আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ,
আমার কাছের এক বন্ধুর পক্ষ থেকে প্রশ্ন করছি।
সে তার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে। তালাক এর ব্যাপারে মোটামোটি জেনেশুনেই আমল করেছে। একসাথে যে ৩ তালাক দেওয়া কঠিন গুনাহ এর কাজ, এই কারণে শুধু এক তালাক-ই দিয়েছে। উভয়পক্ষের কয়েকজন-কে স্বাক্ষী হিসেবে সামনে রেখেই মুখে উচ্চারণ করে বলেছে:
“আমি অমুকের মেয়ে, অমুককে তালাক দিলাম”।
তার ইচ্ছে ছিল, এক সাথেই ৩ তালাক দেওয়ার। সে চাচ্ছিলো, কোনোভাবে যদি ভবিষ্যতে এই মেয়ের প্রতি সফ্ট-কর্ণার তৈরী হয়, তাহলে যেন ফিরিয়ে আনার কোনো ধরণের পথ-ই খোলা না থাকে। সে এতই ক্ষুব্ধ এই মেয়ের প্রতি। কারণ, মারাত্মক রকমের জঘন্য অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল তার স্ত্রী। কয়েকবার সুযোগ দেওয়ার পর-ও ঐ মেয়ে পাপ-কাজ বন্ধ করে নি। নষ্টামির চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল সে। এই ব্যাপারে মেয়ের মা-বাবা, আপন ভাই সবাই জানে। মারাত্মক চারিত্রিক দোষে দোষী হয়ে গিয়েছিলো এই মেয়ে, বিস্তারিত বুঝে নিন আপনারা।
যেহেতু পবিত্র অবস্থায় ১ তালাক দিয়েছিলো, সে চাচ্ছে ঐ মেয়ের পরবর্তী প্রত্যেক মাসেই হায়েজ এর পর পবিত্র অবস্থায় বাকি দুই তালাক-ও দিয়ে দিয়ে দিবে, একটা করে । ধরুন ১ তালাক দিয়েছিলো ডিসেম্বর এর ১৫ তারিখ। এরপর পরবর্তী মাসিক এর দিন ছিল আনুমানিক জানুয়ারির ৭ তারিখ পর্যন্ত। স্বামী হিসেবে তার ধারণা আছে, স্ত্রীর মাসিক সাইকেল এর ব্যাপারে, সে অনুযায়ী অনুমান করেছে সে। মেয়ের পরিবার থেকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে নি, এইটা জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে তার নেই। বা কাউকে দিয়ে জেনে নেওয়ার-ও দরকার বোধ করছে না।
১) জানুয়ারী-র ৭ তারিখ যদি মাসিক শেষ হয়, তাহলে আনুমানিক জানুয়ারির ১০/১১ তারিখে সে দ্বিতীয় তালাক দিতে পারবে কি না ?
২) কিভাবে এই আমল করবে ? মেয়ের পরিবারের কাউকে, যেমন ভাইকে কি জানিয়ে দিবে, যে, সে দ্বিতীয় বার তালাক দিয়েছে একাকী, মুখে উচ্চারণ করে ? এরপর, জাস্ট জানিয়ে দিবে ? সে যদি একাকী তালাক দেয়, স্ত্রীর নাম উল্লেখ করতে হবে ? কি বাক্য দিয়ে এই কাজ করবে ? যেমন: অমুক এর মেয়ে অমুক কে আমি দ্বিতীয় তা..... দিলাম - এইভাবে বলা যাবে ?
৩) এই ক্ষেত্রে ঐ মেয়েকে কি অনলাইনে মেসেঞ্জারে বা WhatsApp-এ জানিয়ে দিবে, যে, তাকে তালাক আর একবার (দ্বিতীয়বার এর মতো) দেওয়া হয়েছে ?
৪) অবশিষ্ট থাকলো আর একটি তালাক। এটি কি পরবর্তী পবিত্র অবস্থায় অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ এর পর ৬/৭ তারিখের দিকে দিতে পারবে ?
সে তাড়াতাড়ি ৩ তালাক পূর্ণ করতে চাচ্ছে, কোনোভাবেই যেন ঐ মেয়ের প্রতি কোনো ধরণের সফ্ট-কর্ণার তৈরী না হয়।
৫) আমার বন্ধুর আত্মীয়, পরিচিতরা স্বাভাবিকভাবেই জানতে পারবে, সে তালাক দিয়েছে স্ত্রীকে। কারণ জানার আগ্রহ থাকবে অনেকের মধ্যেই, ঠিক কি কারণে সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উত্তরে কি বলা উচিত তার ? যে, তার স্ত্রীর চরিত্রগত সমস্যা ছিল, সে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিল - এই টাইপ কি বলা যাবে ? যুক্তিযুক্ত কারণ না বললে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারে যে ছেলের সমস্যা ছিল, বৌ সামলাইতে পারে নাই, ইত্যাদি ইত্যাদি।
৬) তাদের একটি পুত্রসন্তান আছে, বয়স আনুমানিক ১২ বছর। আমার বন্ধু চাচ্ছে না, ছেলেকে কখনোই তার মায়ের সংস্পর্শে পাঠাতে। ছেলের মা চাচ্ছে, কয়েকদিন এর জন্য ছেলেকে তার নানার বাসায় পাঠাতে, প্রতি মাসে। এই ক্ষেত্রে করণীয় কি ? প্রসঙ্গত, ১ম তালাক দেওয়ার আগে থেকেই মেয়ে তার বাবার বাসায় অবস্থান করছিলো।
৭) পরবর্তীতে যদি ঐ মেয়ে-র পরিবার মেয়ের জন্য অন্য কোথাও বিয়ের সম্পর্ক করতে যায়, তখন ঐ ছেলেপক্ষের কেউ যদি আমার বন্ধুর কাছে জানতে চায়, মেয়ে-টা কেমন ছিল, কি কারণে ডিভোর্স দিয়েছিলো সে, সেই ক্ষেত্রে আমার বন্ধু তাদের কাছে কতটুকু, কিভাবে, কি বলবে ? বা বলা উচিত ?
৮) ঐ মেয়ে আমার বন্ধুর বিবাহিত জীবনকে একেবারে জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছিলো। এখন, ছেলের কারণে অন্তত যোগাযোগ রাখতে হবে প্রাক্তন শশুর-বাড়ির সাথে। ছেলের মায়ের সাথে আমার বন্ধু কি WhatsApp-এ প্রয়োজনীয়, একান্ত জরুরতের খাতিরে যোগাযোগ করতে পারবে, ছেলের বিষয়ে ?
৯) আমার বন্ধু তার প্রাক্তন শশুর-শাশুড়ি-কে কিভাবে সম্বোধন করবে, প্রয়োজনের খাতিরে যদি যোগাযোগ করতেই হয় ? কি বলে ডাকবে ? আংকেল-আন্টি টাইপ ?
আপাতত এইগুলোর উত্তর দিবেন প্লিজ।
ওয়াস্সালামু-আলাইকুম।