জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান হলো ওয়াতনে আসলী (স্থায়ী নিবাস) তে এক দিনের জন্য গেলেও পুরো নামাজ পড়তে হবে।
ব্যক্তি নিজের স্থায়ী নিবাসে গেলে কখনো মুসাফির হয়না। স্থায়ী নিবাস বলে এমন স্থানকে-“যেখানে ব্যক্তির বসবাসের জন্য স্থায়ী গৃহ থাকে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে যেখানে সর্বদার জন্য থাকার নিবাস হয়”।
শরীয়তের বিধান হলো কোন স্থানে গিয়ে সেখানে যদি কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত না করে, তাহলেও কসর পড়তে হবে। বেশি দিন থাকার নিয়ত করলে কসর করতে পারবে না।
৭৮ কিলোমিটার হল সফরের দূরত্ব। এর কম নয়। সুতরাং কেউ যদি ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরের নিয়তে বের হয় কেবল সেই ব্যক্তি কসর পড়তে পার। এরচে’কম দূরত্বের সফরের জন্য কসর পড়া জায়েজ নয়।
বিস্তারিত জানুনঃ-
সেক্ষেত্রে চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ কসর করতে হবে। কুরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে,
وَإِذَا ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَنْ تَقْصُرُوا مِنَ الصَّلَاةِ
‘আর যখন তোমরা যমীনে সফর করবে, তখন তোমাদের নামাজ কসর করাতে কোনো দোষ নেই।’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১০১]
হাদিস শরীফে এসেছে,
عِيسَى بْنُ حَفْصِ بْنِ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ أَبِيهِ قَالَ صَحِبْتُ ابْنَ عُمَرَ فِى طَرِيقٍ – قَالَ – فَصَلَّى بِنَا رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ أَقْبَلَ فَرَأَى نَاسًا قِيَامًا فَقَالَ مَا يَصْنَعُ هَؤُلاَءِ قُلْتُ يُسَبِّحُونَ. قَالَ لَوْ كُنْتُ مُسَبِّحًا أَتْمَمْتُ صَلاَتِى يَا ابْنَ أَخِى إِنِّى صَحِبْتُ رَسُولَ اللَّهِ – ﷺ – فِى السَّفَرِ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ أَبَا بَكْرٍ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ وَصَحِبْتُ عُمَرَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَصَحِبْتُ عُثْمَانَ فَلَمْ يَزِدْ عَلَى رَكْعَتَيْنِ حَتَّى قَبَضَهُ اللَّهُ تَعَالَى وَقَدْ قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ (لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِى رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
ইবনে উমর রাযি. বলেন, নিশ্চয় আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সাথে সফর করেছি, তিনি মৃত্যুবরণ করার আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি আবু বকর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও আমরণ সফরে ২ রাকাতই পড়েছেন। আমি উমর রাযি. এর সাথেও সফর করেছি তিনি মৃত্যু পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আমি উসমান রাযি. এর সাথেও সফর করেছি, তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সফরে ২ রাকাতের বেশি পড়েন নি। আর আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, আমি তোমাদের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাঝে রেখেছি উত্তম আদর্শ। (মুসলিম ১৬১১)
আরো জানুনঃ
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার স্থায়ী বাসা (ওয়াতনে আসলী) কোনটা?
আপনি যদি স্থায়ী ভাবে স্বামীর বাসাতেই স্বামী ও সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত করেন,নিজের বাবার বাসায় সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত না করেন, অর্থাৎ স্থায়ীভাবে স্বামীর বাসাতেই থাকার নিয়ত করেন, সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্বামীর স্থায়ী গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে সেখানে আপনি একদিন থাকলেও আপনি মুকিম,আপনি সেখানে পূর্ণ নামাজ আদায় করবেন।
আর যদি আপনি স্বামীর বাসাকে স্থায়ী বাসা হিসেবে গণ্য না করেন বরং নিজের বাবার বাসাকেই স্থায়ী বাসা হিসেবে গণ্য করেন,নিজের বাবার বাসাতেই থাকেন আর নিজের বাবার বাসাতেই সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত করেন, সেক্ষেত্রে আপনার স্থায়ী বাসা বাবার বাসা।
স্বামীর বাসা আপনার স্থায়ী বাসা (ওয়াতনে আসলি)
সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্বামীর স্থায়ী গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে সেখানে আপনি ১৫ দিনের কম থাকার নিয়ত করলে আপনি মুসাফির হিসেবে কসর নামাজ আদায় করবেন।
فى رد المحتار- (الوطن الاصلى يبطل بمثله) ( قوله إذا لم يبق له بالأول أهل ) أي وإن بقي له فيه عقار قال في النهر : ولو نقل أهله ومتاعه وله دور في البلد لا تبقى وطنا له وقيل تبقى كذا في المحيط وغيره (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب صلاة المسافر، مطلب في الوطن الأصلي ووطن الإقامة-2/614)
সারমর্মঃ ওয়াতনে আসলিতে যদি স্থায়ী আর না থাকার নিয়ত করে,এবং পরিবার সামানা যদি সেখানে আর না থাকে,তাহলে সেটা আর ওয়াতনে আসলি থাকবেনা।
অন্যথায় সেটা ওয়াতনে আসলি হিসেবেই থাকবে।
আরো জানুনঃ
(০২)
আপনি যদি স্থায়ী ভাবে নিজ গ্রামের বাসাতেই স্বামী ও সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত করেন,নিজের স্বামীর বাসায় সন্তানাদি নিয়ে আজীবন থাকার নিয়ত না করেন, অর্থাৎ স্থায়ীভাবে নিজ গ্রামের বাসাতেই থাকার নিয়ত করেন, সেক্ষেত্রে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে চট্রগামের নিজ গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলে
সেখানে আপনি একদিন থাকলেও আপনি মুকিম,আপনি সেখানে পূর্ণ নামাজ আদায় করবেন।
(০৩)
মানুষের স্থায়ী বাসা হয় একটা।
যেখানে সে তার স্ত্রী সন্তান নিয়ে আজীবনের জন্য থাকার নিয়ত করে।
সুতরাং আপনার স্থায়ী বাসা কোনটা?
আপনার বাবার গ্রামের বাসা আপনারা স্থায়ী বাসা না হয়ে থাকলে সেক্ষেত্রে সেই গ্রামের বাসায় আপনি কোথা থেকে সফর করে এসেছেন?
কয়দিনের জন্য এসেছেন?
সব কিছু কমেন্ট বক্সে স্পষ্ট করলে জবাব প্রদানে সুবিধা হতো।