আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
38 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আসসালামু আ'লাইকুম। একটা বিপদে পড়ে প্রশ্নটি করা। একটু বড় হবে, কষ্ট করে ধৈর্য্য ধরে পড়ে উত্তর দিলে আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন। কাছাকাছি কোনো মুফতি না পাওয়ায় এখানে প্রশ্ন করা।
আমি পরিবারের বড় মেয়ে। এবছর সহশিক্ষায় পড়া শেষ করেছি, এখন বাসা থেকে বিয়ের জন্য ছেলে খুঁজছে। আমি হিদায়াত পাই ভার্সিটির শুরুর দিকে, সহশিক্ষা হারাম জানতে পারি ভার্সিটির লাস্ট ইয়ারে। সাধ্যমত পর্দা করেছি, বন্ধু ত্যাগ করেছি। কিন্তু যতটুক বুঝলাম, আমি নাহয় আগে নাফরমান ছিলাম, ভার্সিটি গিয়ে জেনেছি। কিন্তু কেউ যদি আগে থেকে আল্লাহভীরু-পর্দাশীল থাকে, তার জন্য সহশিক্ষাটা খুবই বিপজ্জনক। আমার পরিবার দ্বীনদার অতটা না, দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়।
আমার ছোটবোন এবছর অ্যাডমিশন দেবে, সে কয়েকবছর আগে পর্দা শুরু করেছে। আমার চেয়ে অনেক বেশি তাকওয়াবান পর্দাশীল। আমি ওকে নিয়ে অনেক ভয় পেতাম যে সহশিক্ষার এসব পরিবেশে পড়ে সে আস্তে আস্তে ইসলাম থেকে দূরে সরে যায় কীনা, তাকে বোঝাতাম সহশিক্ষার কুফল নিয়ে। ও আমার মত কনফিউজড না, তাই আমার মনে হত ও জানে ও কী চায়। ও বারবার বাসায় বিয়ের কথা বলত, যে ও পড়তে চায়না ওকে যেন বিয়ে দিয়ে দেয়। আমাকে বলত আমার এত বেশি বয়স তাও আমি বিয়ে করিনি কেন, এটা নাকী অস্বাভাবিক আর ওর বিয়ে করার ইচ্ছাটাই স্বাভাবিক(আমি আসলে পছন্দমত দ্বীনদার পাচ্ছিনা দেখে করতে পারছিনা, বাসা থেকে ক্যারিয়ারিস্টিক প্রস্তাব আনে শুধু। আর আমার কেমন যেন সহজে কাউকে ভালো লাগেনা)। আমি না করলে সামাজিকভাবে ও বিয়ে করতে পারছেনা। বাসা থেকে যদিও কখনোই ওকে এখন বিয়ে করতে দেবেনা পরীক্ষা দেয়াবেই জোর করে। আমার কাছে পিচ্চি মেয়ের এত কথা রাগ লাগত তাই ধমকাতাম যদিও জানতাম আসলে পিচ্চি না, এটাই স্বাভাবিক ইচ্ছা। আসলেই আমারটাই অস্বাভাবিক।
আমি সেদিন আম্মা আর বোনকে একসাথে বলছিলাম যে, ভার্সিটিতে অনেক ছেলে থাকবে হয়তো তাদের সাথে না চাইলেও মিশতে হবে কথা বলবে, স্বামীর হক নষ্ট হবে। এর একটু পরে আমার বোনের আড়ালে আমার মা আমাকে ডেকে বলে আমি যাতে আমার বোনের মাথা নষ্ট না করি এসব গুনাহের কথা বলে। পরীক্ষাগুলো দিক, পরে যা হবার হবে। আমার মায়ের তার মাদ্রাসার একজন মহিলা কলিগের সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক, ওই ম্যামের ছেলের সাথে নাকী আমার মা আমার বোনের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে। ওই ছেলেও নাকী রাজি হয়েছে আমার বোন পর্দাশীল দেখে, বোনের পরীক্ষার আগে ওকে কিছু না বলতে বলেছে প্রেশার পড়বে দেখে।
ছেলেটাকে আমি চিনি। ভালো ছেলে। প্রথমে একটু দোনামনা থাকলেও পরে আমিও একটু খোঁজ নিলাম, মনে হল ভালোই হবে। আমি বললাম এটা তো অনেক আগেই বলা দরকার ছিল তাহলে, ও নিশ্চিন্ত হয়ে প্রস্তুতি নিতে পারত!
আমার মা ওই ছেলেকে বলল যে আমি নাকি বলেছি এখন আমার বোনকে এখন সব বলে দিলেই ভালো হবে।
কিন্তু আমার তো মনে হল এখন বলাটা তো রিস্কি হতে পারে। স্বাভাবিক চিন্তায় বারবার এটাই মনে হচ্ছিল, যে বলা ঠিক হবেনা।
ওইদিন আমার বোনের কিছু কথায় আমি অনেক কষ্ট পাই। এরপরে আমি ইস্তেখারা করি যে ওকে এখন সব বলা ঠিক হবে কীনা। কষ্ট পাওয়ার কারণে ইস্তেখারাটা মন থেকে করিনি। নামাজও পড়িনি শুধু দুআ করেছি। অতটা সিরিয়াসও ছিলামনা, কিন্তু ইস্তেখারার পরে একদম সরাসরি মন থেকে আসে যে বলে দিলেই ভালো হবে। আমার মা কে বলি৷ আমার মাও ইস্তেখারা করে। সেও ভালো স্বপ্ন দেখে। তো তার পরেরদিন আমি বোনকে সব বলে দেই।
তখন দেখি ও রাজি না। ও নাকী ফান করে বারবার বিয়ের কথা বলত, এখন করতে চায়না, এই ছেলেকেও পছন্দ না কারণ ছেলেটা কমবয়সী। আবার ও অনেক দ্বীনদার চায় যার থেকে ও অনেককিছু জানতে পারবে, যে তাকে দ্বীনের ব্যাপারে জোর করবে। কিন্তু ইস্তেখারার রেজাল্ট শুনে সে বলেছে, হয়তো তাহলে আল্লাহর প্ল্যান অন্য৷ তাই সেও অনেকবার ইস্তেখারা করে তারপরে জানাবে অ্যাডমিশনের পরে।
আমার মায়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কতকিছু বোঝায়, আমাকে অনেককিছু বলে ছেলেটাকে নিয়ে। কত ভালো, কত যত্নবান, কতকিছু নিয়ে চিন্তা করে। আর ছেলেটার আম্মুও অনেক ভালো আন্টি, উনাকে চিনি। উনার মেয়ে নেই দেখে আমাদের দুইবোনকে অনেক আদর করেন।
আমারও শুনে ভালোই মনে হল। আমার বোনের অনেক ঠান্ডার সমস্যা, এজন্য নাকী গীজার কিনবে, পর্দার জন্য আলাদা রুম করবে।
আমার মা নাকী এই আন্টির কাছে প্রস্তাব দেয়ার আগেও ইস্তেখারা করেছে বেশ কয়েকবার, প্রতিবারই ভালো স্বপ্ন দেখেছে। আমার মায়ের মাদ্রাসা সহশিক্ষার। এখন আমার বোন প্রচুর দুশ্চিন্তা প্রেশারে অসুস্থ হয়ে গেছে সিদ্ধান্ত দিতে হবে দেখে। ও নরমালিই প্রেশার নিতে পারেনা। আপাতত ছেলেটাকে বলা হয়েছে যে একটু সময় চায় আমার বোন। ছেলেটা গত কয়েকমাস থেকে অপেক্ষা করছে। এবং আমার মনে হয়েছে ছোট হলে কী হবে, অনেক দায়িত্বশীল একটা মানুষ ছেলেটা।
আমার প্রশ্নটা হল, আমাদের দুজনের ইস্তেখারা কি ভুল ছিল? এগুলো বোঝে কীভাবে, যে কোনটা আসলে আল্লাহর থেকে আসা হিন্ট আর কোনটা নরমাল চিন্তা বা স্বপ্ন? আমরা কি ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম বলে দিয়ে? এমন কি হতে পারে, যে আমার ইস্তেখারা সিনসিয়ার না হওয়ায় ভুল হিন্ট পেয়েছি আর আম্মাকে আমার রেজাল্ট বলে দেয়ায় আম্মার স্বপ্ন প্রভাবিত হয়েছে? ইস্তেখারার জন্যেও কি হালাল ইনকাম লাগে? আমার মায়ের সহশিক্ষার চাকরীর জন্য কি ভুল রেজাল্ট আসতে পারে?

1 Answer

0 votes
by (583,020 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/13381/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ  
ইস্তেখারা অর্থ হল, ভালোকে তালাশ করা। অর্থাৎ যখন কারো সামনে দু’টি রাস্তা থাকে, সে জানেনা কোন রাস্তাটি তার জন্য মঙ্গলজনক, তাহলে এমতাবস্থায় সে ইস্তেখারা করে একটি রাস্তাকে নির্দিষ্ট করবে। সুতরাং কারো অসুখ মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না? সেটা জানার জন্য ইস্তেখারা করার কোনো নিয়ম নাই। হ্যা এ বিষয়ে আল্লাহর মদদ ও সাহায্য কামনার স্বার্থে ইস্তেখারা করা যেতে পারে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
হযরত জাবির রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَلِّمُنَا الِاسْتِخَارَةَ فِي الأُمُورِ كُلِّهَا، كَمَا يُعَلِّمُنَا السُّورَةَ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: " إِذَا هَمَّ أَحَدُكُمْ بِالأَمْرِ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ لِيَقُلْ: 

তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সব কাজে ইস্তিখারাহ্* শিক্ষা দিতেন। যেমন পবিত্র কুরআনের সূরাহ্ আমাদের শিখাতেন। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ কোন কাজের ইচ্ছা করলে সে যেন ফরজ নয় এমন দু’রাক‘আত সালাত আদায় করার পর এ দু’আ পড়েঃ 

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيمِ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ، وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي - أَوْ قَالَ عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ - فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ، وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي - أَوْ قَالَ فِي عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ - فَاصْرِفْهُ عَنِّي وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أَرْضِنِي " قَالَ: «وَيُسَمِّي حَاجَتَهُ»

ভাবার্থঃ‘‘প্রভু হে! আমি তোমার জ্ঞানের ওয়াসিলাহ্তে তোমার অনুমতি কামনা করছি; তোমার কুদরতের ওয়াসিলায় শক্তি চাচ্ছি আর তোমার অপার করুণা ভিক্ষা করছি। কারণ তুমিই সর্বশক্তিমান আর আমি দুর্বল। তুমিই জ্ঞানী আর আমি অজ্ঞ এবং তুমিই সর্বজ্ঞ। প্রভু হে! তুমি যদি মনে কর যে, এই জিনিসটি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায়, ইহকালে ও পরকালে সত্বর কিংবা বিলম্বে আমার পক্ষে মঙ্গলজনক হবে তা হলে আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দাও এবং তার প্রাপ্তি আমার জন্য সহজতর করে দাও। অতঃপর তুমি তাতে বারাকাত দাও। আর যদি তুমি মনে কর এই জিনিসটি আমার দ্বীন ও দুনিয়ায় ইহকালে ও পরকালে আমার জন্য ক্ষতিকর হবে শীঘ্র কিংবা বিলম্বে তাহলে তুমি তাকে আমা হতে দূর করে দাও এবং আমাকে তা হতে দূরে রাখো; অতঃপর তুমি আমার জন্য যা মঙ্গলজনক তা ব্যবস্থা কর- সেটা যেখান থেকেই হোক না কেন এবং আমাকে তার প্রতি সন্তুষ্টচিত্ত করে তোল।’’তিনি ইরশাদ করেন هَذَا الْأَمْرَ  তার প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে।(সহীহ বুখারী- (শামেলা);২/৫৭,হাদীস নং১১৬২,কিতাবুন-নাওয়াযিল-৪/৬২৯) 

বিস্তারিত জানুন-https://www.ifatwa.info/1472

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার ও আপনার মায়ের ইস্তেখারা সঠিক ছিলো বলেই মনে হচ্ছে। 

ঐ ছেলের সাথে আপনার বোনের কুফুর সামঞ্জস্যতা থাকলে আপনার বোনকে তার সাথে বিবাহ দেয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই মনে হচ্ছে।

কুফু সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ  https://www.ifatwa.info/4541/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...