জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পর্দা করা ফরজ।
সুতরাং কোনো বালেগ পুরুষ কোনো বালেগ নারীকে পড়াতে পারবেনা।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]
ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}
কোনো বালেগাহ মহিলাকে প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষেত্রে মাসয়ালা হলোঃ
যদি বিশেষ প্রয়োজন হয়,অন্যত্রে প্রাইভেট পড়া মুশকিল হয়,এখানে প্রাইভেট পড়াইলে ফেতনার আশংকা যদি না থাকে,পুরোপুরি পর্দা করেই যদি মেয়ে পড়তে আসে,সকলেই যদি দৃষ্টির পুরোপুরি হেফাজত করে,এবং প্রাইভেট পড়ানোর পুরো টাইম যদি মেয়ের কোনো মাহরাম ব্যাক্তি তার কাছে বা সেই রুমেই অবস্থান করে,তাহলে প্রাইভেট পোড়ানো জায়েজ আছে।
বেগানা নারী-পুরুষ খালওয়াত তথা নির্জনে একাকী অবস্থান করতে পারবে না। হাদীসে একে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে.......
ﻻَ ﻳَﺨْﻠﻮﻥَّ ﺭَﺟُﻞٌ ﺑِﺎﻣْﺮَﺃﺓٍ ﺇِﻻَّ ﻭَﻣَﻌَﻬﺎ ﺫُﻭ ﻣَﺤْﺮَﻡ )
কোনো পুরুষ কোনো মহিলার সাথে মহিলার মাহরাম না থাকা অবস্থায় নির্জনে একাকী বসবাস করতে পারবে না।(সহীহ বুখারী-৫২৩৩;সহীহ মুসলিম-১৩৪১)
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عَاصِمٍ، حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ مُوَرِّقٍ، عَنْ أَبِي الأَحْوَصِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ "
আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। সে বাইরে বের হলে শাইতান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। — সহীহ, মিশকাত (৩১০৯), ইরওয়া (২৭৩), তা’লীক আলা ইবনি খুযাইমা (১৬৮৫)
আরো জানুনঃ
এক্ষেত্রে তাদের দিকে,তাদের জন্য শিক্ষকের দিকে তাকানোর বিধান হলোঃ
ফিতনার আশংকা থাকলে তো তাকাতেই পারবেনা।
যদি ফিতনার আশংকা না থাকে,তাহলে বিশেষ প্রয়োজনে তাকাইতে পারবে,তবে কোনো ভাবেই অন্য দৃষ্টিতে তাকানো যাবেনা।
কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে,
إِنَّ السَّمْعَ وَالبَصَرَ وَالفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا.
...নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয় এর প্রতিটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ৩৬
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
,
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
বালেগাহ মহিলা দের মাদ্রাসায় পুরুষ শিক্ষকের শিক্ষকতা অনেক ইসলামী স্কলারদের মতে সম্পুর্ন নাজায়েজ।
,
তবে কিছু ইসলামী স্কলার গন কিছু শর্তের ভিত্তিতে জায়েজ বলেছেন,
তার মধ্যে অন্যতম হলোঃ
পর্দার আড়ালে থাকা,
বিনা প্রয়োজনে কোনো কথা শুনতে পারবেনা।
ফিতনার বিন্দুমাত্র আশংকা না থাকা,ইত্যাদি।
,
.
শায়েখ আব্দুল্লাহিল হাদী বলেছেন
মহিলা মহিলা শিক্ষকের নিকট দ্বীনী ইলম ও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন করবে- এটাই সব চেয়ে নিরাপদ ও সঠিক পদ্ধতি। কিন্তু যদি মহিলা শিক্ষক না পাওয়া যায় তখন পর পুরুষের নিকট শর্ত সাপেক্ষে শিক্ষার্জন করা জায়েয আছে। যেমন,
– নির্জনতা অবলম্বন করা যাবে না।
-পূর্ণ পর্দা রক্ষা করতে হবে।
-মহিলাকে অন্তরালে থাকতে হবে।
-মহিলা কোমল কণ্ঠে কথা বলা থেকে দূরে থাকবে।
-তারা উভয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কথা বলবে না
-এবং সর্বোপরি ফেতনা থেকে দুরে থাকতে হবে।
এ সব শর্ত সাপেক্ষে পরপুরুষের নিকট দীনী ইলম বা দুনিয়াবি প্রয়োজনীয় বিষয় শিক্ষা অর্জন করা জায়েয আছে।
,
তবে কুরআন শিক্ষার বিষয়টি ভিন্ন। কুরআন শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষার অনুরূপ ভাবা ঠিক নয়। কারণ হাদিসে সুন্দর কণ্ঠে ও সুর করে কুরআন তিলাওয়াতের নির্দশে এসেছে। সুতরাং কোন মহিলা যখন পর পুরুষের কাছে সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তিলাওয়াত করবে তখন তা ফিতনার দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে-যা উভয়ের জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।
তাছাড়া কুরআনেও নারীদেরকে পরপুরুষদের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। দেখুন: সূরা আহযাব এর ৩২ নং আয়াত।
এ ক্ষেত্রে প্রখ্যাত সাহাবী আনজাশা রা. এর হাদিসটিও প্রণিধানযোগ্য।
তিনি সফর অবস্থায় মহিলাদের উপস্থিতিতে সুর করে কবিতা আবৃতি করে উট হাঁকাচ্ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তাকে নিষেধ করলেন। কারণ সুর মহিলাদের অন্তরে দ্রুত প্রভাব ফেলে। উক্ত হাদিসে তিনি মহিলাদেরকে কাঁচের পাত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কারণ মহিলারা গান ও সুরের প্রভাবে কাঁচের পাত্রের মত দ্রুত ভেঙ্গে যায় অর্থাৎ ফেতনায় পড়ে যায়।
ইমাম নওবী রহ. সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বলেন,কাযী ইয়ায, হারাবী সহ বহু আলেম এমনই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তবে হাদিসটির অন্য ব্যাখ্যাও আছে।
(শরহে সহীহ মুসলিম-ইমাম নওবী)
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের মাঝে ফিতনা সৃষ্টির সম্ভাবনা আছে- এমন সব ক্ষেত্র থেকে দুরে থাকা আবশ্যক।
আল্লামা সালেহ আল ফাউযান রহ বলেন:
لا ينبغي أن يدرّس الرجل النساء خصوصاً في القرآن؛ لأن المرأة سترتل القرآن وسترخم صوتها فيه وتتغنى به كما قال النبي صلى الله عليه وسلم :
( من لم يتغنّ بالقرآن فليس منا ) وهي أمام رجلٍ أجنبي؛ لأن هذا محلّ فتنة، والله سبحانه وتعالى قال:
{ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ }
“পুরুষের জন্য মহিলাদেরকে বিশেষত: কুরআন পড়ানো উচিৎ নয়। কারণ মহিলাটি পর পুরুষের সামনে তারতীল তথা ধীর-স্থীরভাবে সুন্দর কণ্ঠে তিলাওয়াত করবে, সুর করবে যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالقُرْآنِ فَلَيْسَ مِنَّا
‘যে ব্যক্তি সুন্দর কণ্ঠে কুরআন পড়ে না, সে আমাদের দলভূক্ত নয়।’ (অর্থাৎ আমাদের ত্বরীকা ও নীতি-আদর্শ বহির্ভূত।) [আবূ দাউদ, উত্তম সূত্রে-রিয়াদুস সালেহিন/১০১৪] আর এটাই হল, ফেতনার স্থান। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ
“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে।” (সূরা আহযাব: ৩২)”
★সুতরাং প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই বোন,
কুরআন হিফজের জন্য মহিলা শিক্ষক দুষ্প্রাপ্য নয়,তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত কোনো ভাবেই জায়েজ বলে আখ্যায়িত করা যায়না।