ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
জবাব,
بسم الله
الرحمن الرحيم
দোয়া কবুল
হওয়ার বেশ কিছু শর্ত ও আদব রয়েছে। আপনি যদি নিম্নেলিখিত আদব ও শর্তগুলো মেনে দোয়া
করেন আল্লাহ তায়ালা আপনার দোয়া কবুল করবেন বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ।
https://ifatwa.info/5249/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, দোয়া কবুল হওয়ার বেশ কিছু শর্তসমূহ:-
(০১) খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
“আল্লাহ্ তো কেবল মুত্তাকীদের
থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭]
ইবাদতে ও দুআ
কবুল হওয়ার ব্যাপারে হালাল খাদ্যের অনেক প্রভাব রয়েছে। খাদ্য হালাল না হলে ইবাদত ও
দুআ কবুল হওয়ার যোগ্য হয় না। হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
তরজামা: হে
লোক সকল! আল্লাহ তাআলা হলেন পবিত্র। আর তিনি পবিত্রতা ছাড়া কবুলই করেন না। আল্লাহ তাআলা
মুমিনদেরকে তাই নির্দেশ দিয়েছেন যা রাসূলগণকে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন “হে রাসূলগণ পবিত্র বস্তু আহার করুন
এবং সৎকাজ করুন। আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত”। (সূরা মুমিনুন-৫২)
কোন আমল কবুল হওয়া না হওয়া সংক্রান্ত একটি মৌল কথা:
এ প্রসঙ্গে
যাহেদ আবু আব্দুল্লাহ আননাজী রহ. খুব চমৎকার
মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন-র মারেফাতে বিশ্বাস
স্থাপন করা। ২. হক ও হক্কানিয়াত জানা ও বুঝা। ৩. আমল সযত্নে নিষ্ঠায় একমাত্র আল্লাহ
তাআলার জন্য করা।৪.আমল (মনগড়া পদ্ধতিতে না করে)
সুন্নাত মোতাবেক করা। ৫. আহার্য হালাল হওয়া। যদি এই পাঁচটি বৈশিষ্ট্যর বত্যয়
ঘটে তথা কোন একটি বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত থাকে
তাহলে সে আমল উর্ধ্ব লোকে বিচরণ করবে না। (তথা আল্লাহ তাআলার দরবারে গৃহীত হবে
না)। কারণ-
কেউ আল্লাহ
পাকের মারেফাত লাভ করল অথচ হক ও হক্কানিয়াত চিনল না তা উপকারে আসবে না। আবার কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত
লাভ করল হক -হক্কানিয়াত ও চিনল কিন্তু ইখলাস
ও নিষ্ঠায় সে রিক্ত ও শূণ্য তাহলে তা তার উপকারে আসবে না। কেউ আল্লাহ পাকের মারেফাত
লাভ করল হক -হক্কানিয়াত ও চিনল আবার ইখলাস-
নিষ্ঠায়ও তার কমতি নেয় কিন্তু তার আমলের পদ্ধতিটি সুন্নাহ সম্মত নয় তাহলে এ আমল তার উপকারে
আসবে না। যদি উক্ত চারও বৈশিষ্ট্য পূর্ণ
মাত্রায় পাওয়া যায় অথচ আহার্য হালাল না হয়
তাহলেও এ আমল উপকারে আসবে না। (ইবনে রজব হাম্বলী -জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম,
হাদীস নং ১০.)
(০২) আল্লাহ্
ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে
উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করবে এবং
যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬),
(০৩) দোয়ার
ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে
এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে
যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]
(০৪) দোয়ার
মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না হওয়া; যেমনটি সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয়
যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া
করে।
(০৫) আল্লাহ্র
প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ
তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম
(৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্র
কাছে দোয়া কর।”
(০৬) দোয়াতে
মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর
মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তোমরা জেনে রাখ,
আল্লাহ্ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল
করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯),
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
আবূ হুরাইরাহ
(রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা
নিয়ে আল্লাহ তা'আলার কাছে দুআ কর। তোমরা জেনে রাখ যে, আল্লাহ তা'আলা নিশ্চয় অমনোযোগী ও অসাড় মনের দুআ কবুল করেন
না। (তিরমিজি ৩৩৭৯)
★★এমন কিছু মুহুর্ত আছে,যেই সময়ে দোয়া করলে দোয়া কবুল হওয়া সংক্রান্ত হাদীস
শরীফে এসেছে। তার কিছু এখানে উল্লেখ করছিঃ
(০১) রাতের
শেষভাগে দোয়া করা।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
এটি দোয়া কবুলের
সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ
শোনেন।
আজান ও ইকামতের
মধ্যবর্তী সময়ের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী
সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না।’ (আবু দাউদ)
(০২) জুমআর
দিনের দোয়া
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমআর দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোনো মুমিন আল্লাহর
কাছে কোনো কিছু প্রার্থনা করে, আল্লাহ অবশ্যই সে চাহিদা পুরণ করবেন। (বুখারী)
(০৩) ফরজ নামাজের
পরের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘রাতের শেষ সময় এবং ফরজ
নামাজের পরে দোয়া কবুল হয়।’ (মুসলিম)
(০৪) কদরের
রাতের দোয়া
(০৫) বৃষ্টি
হওয়ার সময়ের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘দুই সময়ের দোয়া ফেরানো
হয় না। আজানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি বর্ষণের সময়ের দোয়া।’ (আবু দাউদ)
(০৬) আরাফাতের
দিনের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘দোয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো
আরাফাতের দিনের দোয়া।’ (তিরমিজি)
(০৭) জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল অন্য যে কোনে দিনের আমলের চেয়ে উত্তম।’ (বুখারি)
রোজাদার ব্যক্তির
ইফতারের সময়ের দোয়ারাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘৩ ব্যক্তির দোয়া কখনো
ফিরিয়ে দেয়া হয় না। যখন রোজাদার ব্যক্তি ইফতার করে। ন্যায় পরায়ন শাসক। নির্যাতিত ব্যক্তির
দোয়া।’ (মুসনাদে আহমাদ, তিরমিজি)
(০৮) ★ইফতারির সময়
দোয়া কবুল হয়
যার সারমর্ম
হলো ইফতারির সময়ে রোযাদারের দোয়া কবুল করা হয়।
তবে দোয়া করার
সময় বেশ কয়েকটি বিষয়ের প্রতি গভীরভাবে খেয়াল রাখা দরকার। এগুলোকে আলেমরা দোয়া কবুলের
শর্ত ও আদব বলে অভিহিত করেছেন।
★পবিত্রতা অর্জন: পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা
সেই দোয়া কবুল করবেন।
★বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা: বিনয়ের সঙ্গে দু’হাত তুলে দোয়া করা।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ-
সালমান ফারসী
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়
তোমাদের রবব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দাহ দু’ হাত তুলে তাঁর নিকট চাইলে তিনি খালি
হাত ফেরত দিতে লজ্জবোধ করেন। (আবু দাউদ ১৪৮৮.ইবনু মাজাহ (অধ্যায় : দু‘আ,
অনুঃ দু‘আতে দু’ হাত উত্তোলন করা,
হাঃ ৩৮৬৫)
★মিনতিভরা কন্ঠে দোয়া করা: মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া করলে তা
ইবাদত হিসেবে গন্য হয়।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ-
ইবনু ‘আব্বাস
রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুমি উভয় হাতকে তোমার কাঁধ বরাবর বা অনুরূপ উঁচু
করে দু‘আ করবে এবং ইস্তিগফারের সময় এক আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে এবং দু‘আতে কাকুতি
মিনতির সময় দু’ হাত প্রসারিত করবে। (আবু দাউদ ১৪৮৯)
★দু’হাত তুলে দোয়া করা: বিনয়, নম্রতা ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দোয়ার সময় দু’হাতের
তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ
আস-সায়িব ইবনু
ইয়াযীদ (রহঃ) হতে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আর
সময় দু’ হাত উপরে উঠাতেন এবং দু’ হাত দিয়ে স্বীয় মুখমন্ডল মুছতেন। (আবু দাউদ ১৪৯২)
★হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাওয়া। অতঃপর দু‘আ শেষে হাতের
তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছা।
হাদীস শরীফে
এসেছেঃ-
‘আবদুল্লাহ
ইবনু ‘আব্বাস রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের ঘরের দেয়ালগুলো পর্দায় আবৃত করো না। যে ব্যক্তি বিনা
অনুমতিতে তার ভাইয়ের চিঠিতে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, সে যেন জাহান্নামের আগুনের দিকে তাকালো। তোমরা হাতের
পৃষ্ঠের দ্বারা নয় বরং হাতের তালুর দ্বারা আল্লাহর কাছে চাইবে। অতঃপর দু‘আ শেষে তোমাদের
হাতের তালু দিয়ে নিজের চেহারা মুছবে। (আবু দাউদ ১৪৮৫.বায়হাক্বী ‘সুনান’ (২/২১২),
হাকিম (৪/২৭০)।)
★আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা : আল্লাহর প্রশংসা ও
দরুদ শরীফসহ দোয়া করা। আল্লাহর প্রশংসা যেমন, ‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ দোয়ার শুরুতে বলা।
এছাড়া ইসমে আজমের সহিত দোয়া করা উত্তম। আরো জাুনন:
https://ifatwa.info/15175/