আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
127 views
in সালাত(Prayer) by (98 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
আমি গত ৩ বছর ধরে প্র‍্যাক্টিসিং ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ!  ইবাদাতে খুব আগ্রহ ছিলো আর মন দিয়ে করতাম ও! ২ মাস আগে আমার বিয়ে হয় আলহামদুলিল্লাহ,  আর বর্তমানে প্রেগন্যান্ট আমি দেড় মাস চলছে আলহামদুলিল্লাহ!
কিন্তু প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে আমার সকল ইবাদাতে আগ্রহ মনোযোগ ইচ্ছা নাই হয়ে গিয়েছে, আল্লাহুম্মাগফিরলি!  শরীরের অবস্থা এমন থাকে কোনো কিছুই ভাল্লাগে না! আল্লাহ মাফ করুন আমার নামাজ আদায় করতে বিরক্ত লাগে! ওজু করতে কষ্ট হয় এজন্য আরও নামাজে অনিহা কাজ করে! ওজু করতে গেলে মনে হয় বমি বমি ভাব লাগে! আগে প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করতাম,  কিন্তু প্রেগন্যান্সির পর থেকে অনেকদিন হয়ে গেলো তিলাওয়াত করা হয় না! নামাজে যতটা তিলাওয়াত করি তাতেই কষ্ট হয়, তিলাওয়াত করলে বমি বমি ভাব আসে! কখনো এমন হয় নামাজ কোন রকম পড়ে দৌড়ে যেয়ে বমি করি!
আর ওজু ও থাকে না বেশিক্ষন এটাও সমস্যা,  এমনিতেই ওজু কর‍তে কষ্ট হয়, আবার ওজু করে যে কুরআন পড়বো সেই এনার্জি ইচ্ছা থাকে না! এমন হয় যে  ওজু করে শুধু ফরজ নামাজ টুকু ৪ রাকাআত পড়লাম আর ৩য় রাকাআতে বা শেষ রাকাআতে ওজু ভেঙে গেলো!   তখন আবার ওজু করে নামাজ পড়ার ইচ্ছা থাকে না!  গ্যাসের সমস্যা আর বমির জন্য কিছু খেতেও পারি না, দেখা যায় পেটে প্রচুর ক্ষুধা কিন্তু খেতে পারছি না! আর ক্ষুধা নিয়ে উঠে ওজু করে নামাজ আদায় করার অবস্থা থাকে না, ঐ অবস্থায় শুয়ে থাকি!
কিভাবে যে বুঝাবো শরীরের অবস্থা এমন থাকে শুয়ে থাকা ছাড়া কোনো কিছু করার এনার্জি পাই না! বিশেষ করে বিকেল থেকে খারাপ লাগা বেশি শুরু হয় সারারাত এমন থাকে! কিভাবে বলি,  আমার ইশা আর ফজরের নামাজ প্রতিনিয়ত মিস হচ্ছে

আমি সজ্ঞানে মিস করছি, অথচ এর পরিনতি সম্পর্কে জানি আমি!  একদিন আমি কোনো ওয়াক্তের নামাজ পড়ি নি শরীর খারাপ থাকায়, চেয়ে চেয়ে ওয়াক্তগুলো পার করেছি! আমি কেমন শক্ত হয়ে গিয়েছি, অথচ এমন ছিলাম না আমি! পরবর্তীতে কাজা ও আদায় করা হয় না, কারণ শরীরের অবস্থা ভালো থাকে না!

মাত্র দেড় মাস চলে প্রেগন্যান্সির, এখনি এই হালত আমার! কারও এরকম ইবাদাতে গাফিলতি এসেছে শুনি নি! কত প্ল্যানিং ছিলো অনাগত বাচ্চার জন্য দুআ করবো,  সারাদিন ইবাদাতে থাকবো, কুরআন নিয়ে দিন কাটাবো, কিন্ত কিছুই হচ্ছে না! আমি অনেক কিছু জেনেও কিছুই করতে পারছি না! আমলহীন ইলম বলে যাকে!

প্রেগন্যান্সি একরকম শাস্তি মনে হচ্ছে আমার কাছে!  শরীরে অশান্তি, মনে অশান্তি, ইবাদাতে স্বাদ নেই!  আল্লাহ তো কারও উপর সাধ্যের বাইরে কিছু চাপিয়ে দেন না,  কিন্তু আমার মনে হচ্ছে আমার এই অবস্থায় ওয়াক্ত মতো সালাত, ইবাদাত করা সাধ্যের বাইরে!

উস্তায, আমি এভাবে এই হালতে মরতে চাই না, আল্লাহ আমার উপর অনেক অসন্তুষ্ট!  আমার কান্নাও আসে না, আল্লাহর কাছে কৃত গুনাহগুলো মাফ চাওয়ার মতো মন থেকে ইচ্ছাও আসে না! আল্লাহ তো উদাসীন মনের ইস্তেগফার কবুল করেন না!
আমি কি করলে, কিভাবে আগের মতো হিদায়াত ফিরে পাবো?! ইবাদাতে আগ্রহ,  খুশু খুযু ফিরে পাবো?! কুরআন নিয়ে বসে থাকতে পারবো?!  কেদে কেদে আল্লাহর কাছে মাফ চাইতে পারবো,  সুন্দর করে দুআ করতে পারবো?!  আমার করনীয় কি উস্তায নাসিহাত করুন দয়া করে! আমি ডিপ্রেসড হয়ে যাচ্ছি! নিজেকে নিজের বিরক্ত লাগে!

[ মাফ করবেন,  অনেক বড় করে প্রশ্ন লিখলাম, আমার অবস্থা বুঝানোর জন্য এতো ডিটেইলস বললাম, তাও হয়তো ভালো ভাবে উল্লেখ করতে পারি নি আমার অবস্থা, নিজেকে মুনাফিক মনে হয়, ইচ্ছা করে সালাত ত্যাগ করছি প্রতিনিয়ত,  খারাপ লাগাও তেমন কাজ করে না]

জাযাকাল্লাহু খইরন

1 Answer

0 votes
by (676,960 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ- 


আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)
সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
আপনার এলাকার কোথাও দাওয়াত তাবলিগের মেহনতের বোনেরা তা'লিম করলে সেখানে তাদের সাথে যুক্ত হতে পারেন 

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। 

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করার চেষ্টা করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...