আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,068 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (48 points)
আজ আমাদের মাসজিদের ইমাম উনি উনার বয়ানে বলছিলেন আল্লাহ যখন রাসুল সা কে মিরাজে নিলেন এবং তার সামনে উনাকে নামাজ হাদিয়া স্বরুপ দিলেন তখন আল্লাহ ও রাসুল এর দুরত্ব ছিল এক বা দুই ধনুক পরিমান। এবং তিনি তার চক্ষু দ্বারা আল্লাহ তালা কে দেখেছেন?


এখন আমার প্রশ্ন হল আদও কি রাসুল আল্লাহ তালা কে দেখেছেন?  আহালে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকিদা কি?

উত্তর যদি না হয় তাহলে কেউ যদি এমন একিদা রাখে তাহলে কি তার আকিদা শুদ্ধ? তার পিছনে কি নামাজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)
edited by
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
আল্লাহ তা’আলা বলেন, 
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যান্ত-যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সূরা বনি ইসরাঈল-০১)

মেরাজ স্বপ্নযোগে হয়েছিলো না বাস্তবে স্বশরীরে হয়েছিলো ? এ নিয়ে উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। এমনকি সাহাবা তাবেঈনদের যুগেও মতবিরোধ হয়েছিলো।আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সিদ্ধান্ত হল,মেরাজ স্বশরীরে হয়েছিলো।

হাকীমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহঃ লিখেছেন, জমহুর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের মতামত হল, মেরাজ জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে হয়েছে। এর দলীল হল ইজমায়ে উম্মত। {নশরুত্তীব-৮০}
আল্লামা সুহাইলী রহঃ বলেন,
وَرَأَيْت الْمُهَلّبَ فِي شَرْحِ الْبُخَارِيّ قَدْ حَكَى هَذَا الْقَوْلَ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْ الْعُلَمَاءِ وَأَنّهُمْ قَالُوا: كَانَ الْإِسْرَاءُ مَرّتَيْنِ مَرّةً فِي نُوُمِهِ وَمَرّةً فِي يَقَظَتِهِ بِبَدَنِهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ –
قَالَ الْمُؤَلّفُ وَهَذَا الْقَوْلُ هُوَ الّذِي يَصِحّ، وَبِهِ تَتّفِقُ مَعَانِي الْأَخْبَارِ الخ (الروض الأنف شرح سيرت ابن هشام-1/244
মুহাল্লাব বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থে আহলে ইলমের এক জামাতের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন যে, মূলত মিরাজ দুইবার হয়েছে। একবার স্বপ্নে দ্বিতীয়বার জাগ্রত অবস্থায় স্বশরীরে। {আররওজুল আনফ ফী শরহিস সীরাতিন নাবাবিয়্যাহ লিইবনে হিশাম-১/২৪৪}


সরাসরি দেখা বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামগণ ও উলামাগণের মাঝে মতভেদ আছে।

(১)হযরত আয়শা রাঃ, হযরত আবু হুরায়রা রাঃ, হযরত ইবনে মাসঊদ রাঃ এবং ইমাম আহমাদ রহঃ এর এক মত অনুসারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তাআলাকে সরাসরি দেখেননি।
(২)হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ, হযরত আনাস রাঃ, হযরত ইকরিমা রহঃ, হযরত হাসান রহঃ, হযরত রাবী বিন সুলাইমান রহঃ, হযরত ইবনে খুযাইমা রহঃ, হযরত কা’বে আহবার রহঃ, হযরত যুহরী রহঃ, হযরত উরওয়া বিন যুবায়ের রহঃ, হযরত মা’মার রহঃ, হযরত আশআরী রহঃ এবং ইমাম আহমাদ রহঃ এর বক্তব্য অনুপাতে সরাসরি আল্লাহকে দেখেছেন।
এমতটিই ইমাম নববী রহঃ প্রাধান্য দিয়েছেন। [শরহে মুসলিম, ইমাম নববীকৃত, কিতাবুল ঈমান, বাবু মা’না কওলিল্লাহ ওয়ালাক্বাদ রাআহু-৩/৬-৭, বর্ণনা নং-২৮০ (১৭৪)]

আমাদের তাহকীক মতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজের রাতে আল্লাহকে দেখেছেন। অন্তর দিয়ে অনুভবে যেমন দেখেছেন, তেমনি চর্মচক্ষেও দেখেছেন। তবে যেহেতু সৃষ্টি সসীম। আর আল্লাহ অসীম। তাই তাকে পূর্ণরূপে দেখার ক্ষমতা কারো নেই।নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেছেন। স্বচক্ষেই দেখেছেন। তবে পরিপূর্ণ দেখেননি।

যেসব হাদীসে এসেছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দেখেননি, এসব হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হল, পূর্ণ দেখেননি। আর যেসব হাদীসে এসেছে দেখেছেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আংশিক হলেও দেখেছেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” رَأَيْتُ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি আমার রব আল্লাহকে দেখেছি। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৫৮০, সুনানে কুরবা নাসায়ী, হাদীস নং-১১৪৭৩,মু’জামে ইবনুল আরাবী, হাদীস নং-১৬৮৫,]হাদীসটি সহীহ।

أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَبَّاسٍ، كَانَ يَقُولُ: «إِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، رَأَى رَبَّهُ مَرَّتَيْنِ: مُرَّةً بِبَصَرِهِ، وَمَرَّةً بِفُؤَادِهِ»
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে দুইবার দেখেছেন, একবার স্বচক্ষে, আরেকবার অন্তর দ্বারা অনুভব করে। [আলমু’জামুল আওসাত, তাবরানীকৃত, হাদীস নং-৫৭৬১]

একটি প্রশ্ন ও উত্তর
قَالَ رَجُلٌ: أَلَيْسَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ: {لَا تُدْرِكُهُ الْأَبْصَارُ} [الأنعام: 103] ؟ فَقَالَ عِكْرِمَةُ: أَلَيْسَ تَرَى السَّمَاءَ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: فَكُلَّهَا تَرَى؟
এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহ কি বলেননি যে, “দৃষ্টিসমূহ তাকে পেতে পারে না [আনআম-১০৩] (তাহলে নবীজী কিভাবে আল্লাহকে দেখলেন?) প্রশ্নের জবাবে ইকরিমা রহঃ বললেন, তুমি কি আসমানে [আসমানের উপরের জান্নাতে প্রবেশ করে] আল্লাহকে দেখবে না? লোকটি বলল, অবশ্যই। তিনি বললেন, এটাতো এমনি। [আল্লাহর নবীতো জমিনে আল্লাহকে দেখেননি, বরং সাত আসমান টপকে গিয়ে আল্লাহকে দেখেছেন। তাই এ আয়াতের বিরোধীতা হচ্ছে কিভাবে?] {রু’য়াতুল্লাহ, ইমাম দারাকুতনীকৃত, হাদীস নং-২৭৮, আসসুন্নাহ, ইবনে আবী আসেমকৃত, হাদীস নং-৪৩৪}(সংগৃহিত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (597,330 points)
সংযোজন করা হয়েছে।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 296 views
...