আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (19 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
১) ইমান ও আকিদা কে দৃঢ় করার উপায় কি?

২) বইয়ের নাম বলবেন প্লিজ আকিদা বিষয়ের।
৩) আইওএম এ আলিম কোর্সের ১ম সেমিস্টার শেষ করেছি আলহামদুলিল্লাহ। তাও মনে হচ্ছে যেন আরো বেশি জানা উচিত আকিদা বিষয়ে। এজন্য কিভাবে পড়াশোনা করলে উপকৃত হবো জানাবেন।

৪) মনের ওয়াসওয়াসার দ্বারা কি গুনাহ হয়?

৫) চাচী যদি মায়ের সাথে যথাযথ ব্যবহার না করে এক্ষেত্রে আমি কি চাচীর সাথে কথাবার্তা কমিয়ে দিলে আমার গুনাহ হবে? কেননা চাচীর কাজকর্মে আমি অনেক কষ্ট পাই যদিও উনি আমার সাথে ভালো আচরন করেন।

1 Answer

0 votes
by (591,570 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
আনাস রাযি. বলেন, রাসুল ﷺ (উম্মতকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য) সব সময় এই দোয়া করতেন, 

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِىْ عَلىٰ دِيْنِكَ 

হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তর আপনার দীনের উপর দৃঢ় করে দিন।

আনাস রাযি. বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার উপর এবং আপনার আনিত শিক্ষার উপর ঈমান এনেছি। এখন আপনার মনে কি আমাদের সম্পর্কে কোনো সন্দেহ আছে? ( যে বেশি বেশি এই দোয়া করেন!) রাসুল ﷺ উত্তর দিলেন হ্যাঁ! সব অন্তর আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মধ্যে পড়ে আছে। আল্লাহ যেভাবে চান, এগুলোকে পরিবর্তন করেন। (তিরমিযি ২১৪০ তাকদির অধ্যায়)

★সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করবেন।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ দোয়া করতেন,

اللَّهُمَّ آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّهَا أَنْتَ خَيْرُ مَن زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلَاهَا

হে আল্লাহ আমাকে তাকওয়ার তওফীক দান করুন এবং নাফসকে পবিত্র করুন, আপনিই তো উত্তম পবিত্রকারী। আর আপনিই আমার নাফসের মুরুব্বী ও পৃষ্ঠপোষক। (মুসলিম ২৭২২)
সুতরাং আপনিও দোয়াটি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

নেককারদের সোহবত গ্রহণ করুন। তাদের সাথে বেশি উঠাবসা করুন।
পুরুষ হলে তাদের  মজলিসে আসা যাওয়া করুন।
দাওয়াত তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত হতে পারেন 

এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা আপনার জন্য সহজ হবে। 

 আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَكُونُواْ مَعَ الصَّادِقِينَ

হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। (সূরা আত তাওবাহ ১১৯)

অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। প্রয়োজনে এর জন্য প্রত্যেক নামাজের পর একটা নিয়ম করে নিন। যেমন, প্রত্যেক নামাজের পর ৫০/১০০/২০০ বার أسْتَغْفِرُ اللهَ   অথবা أسْتَغْفِرُ اللهَ وَأتُوبُ إلَيهِ অথবা  اللَّهُمَّ اغْفِرْ لي পড়ার নিয়ম করে নিতে পারেন। 

★কখনো একাকী নিভৃতে থাকবেন না। কেননা একাকীত্ব গোনাহ চিন্তা করার কারণ হতে পারে। আপনার সময়কে উপকারী বিষয়ে ব্যয় করতে সচেষ্ট হোন। ঈমান ও ইসলামের পরিবেশে সময় ব্যয় করুন।

আপনাকে বেশি পরিমাণে কোরআন তেলাওয়াত করার ও শোনার পরামর্শ দিচ্ছি। এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا

আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়। (সূরা আনফাল ২)

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে বুঝে বুঝে নবীদের কাহিনী, সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি। 

★অধিকহারে আল্লাহর যিকির করুন। কেননা, দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য যিকির খুবই উপকারী। আল্লাহর যিকির অন্তরে ঈমানের বীজ বপন করে। মুমিনের অন্তর যিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

الَّذِينَ آمَنُواْ وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللّهِ أَلاَ بِذِكْرِ اللّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়। (সূরা রা’দ ২৮)

আরো জানুনঃ- 

★ঈমান দৃঢ় করার উপায়ঃ-
আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোর অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করা : আল্লাহর গুণবাচক নামগুলোতে আল্লাহর বড়ত্বের ধারণা পাওয়া যায়, যা আল্লাহর ওপর মানুষের ঈমানকে আরো দৃঢ় করে। 

কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা করা : পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে গবেষণা করলে শুধু জ্ঞানের পরিধিই বড় হয় না; বরং আল্লাহর প্রতি মুমিনের ঈমানও আরো বৃদ্ধি পায়।

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সিরাতজ্ঞান অর্জন করা : নবীজির জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে মুমিনের জন্য শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে। নবীজি হলেন সর্বোত্তম চরিত্রের মডেল। দুনিয়া-আখিরাতের সফলতা অর্জনের নবীজি (সা.)-এর অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ও নিজের সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা : মহান আল্লাহ আমাদের জন্য গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে নিয়োজিত করে রেখেছেন, সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা তিনিই, নিয়ন্ত্রকও তিনিই, মহান আল্লাহর সৃষ্টিগুলো নিয়ে চিন্তা করলে মুমিনের ঈমান আরো বেড়ে যায়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টিতে এবং দিন ও রাতের পরিবর্তনে জ্ঞানবানদের জন্য স্পষ্ট নিদর্শনাবলি রয়েছে।

’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)

অধিক পরিমাণ জিকির ও দোয়া : অধিক পরিমাণে জিকির করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান বাড়ে, ফলে অন্তর প্রশান্ত হয়, পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের প্রশান্ত হয়, জেনে রাখো, আল্লাহর স্মরণেই অন্তরগুলো সত্যিকারের প্রশান্তি লাভ করে।’ (সুরা : আর-রাদ, আয়াত : ২৮)

দ্বিনের সৌন্দর্য সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া : ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামের বিধি-বিধান, আকিদার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও এর ওপর আমল মানুষের দুনিয়া-আখিরাতকে সুন্দর করে, ঈমানকে মজবুত করে।

ইহসান অবলম্বন করা : ‘ইহসান’ মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে, নবীজি (সা.)-এর ভাষায় ইবাদতের ক্ষেত্রে ইহসান হলো, আপনি এমন ভাবে আল্লাহর ইবাদত করবেন, যেন আপনি তাঁকে দেখছেন, আর যদি আপনি তাঁকে দেখতে না পান তবে (মনে করবেন) তিনি আপনাকে দেখছেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০)

আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়া : ঈমান দৃঢ় করার অন্যতম মাধ্যম হলো, মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করা, এতে নিজের মধ্যেও ইবাদতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে, ঈমান বৃদ্ধি পাবে, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর পথে আহ্বানকারীদের প্রশংসা করেছেন, ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সুরা হা-মিম সাজদা, আয়াত : ৩৩)

ইসলামী বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় পরিহার করা ।

দুনিয়ার হাকিকত সম্পর্কে সচেতন হওয়া : দুনিয়া ক্ষণস্থায়ী, দুনিয়া অর্জনই মানুষের মূল লক্ষ্য হতে পারে না। মানুষ দুনিয়াতে ক্ষণিকের অতিথি মাত্র। পৃথিবীর ইতিহাসে দুনিয়াতে বহু রাজা-ধিরাজ অতিবাহিত হয়েছে; কিন্তু পৃথিবীতে তাদের কারো কারো কোনো চিহ্নই নেই। 
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

(০২)
এই বিষয়ে অনেক গুলো বাংলা ভাষায় বই আছে,নির্ভরযোগ্য কিছু বইয়ের নাম তুলে ধরছিঃ-
  
★ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ।
লেখকঃ মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব দাঃবাঃ। 
,
★কিতাবুল ঈমান।
লেখকঃ মুফতী মনসুরুল হক সাহেব দাঃবাঃ। 
,
★ইসলামী আকীদা (১ম খন্ড তাওহিদ)
লেখকঃ মাওলানা ইদরিস কান্ধলবি রহঃ
,
★ঈমান সবার আগে।
লেখকঃ মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব দাঃবাঃ। 
,      
(ইহা ছাড়াও আরো অনেক বিশুদ্ধ আকীদার বই আছে।এখানে সংক্ষেপে কিছু তুলে ধরা হলো।) 

(০৩)
উপরোক্ত বই গুলি ভালোভাবে বুঝে পড়ার পরামর্শ থাকবে। 
প্রয়োজনে এক পৃষ্ঠা দশবার পড়বেন আস্তে ধীরে পড়বেন বুঝে বুঝে পড়বেন প্রয়োজনে মুখস্ত করবেন।

(০৪)
খারাপ চিন্তা না আসলে গুনাহ হয়না।

(০৫)
তার সাথে কথাবার্তা কমিয়ে দিলে আপনার গুনাহ হবেনা। তবে দেখা-সাক্ষাৎ হলে কমপক্ষে সালাম ও কুশল বিনিময় করবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...