আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
40 views
in পবিত্রতা (Purity) by (14 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম হুজুর।
আমার নিম্নবর্নিত প্রশ্নের জবাব দেওয়ার অনুরোধ রইলো।

প্রশ্ন ১: অনেকেই বলে থাকে ইস্তখারার পর বিভিন্ন স্বপ্ন দেখে। ইস্তেখারার পর স্বপ্ন দেখা কি সহীহ্ হাদিস দিয়ে প্রমাণিত?

প্রশ্ন ২: আমি আমার একটি ব্যক্তিগত বিষয় সমাধানের জন্য রাসূল (সা) থেকে স্বপ্নে নির্দেশনা চাই। এই উদ্দেশ্য আমি কি ইস্তেখারা করতে পারবো?

প্রশ্ন ৩: আমার শরীরে ট্যাটু ছিলো। তিনবার লেজার করে ৯৫% এর মতো ট্যাটুর কালি রিমুভ করেছি। অবশিষ্ট হালকা সীমিত ৫% কালি কিছুতেই তুলতে পারছি না চেষ্টার পরেও।
আমি লেজার করে প্রচন্ড অসুস্থ। চামড়া পুড়ে গিয়েছে এবং ইনফেকশন হয়েছে। এই জায়গায় আর কোনো চিকিৎসা করালে আমার অনেক ক্ষতি হবে।
আমার এই শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আমার ফরজ গোসল এবং নামাজ কি আদায় হবে?

প্রশ্ন ৪: আর যদি আমার নামাজ এবং ফরজ গোসল না হয় তাহলে নামাজ ছেড়ে দেওয়া কি বৈধ হবে?

1 Answer

0 votes
by (63,450 points)

 

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাবঃ-

ইস্তেখারা হলো- কোনো বিষয় নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া, কল্যাণ চাওয়া। ইস্তেখারার মাধ্যমে মূলত দুই বিষয়ের মধ্যে উত্তমটি বাছাই করতে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়। ইস্তেখারা সুন্নত আমল। যা সহিহ বুখারির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অনেকে এটাকে মোস্তাহাব বলেছেন।

জাবের বিন আবদুল্লাহ আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুল (স.) তাঁর সাহাবিদের সব বিষয়ে ইস্তেখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজের উদ্যোগ নেয়, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। অতঃপর এই দোয়া (নিচে উল্লেখ করা হয়েছে) পড়ে। (সহিহ বুখারি: ৫৯৪০, তিরমিজি: ৬৪৮)

প্রশ্ন হলো- নিয়ম অনুযায়ী ইস্তেখারা করার পরও স্বপ্নে কোনো নির্দেশনা না পেলে কী করতে হবে? এর উত্তরে আলেমরা বলেন, আসলে ইস্তেখারার জন্য স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়। মনে উদয় হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে শুধুই স্বপ্নেই সমাধান বুঝা যাবে বিষয়টি এমন নয়। মূল বিষয় হলো- ইস্তেখারা শেষে ঘুমানোর পর জাগ্রত হয়ে মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে। (তুহফাতুল আলমায়ি: ২/৩৩৮, বেহেশতি জেওর)

ইস্তেখারা নামাজের পদ্ধতি হলো- প্রথমে পবিত্র হয়ে ইস্তেগফার করে দোয়া-দরুদ পাঠ করে নিজের যে সমস্যা আছে তা নিয়তে রেখে সুরা ফাতেহার সঙ্গে যেকোনো সুরা মিলিয়ে দুই রাকাত নামাজ ধীর-স্থিরভাবে আদায় করা এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়া।

ইস্তেখারার দোয়া

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ (أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ)ـ فَاقْدُرْهُ لِي، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي ـ(أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ)ـ فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ رَضِّنِي بِهِ

অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত। হে আল্লাহ, আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (এখানে নিজের প্রয়োজনের নাম উল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন। হে আল্লাহ, আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’ (সহিহ বুখারি: ৬৮৪১, তিরমিজি: ৬৪৮)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. ইস্তেখারার জন্য স্বপ্ন দেখা জরুরি নয়। মনে উদয় হওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ইস্তেখারার মাধ্যমে শুধুই স্বপ্নেই সমাধান বুঝা যাবে বিষয়টি এমন নয়। মূল বিষয় হলো- ইস্তেখারা শেষে ঘুমানোর পর জাগ্রত হয়ে মন যেদিকে সায় দিবে, বা যেদিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে, সেটিই ফলাফল মনে করবে।

২. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সৌভাগ্যের বিষয়।  এ বিষয়ে ইস্তেখারা করার কোন প্রয়োজন নেই। বরং আপনার উচিত নবীকে স্বপ্নে দেখার জন্য যে সকল আমল রয়েছে, অধিকহারে  উক্ত  আমলগুলো করতে থাকা। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে দেখুন: https://ifatwa.info/8353  

৩-৪. প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেসব অঙ্গ অযু বা গোসলের ভিতর ধোয়া ফরজ, সেসব স্থানে ট্যাটু লাগানো হলে আর তা সেই স্থানে পানি পৌছাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে অযু বা গোসল হবেনা। নতুবা অযু হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ডাক্তার/ত্বক বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহনযোগ্য হবে।

শরীরের যে স্থানে ট্যাটু করা হয় সেখানে রক্ত জমাট বাধে-যা নাপাক এবং রক্তের সাথে বিভিন্ন রঙ কেমিক্যাল, রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি মিশ্রণের ফলে সেখানে চামড়ার উপর একটা আস্তরণ তৈরি হয়। যার কারণে ওজু-গোসলের সময় চামড়া পানি পৌঁছে না। তাই ট্যাটু কৃত স্থানটা নাপাক হওয়ার পাশাপাশি ওজু-গোসলের সময় সেখানে পানি পৌঁছতে বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এ অবস্থায় ওজু-গোসল শুদ্ধ হবে না।ফলশ্রুতিতে সালাতও শুদ্ধ হবে না।

তবে কেউ যদি এর বিধান সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এমনটি করে থাকে তাহলে তা জানার সাথে সাথে অনুতপ্ত হৃদয়ে খাঁটি ভাবে তাকে আল্লাহর নিকট তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং শরীরে লাগানো উল্কি/ ট্যাটু উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা করতে হবে।

 বর্তমানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অথবা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে লেজারের সাহায্যে স্থায়ী ট্যাটু রিমুভ করা সম্ভব। অবশ্য লেজারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এ কাজটি সম্পাদন করা হয় এবং এক সাময় ট্যাটুর চিহ্ন মুছে যায়। ইদানীং এটি আমাদের দেশেও করা হচ্ছে।

কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টার পরও কোন কারণে যদি তা রিমুভ করা সম্ভব না হয় অথবা বিলম্ব হয় বা এতে অঙ্গহানি বা শারীরিক ক্ষয়-ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সে অবস্থাই যথারীতি ওজু-গোসল এবং সালাত অব্যাহত রাখতে হবে। এ কারণে কোনভাবেই সালাত পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। খাঁটি অন্তরে তওবার কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...