আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
34 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (14 points)
আসসালামুয়ালাইকুম,

আমরা দুই ভাই, আমি ছোট। আমার বাবা মারা গেছেন ৩ মাস আগে। বাবা ৫ বছর আগে ব্যাংকে ৩০ লক্ষ টাকা সঞ্চয়পত্র করে রেখে গেছেন। সেখান থেকে প্রতি মাসে সুদ আসে যেটা আমার মা খরচ করেন।
আমার বড় ভাই অস্ট্রেলিয়া থাকেন। এখন বড়ভাই চাচ্ছেন ২ মাস পর মাকে অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যেতে। ওখানে যেতে হলে ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হয়। বাবার রেখে যাওয়া টাকাটা সেই বাবদ দেখাচ্ছেন, যদিও মূল টাকা খরচ করছেন না।

ব্যাংক ব্যালেন্স দেখানো হয়ে গেলে, অর্থাৎ মায়ের বিদেশ যাওয়ার কাগজ রেডি হয়ে গেলে, আমি চাচ্ছি সেই টাকাটা তুলে ওয়ারিশ অনুযায়ী বণ্টন করে নিতে। আমি আমার ভাগের কিছু টাকা দিয়ে ব্যবসা করতে চাচ্ছি এবং বাকি টাকা দিয়ে জমি কিনে রেখে দিতে চাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া আমার অংশের টাকা দিয়ে ব্যাংকের সুদ গ্রহণ করা হোক, সেটাও চাচ্ছি না।

কিন্তু আমার বড় ভাই চাচ্ছেন মা জীবিত থাকতে এই টাকা ভাগ না করতে। পরে আবার বিদেশ যাওয়ার সময় যদি ব্যাংক ব্যালেন্স দেখাতে হয়, যেন এই টাকা প্রদর্শন করতে পারেন। তাছাড়া মা জীবিত থাকতেই টাকা ভাগ করা হচ্ছে- এই ব্যাপারটাও তাঁদের কাছে দৃষ্টিকটু।

আমার মাও এই বিষয়ে মনঃক্ষুণ্ণ। যদিও তিনি মূল টাকা খরচ করছেন না, কিন্তু সুদ গ্রহণ করছেন। আমার যুক্তি হলো সুদ বন্ধ করা, এবং ব্যাংকে রাখার ফলে টাকার যে অবক্ষয় হচ্ছে, সেটা না করে ব্যবসা+জমিতে বিনিয়োগ করা যেন ভবিষ্যতে লাভবান হতে পারি ইনশাআল্লাহ।

যদিও আমার মা, ভাই বলেছেন যে আমাকে ব্যবসার জন্য যে টাকা লাগে সেটা ঋণ দিবেন, কিন্তু আমি সম্পত্তি বণ্টনের সিদ্ধান্তে অটল।

প্রশ্ন ১- মা জীবিত থাকতে এই সম্পদ বণ্টন করা জায়েয হবে কি?

প্রশ্ন ২- মা এবং ২ ছেলের মাঝে ৩০ লক্ষ টাকার বণ্টন কিভাবে হবে? কে কত টাকা পাবে জানাবেন দয়া করে।

জাযাকুমুল্লাহ খইরন।

1 Answer

0 votes
by (64,500 points)

ওয়া ‘আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্ল-হি ওয়া বারাকা-তুহু।

বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম।

জবাবঃ

https://ifatwa.info/64869/ নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,

জীবিত অবস্থায় ওয়ারিশদের মাঝে সম্পত্তি দিলে সেটাকে হেবা বলে, মৃতবরনের পর সম্পত্তির ভাগকে মিরাছ বলে।

ব্যক্তি জীবিত এবং সুস্থ্য থাকা অবস্থায় তার মালিকানাধীন সম্পদ যাকে ইচ্ছে দান করতে পারে। যেখানে ইচ্ছে খরচ করতে পারে। এতে তার পূর্ণ অধিকার রয়েছে।

,

ব্যক্তি জীবিত থাকা অবস্থায় তার অর্জিত সম্পদের একক মালিকানা তার হাতেই থাকে। তাতে যাচ্ছে তাই হস্তক্ষেপের অধিকার তার রয়েছে। এতে কেউ হক দাবী করার অধিকার রাখে না। তার মালিক তার সন্তান বা অন্য কেউ নয়। হ্যাঁ, মৃত্যুর পরের কথা ভিন্ন। তখন শরয়ী নীতিমালা অনুপাতে সম্পদ বন্টন করতে হয়। সে সময় ওয়ারিশগন নীতি অনুসারে সম্পদের দাবী করতে পারবেন। তবে জীবদ্দশায় কেহ সম্পদ দিয়ে গেলে সেটি হিবা তথা গিফট।

,

যদি কোনো ব্যাক্তি জীবিত অবস্থায় তার সম্পদ সন্তানদের দিয়ে যেতে চায়, সেক্ষেত্রে নিয়ম হলোঃ

প্রথমে নিজের বাকি জিবনের জন্য যাহা কিছু রাখতে চায়, ততটুকু সম্পদ রেখে দিবে, যাতে করে পরবর্তীতে মুখাপেক্ষী না হতে হয়। অতঃপর স্ত্রী জীবিত থাকলে তাকে  সম্পদের আট ভাগের এক ভাগ দিবে। অবশিষ্ট সম্পদ তার সন্তানদের মাঝে বরাবর করে বন্টন করে দিবে।

এই বরাবর করে বন্টন করা উত্তম। যদি মিরাছের নিয়ম অনুযায়ী মেয়েকে ছেলের তুলনায় অর্ধেক দেয়, সেটিও জায়েজ আছে।

,

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

  النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ أبَاهُ أتَى بِهِ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: إِنِّي نَحَلْتُ ابْنِي هَذَا غُلاَماً كَانَ لِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَهُ مِثْلَ هَذَا ؟» فَقَالَ: لاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: فَأَرْجِعهُ وَفي رِوَايةٍ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَفَعَلْتَ هذَا بِوَلَدِكَ كُلِّهِمْ ؟ قَالَ: لاَ، قَالَ: اِتَّقُوا الله وَاعْدِلُوا فِي أَوْلاَدِكُمْ فَرَجَعَ أَبِي، فَرَدَّ تِلْكَ الصَّدَقَةَ . وفي روايةٍ : فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَا بَشيرُ أَلَكَ وَلَدٌ سِوَى هَذَا ؟» فَقَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «أكُلَّهُمْ وَهَبْتَ لَهُ مِثْلَ هذَا ؟» قَالَ: لاَ، قَالَ: فَلاَ تُشْهِدْنِي إِذاً فَإِنِّي لاَ أَشْهَدُ عَلَى جَوْرٍ وفي روايةٍ : «لاَ تُشْهِدْنِي عَلَى جَوْرٍ» . وفي رواية : «أَشْهِدْ عَلَى هذَا غَيْرِيثُمَّ قَالَ: «أَيَسُرُّكَ أَنْ يَكُونُوا إِلَيْكَ فِي البِرِّ سَواءً؟» قَالَ: بَلَى، قَالَ: «فَلا إِذاً» . متفق عليه

 নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁর পিতা তাঁকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে হাজির হয়ে বললেন, ‘আমি আমার এই ছেলেকে একটি গোলাম দান করেছি। [কিন্তু এর মা আপনাকে সাক্ষী রাখতে বলে।]’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমার সব ছেলেকেই কি তুমি এরূপ দান করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তা ফেরৎ নাও।’’

,

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমার সব ছেলের সঙ্গেই এরূপ ব্যবহার দেখিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা কর। সুতরাং আমার পিতা ফিরে এলেন এবং ঐ সাদকাহ [দান] ফিরিয়ে নিলেন।’’

,

আর এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বাশীর! তোমার কি এ ছাড়া অন্য সন্তান আছে?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাদের সকলকে কি এর মত দান দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ [রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] বললেন, ‘‘তাহলে এ ব্যাপারে আমাকে সাক্ষী মেনো না। কারণ আমি অন্যায় কাজে সাক্ষ্য দেব না।’’

,

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমাকে অন্যায় কাজে সাক্ষী মেনো না।’’

,

অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এ ব্যাপারে তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে সাক্ষী মানো।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এ কথায় খুশী হবে যে, তারা তোমার সেবায় সমান হোক?’’ বাশীর বললেন, ‘জী অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এরূপ করো না।’’

(সহীহুল বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০, মুসলিম ১৬২৩, তিরমিযী ১৩৬৭, নাসায়ী ৩৬৭২-৩৬৮৫, আবূ দাউদ ৩৫৪২, ইবনু মাজাহ ২৩৭৫, ২৩৭৬, আহমাদ ১৭৮৯০, ১৭৯০২, ১৭৯১১, ১৭৯৪৩, মুওয়াত্তা মালিক ১৪৭৩)

,

অন্য বর্ণনায় এসেছে হযরত নোমান ইবনে বশীর (রাযি.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা (সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে) তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো। তোমাদের সন্তানদের মাঝে ইনসাফ করো।’ (সহীহ বুখারী : ১/৩৫২; সুনানে আবুদাউদ : ৩৫৪৪)

,

আরো জানুনঃ

https://ifatwa.info/6405/

,

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

,

১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত টাকার মালিক যেহেতু আপনার বাবা ছিলেন। তাই তিনি মারা যাওয়ার পর উক্ত টাকার মালিক মিরাস হিসাবে আপনার মা ও আপনারা দুই ভাই হয়ে গিয়েছেন। সুতরাং আপনার মা উক্ত টাকার একক মালিক না। তাই এভাবে ব্যাংকে রেখে সুদ খাওয়া জায়েজ হবে না। সুতরাং আপনারা উক্ত টাকার মিরাস ভাগ করে নিতে পারেন।

আর আপনার বাবার কে কে নিকট আত্মীয় জীবিত আছেন তা বললে মিরাস বন্টনের ক্ষেত্রে সুবিধা হতো।

,

২. আপনার বাবার মিরাস পাবেন এমন ব্যক্তি আপনারা ছাড়া অন্য কেউ যদি না থাকেন তাহলে উক্ত টাকা বন্টন হবে-

আপনার মা – ৩৭৫০০০ টাকা

আপনি পাবেন – ১৩১২৫০০ টাকা

আপনার ভাই পাবেন - ১৩১২৫০০ টাকা


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (14 points)
মিরাসের হকদার কে কে জানাবেন প্লিজ?

আমার দাদা-দাদি জীবিত নেই। ১জন ফুফু আর ৩ জন চাচা জীবিত আছেন। ওনারা কি মিরাসের হকদার হবেন? 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...