আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
65 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম, আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবেন ইনশাআল্লাহ।
১) আমার কিছু ভুলের জন্য আমার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করেছে। একসময় বুঝে না বুঝে আমি তাকে কষ্ট দিয়েছি। সেগুলোর কারনে সে আমাকে আর ভালোবাসে না,তাই নিজে ভালো থাকার জন্য আরেকটা বিয়ে করছে। এখন আমি অনেক কষ্টে আছি আলহামদুলিল্লাহ। আমার প্রশ্ন হল এই কষ্ট কী আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা নাকি আমার কৃতকর্মের ফল?
২) আমার স্বামী তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছেই থাকে। প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে আমাদের সময় দেয়। সে বলে যেহেতু তোমার প্রতি আমার আকর্ষণ কাজ করে না, তাই আমি তার সাথে সময় কাটাই বেশি, তার কাছে সে মানসিক শান্তি পায়। এখন কথা হলো সে যেহেতু সমতা করছে না, আমি যদি আমার হক আদায় না করার কারণে তাকে ক্ষমা করি,তাহলে আল্লাহ কী তাকে ক্ষমা করবে? নাকি এজন্য আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবে?
৩) সমতা কী শুধুমাএ ভরনপোষণ আর রাত্রিযাপনের? ভরনপোষণের ক্ষেএে যখন যার যা লাগবে তা এনে দিলেই হবে নাকি দুইজনকে সবকিছু সমান দিতে হবে?
৪) সে যেহেতু ভালো থাকার জন্য বিয়ে করেছে, তাই দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে বেশি সময় কাটাচ্ছে। যেমন তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, কাজ করতে গেলে তাকে সাথে নিয়ে যাওয়া, কাজ ব্যতীত দিনের যাবতীয় সময় তাকে দেওয়া। সে বলে তোমাকে তো ভরনপোষণ দিচ্ছি, আর তোমার সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগেনা, ভালো যার সাথে লাগে তাকে বিয়ে করেছি তাকেই সময় দিবো। এতে কী তার গুনাহ হবে?  নাকি তার মন চাইছে তাই তার সাথে বেশি সময় কাটাতে পারবে?

৫) স্বামীর ভালোবাসা বা তার দেওয়া কষ্ট কী রিজিকের অন্তর্ভুক্ত? আমি তার কাছে থেকে কতটুকু সময় বা ভালোবাসা পাবো এটা কী তাকদীরের লিখন? আমি কী এভাবে কল্পনা করতে পারবো যে আমার যতটুকু সময় তকদীরে লেখা আছে আমি ততটুকুই পাবো?

৬) আমার নিজের কাছে অপরাধী মনে হয়, শুধু মনে হয় বিয়ের শুরু থেকে বনিবনা হতো, তাহলে হয়তো এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। আমি কী করে তার সাথে খারাপ আচরণ করলাম। আমার জন্য আমার সন্তানটা পিতার সবটুকু ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমি কী ভুল ভাবছি নাকি আমার সন্তানের তাকদীরে বাবার যতটুকু সময় বা ভালোবাসা লেখা আছে ততটুকুই পাবে?

৭) আমার স্বামী চায় আমরা মানে তার দুই স্ত্রী মিলেমিশে থাকি।আমার কী ঐ মেয়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে? আর আমার সন্তান কী ঐ মেয়েকে মা বলে ডাকতে পারবে?
৮) আমার স্বামী একটি ক্লিনিকে চাকরি করে ২০ হাজার টাকা বেতনে, সে ডাক্তার, প্রতি শুক্রবার সে ক্লিনিকে যায় না, আবার মাঝে মাঝেও যায় না।  ক্লিনিকের কেউ কিছু বলে না, সে না গেলে। এখন প্রশ্ন হল তার ইনকাম কী হালাল হচ্ছে?

1 Answer

0 votes
by (581,790 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/6683 নং ফাতওয়ায় বর্ণিত রয়েছে ,
শরীয়তের বিধান মতে একাধিক স্ত্রীর মাঝে যদি ইনছাফ করতে পারে,তাহলে প্রয়োজনের স্বার্থে একাধিক বিবাহ করতে পারবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন
فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلاث ورباع 
তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)।(সুরা : নিসা, আয়াত-৩)

দ্বিতীয় বিয়ে করার ইসলামী শর্ত বেশ কঠিন অনেক কড়া। আগের স্ত্রীর সব ধরনের হক আদায়ের পর নতুন বিয়ের পরেও সমান তালে সব অধিকার পালন করার আত্মবিশ্বাস থাকলেই কেবল যৌক্তিক কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়।
قال اللہ تعالی:فإن خفتم ألا تعدلوا فواحدة الآیة (سورہ نسا، آیت:۳)
 আল্লাহতায়ালা বলেন, একাধিক বিয়ের সুবিধা যাদের আছে, তারা যদি সম অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভীত হও, তাহলে এক বিয়ে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক। 
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/6683

একাধিক স্ত্রীর মাঝে দুই বিষয়ে সমতা রক্ষা করা অতীব প্রয়োজন। স্ত্রীদের সঙ্গে রাতযাপন ও ভরণ-পোষণ। 

এ দুই অধিকার সব স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমানভাবে স্বামীকে পালন করে যেতে হবে। কোন স্ত্রী সুন্দর বা অসুন্দর, আর কোনটি কুমারী বা বিধবা তা পার্থক্য করা যাবে না। 

কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি মনের ভালোবাসা বেশি হওয়া, আবার অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হওয়া তা সমতার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, এটি মনের বিষয়, আর মনের ওপর কারও কোনো অধিকার নেই। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে শুধু রাতযাপন ও খরচাপাতি এ দুই বিষয়ে সমতা ধর্তব্য। এটাই হলো একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষার ইসলামি শরিয়তের বিধান। 

হাদিসে আছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করো না। (তিরমিজি : ১১৭০, আবু দাউদ : ২১৩৬)।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,
কোনো ব্যাক্তির যদি একাধিক বিবাহ বাস্তবেই খুবই প্রয়োজন হয়, বর্তমান স্ত্রী দ্বারা যদি তার শারিরীক চাহিদা ও অন্যান্য আবশ্যকীয় হক আদায় না হয়,আর সেই একাধিক স্ত্রীর চাহিদা পূরন করতেও সক্ষম হয়,তাদের ভরনপোষণ এর ব্যপারেও পূর্ণ সক্ষম হয়,আর একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়তের শর্তাবলী পূর্ণ ভাবে মানার উপরেও সক্ষম হয়,তার জন্য একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলাম অনুৎসাহিত নয়।

বরং ইসলাম এক্ষেত্রে তাকে একাধিক বিবাহে উৎসাহ প্রদান করে।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,
(০১)
আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা হিসেবেই ধরতে পারেন।

(০২)
এক্ষেত্রে সে শাস্তির উপযুক্ত হবে।

তবে আপনি যদি সন্তুষ্টি চিত্তে তাকে একেবারে মন থেকে ক্ষমা করে দেন,আর সেও যদি খালেস দিলে তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে কবরে যেতে পারে,সেক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করতে পারেন।

তবে এটি একান্তই আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা।

(০৩)
উপরে উল্লেখ রয়েছে,
কোনো ব্যাক্তির যদি একাধিক বিবাহ বাস্তবেই খুবই প্রয়োজন হয়, বর্তমান স্ত্রী দ্বারা যদি তার শারিরীক চাহিদা ও অন্যান্য আবশ্যকীয় হক আদায় না হয়,আর সেই একাধিক স্ত্রীর চাহিদা পূরন করতেও সক্ষম হয়,তাদের ভরনপোষণ এর ব্যপারেও পূর্ণ সক্ষম হয়,আর একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়তের শর্তাবলী (ভরনপোষণ ও রাত যাপন) পূর্ণ ভাবে মানার উপরেও সক্ষম হয়,সেক্ষেত্রে সে একাধিক বিবাহ করতে পারে।

ভরনপোষণ এর ক্ষেত্রে দুইজনকেই সবকিছু সমান দিতে হবে।
উদাহরণ, ১ম স্ত্রীকে ৫০০ টাকার বাজার করে দিলে ২য় স্ত্রীকে ৫০০ টাকার বাজার করে দিতে হবে।

রাত্রিযাপন বলতে সপ্তাহ বা মাসের দিন গুলো পালি করে দিতে হবে,যে ১৫ দিন ১৫ রাত ১ম স্ত্রীর পালি,১৫ দিন ১৫ রাত ২য় স্ত্রীর পালি।

(০৪)
সে আপনার প্রতি জুলুম করছে।
সে এভাবে বেইনসাফি করতে পারেনা,ইসলাম অনুমোদন দেয়না। এতে তার গুনাহ হবে।

(০৫)
এটাও তাকদীরের লিখন।

(০৬)
তাকদিরের লিখন বলেই মেনে নেয়ার পরামর্শ থাকবে। 

(০৭)
আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথাই শরীয়ত নির্দেশ দিয়েছে।

সুতরাং সে যেহেতু আপনিও আত্মীয় (সতিন), সুতরাং তার সাথে আপনি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলবেন।

আপনার সন্তান ঐ মেয়েকে মা বলে ডাকতে পারবে। তবে চাইলে আন্টি বলেও ডাকতে পারে। ( প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে মা বলে ডাকা বাধ্যতামূলক নয়।)

(০৮)
এভাবে অনুপস্থিত থেকে পূর্ণ বেতন নেয়া হালাল হবেনা। হ্যাঁ যদি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সম্পর্কে ফায়সালা করে নেয় যে আনি মাসের এতোদিন অনুপস্থিত থাকবো,তারপরেও তারা যদি পূর্ণ বেতন দিতে রাজী হয়,সেক্ষেত্রে পূর্ণ বেতন নেয়া হালাল হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...