ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া
রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু
بسم
الله الرحمن الرحيم
জবাবঃ-
ইস্তেখারা হলো- কোনো বিষয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য
চাওয়া, কল্যাণ চাওয়া।
ইস্তেখারার মাধ্যমে মূলত দুই বিষয়ের মধ্যে উত্তমটি বাছাই করতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া
হয়। ইস্তেখারা সুন্নত আমল। যা সহিহ বুখারির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অনেকে এটাকে মোস্তাহাব
বলেছেন।
জাবের বিন আবদুল্লাহ আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (স.) তাঁর সাহাবিদের সব বিষয়ে
ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি
তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজের উদ্যোগ
নেয়, তখন সে যেন
দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। অতঃপর এই দোয়া (নিচে উল্লেখ করা হয়েছে) পড়ে। (সহিহ বুখারি:
৫৯৪০, তিরমিজি:
৬৪৮)
প্রশ্ন হলো- নিয়ম অনুযায়ী ইস্তেখারা করার পরও স্বপ্নে কোনো নির্দেশনা
না পেলে কী করতে হবে? এর উত্তরে
আলেমরা বলেন, আসলে ইস্তেখারার
জন্য স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়। মনে উদয় হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে
শুধুই স্বপ্নেই সমাধান বুঝা যাবে বিষয়টি এমন নয়। মূল বিষয় হলো- ইস্তেখারা শেষে ঘুমানোর
পর জাগ্রত হয়ে মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে
আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল
মনে করবে। (তুহফাতুল আলমায়ি: ২/৩৩৮, বেহেশতি জেওর)
ইস্তেখারা নামাজের পদ্ধতি হলো- প্রথমে পবিত্র হয়ে ইস্তেগফার
করে দোয়া-দরুদ পাঠ করে নিজের যে সমস্যা আছে তা নিয়তে রেখে সুরা ফাতেহার সঙ্গে যেকোনো
সুরা মিলিয়ে দুই রাকাত নামাজ ধীর-স্থিরভাবে আদায় করা এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়া।
ইস্তেখারার দোয়া
اللَّهُمَّ
إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ
فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ،
وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ
خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ (أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي
وَآجِلِهِ)ـ فَاقْدُرْهُ لِي، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي
فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ(أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ)ـ
فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ
رَضِّنِي بِهِ
অর্থ: ‘হে আল্লাহ,
আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি।
আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে
সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞানে
আমার এ কাজ (এখানে নিজের প্রয়োজনের নাম উল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার
বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর
হলে, আপনি তা আমার
জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ, আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার
দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা
ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান
ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি
আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে
কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’ (সহিহ বুখারি:
৬৮৪১, তিরমিজি:
৬৪৮)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. ইস্তেখারার
জন্য স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়। মনে উদয় হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে
শুধুই স্বপ্নেই সমাধান বুঝা যাবে বিষয়টি এমন নয়। মূল বিষয় হলো- ইস্তেখারা শেষে ঘুমানোর
পর জাগ্রত হয়ে মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে।
২. নবীজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়। এ বিষয়ে ইস্তেখারা করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং
আপনার উচিত নবীকে স্বপ্নে দেখার জন্য যে সকল আমল রয়েছে, অধিকহারে উক্ত আমলগুলো
করতে থাকা। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন: https://ifatwa.info/8353
৩-৪. প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেসব অঙ্গ অযু বা গোসলের ভিতর ধোয়া ফরজ, সেসব স্থানে ট্যাটু লাগানো হলে আর তা সেই
স্থানে পানি পৌছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে অযু বা গোসল হবেনা। নতুবা অযু হয়ে যাবে।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তার/ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহনযোগ্য হবে।
শরীরের যে স্থানে ট্যাটু করা হয় সেখানে
রক্ত জমাট বাধে-যা নাপাক এবং রক্তের সাথে বিভিন্ন রঙ কেমিক্যাল, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি মিশ্রণের ফলে
সেখানে চামড়ার উপর একটা আস্তরণ তৈরি হয়। যার কারণে ওজু-গোসলের সময় চামড়া পানি পৌঁছে
না। তাই ট্যাটু কৃত স্থানটা নাপাক হওয়ার পাশাপাশি ওজু-গোসলের সময় সেখানে পানি পৌঁছতে
বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় ওজু-গোসল শুদ্ধ হবে না।ফলশ্রুতিতে সালাতও শুদ্ধ হবে
না।
তবে কেউ যদি এর বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার
কারণে এমনটি করে থাকে তাহলে তা জানার সাথে সাথে অনুতপ্ত হৃদয়ে খাঁটি ভাবে তাকে আল্লাহর
নিকট তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং শরীরে লাগানো উল্কি/ ট্যাটু উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা
করতে হবে।
বর্তমানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অথবা আধুনিক চিকিৎসা
পদ্ধতিতে লেজারের সাহায্যে স্থায়ী ট্যাটু রিমুভ করা সম্ভব। অবশ্য লেজারের মাধ্যমে ধীরে
ধীরে এ কাজটি সম্পাদন করা হয় এবং এক সাময় ট্যাটুর চিহ্ন মুছে যায়। ইদানীং এটি আমাদের
দেশেও করা হচ্ছে।
কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টার পরও কোন কারণে যদি
তা রিমুভ করা সম্ভব না হয় অথবা বিলম্ব হয় বা এতে অঙ্গহানি বা শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা
থাকে তাহলে সে অবস্থাই যথারীতি ওজু-গোসল এবং সালাত অব্যাহত রাখতে হবে। এ কারণে কোনভাবেই
সালাত পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। খাঁটি অন্তরে তওবার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন
বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ।