আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (9 points)
উস্তায প্রশ্নটা আমার ভার্সিটির এক ছোট বোনের,

আমি যখন ইন্টার ১ম বর্ষের ছাত্রী, ২ বান্ধবীর সামনে এক ছেলে আমাকে নাম ধরে বলেছিলো - অমুক, তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও? যদি চাও তাহলে ৩ বার কবুল বলো। এবং আমি তখন হাসি তামাশায় অনেকবার কবুল বলে ফেলি।
এরপর থেকে ছেলে বলে প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে, ২ জন মেয়ে সাক্ষী রেখে যেহেতু কবুল বলেছো তারমানে আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে শায়েখ আহমাদুল্লাহ সাহেবের প্রশ্নোত্তর পর্ব থেকে আমাকে শুনায়-ও। আমি তাকে তালাক দিতে বললে, সে বলে পারবেনা। আমি ছেড়ে গেলে সে আত্নহত্যা করবে জানায়। আমি আমার পরিবারের কাছে সেই ছেলের নামে অভিযোগ করেছি(কবুল বলার কথা গোপন রেখে, শুধু বলেছি ছেলেটা ডিস্টার্ব করে)। কিন্তু তারাও হুমকি-ধামকি দিয়ে কোন কাজ হয়নি।
আমি তারসাথে কোনপ্রকার যোগাযোগ রাখতে চাইনা, কিন্তু সে বলে আমরা স্বামী-স্ত্রী, সুতরাং যোগাযোগ করলে সেটা অবৈধ যিনা-র আওতায় পরবে না।

প্রশ্ন :

১. সত্যিই কি আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে?

২. বিয়ে হয়ে গেলে, তার কথামতো কি আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী? ফোনে যোগাযোগ করা কিংবা দেখা করতে পারবো?

৩. আমি যদি এই ছেলের সাথে সংসার না করতে চাই তাহলে কিভাবে তার থেকে মুক্তি পেতে পারি?

এবং উস্তায আমি শুনেছি এমন একটা হাদিস-  মা-বাবা (অভিভাবক) ছাড়া কোন মেয়ে বিয়ে করলে সোই বিয়ে বাতিল! বাতিল! বাতিল!

৪. যদি তার সাথে আমার বিয়ে না হয়ে থাকে, তাহলে কি আমি এই মুহুর্তে তার সাথে চিরদিনের জন্য যোগাযোগ বন্ধ করে দিবো?
মেহেরবানী করে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েন উস্তায, মেয়েটা খুবই ডিপ্রেশনে আছে।

1 Answer

0 votes
by (597,570 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/11771 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে। যথা-
বর ও কনেকে কিংবা তাদের প্রতিনিধিকে ইজাব তথা প্রস্তাবনা ও কবুল বলতে হয়।

উক্ত ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

وَ اسۡتَشۡہِدُوۡا شَہِیۡدَیۡنِ مِنۡ رِّجَالِکُمۡ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُوۡنَا رَجُلَیۡنِ فَرَجُلٌ وَّ امۡرَاَتٰنِ مِمَّنۡ تَرۡضَوۡنَ مِنَ الشُّہَدَآءِ اَنۡ تَضِلَّ اِحۡدٰىہُمَا فَتُذَکِّرَ اِحۡدٰىہُمَا الۡاُخۡرٰی

আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী রাখ, অতঃপর যদি দু’জন পুরুষ না হয় তবে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রীলোক যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর, যাতে স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুলে গেলে তাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
(সুরা বাকারা ২৮২)

হাদিস শরিফে এসেছে, 

لَا يَجُوزُ نِكَاحٌ، وَلَا طَلَاقٌ، وَلَا ارْتِجَاعٌ إِلَّا بِشَاهِدَيْنِ

‘রাসূল (সা.) বলেছেন, দুইজন সাক্ষী ছাড়া বিবাহ, তালাক ও ফিরিয়ে আনা বৈধ হবে না।’ [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস: ১০২৫৪]

قوله صلى الله عليه وسلم : ( لا نكاح إلا بولي وشاهدي عدل ) رواه البيهقي من حديث عمران وعائشة ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (7557) 

রাসুলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত, সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।

 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী- “তোমরা বিয়ের বিষয়টি ঘোষণা কর।”[মুসনাদে আহমাদ এবং সহীহ জামে গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে (১০৭২)]
۔
ইজাব ও কবুলটি উভয় সাক্ষ্যি স্বকর্ণে শুনতে হবে।

উক্ত তিনটির কোন একটি শর্ত না পাওয়া গেলে ইসলামী শরীয়তে বিবাহ শুদ্ধ হয় না।

উপরোক্ত তিনটি শর্ত  পাওয়া গেলে বিবাহ হবে,অন্যথায় বিবাহ হবেনা।


ইজাব কবুল ব্যাতিত বিবাহ হয়না।
https://ifatwa.info/113178/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 

قال في "كشاف القناع" (5/ 37) : "ولا ينعقد النكاح إلا بالإيجاب والقبول ، والإيجاب هو اللفظ الصادر من قِبَل الولي أو من يقوم مقامه كوكيل.

সারমর্মঃ
ইজাব কবুল ব্যাতিত বিবাহ হবেনা।
ইজাব হলো যে শব্দটি অভিভাবক অথবা তার স্থলাভিষিক্ত এর থেকে বের হয়,যেমন উকিল।    
এমন সব শব্দে বিবাহ সংঘটিত হবে। যেমন বলা, (زوجت أو نكحت) আমি বিবাহ করলাম বা বিয়ে দিলাম। অথবা বলা, (قبلت هذا النكاح) আমি এ বিয়ে কবুল করলাম। অথবা (تزوجتها) আমি তাকে বিয়ে করলাম, বা (تزوجت) আমি বিয়ে করলাম, অথবা (رضيت) এ বিয়ে আমি রাজি আছি।

প্রস্তাব (الإيجاب): অলী তথা অভিভাবক অথবা যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তার পক্ষ থেকে বিয়ে করার বা বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া। 

★ কবুল (القبول): স্বামী বা তার স্থলাভিষিক্ত থেকে বিয়ে কবুল করার শব্দ। যেমন বলা, (قبلت) আমি বিয়ে কবুল করলাম বা (رضيت هذا النكاح) এ বিয়ে আমি রাজি আছি বা শুধু কবুল করেছি বলা।

আরো জানুনঃ 

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ

النكاح ينعقد بالإيجاب والقبول بلفظين يعبر بهما عن الماضي لأن الصيغة وإن كانت للإخبار وضعا فقد جعلت للإنشاء شرعا دفعا للحاجة وينعقد بلفظين يعبر بأحدهما عن الماضي وبالآخر عن المستقبل مثل أن يقول زوجني فيقول زوجتك لأن هذا توكيل بالنكاح والواحد يتولى طرفي النكاح الھدایۃ، ج:1، ص:185، ط:دار احياء التراث العربي - بيروت - لبنان
সারমর্মঃ
বিবাহ ইজাব কবুল দ্বারা সম্পন্ন হয়,দুটির একটি অতিতকাকাল সূচক বাক্য হবে,আরেকটি বর্তমান কাল বুঝায় এমন বাক্য হতে হবে।

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 
وینعقد بلفظ النکاح والتزویج والہبة والتملیک والصدقة )
সারমর্মঃ  
বিবাহ,তাযয়িজ,হিবা,তামলিক,সদকাহ এই জাতীয় বাক্য গুলি দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয়।
,
অন্য কোনো বাক্য দ্বারা বিবাহ হবেনা।

لما في الفتاوي الهندية ج ١- ص:٢٧٠

ينعقد بالإيجاب والقبول وضعا للمضي أو وضع أحدهما للمضي والآخر لغيره مستقبلا كان كالأمر أو حالا كالمضارع، كذا في النهر الفائق فإذا قال لها أتزوجك بكذا فقالت قد قبلت يتم النكاح وإن لم يقل الزوج قبلت، كذا في الذخيرة ولو قال: تزوجيني نفسك فقبلت؛ انعقد إن لم يقصد به الاستقبال هكذا في النهر الفائق. وكما ينعقد بالعبارة ينعقد بالإشارة من الأخرس إن كانت إشارته معلومة، كذا في البدائع. ولا ينعقد بالتعاطي، كذا في النهاية ولا ينعقد بالكتابة من الحاضرين فلو كتب تزوجتك فكتبت قبلت؛ لم ينعقد هكذا في النهر الفائق.

অনুবাদঃ- এটি (বিবাহ) প্রস্তাব (ইজাব) এবং গ্রহণের (কবুলের) দ্বারা সমাপ্ত (সংগঠিত) হয়,উভয় বাক্য অতীতকালের জন্য গঠিত হোক, অথবা এর একটি অতীত কাল এবং অন্যটিকে অন্য কালের জন্য হোক,চাই তাহা ভবিষ্যত কালের জন্য গঠিত হোক, যেমন আমরের সীগাহ, অথবা বর্তমান কালের জন্য গঠিত হোক,যেমন মুযারে' এর সীগাহ। যেমনটি নাহরুল ফায়েক গ্রন্থে এসেছে।

যদি সে তাকে (পাত্রীকে) বলে, "আমি তোমাকে এতো টাকা/দিরহামের বিনিময়ে বিয়ে করব," এবং সে (পাত্রি) বলল, "আমি মেনে নিচ্ছি," বিবাহটি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
যদিও স্বামী না বলে যে, "আমি কবুল করলাম {মেনে নিলাম},"
এমনটি যাখিরাহ গ্রন্থে এসেছে।

যদি সে বলে, "আমার সাথে নিজেকে বিয়ে করো" এবং সে মেনে নিল (কবুল বললো);
এক্ষেত্রেও বিবাহটি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
যদি এর দ্বারা ভবিষ্যত কালের ইচ্ছা না করে।
এমনটিই নাহরুল ফায়েক গ্রন্থে এসেছে।
 
বিবাহের চুক্তি যেমন বাক্য দিয়ে সম্পন্ন (শেষ)  করা হয়, তেমনি একজন নিঃশব্দ (বোবা) ব্যক্তির ইশারা (ইঙ্গিত) দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন (শেষ) করা হয়। যদি তার ইশারা (সংকেত) জানা যায়।
এমনটি বাদাই' গ্রন্থে আছে।

শুধুমাত্র তায়াতী' তথা ইজাব কবুল ছাড়া এমনিতেই গ্রহনের দ্বারা বিবাহ সংগঠিত হবেনা।
এমনটি নিহায়াহ গ্রন্থে এসেছে। 

এবং এটি উপস্থিতদের থেকে লেখার দ্বারা বিবাহ সংগঠিত হবেনা।

যদি তিনি (পাত্র) লিখেন, "আমি তোমাকে বিয়ে করব," এবং পাত্রী লেখে, আমি গ্রহণ করলাম। তাহবে বিবাহ সংগঠিত হবেনা।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াহ ১/২৭০)

আরো জানুনঃ- 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন, 
(০১)
প্রশ্নের বিবরন মতে এক্ষেত্রে বিবাহ হয়নি।
এখানে কোনো ইজাব অর্থাৎ বিবাহের প্রস্তাব পেশ করা হয়নি।

এবং এখানে দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে বিবাহ হয়নি। বরং শুধুমাত্র ২ জন মহিলার সামনে বিবাহ হয়েছে,সেখানে নুন্যতম আরো একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সাক্ষী থাকা লাগতো।

সুতরাং উক্ত বিবাহ শুদ্ধ হয়নি। 

আপনি অন্যত্রে বিবাহ করতে পারেন,কোনো সমস্যা নেই।

(০২)
আপনারা এখন স্বামী-স্ত্রী নয়। ফোনে যোগাযোগ করা কিংবা দেখা করতে পারবেননা।

(০৩) 
যেহেতু বিবাহই হয়নি,তাও মুক্তি পাওয়ার কোনো প্রশ্নই উঠেনা। 

(০৪)
আপনি এই মুহুর্তে তার সাথে চিরদিনের জন্য যোগাযোগ বন্ধ করে দিবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...