আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
41 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (27 points)
আমার পৈত্রিক গ্রামের বাড়িতে কেও থাকি না, বাবা একশহরে আর চাকরী সুবাদে আমি অন্য শহরে,  আমার হয়তো পৈতৃক বাড়িতে ফিরে গিয়ে স্থায়ী হওয়ার ইচ্ছা এখন নাই। কিন্তু এমন যদি হয় চাকরী নাই সব দিকে সমস্যা তাহলে সেখানে থাকার মতো বসত বাড়ি আছে। এমনিতে চাকুরী স্থলেই আমি ও আমার স্ত্রী বাড়ি ভাড়া করে থাকি। বিভিন্ন অফিশিয়াল কাজে   স্থায়ী ঠিকানা গ্রামের বাড়ির কথাই লিখি। সেই হিসাবে আমার ওতনে আসলী আমার গ্রামের বাড়ি, ওতনে ইকামাহ আমার ভাড়া বাড়ি।

১. আমার গ্রামের বাড়ি থেকে আমার বর্তমান বসবাসের স্থান সবচেয়ে ছোট রাস্তায় ৮৮ কিলো মিটার দূরে। এখন আমি যদি বাড়ি এসে আমার কয়েক দিনের জন্য কোনো কাজে আমার ভাড়া বাড়িতে যাই তাহলে সে কদিন কি কসর করবো। ( যেমন অফিসের কাজে সেখানে গেলাম ২ দিন অফিস করে চলে এলাম। ইত্যাদি)
২. আমার স্ত্রী তার ওতনে আসলী হিসাবে কোন জায়গা বিবেচনা করবে?

৩.  আমি আমার ভাড়া বাড়ি থাকাকালীন সিদ্ধান্ত নেই আগামী ৯ তারিখ ঢাকা যাবো (যা আমার ভাড়া বাড়ি ও স্থানী বাড়ি সব থেকেই ৭৮ কিলো +) এখন গত পরশু রাতে আমি আমার ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেই, এবঁ গতকাল সকালে গ্রামের বাড়ি পৌছি, এবং রাতে সেখান থেকে সিলেট শহরে আসি, এবং আজকে আমার ভাড়া বাড়িতে যাবো। এখন আমার জিজ্ঞেসা হলো এই যে গ্রামের বাড়ি থেকে বের হলাম আমার ভাড়া বাড়ির উদ্দেশ্যে সেখানে তো ১০ থেকে আবার ঢাকা যাওয়ার প্লান,  ঢাকায় ২-৩ দিন থাকবো মানে এই দফা ভাড়া বাড়িও ১৫ দিন থাকা হবে না তার আগেই ঢাকায় যাবো সেখান থেকে ফিরে আসবো, তাহলে এই দশ দিন আমার ভাড়া বাড়িতে কি কসর করতে হবে?
 কসর অপশনাল থাকলে তো সমস্যা ছিলো না, কিন্তু কসর করা তো বাধ্যতামূলক এই বিষয়ে কি করবে, মূলনীতি অনুসারে বললে পরবর্তী সিদ্ধান্ত সহজ হতো।
জাজাকাল্লাহ
৪. আমার ভাড়া বাসা থেকে নতুন করে কসরের নিয়ম তো ওতনে ইকামার মতোই। যে সেকান থেকে নতুন করে ৭৮+ কিলো ১৫ এর কম দিনের জন্য গেলে কসর হবে। নাহয় ভাড়া বাড়ির এলাকায় আছিই ধরা হবে ও মুকিম থাকবো। আমার ধারনা ঠিক আছে?

৫. ভাড়া বাড়ি থেকে পৈতৃক বাড়ি আসা যাওয়ার পথে মধ্যের এক শহরে ১/২ দিনের জন্য থাকলে সেখানে আমি কসর করি৷ এই আমল কি ঠিক?

1 Answer

0 votes
by (592,140 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم 

শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
    
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।

শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।

৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয় কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়তে পার। এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।

বিস্তারিত জানুনঃ- 

সেক্ষেত্রে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করতে হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,

وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ

‘আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের নামাজ কসর করাতে কোনো দোষ নেই।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১০১]

হাদিস শরীফে এসেছে,

عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ

ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি  উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)

আরো জানুনঃ 



فى رد المحتار- (الوطن الاصلى يبطل بمثله) ( قوله إذا لم يبق له بالأول أهل ) أي وإن بقي له فيه عقار قال في النهر : ولو نقل أهله ومتاعه وله دور في البلد لا تبقى وطنا له وقيل تبقى كذا في المحيط وغيره (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صلاة المسافر، مطلب في الوطن الأصلي ووطن الإقامة-2/614)
সারমর্মঃ ওয়াতনে আসলিতে যদি স্থায়ী আর না থাকার নিয়ত করে,এবং  পরিবার সামানা যদি সেখানে আর না থাকে,তাহলে সেটা আর ওয়াতনে আসলি থাকবেনা। 
অন্যথায় সেটা ওয়াতনে আসলি হিসেবেই থাকবে।   

আরো জানুনঃ

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে আপনার গ্রামের বাড়ি মূলত আপনার স্থায়ী বাড়ি তথা ওয়াতনে আসলি। আপনি চাকরির সুবাদে যে বাসায় ভাড়া থাকেন, সেখানে তো নিজের স্ত্রী সন্তান সহ আজীবন থাকার নিয়ত করেননি।

সুতরাং বিষয়টি এমন হয়ে থাকলে আপনি যদি গ্রামের বাড়িতে এসে কয়েক দিনের জন্য কোনো কাজে আপনার সেই ভাড়া বাড়িতে যান,সেক্ষেত্রে সে কদিন কসর করবেন।

(০২)
আপনি যেটি বিবেচনা করবেন,সেটিই তার ওয়াতনে আসলি।

হ্যাঁ যদি আপনার স্ত্রী তার বাবার বাসায় থাকে এবং বাবার বাসাতেই আজীবন সন্তানসহ থাকার নিয়ত করে, সেক্ষেত্রে তার বাবার বাসা তার জন্য স্থায়ী বাসা হবে।

(০৩)
এই দশ দিন আপনার ভাড়া বাড়িতে কসর করতে হবে।

(০৪)
আপনি যদি গ্রামের বাসা হতে ভাড়া বাসায় এসে ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি দিন থাকার নিয়ত করেন,সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত আপনার ধারনা ঠিক। 

(০৫)
এই আমল ঠিক।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...