আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in সালাত(Prayer) by (3 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ।

আমার বয়স ২১ বছর চলছে। নামাজ রোজা আমি আমার ১১-১২ বছর থেকে পড়ি। না পড়লে গুনাহ হয়, আল্লাহ তায়ালা নারাজ হন, জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে, এগুলো জেনে নামাজ ছাড়তাম না।
তবে নামাজের গুরত্ব বুঝলেও নামাজে  রেগুলার ছিলাম না। মাঝে মাঝেই নামাজ পড়া হত না। পরে কাযা করতাম, আবার করতাম না।

বাড়িতে তেমন গুরুত্ব দিয়ে কেউ ফজর পড়ত না। ফজরের মাঝে মাঝে ওঠা হত না। বা অন্য সময় কিছু কাযা করতাম। রোযাও লাস্ট দুই-তিন-চার বছর সবগুলো রাখি।

কয়েক বছর হলো তাহাজ্জুদ আদায় করি মাঝে মাঝে।

আলহামদুলিল্লাহ, এখন ফজরে বা ফজরের আগে ঘুম থেকে উঠতে পারি।

কিন্তু আমার এখনো মাঝে মধ্যেই বিতির সালাত কাযা হয়ে যায়। মনে করি তাহাজ্জুদের সময় উঠে পরে নিব। ফজরের সময় তখন ঘুম ভাঙলেও উঠতে আলসেমি লাগে। এমন করে আর পড়া হয় না। কাজাও আদায় করা হয় না।
আমাকে কিছু উপদেশ দিবেন ইনশাআল্লাহ্।

আমার অনেক নামাজই আদায় করা হয় নাই আগের। সেগুলোরও সব বা অনেকগুলোরই কাযা করি নাই।
আর, আমি যদি তাহাজ্জুদের সময় উঠি, তবে কি সেই সময় নফল আদায় করব নাকি আগের কাযা আদায় করব?

আবার যোহরের সময় যে নফল সালাত আদায় করা হয়, সেই সময় কি আগের কাজার নিয়তে পড়ব নাকি নফল পড়ব?

নফল নাকি কাজাতে বেশি গুরুত্ব দিব?
closed

1 Answer

0 votes
by (65,970 points)
selected by
 
Best answer

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব:-

https://ifatwa.info/12227/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,

হানাফি মাযহাব মতে বিতির নামাযকে কা'যা করা ওয়াজিব।যেমন ইবনে আবেদীন শামী রাহ লিখেন,

فى تنوير الأبصار- وكذا حكم الوتر

وقال ابن عابدين، لأنه فرض عملى عنده (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب قضاء الفوائت-2/73، سعيد)

মসজিদের বা জনসম্মুখে বিতিরকে কা'যা করলে হাত উত্তোলন করে দোয়ায়ে কুনুত পড়ক যাবে না।

যেমন রদ্দুল মুহতারে বর্ণিত রয়েছে-

أما في القضاء عند الناس فلا يرفع حتى لا يطلع أحد على تقصيره. اه

বিতিরের নামাযকে যদি মসজিদে বা জনসম্মুখে কা'যা করা হয়,তাহলে কুনুতের সময় তাকবীর অবশ্যই বলা যাবে, তবে হাত উত্তোলন করা যাবে না।

হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,

، قالت أمّ المؤمنين عائشة -رضي الله عنها- أنّ النبيّ صلّى الله عليه وسلّم: (كان إذا غلبه نومٌ أو وجَعٌ عن قيامِ الليلِ صلَّى من النهارِ ثِنتي عشرةَ ركعةً)

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর যখন বেশ ঘুম চলে আসতো বা শারিরিক ক্লান্তি কারণে কিয়ামুল লাইল করতে পারতেন না তখন দিনে বার রা'কাত নামায পড়ে নিতেন।(সহীহ মুসলিম-৭৪৬)

আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/6278/

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী  বিতির নামাজেরও কাজা আদায় করতে হবে।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى

অনুবাদ-যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়, তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২)

 

ফুকাহায়ে আহনাফদের মতে বিতর নামাজের কাযা তিন রাকাত আদায় করতে হবে। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,

وفي الفتاوى رجل يقضي الفوائت فإنه يقضي الوتر وإن لم يستيقن أنه هل بقي عليه وتر أو لم يبق فإنه يصلي ثلاث ركعات ويقنت ثم يقعد قدر التشهد ثم يصلي ركعة أخرى فإن كان وترا فقد أداه وإن لم يكن فقد صلى التطوع أربعا ولا يضره القنوت في التطوع

ফাতাওয়ার কিতাব সমূহে বর্ণিত রয়েছে,একজন ব্যক্তি সে তার জীবনের ছুটে যাওয়া নামায সমূহের কা'যা করতেছে।তাহলে সে বিতিরেরও কা'যা করবে।যদি নিশ্চিত না থাকে যে,তার উপর কোনো বিতির কা'যা রয়েছে কি না?তাহলে সে তিন রা'কাত কা'যা পড়বে,এবং কুনুত করবে।অতঃপর তাশাহুদ পরিমাণ সময় বৈঠক করবে।অতঃপর আরো এক রাকাত পড়বে।যদি সেটা বিতির হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আদায় হয়ে যাবে।আর যদি বিতির না হয়ে থাকে,তাহলে তো সে চার রাকাত পড়েই নিয়েছে যা নফল হিসেবে গণ্য হবে।নফল নামাযে কুনুত করাতে কোনো সমস্যা নেই। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১২৫)

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

 প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে শেষ রাতে নিয়মিত জাগ্রত হতে না পারলে এশার ফরজ ও সন্নাতের পরই বিতির নামাজ পড়া আপনার জন্য উত্তম হবে ইনশাআল্লাহ।

 আপনি যেদিন থেকে বালেগ/বালেগাহ হয়েছেন, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কাজা নামাজের হিসাব করবেন। সেক্ষেত্রে চেষ্টার পরে অনুমানে কিছু ভুল হলে আশা করি আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন। আপনি এভাবে কাজা নামাজের নিয়ত করবেনঃ- "আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা রয়েছে, সে অনাদায়কৃত নামায সমূহের মধ্য থেকে প্রথম ফজরের নামাযকে এখন কাযা আদায় করছি”

হিসেব করে নিবেন যে, ওয়াক্ত কাজা হয়েছে? জোহরের নামাজ কয় ওয়াক্ত কাজা হয়েছে? আসরের নামাজ কয় ওয়াক্ত কাজা হয়েছে? মাগরিবের নামাজ কয় ওয়াক্ত কাজা হয়েছে? ঈশার নামাজ কয় ওয়াক্ত কাজা হয়েছে? বিতর কতদিনের কাজা হয়েছে? প্রবল ধারণার ভিত্তিতে খাতায় একটি হিসেবে লিখে নিবেন। হিসাবে ভূল হলেও আল্লাহ তায়ালা আপনাকে ক্ষমা করবেন ইনশাআল্লাহ।

এরপর প্রতিদিন নামাজ গুলির কাজা আদায় শুরু করবেন। আর সেই খাতা হতে হিসাব মাইনাস করবেন।  এভাবে আস্তে-ধীরে একদিন আপনার সমস্ত কাজা নামাজ উঠিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। এক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবেনা। আপনি শুধু মাত্র ফজর নামাজ গুলি আদায় করে শেষ করে নিয়ে তারপর অন্য নামাজের কাজা আদায় শেষ করতে পারেন।  আপনি ফজর কাযা গুলো আগে আদায় তারপর জোহর আদায় এভাবে ধারাবাহিক ভাবে আদায় করতে পারবেন। তিন তিন সময় নামাজ পড়া নিষিদ্ধ। সূর্যদয়, দ্বিপ্রহর ও সূর্যাস্তের সময়। এই তিন সময় ছাড়া যে কোনো সময় আপনি উমরী কাযা নামাজ আদায় করতে পারবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই।

 নফল নামাজ পড়লে অবশ্যই সাওয়াব পাবেন। তবে নফল নামাজের চেয়ে কাজা নামাজ আদায় করাই অধিক যুক্তিযুক্ত। যখন মনে হবে আপনার জিম্মায় এখন আরা কোনো কাজা নামাজ আবশিষ্ট নাই তখন অবশ্যই নফল নামাজের ইহতেমাম করবেন। তবে আপনি কাযা নামাজ আদায় করার পাশাপাশি নফল নামাজও আদায় করতে পারেন ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...