আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in সালাত(Prayer) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু,

সম্মানিত মুফতি সাহেব ,
আপনার কাছে আমার প্রশ্নটি হল , আমি বিভিন্ন ওয়াজ নসিয়তের মধ্যে শুনেছি যে, নামাজ কোন অবস্থাতেই ইচ্ছাকৃতভাবে কাজা করা যাবে না , নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করতে হবে যে, ওয়াক্ত মতো নামাজ আদায় করার ,

আমি নিজেও আলহামদুলিল্লাহ নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ওয়াক্তের মধ্যে নামাজ আদায় করার ! তা চাই আমি সফরে থাকি রেলগাড়িতে থাকি অথবা যেথায় থাকি না কেন ।

কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় যখন আমার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও সফরে যায় তখন ! স্ত্রীকে নামাজ পড়ানো খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে ! তাই আমি স্ত্রীকে নিয়ে খুব প্রয়োজন না হলে কখনোই সফরে যায় না !

এখন আমার আসল প্রশ্নটা হল , আমি তো আল্লাহর অনুগ্রহে যথাসাধ্য চেষ্টা করি ওয়াক্তের মধ্যেই রাস্তা ঘাটে ট্রেনে বাসে যেখানেই হোক না কেন ওয়াক্তের মধ্যে নামাজ আদায় করার!
এখন আমি একবার লোকাল ট্রেনে সফরে ছিলাম সাথে আমার স্ত্রী ও ছিল ! আমি তো কোন রকমে ট্রেনের ভিতর উপরের দিকে যেখানে সমান পত্র ব্যাগ রাখা হয় সেখানে বসে বসে নামাজ আদায় করে নিয়েছি !
কিন্তু আমার স্ত্রী সেতো আর উপরে উঠতে সক্ষম হয়নি , এবং ট্রেনের ভিতরে নিচেও কোথাও নামাজ পড়ার জায়গা ছিল না ।

এখন আমি আমাদের এলাকার পাশের মসজিদের এক ইমাম সাহেব তিনি মুফতি ! তানাকে এই অবস্থায় ফোন করি তিনি আমাকে বললেন যে সফরে কিছু পরিস্থিতিতে নামাজ কাজা করার সুযোগ রয়েছে !
এখন আমি জানতে চাচ্ছি যে সত্যিই কি সফরে কিছু পরিস্থিতিতে নামাজ কাযা করার সুযোগ রয়েছে ?!
যদি থাকে তো সে পরিস্থিতিটি কিভাবে বুঝব ! কিভাবে বুঝব যে এ অবস্থায় আমার নামাজ কাজা করা জায়েজ আছে !!

২) দ্বিতীয়তঃ অনেকে দেখেছি নামাজ কজার বিষয়ে দলিল দিয়ে থাকেন যে, খোন্দকের যুদ্ধ আল্লাহর রসুলের আসরের নামাজ কাযা হয়ে গিয়েছিল পরে সূর্যাস্ত হয়ে যাওয়ার পর তিনি তা কাযা আদায় করে নেন, এবং একটি সফরে আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তানার সাহাবায়ে কেরামের ফজরের সালাত ছুটে যায় ! পরে সূর্য ওঠার পর তারা  দ্রুতই সেই নামাজ কাযা আদায় করে নেই !

এখন আমার জানা মতে খোন্দকের যুদ্ধের পর সলাতুল খউফের বিধান নাযিল হয় ! এবং এই যুদ্ধের পর থেকে আর কখনোই যুদ্ধের কারণে নামাজ কাজা হয়নি !
এবং দ্বিতীয় ঘটনাটি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে আল্লাহ সুবহানা তা'য়ালা তানার রসুলের মাধ্যমে  আমাদেরকে অবগত করার জন্য ঘটনাটি ঘটিয়েছেন , যাতে আমরা জানতে পারি যে কখনো ঘুমের কারণে আমার ছুটে গেলে আমাদের কি করা উচিত!!

এমতবস্থায় উপরের দুটি দলিল দিয়ে পরিস্থিতির সাপেক্ষ সালাত কাজা করার মাসাআলা বের করা টি কতটা সঠিক হবে ?

জাযাকাল্লাহু খাইরা

1 Answer

0 votes
by (579,240 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- « إِذَا رَقَدَ أَحَدُكُمْ عَنِ الصَّلاَةِ أَوْ غَفَلَ عَنْهَا فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ يَقُولُ أَقِمِ الصَّلاَةَ لِذِكْرِى

অনুবাদ-যখন তোমাদের কেউ নামায ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, বা নামায থেকে গাফেল হয়ে যায়, তাহলে তার যখন বোধোদয় হবে তখন সে যেন তা আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-আমাকে স্মরণ হলে নামায আদায় কর।

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৬০১
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১২৯৩২
সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪১৮২)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ سَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَهُ الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلَالٍ: اكْلَأْ لَنَا اللَّيْلَ. فَصَلَّى بِلَالٌ مَا قُدِّرَ لَهُ وَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابُهُ فَلَمَّا تَقَارَبَ الْفَجْرُ اسْتَنَدَ بِلَال إِلَى رَاحِلَته موجه الْفَجْرِ فَغَلَبَتْ بِلَالًا عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا بِلَالٌ وَلَا أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «أَيْ بِلَالُ» فَقَالَ بِلَالٌ أَخَذَ بِنَفْسَيِ الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ قَالَ: «اقْتَادُوا» فَاقْتَادَوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَ بِلَالًا فَأَقَامَ الصَّلَاةَ فَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلَاةَ قَالَ: مَنْ نَسِيَ الصَّلَاةَ فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذكرهَا فَإِن الله قَالَ (أقِم الصَّلَاة لذكري)

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধ হতে ফেরার পথে রাতে পথ চলছেন। এক সময়ে তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শেষ রাতে বিশ্রাম গ্রহণ করলেন। বিলাল (রাঃ)-কে বলে রাখলেন, সালাতের জন্য রাতে লক্ষ্য রাখতে। এরপর বিলাল, তার পক্ষে যা সম্ভব হয়েছে সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করলেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীগণ ঘুমিয়ে রইলেন। ফজরের (ফজরের) সালাতের সময় কাছাকাছি হয়ে আসলে বিলাল সূর্যোদয়ের দিকে মুখ করে নিজের উটের গায়ে হেলান দিলেন। বিলালকে তার চোখ দু’টো পরাজিত করে ফেলল (অর্থাৎ- তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন)। অথচ তখনো বিলাল উটের গায়ে হেলান দিয়েই আছেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জাগলেন না। বিলালও জাগলেন না, না রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথীদের কেউ। যে পর্যন্ত না সূর্যের তাপ তাদের গায়ে লাগলো।
এরপর তাদের মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই প্রথম ব্যক্তি, যিনি ঘুম থেকে জাগলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ব্যতিব্যাস্ত হয়ে বললেন, হে বিলাল! (কী হলো তোমার)। বিলাল উত্তরে বললেন, রসূল! আপনাকে যে পরাজিত করেছে সেই পরাজিত করেছে আমাকে। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সওয়ারী আগে নিয়ে চলো। উটগুলো নিয়ে কিছু সামনে এগিয়ে গেলেন। এরপর রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূ (ওযু/ওজু/অজু) করলেন। বিলালকে তাকবীর দিতে বললেন, বিলাল তাকবীর দিলেন। তারপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের ফজরের (ফজরের) সালাত (সালাত/নামায/নামাজ) আদায় করালেন। সালাত শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, সালাতের কথা ভুলে গেলে যখনই তা মনে পড়বে তখনই আদায় করে নিবে। কারণ আল্লাহ বলেছেন, ’’সালাত ক্বায়িম কর আমার স্মরণে’’। 
(মুসলিম ৬৮০, আবূ দাঊদ ৪৩৫, ইবনু মাজাহ্ ৬৯৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ২০৬৯।)

حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الْمُبْتَلَى حَتَّى يَبْرَأَ وَعَنِ الصَّبِيِّ حَتَّى يَكْبَرَ " .

উছমান ইবন আবূ শায়রা (রহঃ) .... আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি হতে কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে (অর্থাৎ যাদের ভাল-মন্দ আসল লেখা হয় না)। এরা হলোঃ (১) নিদ্রিত ব্যক্তি- যতক্ষণ না সে জাগরিত হয়। (২) পাগল ব্যক্তি- যতক্ষন না সুস্থ হয় এবং (৩) নাবালক ছেলে মেয়ে- যতক্ষণ না তারা বয়োপ্রাপ্ত হয়।
(আবু দাউদ ৪৩৪৬)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
(০১)
সফর অবস্থাতে নামাজ কাজা করা জায়েজ নেই।
এমতাবস্থায় নামাজ কাজা হয়ে গেলে কাজা আদায় করতে হবে,পাশাপাশি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।

তাই সফর এমন সময় করা উচিত, যাতে নামাজ কাজা না হয়। 

দূরবর্তি সফর হলে সেক্ষেত্রে দিনের বেলা সফর হলে ফজরের নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে পড়েই সফর শুরু করা।সেক্ষেত্রে আসরের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত যেহেতু জোহরের ওয়াক্ত থাকে,তাই এমতাবস্থায় প্রায় ১২/১৩ ঘন্টা পাওয়া যায়। রাতের সফর হলে ঈশার নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে পড়ে সফর শুরু করা।

(০২)
যদি নামাযী নামাযের নির্দিষ্ট সময় ভুলে যায় বা বে খবরি ঘুমিয়ে পড়ে, অথবা যদি শত্রু তাকে নামাযের সময় না দেয়, অথবা যদি সে এতটাই গুরুতর অসুস্থ হয় যে সে ইশারা করেও  নামায পড়তে পারে না। এ সকল ক্ষেত্রে যদি নামায কাজা হয়ে যায়,সেক্ষেত্রে সময়মত না পড়ায় কোন গুনাহ নেই।

ঘুমের কারনে নামাজ কাজা হয়ে গেলে কবিরা গুনাহ হবেনা।
তবে নামাজের সময়ে ঘুম থেকে উঠার যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে ও উপায় অবলম্বন করতে হবে।
(যেমন মোবাইল বা ঘড়িতে এলার্ম,কাউকে ডাকতে বলা,ইত্যাদি।) 

উপায় অবলম্বনের পরেও উঠতে না পারলে  সেক্ষেত্রে গুনাহ হবেনা, তওবা করা বাধ্যতামূলক হবেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...