আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
47 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (25 points)
السلام عليكم و رحمة الله و بركاته


১) একটি পরিবারে মা বাবা দুইজনই সরকারি চাকরিজীবী। মা মোটামুটি দ্বীন পালন করার চেষ্টা করেন। বোঝালে বুঝেন। এক হাতে সব কাজ করেন। প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।বাবা সরকারি কলেজ এর প্রিন্সিপাল পদে আছেন। পাঁচ ওয়াক্ত সলাত পড়েন না কেবল জুম্মার নামাজ ছাড়া।
বড় মেয়ে দ্বীন পালন করার চেষ্টা করেন। একটি সরকারি মেডিকেল এ পড়াশুনা করছেন। ভাই এইচ এস সি দিবেন এ বছর। সেও প্র্যাক্টিসিং মুসলিম বিগত ৪ বছর থেকে। প্রথম প্রথম বাবার থেকে বাধা আসলেও বর্তমানে মেনে নিয়েছেন মোটামুটি।এ পরিবারে তাদের বাবা কলেজে গায়রে মাহরাম মহিলার সাথে আরো পুরুষ দের দল নিয়ে গান বাজনা করেন এবং কলেজের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এ গান গেয়ে থাকেন। উনার আগে থেকেই বলা যায় শুরু থেকেই স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক খারাপ। তিনি পরিবারের লোকজন ডেকে নিজের স্ত্রীকে অপমান করছেন ।

স্ত্রী মিটিং এ থাকলে অন্য মানুষের দ্বারা খোজ নিয়ে থাকেন। অহেতুক সন্দেহ পোষণ করেন। অথচ তার স্ত্রীর কোনো দোষ নেই।স্ত্রী তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এত বছর সব সহ্য এসেছেন।উল্লেখ্য, বিয়ের মোহর এখনো পরিশোধ ও করেননি।উল্টো তার চাকরির বেতন এক সময় নিতেন।

সন্তান স্ত্রী এমন ইসলামীক মাইন্ডেড হলেও এত বছরে তার কোনই পরিবর্তন আসে নি ।তিনি বড়ই রাগী স্বভাবের!পড়ালেখার ব্যাপারে সিরিয়াস।কিছু করতে না পারলে সব ইসলাম মানার ফল এমন। এখন সন্তানদের মা আর সহ্য করতে চান না। তিনি আলাদা হতে চান।সন্তানরা বাইরে থাকে পড়াশুনার জন্য। বাড়িতে তিনি একাই।সন্তান হিসেবে বাবার এই অবস্থায় কি দায়িত্ব? কিভাবে বাবাকে দাওয়া করা উচিত?বাবার প্রতি কি দায়িত্ব? কেবল দুআ করা আর সাদাকা করাই কি যথেষ্ট? বড় মেয়ে যদি ওই গায়িকা মহিলাকে থ্রেট দিতে চায় এটা কি ঠিক হবে? মিন ফাদ্বলিক জানাবেন।

২) আরেক বোনের প্রশ্ন,

আমার বাবা একজন নাস্তিক এবং ইসলাম বিদ্বেষী। তিনি আল্লাহ এবং নবী রাসুলগণকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলেন। তিনি রাগী আর বদমেজাজি। আমি কিছু বলার সাহস পাই না। আমার খুবই খারাপ লাগে। আমার কি করণীয় নাসীহা করুন মিন ফাদ্বলিক।

৩) বিয়ের সময় কিছু হাদিয়া পেয়েছিলাম বাবার বাড়ির পক্ষ থেকে, তখন তো বুঝ ছিলনা,এখন মনে হয়,এতে হারামের মিশ্রণ ছিল কি না? ( আমি শিওর না) কিন্তু খুব খটকা হয়। বাবার পরিবর্তে পরিবারের অন্য কোন সদস্য বিয়ের যাবতীয় খরচের জন্য মোটা অংকের এমাউন্ট দিয়েছিল, ঐ টাকা দিয়ে আমি একটা জমি কিনেছি,বিয়েতে ওভাবে খরচ না করে।আমি চাই এ পরিমান টাকা আমি আস্তে আস্তে দান করে দিব সওয়াবের আশা বাদে। ঐ টাকার ই কিছু অংশের আমার একটা গহনা আছে, আমি গহনার টাকাও দান করতে চাই, সওয়াবের আশা বাদে,পরিবারের একটু নাজুক হালত আমার ভাই বোনের আপাতত, তাদের জন্য কি আমি সওয়াবের আশা বাদে এই টাকাটা খরচ করতে পারবো?

(টাকাটা হারাম নাকি হালাল এই ব্যাপারে আমার কোন ধারনা নাই। কিন্তু বারবার মনে আসছে বিষয়টা)

1 Answer

0 votes
by (593,100 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
https://www.ifatwa.info/84764/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
সন্তানের হক সমূহঃ-
(১) কানে আযান দেয়া।
(২) সুন্দর নাম রাখা।

ভালো নাম রাখা পিতা-মাতার সর্বপ্রথম দায়িত্ব। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
من حق الولد على الوالد أن يحسن اسمه ويحسن أدبه.
অর্থ : সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক। (মুসনাদে বাযযার,আলবাহরুয যাখখার)-৮৫৪০)

(৩) আক্বিকা করা
(৪) সদকাহ করা: ছেলে হোক বা মেয়ে হোক সপ্তম দিবসে চুল কাটা এবং চুল পরিমাণ রৌপ্য সদকাহ করা সুন্নাত।

(৫) খাতনা করা।
(৬) তাওহীদ শিক্ষা দেয়া: শিশু যখন কথা বলা আরম্ভ করবে তখন থেকেই আল্লাহর তাওহীদ শিক্ষা দতে হবে।

(৭) কুরআন শিক্ষা দান: ছোট বেলা থেকেই সন্তানকে কুরআন শিক্ষা দিতে হবে। 
(৮) সলাত শিক্ষা দেয়া ও সলাত আদায়ে অভ্যস্ত করা:

(৯) আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়া।

(১০) আদর স্নেহ ও ভালবাসা দেয়া।

(১১) দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেয়া: সন্তানকে দীনি ইলম শিক্ষা দেয়া ফরজ করা হয়েছে। 

(১২) প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করা: সন্তানদেরকে প্রাপ্ত বয়স্ক পর্যন্ত লালন-পালন করতে হবে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় খরচ করতে হবে। 

(১৩) সক্ষম করে তোলা: সন্তানদেরকে এমনভাবে সক্ষম করে গড়ে তোলা,তারা যেন উপার্জন করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। 

সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে এভাবে বলেছেন: “তোমাদের সন্তান সন্ততিদেরকে সক্ষম ও সাবলম্বি রেখে যাওয়া, তাদেরকে অভাবী ও মানুষের কাছে হাত পাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম।” [সহীহ বুখারী:১২৯৫]

(১৪) বিবাহ দেয়া: সুন্নাহ পদ্ধতিতে বিবাহ দেয়া এবং বিবাহর যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা এবং উপযুক্ত সময়ে বিবাহের ব্যবস্থা করা। 

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন,

من وُلِدَ لَهُ وَلَدٌ فَلْيُحْسِنِ اسْمَهُ وَأَدَبَهُ فَإِذَا بَلَغَ فَلْيُزَوِّجْهُ فَإِنْ بَلَغَ وَلَمْ يُزَوِّجْهُ فَأَصَابَ إِثْمًا فَإِنَّمَا إثمه على أَبِيه

তোমাদের মাঝে যার কোনো (পুত্র বা কন্যা) সন্তান জন্ম হয় সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম আদব কায়দা শিক্ষা দেয়; যখন সে বালেগ অর্থাৎ সাবালক/সাবালিকা হয়, তখন যেন তার বিয়ে দেয়; যদি সে বালেগ হয় এবং তার বিয়ে না দেয় তাহলে, সে কোনো পাপ করলে উক্ত পাপের দায়ভার তার পিতার উপর বর্তাবে। (বাইহাকি ৮১৪৫)

(১৫) দ্বীনের পথে পরিচালিত করা: পিতা-মাতার অন্যতম দায়িত্ব হলো সন্তানদেরকে দ্বীনের পথে, কুরআন-সুন্নাহর পথে পরিচালনা করা, দ্বীনের বিধান পালনের ক্ষেত্রে অভ্যস্ত করে তোলা। 

(১৬) সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করা: সন্তানগণ পিতামাতার কাছ থেকে ইনসাফ আশা করে এবং তাদের মাঝে ইনসাফ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

(১৭) ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে বিরত রাখা:  ইসলাম অনুমোদন করে না এমন কাজ থেকে তাদেরকে বিরত না রাখলে এই সন্তানগনই কিয়ামাতে পিতামাতার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। 

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।( সূরা আত-তাহরীম: ৬)

(১৮) পাপকাজ, অশ্লিলতা, বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখা।

যেসকল মা বাবার একাধিক সন্তান আছে,তাদের ভরনপোষণ ও যাবতীয় খরচ ও হক এর ক্ষেত্রে সকলের মাঝে ইনসাফ কায়েম করতে হবে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষভাবে সতর্ক করে বলেছেন: “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তাদের মাঝে ইনসাফ করো।” [সহীহ বুখারী: ২৫৮৭]

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তার বাবা সন্তানদের যথাযথ হক আদায় করছেন না পাশাপাশি তাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্ক ঠিক ভালো নেই,এমতাবস্থায় সংসার শুধু অশান্তি চলতে থাকে।

এক্ষেত্রে তার বাবার প্রতি পরামর্শ থাকবে শরীয়তের নীতি আদর্শ মেনে সংসারের কার্যকর্ম পরিচালনা করার জন্য।

তার সন্তানেরা চেষ্টা করবে,বাবাকে বুঝিয়ে তাবলিগে পাঠানোর।

বড় মেয়ে চাইলে সেই গায়িকাকে নিষেধ করতে পারবে,শরয়ী বিধান জানিয়ে নসিহত করতে পারে।

প্রশ্ন উল্লেখিত ছুরতে তার মা স্বামীর মুহব্বত বৃদ্ধির জন্য নিম্নোক্ত আমল গুলি করতে পারেনঃ- 

পাশাপাশি স্বামীর হক যথাযথভাবে তার মায়ের আদায় করতে হবে।

স্বামী স্ত্রী একে অপরের হক যথাযথ ভাবে আদায় করবে,তাহলে সংসারে শান্তি আসবে,ইনশাআল্লাহ। 

স্বামী স্ত্রী উভয়ের হক সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ- 

(০২)
নিশ্চিত না জেনে এভাবে কোনো কিছুকে হারাম বলার সুযোগ নেই।

নিশ্চিত ভাবে হারাম,এমনটি না জানা হলে সেক্ষেত্রে সদকাহ আবশ্যক নয়।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...