আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
1,084 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (29 points)
আসসালামু আলাইকুম,

তাবলিগ জামাতে কিছু কিছু ফজিলতের কথা বলা হয় (যেমনঃ  একবার সুবহানাল্লাহ বললে ৪৯ কোটি বার বলার সওয়াব হয়, এক ওয়াক্ত নফল নামাজ পরলে ৪৯ কোটি নফল নামাজ পড়ার সওয়াব হয়, এক টাকা দান করলে ৭লক্ষ টাকা দানের সওয়াব , আরো আসরের সময় গাশতের আদব বলার সময় যেসব ফজিলত গুলো বলা হয় ) এই সকল ফজিলতের কথা কি কুরআন সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত?
মুসাফির ব্যাক্তির আমলের ফজিলতের/আমলের ব্যাপারে কোন বই পড়লে  ভাল জানতে পারব? অথবা আপনি সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু বলে দিলে উপকৃত হবো!

1 Answer

+1 vote
by (574,050 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
আল্লাহর রাস্তায় বের হলে অনেক সওয়াব হবে। অনেক হাদীসে সংখ্যাও উল্লেখ করা হয়েছে সওয়াবের। তবে নির্দিষ্ট করে ৪৯ কোটি বলাটা উচিত হবে না। তবে অগণীত সওয়াব হয় আল্লাহর রাস্তায় বের হলে এটা নিশ্চিত। 
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبعمائة ضعف 

অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়।
(সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪)

উলামায়ে কেরামগন বলেছেনঃ   
মূলত উক্ত ফযীলতটি দু’টি হাদীসের সমন্বয়ে বলা হয়ে থাকে। একই হাদীস একসাথে উক্ত ফযীলত বর্ণিত হয়নি। হাদীস দু’টি দেখলেই উপরোক্ত ফযীলত সত্য হবার প্রমাণ আমাদের কাছে পরিস্কার হয়ে যাবে।

১ম হাদীস

عن خريم بن فاتك : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم من أنفق نفقة في سبيل الله كتبت له بسبع مائة ضعف

অনুবাদ-হযরত খুরাইম বিন ফাতেক রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন কিছু খরচ করে তা তার আমলনামায় ৭ শত গুণ হিসেবে লেখা হয়।

সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-১৬২৫
সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪৬৪৭
সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৫
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৯০৩৬
মুসনাদে তায়ালিসী, হাদীস নং-২২৭
মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৯৭৭০
শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩২৯৪

এখালে লক্ষ্য করুন। এক টাকা খরচ করলে এখানে সাত শত গুণ সওয়াব লেখার কথা এসেছে। এবার দ্বিতীয় হাদীসটি দেখুন-

২য় হাদীস

عن سهل بن معاذ عن أبيه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال إن الذكر في سبيل الله تعالى يضعف فوق النفقة بسبع مائة ضعف قال يحيى في حديثه بسبع مائة ألف ضعف

হযরত সাহল বিন মুয়াজ রাঃ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহকে স্মরণ করার সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় খরচের সওয়াবের তুলনায় ৭ লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।

অন্য বর্ণনায় এসেছে সাত লক্ষ গুণ বৃদ্ধি করে দেয়া হয়।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৬১৩
আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৪০৫
মুসনাদুস সাহাবা ফি কুতুবিত তিসআ, হাদীস নং-১৫১৮৬
কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১০৮৭৯
জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-৬৮৫৮)

এবার উভয় হাদীসকে একত্র করুন। প্রথম হাদীস দ্বারা জানতে পারলাম। এক টাকা খরচে সওয়াব পাওয়া যায় ৭ শত গুণ। আর দ্বিতীয় হাদীসে জানতে পারলাম খরচের তুলনায় অন্য আমলে পাওয়া যায় ৭ লক্ষ্য সওয়াব বেশি। এর মানে হল, একটি আমল করলে প্রতি আমলে খরচ করলে যত পাওয়া যেত তারও সাত লক্ষ্য গুণ বেশি সওয়াব।

তাই এবার ৭ শতকে ৭ লক্ষ্য দিয়ে গুণ দিন। ৭০০×৭০০০০০=৪৯,০০,০০,০০০।

তাহলে কি বুঝা গেল? আল্লাহর রাস্তায় একটি আমল করা ঊনপঞ্চাশ কোটি আমল করার সওয়াবের সমতূল্য।

উল্লেখিত হাদীস দু’টি সনদ হিসেবে দুর্বল। কিন্তু জাল নয়। আর সকল গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণ একমত দুর্বল হাদীস ফযীলতের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য। তাই এ ফযীলত বলতে কোন সমস্যা নেই। জাযাকাল্লাহ।

(০২)
সফর বা ভ্রমণকারীর জন্য মহান আল্লাহ তাআলা অনেক অনুদান ও সাদাকা ঘোষণা করেছেন। ইসলামের বিধি-বিধান পালনে তাদের জন্য অনেক কিছুকেই তিনি সহজ করে দিয়েছেন। যাতে তারা ইসলামের কোনো বিধি-বিধানকেই নিজেদের জন্য কষ্টকর মনে না করেন।

আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের জন্য নামাজে ছাড় দিয়েছেন। সফর অবস্থায় ৪ রাকাআত বিশিষ্ট নামাজকে ২ রাকাআত করে দিয়েছেন। যাতে বান্দার কষ্ট না হয়।

আবার সফর অবস্থায় বান্দার জন্য রমজানের ফরজ রোজা না রাখারও অনুমতি রয়েছে। যা পরবর্তী সময়ে আদায় করে নিলেই হয়।

মহান আল্লাহ তাআলা মুসাফিরের প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি মুসাফিরের দোয়া ফিরিয়ে দেন না। সফর অবস্থায় সে যে দোয়া করে আল্লাহ তাআলার তার সে দোয়াই কবুল করে নেন।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ بَكْرٍ السَّهْمِيُّ، عَنْ هِشَامٍ الدَّسْتَوَائِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنْ أَبِي جَعْفَرٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ " ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ يُسْتَجَابُ لَهُنَّ لاَ شَكَّ فِيهِنَّ دَعْوَةُ الْمَظْلُومِ وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ لِوَلَدِهِ " .

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও সন্তানের জন্য পিতার দোয়া।

তিরমিযী ১৯০৫, ৩৪৪৮, ১৫৩৬, আহমাদ ৭৪৫৮, ৮৩৭৫, ৯৮৪০, ১০৩৩০, ১০৩৯২, সহীহাহ ৫৯৬, রাওদুন নাদীর ৫১০, সহীহ আবু দাউদ ১৩৭৪। তাহকীক আলবানীঃ হাসান।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...