসল করে ইস্তেহাযা
অবস্থায় নামাজ আদায় করতে হবে। সুতরাং আপনার রেগুলার অভ্যাসের দিনগুলো অথবা নির্দিষ্ট
অভ্যাস না থাকলে দশ দিনের অতিরিক্ত যেই রক্ত আসে, তা ইস্তেহাযার
রক্ত। উক্ত ইস্তেহাযার সময় নামাজ, রোজা, তেলায়াত করতে কোন সমস্যা নেই।
আরো বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: https://ifatwa.info/23542/
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
মেডিকেল সায়েন্স-এর সুবাদে আমরা অনেকেই
জানি, এক ধরনের পিল বা ওষুধ
আছে যা আগেভাগে সেবন করলে নারীদের পিরিয়ড বিলম্বিত করা যায়। এ বিষয়ে বিভিন্ন উলামা
ও ফকিহদের মত হলো, পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করলে, নারীর শরীরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে দূষিত রক্ত
আটকে থাকার কারণে তার লিভার, কিডনি, পিত্তথলি
এবং অন্যান্য কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কিছু সমস্যা তৈরি হয় বা কখনো কখনো দীর্ঘমেয়াদি
শারীরিক সমস্যাও তৈরি হয়। তাই পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত না করাই উত্তম। এক্ষেত্রে
তাদের জন্য আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিয়ে রোজা ছেড়ে দেয়া এবং পরে কাযা আদায় করা ভালো।
এক্ষেত্রে কোনো ঈমানদার ডাক্তার যদি
কোনো নারীকে পরামর্শ দেয় যে, পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত করে রোজা রাখা হলে সমস্যা হবে না, তাহলে সে বিষয়টি আমলে নিয়ে দেখতে পারে। অর্থাৎ এত ভাবে বলার পরও কেউ পিল খেয়ে
পিরিয়ড বিলম্বিত করে রোজা রাখলে তার রোজা আদায় হয়ে যাবে; তবে
তা শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে অপছন্দনীয়।
বেশিরভাগ আলিম ও ফকীহদের মতে, ঋতুবতী মহিলারা পিরিয়ড কালে রমজানের রোজা না
রাখতে পারলেও এর সওয়াব থেকে কোনো অংশেই বঞ্চিত হবে না। কারণ এটা তার শরীয়তের একটি
ওজর ছিল। এটি তার তাকদীরে লিখা ছিল। অতএব এ বিষয়টিতে হা-হুতাশ না করে, তাকদীরের বিরোধিতা করার জন্য চেষ্টা না করে, আল্লাহ যেভাবে
তাকে যে অবস্থায় রেখেছেন, সেটা মেনে নিয়ে, পরে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়াটা সমীচীন বলে মনে করছি।
কারণ প্রাকৃতিকভাবে স্রষ্টা তার উপর
বিষয়টি অর্পণ করেছেন। আর এ অবস্থায় আল্লাহর সিদ্ধান্ত যা, তার উপর ছেড়ে দিয়ে, যে কোনো উপায়ে রোজা না রেখে, পরবর্তীতে কাযা করার জন্য
এগিয়ে গেলে, আল্লাহ তাকে যে আদেশ করেছিলেন সে আদেশটি তিনি পরিপূর্ণভাবে
পালন করছেন- এই সুবাদে আল্লাহ তাকে অনেক সওয়াব এবং বরকত দেবেন।
কাজেই পিল খেয়ে পিরিয়ড বিলম্বিত
করে রোজা না রেখে, বরং আল্লাহর
সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে পুণ্যবতী নারী বা স্ত্রীগণ যদি রোজা ছেড়ে দেয় এবং পরে সুস্থ
ও পবিত্র অবস্থায় রোজাটি কাযা করে নেয়, তাহলে রোজা রাখার যে
সওয়াব প্রথমে ছিল, সেটা তো পাবেই, অতিরিক্ত
আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরো সওয়াব দান করবেন। আল্লাহ আমাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে,
সেভাবে আমল করার তাওফীক দিন। (আংশিক সংগৃহিত)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
প্রশ্নে উল্লেখিত
আপনার পূর্ব অভ্যাস অনুযায়ী উক্ত রক্ত হায়েযের হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব আপনি
তিন দিন অপেক্ষা করার পর যদি কোন রক্ত দেখা না যায় তাহলে পুনরায় রোজা রাখা শুরু
করবেন।