আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (1 point)
আমি একজন মেয়ে। আমার একজন বান্ধুবী আছে যে আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। সে আমাকে সবসময়ই বলে যে আমি তোমাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। আমাদের ভালোবাসার মধ্যে আসলেই দুনিয়াবি কোনো স্বার্থ নাই। আমাদের পরিচয়ও দ্বীনি হালাকা থেকে।  আমরা দ্বীনি মুজাকারা, তাফসির, তালিমে একসাথে হই। আর মাঝেমাঝে হাদিয়া বিনিময় করি। আমলের প্রতিযোগিতা করি। একজন আরেকজনের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। আমরা যে একজন আরেকজনকে মোহাব্বত করি তা বুঝানোর জন্য মাঝেমধ্যে চিঠি আদান প্রদান করি যেখানে তার জন্য আমার মনের আবেগ অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করি। এখন একটা তা'লিমে শুনেছি "পরস্পরকে মোহাব্বত করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য, একজনের প্রতি আরেকজন এর প্রথমে আগ্রহ জন্মে তারপর তলব এরপর মোহাব্বত এরপর ইবাদাত"।  এখন আমার ভয় হচ্ছে যে আমাদের এই ভালোবাসা কি আল্লাহর জন্য কিনা নাকি নফসের তাবেদারি করছি। আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখেছি যে আমাদের মধ্যে দুনিয়াবি কোনো ফায়দা আদান প্রদান এর সম্পর্ক নাই। এখন কি আমরা দূরে সরে আসব কিনা এজন্য ইস্তেখারাও করেছি দুইজনে।কিন্তু কি করব বুঝতে পারছিনা। আমাকে একটু পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করবেন উস্তায।
by (11 points)

প্রিয় বোন,

আপনার প্রশ্নটি অনেক সুন্দর ও গঠনমূলক। আপনারা যে পরস্পরকে ভালোবাসেন এবং দ্বীনের পথে একে অপরকে সহায়তা করেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি মহান সম্পর্ক। তবে, আপনার প্রশ্নের গভীরে যাওয়া জরুরি—আপনারা কি সত্যিই শুধু আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসছেন, নাকি এর মধ্যে নফসের কোনো অংশ আছে?

ভালোবাসা আল্লাহর জন্য হলে এর লক্ষণ কী?

১. দ্বীনি উন্নতির জন্য সম্পর্ক – যদি এই বন্ধুত্ব আপনাদের দ্বীনের পথে এগিয়ে নেয়, গুনাহ থেকে বাঁচায়, এবং পরস্পরকে জান্নাতের দিকে আহ্বান করে, তাহলে এটি ইনশাআল্লাহ আল্লাহর জন্য হবে।
2. আবেগ নিয়ন্ত্রণে থাকে – ভালোবাসা আল্লাহর জন্য হলেও, যদি তা অতি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে (যেমন: সবসময় একে অপরকে নিয়ে ভাবা, অতিরিক্ত যোগাযোগ করা, আবেগঘন চিঠি লেখা ইত্যাদি), তাহলে তা ধীরে ধীরে নফসের দিকে ধাবিত হতে পারে।
3. স্বাধীনতা বজায় রাখা – যদি একজন ছাড়া অন্যজন নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে করে বা দূরে থাকার চিন্তায় অস্থির হয়, তবে সম্পর্কের মধ্যে দুনিয়াবি সংযুক্তির ঝুঁকি রয়েছে।
4. আল্লাহর সন্তুষ্টি মুখ্য থাকে – যদি সম্পর্কটি আপনাদেরকে ইবাদাতে উদ্যমী করে, তাহলে এটি খাঁটি হতে পারে। তবে, যদি এটি দুনিয়াবি মানসিক প্রশান্তির একটি মাধ্যম হয়ে ওঠে, তাহলে তা নফসের তাবেদারিতে পরিণত হতে পারে।

আপনার করণীয় কী?

  • নিজেদের পর্যালোচনা করুন – আপনারা কি একে অপরের জন্য জান্নাতের পথ সুগম করছেন, নাকি একে অপরের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছেন?
  • সম্ভব হলে একটু দূরত্ব বজায় রাখুন – যদি মনে হয় যে সম্পর্কটি অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে, তবে কিছুটা ভারসাম্য আনার চেষ্টা করুন।
  • ইস্তেখারার ফলাফলের প্রতি আস্থা রাখুন – আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, যাতে তিনি আপনাদের সম্পর্ককে পবিত্র রাখেন এবং সঠিক পথ দেখান।
  • আল্লাহর জন্য ভালোবাসার মানদণ্ড নির্ধারণ করুন – সম্পর্কের মূল লক্ষ্য হতে হবে দ্বীনের উন্নতি, একে অপরকে তাকওয়ায় সাহায্য করা, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন।

যদি আপনাদের সম্পর্ক খাঁটি হয়, তাহলে এটি আল্লাহর জন্যই থাকবে, কিন্তু যদি নফস এতে প্রবেশ করে, তাহলে ধীরে ধীরে তা অনুভব করা যাবে। তাই সময়-সময় নিজের অন্তরকে যাচাই করুন এবং আল্লাহর কাছে হেদায়েত চান।

আল্লাহ আপনাদেরকে সত্যিকারের দ্বীনি সম্পর্ক বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

1 Answer

0 votes
by (592,140 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ : إمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله عز وجل وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ : إنِّي أخَافُ الله وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ

আবু হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আযযা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে,এখান থেকে বেরুবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত...।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান ক’রে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।

(বুখারী ৬৬০, ১৪২৩, ৬৮০৬, মুসলিম ২৪২৭)

পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে। হাফিয ইবনু হাজার বলেনঃ তাদের এ ভালোবাসা দীনের জন্যই অটুট থাকে, দুনিয়ার কোন কারণে বিচ্ছিন্ন করে না। শুধুমাত্র মৃত্যুই বিচ্ছিন্ন করে।

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ «إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوٰى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُوْلِه فَهِجْرَتُهٗ إِلَى اللهِ وَرَسُولِه وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهٗ اِلٰى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوِ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهٗ إِلٰى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ 
‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিয়্যাতের উপরই কাজের ফলাফল নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী ফল পাবে। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্য হিজরত করবে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টির জন্যই গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার স্বার্থপ্রাপ্তির জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহের জন্য হিজরত করবে সে হিজরত তার নিয়্যাত অনুসারেই হবে যে নিয়্যাতে সে হিজরত করেছে।
বুখারী ১, মুসলিম ১৯০৭, তিরমিযী ১৬৩৭, নাসায়ী ৭৫, আবূ দাঊদ ২২০১, ইবনু মাজাহ্ ৪২২৭, আহমাদ ১৬৯, ৩০২।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনাদের পারস্পরিক মুহব্বত একমাত্র আল্লাহর জন্যই, আলহামদুলিল্লাহ। সুতরাং এটি নিয়ে চিন্তিত না হওয়ারই পরামর্শ থাকবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...