আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম,

আমরা আইওএম এর ফিকহ্ ক্লাসে ও ওয়েবসাইট থেকে জেনেছি নামাজে তেলওয়াতের সময় কুরআনে থাকা সুরা গুলির ক্রম মেনে পড়তে হয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই সুরা গুলি এই ক্রমে কি কোরআন লিপিবদ্ধ করে সংকোলন করার আগে থেকেই ছিলো? এক ব্যাক্তির কাছে শুনেছি এই ক্রম গুলি মানুষের বানানো। তাই এটা মেইনটেইন করার কোন দরকার নেই। কোরআনের ক্রম সম্পর্কে কি কোন প্রমাণ বা দলিল আছে আমাদের কাছে?

দ্বিতীয়ত, আমরা জেনেছি অযুর সময় অঙ্গ সমুহ ধৌত করার ক্রম অনুসরণ করা জরুরী নয়। আমাদের অফিসের টয়লেটের বাইরে কয়েকটা বেসিন আছে সেখানে আমরা অযু করে থাকি। এবং অযু শেষে টয়লেটে গিয়ে পা ধৌত করি। যদি অঙ্গ সমুহ ধৌত করার ক্রম মেইনটেইন করা জরুরী না হয়ে থাকে তাহলে টয়লেট থেকে ইসতেনজা সেরে পা ধুয়ে বের হয়ে পা ব্যতীত বাকি অঙ্গ ধৌত করলে কি অযু হয়ে যাবে?

জাযাকাল্লাহু খাইর।

1 Answer

0 votes
by (66,030 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

নামাযের রাকাতসমূহে সূরা পড়ার ক্ষেত্রে মৌলিক কয়েকটি কথা স্বরণ রাখতে হবে।

১) কুরআনে সুরার যেভাবে তারতীব বা সিরিয়াল আছে তার উল্টো করা যাবে না,বরং প্রথম রাকাতে যে সূরা পড়বে,পরের রাকাতে তার পরবর্তী সূরা পড়বে। কিন্তু প্রথম রাকাতে এক সূরা পড়ে, পরের রাকাতে উক্ত সূরার আগের কোন সূরা পড়া, যেমন প্রথম রাকাতে সূরা ফীল পড়া আর দ্বিতীয় রাকাতে সূরা হুমাজাহ পড়া মাকরূহ। কারণ এতে কুরআনের তারতীব পাল্টে দেয়া হচ্ছে। তাই প্রথমে এমন একটি সূরা দিয়ে শুরু করবে, যেন উক্ত সূরার পর পরের রাকাতে পড়ার মত কোন সূরা থাকে। তবে যদি ভুলে এমনটি করে তাহলে সমস্যা নেই।

২) এক সূরা পড়ার পর মাঝখানে এক সূরা বাদ দিয়ে পরের সূরা পড়া মাকরূহ্ তবে দুই সূরা বাদ দিয়ে পড়াতে কোন সমস্যা নেই।

যেমন, প্রথম রাকাতে সূরা ফীল পড়ার পর, দ্বিতীয় রাকাতে সূরা কুরাইশ বাদ দিয়ে সূরা মা’ঊন পড়া মাকরূহ। কিন্তু সূরা কাউসার বা কাফিরূন বা এর পরের সূরাগুলো পড়াতে কোন সমস্যা নেই।

ويكره فصله بسورة بين سورتين قرأهما فى ركعتين لما فيه من شبهة التفضيل والهجر، (مراقى الفلاح على هامش الطحطاوى، فصل فى المكروهات-287، الدر المختار مع الشامى- 2/269)

৩) কখনো ভুলে যদি সূরা নাস পড়ে ফেলে। তাহলে পরবর্তী সকল রাকাতে সূরা নাসই পড়বে। পূর্বের অন্য কোন সূরা পড়বে না। ভুলে অন্য সূরা পড়লে কোন সমস্যা নেই।

কুরআনের কারীমের সূরার সিরিয়াল রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাধ্যমেই সাহাবাগণ রাঃ পেয়েছেন। সুতরাং এতে সন্দেহ করার কোন সুযোগ নেই।

فَقَالَ عُثْمَانُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا يَأْتِي عَلَيْهِ الزَّمَانُ وَهُوَ تَنْزِلُ عَلَيْهِ السُّوَرُ ذَوَاتُ الْعَدَدِ فَكَانَ إِذَا نَزَلَ عَلَيْهِ الشَّىْءُ دَعَا بَعْضَ مَنْ كَانَ يَكْتُبُ فَيَقُولُ ضَعُوا هَؤُلاَءِ الآيَاتِ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا وَإِذَا نَزَلَتْ عَلَيْهِ الآيَةُ فَيَقُولُ ضَعُوا هَذِهِ الآيَةَ فِي السُّورَةِ الَّتِي يُذْكَرُ فِيهَا كَذَا وَكَذَا

উছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর উপর এমন এক যামানাও এসেছে যখন তাঁর উপর বহুসংখ্যক সূরা এক সঙ্গে নাযিল হয়েছে। ঐ যুগে তাঁর উপর কোন বিষয় নাযিল হলে ওয়াহী লেখকগণের কাউকে ডেকে তিনি বলতেন এ আয়াতগুলো যে সূরায় অমুক অমুক বিষয়ের উল্লেখ আছে, সে সূরায় অন্তর্ভূক্ত কর। কোন আয়াত নাযিল হলে বলতেন, এই আয়াতটি যে সূরায় অমুক অমুক বিষয়ের উল্লেখ আছে সে সূরায় অন্তর্ভূক্ত কর। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩০৮৫, মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন, হাদীস নং-২৮৭৫, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হাদীস নং-৩০৫৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৯৯]

تَرْتِيبُ السُّوَرِ هَكَذَا هُوَ عِنْدَ اللَّهِ فِي اللَّوْحِ الْمَحْفُوظِ عَلَى هَذَا التَّرْتِيبِ وَعَلَيْهِ كَانَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْرِضُ عَلَى جِبْرِيلَ كُلَّ سَنَةٍ

সূরার তারতীব এমনি। এমনি আছে আল্লাহর কাছে লওহে মাহফূজে। আর এ তারতীবের সাথেই প্রতি বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলকে শুনাতেন। [আলইতকান ফী উলুমিল কুরআন লিসসুয়ূতী-১/২১৭]

تَرْتِيبُ السُّوَرِ وَوَضْعُ الْآيَاتِ مَوَاضِعَهَا إِنَّمَا كَانَ بِالْوَحْيِ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: “ضَعُوا آيَةَ كَذَا فِي مَوْضِعِ كَذَا ” وَقَدْ حَصَلَ الْيَقِينُ مِنَ النَّقْلِ الْمُتَوَاتِرِ بِهَذَا التَّرْتِيبِ مِنْ تِلَاوَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمِمَّا أَجْمَعَ الصَّحَابَةُ عَلَى وَضْعِهِ هَكَذَا في المصحف

সূরার তারতীব এবং আয়াতসমূহকে যথাস্থানে রাখা এর পুরোটাই হয়েছে অহীর মাধ্যমে। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উক্ত আয়াতকে ওমুক স্থানে রাখো। এ বিষয়টি মুতাওয়াতির তথা নিরবচ্ছিন্ন সূত্র পরম্পরায় সুনিশ্চিত হয়েছে যে, এ তরতীবেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করতেন এবং এভাবে মুসহাফে সূরার তারতীব থাকা বিষয়ে সাহাবাগণের ইজমা বা ঐক্যমত্য সংঘটিত হয়েছে। [আলইতকান ফী উলুমিল কুরআন লিসসুয়ূতী-১/২১৬]

২. অজুতে ধারাবাহিকতার অর্থ হলো, আল্লাহ্ যে ধারাবাহিকতার সাথে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন সেভাবে অজু করা। আল্লাহ প্রথমে মুখমণ্ডল ধোয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, তারপর দু’হাত, তারপর মাথা মাসেহ করা এবং শেষে পা ধৌত করা।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا قُمۡتُمۡ اِلَی الصَّلٰوۃِ فَاغۡسِلُوۡا وُجُوۡہَکُمۡ وَاَیۡدِیَکُمۡ اِلَی الۡمَرَافِقِ وَامۡسَحُوۡا بِرُءُوۡسِکُمۡ وَاَرۡجُلَکُمۡ اِلَی الۡکَعۡبَیۡنِ

হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাজে দণ্ডায়মান হবে, তখন (তার পূর্বে বে-অজু থাকলে অজু করার জন্য) তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় কনুই সমেত ধৌত কর এবং মাথা মাসাহ কর ও পদযুগল টাখনু সমেত ধৌত কর।’ (মায়েদাহ, ৫/৬)

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহ শাস্ত্রবিদেরা বলেনএমন পরিস্থিতিতে অজু হয়ে যাবে। আলেমদের মতে অজুর অঙ্গগুলো ধোয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে মুখ, এরপর হাত ধোয়া অতপর মাথা মাসাহ করা এবং সবশেষে পা ধোয়া-এভাবে ধারাবাহিকতার সাথে অযু করা সুন্নত। এর প্রতি যত্নবান হতে হবে। তবে কখনো এই ধারাবাহিকতা ছুটে গেলে অজু শুদ্ধ হয়ে যাবে। পুনরায় অজু করতে হবে না।

(-মুসনাদে আহমদ ১/৫৯, হাদীস : ৪২১; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৬; কিতাবুল আছল ১/৩০; মাবসূত, সারাখসী ১/৫৫; বাদায়েউস সানায়ে ১/১১২; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১/২২০; আলবাহরুর রায়েক ১/২৭; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৮)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...