আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (6 points)
আমাদের ছাত্রী হোস্টেলের সাপ্তাহিক তালীম প্রোগ্রামে, তালীম শেষে সবাই প্রথমে বক্তার সাথে মুসাফাহ করে। তারপর একে অপরের সাথে মুসাফাহ করে। এবং বক্তার সাথে মুসাফাহ করার পূর্বে শ্রোতাগন একে অপরের সাথে মুসাফাহ করতে চান না। তাদের ভাষ্যমতে প্রথমে সবাইকে বক্তার সাথে মুসাফাহ করতে হবে তারপর শ্রোতাগন একে অপরের সাথে মুসাফাহ করতে পারবেন।
প্রশ্ন-

১. প্রথমে মধ্যমনি (বক্তার) সাথে মুসাফাহ করতে হবে এটা কি শরীয়তসম্মসত?

২. বক্তার সাথে সবাই মুসাফাহ করার কারনে আমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়, সেক্ষেত্রে আমি কি ততটুকু সময়ের মধ্যে আশেপাশের বোনদের সাথে মুসাফাহ করে তারপর বক্তার সাথে মুসাফাহ করতে পারবো?

৩. সাপোজ বক্তা তার সামনের ১০০ বোনের সাথে মুসাফাহ করতে করতে ১০০ বার মুসাফাহ'র দু'আ পড়তে হবে? নাকি ১ বার পড়ে ৫/১০ জন বোনের সাথে মুসাফাহ করতে পারবে? অনবরত মুসাফাহ'র দু'আ পড়তে থাকায় অনেক বোনের কুশলাদি জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে থাকলেও জিজ্ঞেস করা যায়না, যেহেতু দ্রুততম সময়ের মধ্যে সব বোনেরাই চান একবার মুসাফাহ করতে!

1 Answer

0 votes
by (64,590 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম

জবাব,

পরস্পরের মাঝে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ইসলামের শিক্ষা। সম্পর্ক বজায় রাখতে আমরা বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করি। এরমধ্যে একে অপরের সাথে দেখা সাক্ষাৎ একটি পদ্ধতি। সাক্ষাতের সময় প্রথমেই আমরা সালাম বিনিময় করি এবং মুসাফাহা করি। এ সম্পর্কে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা একে অপরের সঙ্গে মুসাফাহা করো, এতে তোমাদের অন্তরে বিদ্যমান প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে। একে অন্যকে হাদিয়া প্রদান করো, এতে হৃদ্যতা সৃষ্টি হবে এবং শত্রুতা ও ঘৃণা দূরীভূত হবে।’ (আবু দাউদ : ৫২১২)।

হজরত বারা বিন আযেব রা. বলেন, ‘পরিপূর্ণ অভিবাদন হল তোমার ভাইয়ের সঙ্গে তোমার মুসাফাহা করা।’-(আল-আদাবুল মুফরাদ ৯৬৭)

হাদিসে আরো বর্ণিত হয়েছে, ‘দুজন মুসলমান যখন সাক্ষাতে মুসাফাহা করে, তাদের হাতের বন্ধন মুক্ত হওয়ার আগেই দুজনের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হয়।’ -(মুসনাদে আহমাদ : ৩/১৪২)

আল্লাহর রাসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে-কেরাম নিয়মিত মুসাফাহা করতেন। আবুল খাত্তাব কাতাদাহ রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আনাস রা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূল সা.-এর সাহাবিদের মধ্যে কি মুসাফাহা করার প্রথা ছিল। তিনি বলেন, হ্যাঁ। (বুখারি, ৬০৬৩)

আরেক হাদিসে হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমাদের মধ্যে থেকে কেউ তার ভাইয়ের সঙ্গে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথানত করবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে? তিনি বললেন, না। সে বলল, তাহলে কি তার হাত ধরে তার সাথে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তিরিমিজি, ২৭২৮)

নিয়ম হলো- দুই হাতে মুসাফাহা করা। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, (মুসাফাহার সময়) আমার হাতটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুই হাতের মধ্যে ছিল। (বুখারি, হাদিস : ৫/২৩১১) আর মুসাফাহার সময় এ দোয়া পড়বে ‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ মুসাফাহার পর হাত বুকে লাগানোর বিধান নেই, জরুরিও নয় বটে।

পুরুষদের মতো মহিলাদের জন্য পরস্পর মুসাফাহা করা সুন্নত। এই সুন্নতের প্রচলন এবং প্রচার-প্রসার করা উত্তম কাজ। তবে পুরুষের জন্য নিজ স্ত্রী ব্যতীত অন্য মাহরাম মহিলার সাথে মুসাফাহা থেকে বিরত থাকা ভালো। তবে কারণবশত কুমন্ত্রণা ও কুধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা অবস্থায় শুধু মাহরামদের সাথে মুসাফাহার অনুমতি থাকলেও গাইরে মাহরামের সাথে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। আলফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ ৪/২৬৬০, আদদুররুল মুখতার ৬/৩৬৭

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

১. মুসাফাহা করা সুন্নত। বক্তার সাথে মুসাফাহা যে করতেই হবে বিষয়টা এরকম নয়। মুসাফাহা করলে সওয়াব না করলে গুনাহ হবে না। তবে সময় সুযোগ থাকলে মুসাফাহা করা উচিত। কিন্তু এই ধারণা ভুল যে বক্তার সাথে মুসাফাহা করার পূর্বে অন্য কারো সাথে মুসাফাহা করা যাবে না। বরং সালাম বিনিময়ের পর  যে কারো সাথে মুসাফাহা করা যায়।

২. আপনি আপনার মতো করে যে কারো সাথে মুসাফাহা করতে পারেন। এতে কোন সমস্যা নেই।

৩. ওলামায়ে কেরাম মুসাফাহার দোয়া হিসেবে এ দোয়াটি উল্লেখ করেছেন,

يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ

উচ্চারণ: ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়ালাকুম

অর্থ: আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে ক্ষমা করুন। 

সময় থাকলে প্রত্যেকের সাথে মুসাফাহার সময় উক্ত দোয়াটি পড়া মুস্তাহাব। কিন্তু সময়ের স্বল্পতার করণে প্রতিজনের বেলায় না পড়লে গুনাহ হবে না। কারণ, এটি মুস্তাহাব আমল। এজাতীয় আমলকে ফরজ বা ওয়াজিব মনে করা যাবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...