আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
31 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)

আসসালামু আলাইকুম। 

শিরোনাম:হুরমতে মুসাহারা হবার পর কি মা- বাবা আলাদা রুমে একই বাসায় থাকা জায়েজ হবে? 

ঘটনার বিস্তারিতঃ

আমরা ২ বোন।আমার বড় বোনের ভাষ্যমতে,আমার বাবা ছোটবেলা (৫-১৬)থেকে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে।স্বামী -স্ত্রী এর যেমন হয় তার সাথে নাকি তাই করেছে।বাবা যেহেতু বাহিরে থাকে বছরে ১-২ মাস আমাদের সাথে  থাকে।আমার বোন বলছে যখন বাসায় কেউ না থাকত বা সুযোগ পেত এমন করত।আর ওকে ভয় দেখাত যাতে কিছু কাউকে না বলে।বাবাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কুরআন নিয়ে বলে সে নিজের মেয়ের সাথে এমন করেনি।আর একটা মেয়ে তো তার ইজ্জত নিয়ে মিথ্যা কথা বলবে না।তবে আমি একদিন দেখিছি আমারা শুয়ে ছিলাম তবে আমি ঘুমাই নি, চোখ বন্ধ ছিল তখন আমার আপু যে পাশে যেখানে আব্বু মশারী উঠাছে তারপর আমি লাইট জ্বালাই আর সে সাথে সাথে চলে যায়।

এখন আমি কি করবো, আমার বাবা কখন আমার দিকে কোন কুদৃষ্টি দেয় নি এমনকি সব দায়িত্ব ভালো ভাবে পালন করে।আমার সাথে সেকোন অন্যায় করেনি।যেহেতু যে পিতার কর্ত্বব্য আমার ক্ষেএে যর্থাথ করেছে, তাহলে আমি সন্তান হিসাবে আমার হোক আছে, যেমন আম্মু আলাদা হয়ে গেলে মেয়ে হিসাবে তাকে রান্না -বান্না বা সেবা যত্ন করা কি উচিত হবে?

 আপু  বিয়ে হয়ে গেছে।সে এখন আমাদের ফ্যামেলিতে থাকে না,তবে মাঝে মাঝে আসে।তবে আব্বুর সাথে কোন কথা বলে না

এখন ছোট মেয়ে(আমি) বিষয়টি জানার পর বলেছি,  মা-বাবা এক বাসায় থাকলে আমি তাদের সাথে থাকবে না। কারন হুরমতে মুসাহারা হলে সম্পর্ক হারাম হয়ে গেছে।

তার মা-বাবা বলছে মেয়েকে তাদের সাথে থাকতে তারা এক বাসায় আলাদা রুমে থাকবে।মা-মেয়ে এক সাথে, বাবা আলাদা রুমে। 

বাবাকে দেখার মত কেউ নেই,আর সে কাজে বাহিরে থাকে বেশি দিন,বছরে ১-২ মাস আমাদের সাথে থাকে,সেহেতু আমি প্রাপ্ত বয়সী মেয়ে তাই বাবা আমার সাথে থাকতে চাচ্ছে না আর আমারও সাহস হচ্ছে না।

বাবা-মা বলছে ছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলে তারা আলাদা হয়ে যাবে।

এখন আমি কি করব?

আম্মুকে নিয়ে একা থাকলে আব্বুকে কে দেখবে?

সে যা করছে তা চরম পাপ,তবে মেয়ে হিসাবে সে যেহেতু আমার হক সম্পূর্ন পালন করছে আমি তাকে একা রাখি কি করে?এবং আব্বু কেঁদে কেঁদে বলতেছে এতকষ্ট করে মেয়ে মানুষ করছি এখন মেয়ে বাবাকে দেখতে পারে না,আমার সাথে থাকতে চায় না।আমি কোন সিন্ধান্ত বা উপায় পাচ্ছি না।আমাকে উপযুক্ত পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করুন।

আমার কোন ভাই নেই,চাচা,দাদা নেই।আমি বাসা থেকে দূরে কোথাও যেতে পারছি না,লেখাপড়া জন্য।

কি সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ?

মা-বাবার জন্য বা কি মাসায়েলা?হয়তো বা আমি বিষয় টি ক্লিয়ার বলতে পারিনি।যারা এডমিন মুফতি আছে দয়া করে বিষয়টি সম্পর্কে বলবেন, খুবই মানসিক প্রেশারে আছি।

1 Answer

0 votes
ago by (575,580 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছে 

أخبرنا إسماعیل بن عیاض، حدثنا سعید بن أبی عروبة، من قیس بن سعید، عن مجاهد في الرجل یفجر بالمرأة قال: إذا نظر إلی فرجها فلا یحله له أمها ولا بنتها، أخرجه محمد في الحجج أیضًا ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۲

যার সারমর্ম হলো যদি কেহ কোনো মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করে,তাহলে সেই মহিলার মেয়ে বা তার মাকে সে কোনোদিন বিবাহ করতে পারবেনা।

ই'লাউস সুনান ১১/১৩১

أخبرنا أبوحنیفة، عن حماد، عن إبراهیم، قال: إذا قبل الرجل أم أمرأته أو لمسها من شهوةٍ حرمت علیه امرأته، أخرجه محمد في الحجج ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۱)

যার সারমর্ম হলো কেহ যদি তার শাশুড়িকে চুম্বন করে,অথবা উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করে,তাহলে স্ত্রী তার উপর চিরজীবনের জন্য হারাম হয়ে যাবে।      

★★হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে।

শর্তগুলো হল,
১–

সরাসরি খালি গায়ে বা এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। যদি এমন মোটা কাপড় পরিধান করে থাকে যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভূত না হয়, তাহলে নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।

فى الدر المختار- أو لمس ) ولو بحائل لا يمنع الحرارة
وقال ابن عبدين– ( قوله : بحائل لا يمنع الحرارة ) أي ولو بحائل إلخ ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة ، كذا في أكثر الكتب (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/107-108)

যার সারমর্ম হলো যদি কাপড় পরিধান অবস্থায় হয় তাহলে যদি এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। 
তাহলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবে।   

( যদি এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে,যেটা শরীরের গরমি ভাব অনুভব হয়,তাহলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমানীত হবে। ) 

অন্যথায় হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবেনা।     

২–

স্পর্শ করলে পুরুষ মহিলা যেকোন একজনের উত্তেজনা অনুভুত হওয়া।

পুরুষের উত্তেজনা অনুভূত হওয়ার লক্ষণ হল গোপনাঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।

وفى رد المحتار- قوله (بشهوة) اي ولو من احدهما،
وفى الدر المختار- وحدها فيهما تحرك آلته أو زيادته به يفتى
وفي امرأة ونحو شيخ كبير تحرك قلبه أو زيادته (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/107-109)  
সারমর্মঃ
উত্তেজিত হওয়ার সীমা হলো লিঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।
মহিলাদের ক্ষেত্রে কলব তথা অন্তর কেঁপে উঠা, আগে থেকেই কেঁপে উঠে থাকলে স্পর্শ করার পর কাঁপা বেড়ে যাওয়া। 

৩-
স্পর্শ,দৃষ্টিপাত করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। 
আগে বা পরে উত্তেজিত হলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবেনা।      

وفى الدر المختار- والعبرة للشهوة عند المس والنظر لا بعدهما
وفى رد المحتار- ( قوله : والعبرة إلخ ) قال في الفتح : وقوله : بشهوة في موضع الحال ، فيفيد اشتراط الشهوة حال المس ، فلو مس بغير شهوة ، ثم اشتهى عن ذلك المس لا تحرم عليه (رد المحتار-كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/108)

যার সারমর্ম হলো স্পর্শ,দৃষ্টিপাত করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। 

বিস্তারিত জানুনঃ  

https://www.ifatwa.info/61822/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
فتاوی شامی:
' فتحصل من هذا أنه لا بد في كل منهما من سن المراهقة وأقله للأنثى تسع وللذكر اثنا عشر لأن ذلك أقل مدة يمكن فيها البلوغ كما صرحوا به في باب بلوغ الغلام وهذا يوافق ما مر من أن العلة هي الوطء الذي يكون سببا للولد أو المس الذي يكون سببا لهذا الوطء ولا يخفى أن غير المراهق منهما لا يتأتى منه الولد'۔[3/35،دارالفکر]
সারমর্মঃ-
হুরমতে মুসাহারাত এর ক্ষেত্রে উভয়ের বালেগ হওয়ার নিকটতম বয়সী হওয়া জরুরী। 
মেয়েদের জন্য তাহা সর্বনিম্ন ৯ বছর বয়স।
আর ছেলেদের জন্য তাহা সর্বনিম্ন ১২ বছর বয়স।

البحرالرائق:
'وقد يقال: إنها دخلت تحت حكم الاشتهاء فلا تخرج عنه بالكبر ولا كذلك الصغيرة وليس حكم البقاء كالابتداء۔ وفي الخانية: وقال الفقيه أبو الليث: مادون تسع سنين لا تكون مشتهاة وعليه الفتوى ا هـ
সারমর্মঃ-
নয় বছরের কমে মেয়ে উত্তেজিত হয়না।

 فأفاد أنه لا فرق بين أن تكون سمينة أو لا، ولذا قال في المعراج: بنت خمس لا تكون مشتهاة اتفاقا وبنت تسع فصاعدا مشتهاة اتفاقا وفيما بين الخمس والتسع اختلاف الرواية والمشايخ، والأصح أنها لا تبثت ( تثبت ) الحرمة'۔[3/106،دارالمعرفہ]
সারমর্মঃ-
৫ বছর বয়সী মেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে উত্তেজিত হয়না।
৯ বছর বয়সী মেয়ে সর্বসম্মতিক্রমে উত্তেজিত হয়।
আর ৫ ও ৯ বছরের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে  
সহীহ কথা হলো,এক্ষেত্রে হুরমতে মুসাহারাত প্রমানিত হবেনা। 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে আপনার মা বাবার মাঝে হুরমতে মুসাহারাত প্রমানিত হয়েছে।
তাদের মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক আজীবনের জন্য ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পুনরায় ঘর সংসার চালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এক্ষেত্রে কোনোভাবেই আপনার মা উক্ত বাসায় থাকতে পারবেনা।

হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবার ফিতনার আশংকা থাকায় পর মা- বাবা আলাদা রুমে একই বাসায় থাকা জায়েজ হবেনা।

এক্ষেত্রে আপনারা একটি সমাধানের দিকে আসতে পারেন।
তাহা হলো, আপনার বাবা অন্যত্রে কাউকে বিবাহ করে,নতুন করে ঘর সংসার করবে।

আপনারা আপনার বাবার সাথে থাকবেননা।
আপনার বাবার নতুন বিবাহের পর ফিতনার আশংকা না থাকার শর্তে জায়গা নিরাপদ হলে সেক্ষেত্রে উক্ত বাসার আলাদা রুমে আপনার ২ বোন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে থাকতে পারেন।

আপনার মা আপনার মামা বা নানার বাসায় চলে যাবে। অন্যত্রে ২য় বিবাহের চেষ্টা করবে।
আর যদি বিবাহ ছাড়াই এভাবেই আপনার থাকতে চান,সেক্ষেত্রে গুনাহ মুক্ত থাকার শর্তে আপনার মা বিবাহ ছাড়া আপনার মামা বা নানার বাসায় থাকতে পারেন।
এক্ষেত্রে বাবার বাসায় আপনারা উপরোক্ত শর্তমাফিক থাকতে না পারলে মায়ের সাথে আপনার নানার বাসা মা মামার বাসায় থাকবেন।

এক্ষেত্রে আপনাদের ২ বোনের ভরনপোষণ এর টাকা আপনার বাবা প্রতি মাসে পাঠিয়ে দিবে।

★অথবা আরেকটি পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়,তাহা হলোঃ-

আপনার বাবা আপনাদের ২ বোনের জন্য আলাদা বাসা ভাড়া/ক্রয় করে দিবে।
আপনাদের দুইজনের ভরনপোষণ এর জন্য আপনাদের প্রতি মাসে টাকা দিবে।

সেই আলাদা বাসায় আপনারা ২ বোন আপনার মাকে নিয়ে সেই খরচে থাকতে পারেন।

আর আপনার বাবা অন্যত্রে বিবাহ করে তার সাথে ঘর সংসার করবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...