আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (8 points)
আস্সালামুআলাইকুম। মুফতি সাহেবের কাছে অনুরোধ, নিচের চারটি প্রশ্নের বিস্তারিত উত্তর যদি দিতেন। জাযাকাল্লহু খইর।

১। একজন পিতার পাঁচ সন্তান। তার বড় সন্তানের এক মেয়েকে ১২ বছর যাবৎ পড়াশোনার খরচ দিয়েছে। এই জের ধরে ঐ পিতা তার অন্য সন্তানদের একজন করে ছেলে বা মেয়েকে পড়াশোনার খরচ দিতে বাধ্য কি না ? অন্য সন্তানরা কি পিতার কাছে এই খরচ নেবার জন্য জোর করতে পারে কি না?
২। ঐ পিতা তার বড় সন্তানকে বিয়ের পরেও তার বাচ্চা হবার পরেও নিজের অন্য এক বাসায় থাকতে দিয়েছে এবং ভাড়া নেই নি প্রায় ১৮ বছর, এখনও নিচ্ছে না। এই ভাড়া না নেয়ার আনুমানিক টাকা হতে পারে ৫ লক্ষ টাকা। এখন এর জের ধরে কি অন্য সন্তান ৫ লক্ষ টাকা বা সমতুল্য নেবার জন্য জোর করতে পারে? কোনো সন্তান তার পিতাকে এই দাবি বা জোর করতে পারে কি না যে - পিতাকে অমুক জিনিস দিতেই হবে?

৩। ঐ পিতা তার কোনো এক সন্তানের জন্য  এ যাবৎ যে পরিমাণ খরচ করেছে, অন্য ৪ সন্তানের জন্যও কি সেই সমান পরিমাণ খরচ করতে বাধ্য কি না?

উল্লেখ্য- উপরে ৩ বিষয়ে যে সন্তানদের জোর করার কথা বলছি, তাদের সবাই বিবাহিত এবং তাদের ১ জনের বাদে অন্য সবার নিজেদের ছেলে মেয়ে আছে
৪। এমনটা শুনলাম যে, কুরআন হাদিসে এমনটা নাকি আছে যে -ছেলে সন্তান বালেগ হবার পরে বিয়ে দেবার পরেও তার বসবাসের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেয়া এবং তাকে আর্থিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়া পর্যন্ত পিতার দায়িত্ব থাকে --- এইটা কি সঠিক? এই ব্যাপারে মাসআলা কুরআন হাদিসের আলোকে যদি বলতেন?

1 Answer

0 votes
by (592,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ

  النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَأَرْجِعهُ وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ . وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» . وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِي !» ثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» . متفق عليه 

 নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। [কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।]’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন এবং ঐ সাদকাহ [দান] ফিরিয়ে নিলেন।’’

আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’ বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’ 
(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)

অন্য বর্ণনায় এসেছে হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’
(সহীহ বুখারী : ১/৩৫২; সুনানে আবুদাউদ : ৩৫৪৪)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
ঐ পিতার জন্য জরুরী, যে তিনি তার অন্য সন্তানদের নুন্যতম একজন করে ছেলে বা মেয়েকে পড়াশোনার খরচ দিবে।

এটাই ইনসাফের দাবী।

তবে তিনি ইনসাফ না করলে অন্য সন্তানরা পিতার কাছে এই খরচ নেবার জন্য জোর করতে পারবেনা।

বিনা ওযরে ইচ্ছা করেই ইনসাফ না করলে সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহর কাছে পিতাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

(০২)
এর জের ধরে অন্য সন্তান ৫ লক্ষ টাকা বা সমতুল্য নেবার জন্য জোর করতে পারেনা।

কোনো সন্তান তার পিতাকে এই দাবি বা জোর করতে পারে না যে - পিতাকে অমুক জিনিস দিতেই হবে।

তবে বিনা ওযরে পিতা ইনসাফ না করে কোনো সন্তানের  উপর জুলুম করলে সেক্ষেত্রে মহান আল্লাহর কাছে পিতাকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে।

(০৩)
ঐ পিতার জন্য জরুরী, যে তিনি এক সন্তানের জন্য  এ যাবৎ যে পরিমাণ খরচ করেছেন, অন্য ৪ সন্তানের জন্যও সেই সমান পরিমাণ খরচ করবেন।
বিনা ওযরে তার বিপরীত করবেনা।

এটাই ইনসাফের দাবী।

(০৪)
এটি সঠিক নয়।

শরীয়তের মাসয়ালা হলো ছেলে সন্তান বালেগ হওয়ার পর তার অন্ন,বস্ত্র,বাসস্থান, মোট কথা কোনো প্রকারের ভরনপোষণ দেয়া পিতার উপর আবশ্যক নয়।

হ্যাঁ যদি বালেগ ছেলে পঙ্গু বা অন্ধ হয়,কোনোক্রমেই উপার্জন করতে পারে না, একেবারেই উপার্জনে অক্ষম, সেক্ষেত্রে তার ভরণপোষণ তার পিতার উপর আবশ্যক হবে।

ونفقة البنت بالغة والابن بالغا زمنا أو أعمى على الأب خاصة به يفتى 
বালেগ মেয়ে এবং বালেগ পঙ্গু বা অন্ধ ছেলের ভরণপোষণের দায়িত্ব পিতার উপর।এটার উপরই ফাতাওয়া।(আল-উকুদুদ-দুররিয়া-১/৮২) 

https://ifatwa.info/3082/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
শরীয়তের বিধান হলো বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত ছেলে সন্তানের ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব।
আর মেয়ে সন্তানকে বিবাহ দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব। 

 কিন্তু ছেলে সন্তান বালেগ হওয়ার পরেও যদি কেহ অসুস্থতা,পাগল, ইলমে দ্বীন শিক্ষায় লিপ্ত থাকা ইত্যাদি কারনে যদি সম্পদ উপার্জন না করতে পারে,তাহলেও তার ভরনপোষণ দেওয়াও পিতার উপর ওয়াজিব বা জরুরি। 
এবং যেই ছেলের ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব, তার বিবাহের খরচাপাতিও পিতার উপর ওয়াজিব। 
আর যেই ছেলের ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব নয়,তার বিবাহের খরচাপাতিও পিতার উপর ওয়াজিব নয়।              
(নাজমুল ফাতওয়া ৫/২১৫) 

ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী তে আছে  
لما فی الھندیۃ(۵۶۳/۱):طلبة العلم إذا كانوا عاجزين عن الكسب لا يهتدون إليه لا تسقط نفقتهم عن آبائهم إذا كانوا مشتغلين بالعلوم الشرعية لا بالخلافيات الركيكة وهذيان الفلاسفة ولهم رشد وإلا لا تجب كذا في الوجيز للكردري ونفقة الإناث واجبة مطلقا على الآباء ما لم يتزوجن إذا لم يكن لهن مال كذا في الخلاصة ولا يجب على الأب نفقة الذكور الكبار إلا أن الولد يكون عاجزا عن الكسب لزمانة أو مرض ومن يقدر على العمل لكن لا يحسن العمل فهو بمنزلة العاجز كذا في فتاوى قاضي خان

যার সারমর্ম হলো তালেবে ইলেম যখন শরীয়তের জ্ঞান অর্জনে লিপ্ত থাকে,সে যদি সম্পদ উপার্জন না করতে পারে,তাহলে তার ভরনপোষণ দেওয়া পিতার উপর ওয়াজিব। 
,,, বালেগ সন্তানের ভরনপোষণ পিতার উপর ওয়াজিব নয়, কিন্তু সে যদি অসুস্থতা, কাজ করতে অক্ষম ইত্যাদি কারনে  সম্পদ উপার্জন না করতে পারে,তাহলে তার ভরনপোষণ দেওয়া পিতার উপর জরুরী। 

আরো জানুন-https://www.ifatwa.info/2362


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...