আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আমি দীর্ঘ সময় একটি হারাম সম্পর্কের মধ্যে ছিলাম। একসময়, সে অন্য এক মেয়ের সাথে জড়িয়ে আমাকে ছেড়ে যায়। সে মেয়েটির সাথে আমার ফেসবুকে একাউন্টের মাধ্যমে আমি সেজে কথা বলার মাধ্যমে বুঝায় যে, আমি তাদের সম্পর্কের বিষয়ে সম্মত আছি, অথচ আমি এর কিছুই জানতাম না।

যখন আমি জানতে পারি, তখন আমাকে কিছু না বলার অনুরোধ করা হয় এবং আমি কিছু বলি না। পরে তাকে আটকাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সে শোনেনি। কিছু সময় পর বুঝতে পারলাম তার চলে যাওয়া ভালো হয়েছে, তাই আমিও ফিরে গেলাম।

এরপর তিনি ঐ সম্পর্কের মধ্যে থেকেও নানান বাহানায় প্রায়ই আমার কাছে আসতে শুরু করে, কথা বলতে, যোগাযোগে থাকতে চায়। আমি বারণ করলেও তিনি এসবই করে যাচ্ছিল। পরে আমি মেয়েটিকে সব কিছু সত্য বললাম, কারণ মনে হচ্ছিল আমি তার অন্যায়ের সঙ্গী হচ্ছি। তবে মেয়েটি আমার কথা না ভেবেই তার সাথে ঝগড়া করে। আমাকে ঐ ব্যাক্তি ব্লেইম করে অপরাধবোধে ফেলে দিতে লাগে। পরে আমিই মনে হয় ভুল ভেবে কথা ফিরিয়ে নেই। পরে যখন আবার ভাবলাম তখন আবারও অনুতাপ জাগে এবং পুনরায় বলি। এবারও একই ঘটনা। আমি কথা ফিরিয়ে নেই। এবং মেয়েটি আমাকে মিথ্যাবাদী খারাপ ভাবতে শুরু করে।

পরে তিনি আবার  আমার সাথে কথা বলতে চায়। কিছুদিন কথা বলে বিরক্ত হয়ে যাই। তিনি আমাদের উভয়কে প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে, কিন্তু নিজের ভুলের জন্য তার কোনো অনুতাপ নেই। আমি তাকে বলি যে, আমি তাদের সাথে কথা না বলার চেষ্টা করছি। হয় তিনি ফিরবে, নয়তো তিনি ঐ মেয়ের সাথে থাকা অবস্থায় তো না-ই, আমার সাথে বিয়ের পূর্বে আর কথা বলতে পারবে না।
একদিন বলে তিনি আমাকে ভালোবাসে ঐ মেয়ের সাথে শুধু প্রেম। আমার খুব খারাপ লাগে। এবং আমি সব মেয়েকে বলে দিই। যেহেতু কোন প্রমাণ ছিল না। আমি প্রমাণ দেখাতে পারিনি। সে আমাকে অবিশ্বাস করে এবং বকতেও লাগে।

পরে আবারও জানাই আমার মিথ্যের কারণে মেয়ে বিপদে না পড়ে এবং আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার ভয়ে। তবে তিনি এবং মেয়েটি আমার সাথে খুবই বাজেভাবে ব্যবহার করেন। তারপর আমি কথা বলা বন্ধ করে দিই।
মেয়েটি আবার নিজে থেকে আমাকে মেসেজ দেয়, কিন্তু আমি রেসপন্স করি না।
পরবর্তীতে আমার কাছে একটি কল আসে। ফাঁদে ফেলার জন্য হয়। ভাগ্যক্রমে আলহামদুলিল্লাহ, আমি সেখান থেকে বেঁচে যাই। আমার বেশ কিছু ইনফরমেশন নিয়ে নেয় অবশ্য। আমি ধারণা করছি এটা এই ঘটনাপ্রবাহের সাথেই সম্পর্কিত।

তিনি এর বেশ কিছু মাস পর আমাকে মেসেজ দিয়ে বলে যে, আমার চরিত্র জঘন্য। আমার নাকি তার আগে প্রেম ছিল, শরীরিক সম্পর্ক ছিল অন্য ছেলের সাথে। ঐ ছেলে নাকি তার সাথে যোগাযোগ করেছে। তিনি ঐ যোগাযোগের স্ক্রিনশটও আমাকে দেন। আমি তাকে জানাই যে আমি এসব জানি না। এসব মিথ্যে। বুঝিয়ে বলি। তখন মনে হচ্ছিল সে বুঝেছে।
ঐ ছেলে নাকি কলে কথা বলেনি। মেসেজে কথা বলেছে শুধু।

এরপর মেয়েটি তার আইডি থেকে নক দিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আমাদের আর কথা হয় কিনা। আমি রিপ্লাই দেই যেহেতু কিছুদিন আগে কথা বলেছিলাম। তার পরিবারের সদস্য অসুস্থ ছিল, তার কথা জিজ্ঞেস করি। তখন সে বলতে লাগে এটা কিভাবে জেনেছি, আর আমার ছবি চাইতে শুরু করে।
তার সাথে বিচ্ছেদের পর বলেছিলাম আমার সমস্ত ছবি মুছে ফেলতে, মুছেও ফেলেছিলেন তিনি।
পরে বকতে শুরু করে। আমি রেগে কিছু না বলে ব্লক দেই। তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে না পারলেও পরে বুঝতে পারি এটা ঐ মেয়ে ছিল।

আমি সিদ্ধান্ত নিই, প্রথমবারের বলায় বিশ্বাস না করলে, আমি তাকে পুনরায় কিছু বুঝাবো না।
এই ঘটনার কিছুদিন পরে তিনি আমাকে কল দিয়ে বলেন আমি জঘন্য, বেইমান। আমার শারীরিক সম্পর্ক ছিল, তিনি জেনেছে, প্রমাণও আছে।

কিছু মাস পরে, ছেলেটি আমার বোনকে কল করে বলে যে সে জানে আমার অন্য ছেলের সাথে শারীরিক সম্পর্ক আছে এবং তার প্রেমিকার সাথে নাকি বিয়ের ব্যবস্থা হয়েছে আমি বারবার মেসেজ দিয়ে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছি না। অথচ আমি গুটিকয়েকবার নিজে থেকে কথা বলেছিলাম। তারপর সরতে শুরু করি। তারাই আসতে লাগে।।
আমি যতবার তাদের কাছে গিয়েছি, তাদের প্রতারণাকে ধ্বংস করতে গিয়েছি, কারো ক্ষতি করতে চাইনি।

এর কোনকিছু সত্য ছিল না। তাই আমার পরিবার আমাকে তাদের সাথে কথা বলার জন্য পুরোপুরি নিষেধ করেছে। আমিও এখন পর্যন্ত আর যোগাযোগ করিনি। সবপথও আলহামদুলিল্লাহ বন্ধ করে রেখেছি।

এখন, আমার মনে হচ্ছে মেয়েটি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন তিনি নাকি মেয়ে এসব করছে। আমি জানি যে, মিথ্যার ইমারত ভেঙে যাবে, হোক তা দুনিয়ায় কিংবা আখিরাতে। তাই আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ, এসব কুৎসায় দুঃখ পাই না।

আমার মনে হচ্ছে, আল্লাহর তরফ থেকে আমাকে কিছু ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে, কারণ আমি বারবার হক কথা না বলার পরিণতি নিয়ে চিন্তা করছি, আয়াত আর আলোচনা সামনে আসছে। আমার কাছে পূর্বে ছেলেটির প্রতারণার প্রমাণ ছিল, কিন্তু আমি তা মুছে দিয়েছিলাম। এখন আমার কাছে দুটো স্ক্রিনশট আর ঐ প্রতারণা চক্রের কল রেকর্ড ছাড়া বিশেষ কিছু নেই। এগুলো কতটা সবল প্রমাণ আমার জানা নেই।

প্রশ্ন:

১. আমি কি পুনরায় মেয়েটিকে আমার কথা বলার চেষ্টা করবো?

২. যদি বলি, কীভাবে বলবো, কারণ আমার কাছে তেমন কোনো প্রমাণ নেই?

৩. আমি কীভাবে শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে এই পরিস্থিতি সমাধান করবো?

৪. আমি কি আল্লাহর কাছে দোয়া এবং তাওবা করে সামনে এগিয়ে যেতে পারি, নাকি এখনো কিছু করতে হবে?

1 Answer

0 votes
by (579,240 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

(১-২)
ঐ মেয়ে আর সেই ছেলে কাহারো সাথেই আপনার যোগাযোগ করার প্রয়োজন নেই।
তাদেরকে কিছুই বলতে হবেনা।

(৩-৪)
https://ifatwa.info/69174 নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
বিবাহ পূর্ব প্রেম পুরোপুরি নাজায়েজ।    
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠] 

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١] 

মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছেঃ   
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}
,
https://ifatwa.info/30521/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 

দুনিয়ার আগুন শরীরের শুধু বাহ্যিক অঙ্গ পোড়াতে পারে। পোড়াতে পারে না তা অভ্যন্তরীণ অঙ্গ। কিন্তু জাহান্নামের আগুনের এমন পাওয়ার থাকবে যা জাহান্নামিদের শরীর পোড়ানোর পাশাপাশি তাদের হৃৎপিণ্ডও পুড়িয়ে ছাই করে ফেলবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এটি আল্লাহর প্রজ্ব¡লিত অগ্নিযা তাদের হৃদয়কে গ্রাস করে ফেলবে।’ (সূরা হুমাজা : ৬-৭) দুনিয়ার আগুন লাল বর্ণের হয়ে থাকে। কিন্তু জাহান্নামের আগুন তীব্র উত্তপ্ত হওয়ার দরুণ কালো বর্ণের হবে।

আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা বর্ণ হয়েছে। তারপর এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়েছে। এখন তা গভীর অন্ধকার রাতের অন্ধকারের মতো কালো (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪৩২০)। ‘জাহান্নামিরা যখন পিপাসায় ছটফট করবে তখন তাদেরকে গলিত পুঁজ পান করানো হবেযা সে এক এক ঢোক করে গিলবে’ (সূরা ইবরাহিম : ১৬-১৭)।

রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘পুঁজ যখন তার মুখের নিকটে নিয়ে আসা হবেসে তা অপছন্দ করবে। তারপর যখন আরো নিকটে নিয়ে আসা হবেতখন তার মুখমণ্ডল পুড়ে যাবে এবং মাথার চামড়া গলে পড়ে যাবে। তারপর সে যখন তা পান করবে তখন তার নাড়িভুঁড়ি গলে ছিন্নভিন্ন হয়ে মলদার দিয়ে বের হয়ে যাবে।’ (জামে তিরমিজি :২৫৮৩)

 ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিতএকদিন রাসূলুল্লাহ সা: এ আয়াত তিলাওয়াত করলেনঅর্থাৎ ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং পূর্ণ মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ তারপর প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করলেন, ‘যদি জাক্কুম গাছের একটা ফোঁটা এই দুনিয়ায় পড়ে তাহলে দুনিয়াবাসীর জীবনোপকরণ বিনষ্ট হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় ওইসব লোকের কেমন দুর্দশা হবে এটা যাদের খাদ্য হবে?’ (জামে তিরমিজি : ২৫৮৫)

রাসূল সা: জাহান্নামের সবচেয়ে সহজ শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তির আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘জাহান্নামিদের মধ্যে সবচেয়ে সহজ শাস্তি ওই ব্যক্তির হবেযাকে ফিতাসহ এক জোড়া জুতা পরিয়ে দেয়া হবে। এতে তার মগজ এমনভাবে টগবগ করবে গরম পানির পাত্র যেমন টগবগ করে। সে ধারণা করবে তার থেকে কঠিন আজাব আর কেউই ভোগ করছে না। অথচ সে হবে সবচেয়ে সহজ শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি। (সহিহ মুসলিম : ৩৬৪)

★সু-প্রিয় প্রিয় পাঠক,পাঠিকা! 

জাহান্নামের সবচেয়ে সহজ শাস্তির যদি হয় এমন পাওয়ার তাহলে কঠিন শাস্তির পাওয়ার কেমন হবেতা আমাদের ভাবতে হবে। প্রতিদিন কত গুনাহ আমরা করে যাচ্ছি অহরহ। কখনো কি ভেবে দেখেছিএর শাস্তি যদি আমাকে দেয়া হয় তাহলে কিভাবে সহ্য করবঅথচ জাহান্নামে যাওয়ার জন্য একটি কবিরা গুনাহ-ই যথেষ্ট। মহান আল্লাহ তায়ালা যদি আমাদের মাফ না করেনতাহলে আমাদের কী উপায় হবেআল্লাহ তায়ালা আমাদের জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে হিফাজত করুন।

 


★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
আপনার প্রধান কাজ তো হল আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা করা।

আর যদি আপনি আসলেই আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে প্রথমে এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে দিন। এক কথায়, ছেলেটির সঙ্গে সব ধরণের যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিন। যোগাযোগ বন্ধ করার কারণে ছেলেটি যদি মনোকষ্ট নেয় তাহলে আপনার কোনো গুনাহ তো হবেই না; বরং নিজে গুনাহ থেকে বাঁচার এবং ছেলেটিকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর সাওয়াব পাবেন।

আল্লাহওয়ালাদের সোহবত গ্রহন করুন। এতে নফস নিয়ন্ত্রণ করা এবং তাওবার উপর অটল থাকা সহজ হবে।

★তার কথা মনে পড়ে,এমন কোনো কাজ,স্থান সবকিছু থেকেই দূরে থাকবেন।
,
★মনের কামনার বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রধান অস্ত্র হল ঈমান। ঈমান সুদৃঢ় রাখতে হবে।
★ধৈর্য ও মনের দৃঢ়-সংকল্পতা এবং সুপুরুষের মত মনের স্থিরতা। 
মনের খেয়াল-খুশীকে নিয়ন্ত্রণে রেখে দৃঢ়-সংকল্প হোন, যে, আপনি ঐ শয়তানী কুমন্ত্রণায় সায় দেবেন না।
অতএব ধৈর্যের সাথে শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ করবেন, এবং তার অনিষ্ট থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবেন।
★নির্জনতা ত্যাগ করুন। কারণ, নির্জনতায় ঐ শ্রেণীর কুবাসনা মনে স্থান পায় বেশী। অতএব সকল অসৎ-চরিত্রের বন্ধু থেকে দুরে থেকে সৎ-বন্ধু গ্রহণ করে বিভিন্ন সৎ আলোচনায় প্রবৃত্ত হোন। 

★আল্লাহর যিকরে মনোযোগ দিন। 
বিভিন্ন ফলপ্রসু বইপুস্তক পাঠ করুন। সম্ভব হলে সে জায়গা একেবারে বর্জন করুন, যে জায়গায় পা রাখলে তার সহিত দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

ফোন/মেসেজ এলে তার উত্তর দিবেন না। 

প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ 

নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে-বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি পুনরায় এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنْ اسْتَطَاعَ منكُم الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ

‘হে যুব সমাজ! তোমাদের মধ্যে যারা সামর্থ্য রাখ তাদের উচিত বিয়ে করে ফেলা। কেননা বিয়ে দৃষ্টি অবনতকারী ও লজ্জাস্থানকে হেফাযতকারী। আর যার সামর্থ্য নেই তার উচিত রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।’ (বুখারী ৫০৬৬)

আরো জানুনঃ- 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,

আল্লাহকে ভয় করুন। জাহান্নামের শাস্তি খুবই কঠিন। সুতরাং আপনি হারাম রিলেশন ত্যাগ করুন। 

পারিবারিক ভাবে অন্যত্রে বিবাহের চেষ্টা করুন। আল্লাহ তায়ালার কাছে তওবা করুন।


পূর্বের রিলেশনের জন্য আর কিছুই করতে হবেনা।  ঐ মেয়েকেও আর কিছু বুঝাতে হবেনা। ছেলেটিকেও আর কিছু বুঝাতে হবেনা।

সম্পূর্ণভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (4 points)
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান উস্তায

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...