ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
বিসমিল্লাহির রহমানির
রহীম
জবাব,
১. নামাজের মধ্যে
সেজদায় কুরআন হাদীসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া করা যাবে।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদায় দোয়া
পাঠ করতেন।
عَنْ
أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- كَانَ يَقُولُ فِى
سُجُودِهِ « اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى ذَنْبِى كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ
وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ
হযরত আবু হুরায়রা
রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ সেজদায় পড়তেন আল্লাহুম্মাগফিরলি জামবি’ কুল্লাহু দিক্কাহু
ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু”। {তাহাবী শরীফ, হাদিস নং-১৩০৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৮৭৮, সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-১১১২, সহীহ ইবনে খুজাইমা,
হাদিস নং-৬৭২,
সহীহ ইবনে হিব্বান,
হাদিস নং-১৯৩১}
আপনি আপনার
অন্তরে সেই বিশেষ বিষয়কে উপস্থিত রেখে মুজমাল দু'আ যাতে দুনিয়া আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ রয়েছে,যেমন "রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ" কুরআন-হাদীসে বর্ণিত এমন দু'আ করতে পারবেন।
তবে এসময় চুপ
থাকা যাবেনা। নামাজের ভিতর এক রুকন সমপরিমাণ চুপ থাকলে সেজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়।
(এক রুকন=
ছহীহ শুদ্ধ ভাবে তিন বার سبحان
ربي العظيم পড়া সমপরিমাণ সময়)
বিস্তারিত
জানুনঃ https://ifatwa.info/5487/
★নামাজে কুরআন-সুন্নাহে বর্ণিত দোয়া করা যাবে। বা কুরআনে বা হাদিসে
আছে এমন দুআর সমার্থক শব্দের দুআ করা যাবে। বা আখেরাতের জন্য দুআ করা যাবে। কিন্তু
দুনিয়াবী দুআ করা যাবে না। আরবি ছাড়া অন্য ভাষায়ও দুআ করা যাবে না।
দুনিয়াবী দোয়া
করলে বা আরবি ছাড়া অন্য ভাষায় দুআ করলে নামায ভেঙ্গে যাবে। দুনিয়াবী দোয়া-যেমন হে আল্লাহ! আমাকে এক লাখ টাকা
দান করেন। আখেরাতের জন্য দোয়া যেমন-হে আল্লাহ আমাকে জান্নাত দান করেন।
অন্য ভাষায়
দোয়া করলে নামাজ হবে না। বরং দোয়া আরবি ভাষায়, বা কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়াই কেবল করা যাবে। নামাজে
দোয়া করতে হলে আরবি দোয়াই করা এটিই বিধান। (আদদুররুল মুখতার-২/২৩৩-২৩৪, ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া,২/৩, বাহরুর রায়েক-১/৫৭৬)
সেজদায় গিয়ে
سبحان ربي
الأعلى
এছাড়াও অন্যান্য
দোয়া পড়া যাবে। সমস্যা নেই। কিন্তু দুনিয়াবি দোয়া বা আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় দুআ
করা যাবে না।
★সুতরাং আপনি নামাযের বাহিরে দু'আ করবেন, অথবা আপনি আপনার অন্তরে সেই বিশেষ বিষয়কে উপস্থিত
রেখে মুজমাল দু'আ যাতে দুনিয়া আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ রয়েছে,
যেমন "রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া
ওয়াল আখিরাহ" কুরআন-হাদীসে বর্ণিত এমন দু'আ করতে পারবেন। নফল সালাতে বাংলায় দু'আ সম্পর্কে কেউ কেউ রুখসত দিয়ে থাকেন। তবে
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে তারাবীর সালাতের সাজদায় মুখে উচ্চারণ করে বাংলায় দোয়া
করা জায়েয নেই।
বিস্তারিত
জানুন: https://www.ifatwa.info/185
২. ঘুমানোর সময় আপনার উভয় আমল সহিহ। ঘুমের আগে
নবীজি (সা.) যেসব সুরা পাঠ করতেন তা নিচে দেওয়া হলো:-
সুরা মুলক
: রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিদিন ঘুমানোর আগে সুরা মুলক ও সুরা সাজদা পাঠ করতেন। জাবির
(রা.) থেকে বর্ণিত, “নবী (সা.) ‘আলিফ লাম মিম, তানজিলু’ (সাজদা) ও ‘তাবারাকাল্লাজি’ (মুলক) পাঠ না করে ঘুমাতেন
না।” (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)
সুরা বনি ইসরাইল
: অন্য বর্ণনায় এসেছে তিনি ঘুমের আগে সুরা বনি ইসরাইল ও সুরা ঝুমার পাঠ করতেন। আয়েশা
(রহ.) বলেন, ‘নবী (সা.) সুরা ঝুমার ও বনি ইসরাইল পাঠ না করে ঘুমাতেন না।’ (সুনানে তিরমিজি,হাদিস : ৩৪০৫)
তিন কুল :
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘প্রতি রাতে নবী (সা.) বিছানায় যাওয়ার প্রাক্কালে সুরা ইখলাস,
সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করে দুই
হাত একত্র করে হাতে ফুঁক দিয়ে যতদূর সম্ভব সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। মাথা ও মুখ থেকে
আরম্ভ করে তাঁর দেহের সম্মুখভাগের ওপর হাত বুলাতেন এবং তিনবার এরূপ করতেন।’ (সহিহ বুখারি,
হাদিস : ৫০১৭)
সুরা কাফিরুন
: ফারওয়াহ ইবনু নাওফাল (রা.) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন,
নবী (সা.) নাওফাল (রা.)-কে বলেন,
‘‘তুমি ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল
কাফিরুন’ সুরাটি পড়ে ঘুমাবে। কেননা তা শিরক থেকে মুক্তকারী।’’ (সুনানে আবি দাউদ,
হাদিস : ৫০৫৫)
মুসাব্বিহাত
সুরাগুলো : ইরবাজ ইবনে সারিয়া বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে মুসাব্বিহাত সুরাগুলো
পাঠ করতেন এবং বলতেন, এ আয়াতগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে, যা হাজার আয়াতের চেয়ে উত্তম।’ (সুনানে তিরমিজি,হাদিস : ২৯২১)
মুসাব্বিহাত
সুরা দ্বারা সুরা হাদিদ, হাশর, সাফ্ফ, জুমা ও তাগাবুন উদ্দেশ্য। (তাফসিরে কুরতুবি, ১৭/২৩৫)
আয়াতুল কুরসি
: আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি শোবার সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে,
তাহলে সকাল পর্যন্ত একজন ফেরেশতা তাকে
শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৭৫)
সুরা বাকারার
শেষ দুই আয়াত : আবু মাসউদ বাদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
যে ব্যক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ
দুই আয়াত পাঠ করবে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪০০৮)
ইমাম নববী
(রহ.) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যথেষ্ট হওয়ার অর্থ তাহাজ্জুদ,
শয়তান ও বিপদ থেকে যথেষ্ট হবে। (শরহু মুসলিম : ৬/৯২)
আলে ইমরানের
শেষ ১০ আয়াত : আবদুল্লাহ ইবেন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি তাঁর খালা উম্মুল মুমিনিন মায়মুনা
(রা.)-এর ঘরে রাত কাটান। (তিনি বলেন) ‘আমি বালিশের প্রস্থের দিক দিয়ে শয়ন করলাম এবং
আল্লাহর রাসুল (সা.) ও তাঁর পরিবার সেটির দৈর্ঘ্যের দিক দিয়ে শয়ন করলেন। নবী (সা.)
রাতের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি সময় পর্যন্ত ঘুমালেন। অতঃপর তিনি জাগ্রত হলেন এবং চেহারা
থেকে ঘুমের রেশ দূর করলেন। পরে তিনি সুরা আলে ইমরানের (শেষ) ১০ আয়াত তিলাওয়াত করলেন।’
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৯২)