জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার মাসয়ালা আগে জেনে নেইঃ
ফরজ নামায দাঁড়িয়ে পড়া ফরজ।
وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ
‘তোমারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে (নামাযে ) বিনীতভাবে দণ্ডায়মান হও।’ (সূরা বাক্বারাহ ২৩৮)।
যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে পড়তে অক্ষম সে বসে নামায পড়বে। তার জন্য নামায দাঁড়িয়ে পড়া ফরজ নয়।
এক্ষেত্রে মূল হল হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. এর একটি হাদীস –
عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ كَانَتْ بِي بَوَاسِيرُ فَسَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الصَّلَاةِ فَقَالَ صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ
‘হযরত ইমরান বিন হুসাইন রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমার অর্শ্বরোগ ছিল। তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নামায (এর পদ্ধতি) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন,দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করবে,তাতে সামর্থ্য না হলে বসে। যদি তাতেও সক্ষম না হও তাহলে কাত হয়ে শুয়ে।’
(সহিহ বুখারী হাদীস নং- ১১১৭)
ইবনে কুদামাহ রহ. বলেন –
أجمع أهل العلم على أن من لا يطيق القيام له أن يصلي جالسا আহলে ইলম এ ব্যপারে একমত যে, যে ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে অক্ষম সে বসে নামায পড়বে। (আল-মুগনী ১/৪৪৩)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে দাঁড়াতে অক্ষম ব্যক্তির জন্য ফরজ নামায বসে পড়া জায়েয। দাঁড়ানোর সক্ষমতা থাকার পরেও যদি কেউ ফরজ নামায বসে পড়ে তবে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে।
প্রশ্ন হল, কতটুকু অসুস্থতা হলে,ফরজ নামায বসে পড়া জায়েয হবে। অর্থাৎ একেবারে সামান্য দুর্বলতা বা অসুস্থতার কারণেই কি ফরজ নামায বসে পড়া জায়েয হবে নাকি যখন কোনোভাবেই দাঁড়াতে সক্ষম হবে না, কেবল সেক্ষেত্রেই বসে নামায পড়া জায়েয হবে?
এর জবাব হল,
(ক) যদি দাঁড়িয়ে নামায পড়ার কারণে রোগীর খুব বেশি কষ্ট হয় অথবা
(খ) রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে অথবা
(গ) রোগ মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা হয় তবে তার জন্য বসে নামায পড়া জায়েয। (আল মাজমূ ৪/৩১০;তানভীরূল আবসার ২/৫৬৫)
এ ব্যপারে মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাকে একটি রেওয়ায়েত রয়েছে-
عن عمر بن ميمون بن مهران عن أبيه قال: قيل له ما علامة ما يصلي المريض قاعداً؟ قال: إذا كان لا يستطيع أن يقوم لدنياه فليصل قاعداً
‘উমর বিন মায়মূন রহ.তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, রোগীর জন্য বসে নামায জায়েয হওয়ার আলামত কি? তিনি বললেন, যখন সে তার দুনিয়াবী কাজের জন্য দাঁড়াতে পারেনা তখন বসে নামায পড়বে।’
মোটকথা, রোগীই নিজের অবস্থা নির্ধারণ করবে যে, কখন তার জন্য বসে নামায পড়া জায়েয হবে। যদি দাঁড়ানোর কারণে অতিরিক্ত কষ্ট হয় বা কোনো ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তবে সে বসে সামায পড়তে পারবে।
এখন প্রশ্ন হল, কোনো ব্যক্তি যদি দাঁড়াতে সক্ষম হয় কিন্তু রুকু-সিজদা করতে সক্ষম না হয় তাহলে সে কিভাবে নামায আদায় করবে?
এক্ষেত্রে ফিকহে হানাফীর প্রসিদ্ধ মত হল, এমন ব্যক্তি বসে ইশারায় রুকু সিজদা করবে। তার জন্য দাঁড়িয়ে নামায পড়া আর ফরজ থাকবে না। (বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৭; ফাতাওয়া হিন্দীয়া ৪/২০৪;ফাতহুল ক্বাদীর ১/৪৬০;বাদায়েউস সানায়ে ১/১০৭)
যেমন আদ্দুররুল মুখতার- এ এসেছে–
وإن تعذرا )ليس تعذرهما شرطا بل تعذر السجود كاف( لا القيام أومأ قاعدا وهو أفضل من الايماء قائما لقربه من الارض
‘অসুস্থ ব্যক্তি যদি রুকু-সিজদা করতে অপারগ হয় (রুকু,সিজদাহ উভয়টিতে অপারগ হওয়া শর্ত নয় বরং সিজদা করতে অপারগ হওয়াই যথেষ্ট ) দাঁড়াতে অপারগ না হয় তবে বসে ইশারা করবে। দাঁড়িয়ে ইশারা করা থেকে এটা (বসে ইশারায় নামায পড়া) উত্তম জমিনের নিকটবর্তি হওয়ার কারণে।’ (আদ্দুররুল মুখতার ২/১০২)
কিন্তু প্রশ্ন হল, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায পড়তে পারে না সে তো বসেই নামায পড়বে। বসার নির্দিষ্ট কোনো ধরণ আছে নাকি সে যেকোনো ভাবেই বসতে পারবে?
এর জবাব হল, উল্লেখিত ব্যক্তি তার সুবিধামত যে কোনো সূরতে বসতে পারবে। তার জন্য কোনো বিশেষ সূরতে বসা জরুরী নয়। তবে উভয় বৈঠকে সুস্থব্যক্তির বৈঠকে বসার ন্যায় বসবে। অর্থাৎ বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে এবং ডান পায়ের আঙ্গুলগুলো খাড়া করে রাখবে। আর যদি এটাও না পারে তবে বৈঠকেও তার সুবিধামত বসবে।
إذَا صَلَّى الْمَرِيضُ قَاعِدًا كَيْفَ يَقْعُدُ الْأَصَحُّ أَنْ يَقْعُدَ كَيْفَ يَتَيَسَّرُ عَلَيْهِ
‘যখন অসুস্থ ব্যক্তি বসে নামায পড়বে,কিভাবে বসবে? বিশুদ্ধমত হল তার যেভাবে (বসলে) সহজ হয় সেভাবে বসবে।’ (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৪/২০২)
★সুতরাং
(১) যে ব্যক্তি দাঁড়াতে ও রুকু সিজদা করতে সক্ষম সে চেয়ারে বসে নামায আদায় করলে তা সহীহ হবে না।
(২) যে ব্যক্তি আরামের জন্য বা সাধারণ কষ্টের বাহানায় চেয়ারে বসে নামায পড়ে তার নামায সহীহ হবে না।
(৩) যে দাঁড়াতে ও জমিনে বসতে সক্ষম কিন্তু রুকু-সিজদা করতে অক্ষম সে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করবে। শুধু রুকু-সিজদা বসে ইশারায় করবে। এমন ব্যক্তি যদি চেয়ারে বসে ইশারায় রুকু-সিজদা আদায় করে তবে তা আদায় হয়ে যাবে ।
(৪) আর যে বক্তি দাঁড়াতে সক্ষম কিন্তু নিচে বসতে সক্ষম নয় সে দাঁড়িয়ে নামায পড়বে তবে রুকু,সিজদা ও বৈঠকের সময় চেয়ারে বসে আদায় করতে পরবে এবং ইশারায় রুকু ও সিজদা করবে।
(৫) যে ব্যক্তি দাঁড়াতে অক্ষম কিন্তু নিচে বসতে ও সিজদা করতে সক্ষম এমন ব্যক্তি চেয়ারে বসে ইশারায় সিজদা করলে তার নামায বাতিল গণ্য হবে। তার জন্য নিচে বসে জমিনের উপর সিজদাহ করা জরুরী।
(৬) যে ব্যক্তি দাঁড়াতে ও বসতে কোনোটাতেই সক্ষম নয় সে পূরো নামায চেয়ারে বসে ইশারায় আদায় করতে পারবে।
মূলকথা হল, যে ব্যক্তি দাঁড়িয়ে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পদ্ধতি হল, জমিনে বসে তা আদায় করা। আর যে রুকু সিজদা করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প পন্থা হল, ইশারায় তা আদায় করা। আর যে ব্যক্তি যমিনে বসে নামায আদায় করতে অক্ষম তার জন্য বিকল্প হল, চেয়ারে বসে নামায আদায় করা। কেবলমাত্র প্রথম ও দ্বিতীয় ওযরের কারণে চেয়ারে বসে নামায আদায় করা ঠিক নয়।
আরো জানুনঃ-
(০২)
তারা চেয়ারে নামাজ পড়বেননা।
বরং মাটিতে বসে নামাজ আদায় করবেন।
এক্ষেত্রে যেভাবে বসলে তাদের ভালো হয়,সেভাবেই তারা বসে নামাজ আদায় করবেন।
চাইলে চারজানু হয়ে (বাবু মেরে) বসতে পারেন,চাইলে ডান দিকে পা বের করে দিয়ে নামাজ পড়তে পারেন,চাইলে প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে কেবলার দিকে পা বাড়িয়ে দিয়ে নামাজ পড়তে পারেন। কোনো সমস্যা নেই। নামাজ হয়ে যাবে।