আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
26 views
in সালাত(Prayer) by (51 points)
আসসালামু আলাইকুম

আমার বোন অনেক বেশি পা ব্যথায় ভুগছেন। এমনকি রুকু সিজদা করতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে  ।এমতাবস্থায় শুধু ফরজ সালাত আদায় করলে হবে?
সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ না পড়লে কি গুনাহ হবে?


দ্বিতীয় প্রশ্ন

ইংলিশ কমোডে অনেকে বলে ছিটকা আসেই আসে। তাই দেশে থাকতে অলওয়েজ কোমর পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতাম কিন্তু এখন লন্ডনে থাকি।অনেক ঠাণ্ডা ।একদম সিউর হলে তখন ধুয়ে ফেলি। কিন্তু সবসময় তো বুঝিনা ছিটকা আসলো কিনা। অনেক সাবধান থাকি। তাও কি কোমর পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে?


৩য় প্রশ্ন

কিছুদিন আগে হায়েজ হয়েছিল। আমার স্কার্টে ব্লাড লাগে। এই কাপড় ওয়াশিং মেশিনে ধুয়েছি। এরপর এটা দিয়ে সালাতও আদায় করি। কয়েকদিন পর দেখি স্কার্টে ব্লাডের দাগ রয়ে গেছে। যেটা আবার হাতে ঘষে ধুইতে গেলে দেখি যে ক্লিন হয়ে গেছে। এখন আমি স্কার্ট টা পড়ে যে সালাতগুলো পড়ছি এগুলো কি আবার আদায় করতে হবে??

৪র্থ প্রশ্ন

সহবাসের পর কাপড়ে বীর্য লাগলে সে কাপড় কি আলাদাভাবে ধুইতে হবে নাকি অন্যান্য কাপড়ের সাথে একসাথে ওয়াশিং মেশিনে ধুয়া যাবে?

1 Answer

0 votes
ago by (575,580 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজ ওযর বশত ছেড়ে দেয়া জায়েজ আছে,তবে বিনা ওযরে ছেড়ে দেয়া  বা ওযর বশত ছেড়ে দেয়াকে অভ্যাসে পরিণত করা জায়েজ নেই। 

https://ifatwa.info/19165/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 
সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়, যে আমলকে রাসূল সাঃ ইবাদত হিসেবে পাবন্দীর সাথে করেছেন। কখনো ওজর ছাড়া ছেড়ে দিয়েছেন বা নিজেতো ছাড়েননি কিন্তু যে ছেড়ে দিয়েছে তাকে ভর্ৎসনা করেননি। এরকম আমলকে সুন্নতে মুআক্কাদা বলা হয়। {আততাআরিফাতুল ফিক্বহিয়্যাহ-৩২৮, আলমুজিজ ফি উসুলিল ফিক্বহ-৪৩৯-৪০}

সুন্নাতে মুয়াক্কাদা সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: مَنْ ثَابَرَ عَلَى اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً بَنَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، أَرْبَعًا قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْمَغْرِبِ، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْعِشَاءِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الْفَجْرِ

আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দিবা-রাত্র বার রাকাত (সুন্নাতে মুআক্কাদা) আদায়ে অভ্যস্ত হয়ে যায় আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে রাখেন। চার রাকাত জোহরের ফরয নামাযের পূর্বে এবং দু’রাকাত জোহরের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকাত মাগরিবের ফরয নামাজের পরে, দু’রাকআত ইশার ফরয নামাজের পরে এবং দু’রাকআত ফজরের ফরয নামাজের পূর্বে। (সুনানে নাসায়ী ১৭৯৫)

مَنْ صَلَّى اثْنَتَىْ عَشْرَةَ رَكْعَةً فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ بُنِيَ لَهُ بِهِنَّ بَيْتٌ فِي الْجَنَّةِ ” . قَالَتْ أُمُّ حَبِيبَةَ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . وَقَالَ عَنْبَسَةُ فَمَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ أُمِّ حَبِيبَةَ . وَقَالَ عَمْرُو بْنُ أَوْسٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَنْبَسَةَ . وَقَالَ النُّعْمَانُ بْنُ سَالِمٍ مَا تَرَكْتُهُنَّ مُنْذُ سَمِعْتُهُنَّ مِنْ عَمْرِو بْنِ أَوْسٍ

দিন ও রাতে যে ব্যক্তি মোট ১২ রাক‘আত (সুন্নাত) সলাত আদায় করে তার বিনিময়ে জান্নাতে ঐ ব্যক্তির জন্য একটি ঘর নির্মাণ করা হয়। উম্মু হাবীবাহ্ বলেছেন: আমি যে সময়ে রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কাছে এ সলাত সম্পর্কে শুনেছি তখন থেকে আর কখনো তা আদায় করা পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্বাসাহ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান বলেছেন: এ সলাত সম্পর্কে যখন আমি উম্মু হাবীবার কাছে শুনেছি; তখন থেকে আর ঐ সলাত গুলো কখনো পরিত্যাগ করিনি। ‘আম্র ইবনু আওস বলেছেনঃ যে সময়ে এ সলাত সম্পর্কে আমি ‘আম্বাসাহ্ ইবনু আবূ সুফ্ইয়ান- এর নিকট থেকে শুনেছি সে সময় থেকে আর কখনো তা পরিত্যাগ করিনি। নু’মান ইবনু সালিম বলেছেন: যে সময় আমি এ হাদীসটি ‘আম্র ইবনু আওস- এর নিকট থেকে শুনেছি তখন থেকে কখনো আর তা পরিত্যাগ করিনি। [সহিহ মুসলিম অধ্যায়: ফরযের পূর্বে ও পরে নিয়মিত সুন্নাতের ফাযীলাত এবং তার সংখ্যার বিবরণ। হা/১৫৭৯]

ইবন নুজাইম রহ. বলেন,

 والذي يظهر من كلام أهل المذهب أن الإثم منوط بترك الواجب أو السنة المؤكدة على الصحيح ؛ لتصريحهم بأن من ترك سنن الصلوات الخمس قيل لا يأثم ، والصحيح أنه يأثم .. . . فالإثم لتارك السنة المؤكدة أخف من الإثم لتارك الواجب

মাযহাবের ইমামদের কথা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ওয়াজিব অথবা সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগ করলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী গুনাহ হয়। কেননা, তারা বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের (আগে-পরের) সুন্নতগুলো ছেড়ে দিবে, কেউ বলেন, গুনাহ হবে না। বিশদ্ধ কথা হল, গুনাহ হবে।’ তবে সুন্নতে মুআক্কাদা ত্যাগকারীর গুনাহ ওয়াজিব ত্যাগকারীর চাইতে কম হবে। (আল বাহরুর রায়েক ১/৩১৯)

আল্লামা জুরজানী রাহ বলেনঃ

ﻭﺣﻜﻤﻬﺎ ﻛﺎﻟﻮﺍﺟﺐ -— ﺇﻻ ﺃﻥ ﺗﺎﺭﻙ ﺍﻟﻮﺍﺟﺐ ﻳﻌﺎﻗﺐ ﻭﺗﺎﺭﻛﻬﺎ ﻻ ﻳﻌﺎﻗﺐ - ( ﺍﻟﺘﻌﺮﻳﻔﺎﺕ ﻟﻠﺠﺮﺟﺎﻧﻰ 138-

সুন্নতে মুআক্কাদা ওয়াজিবের মতই। অর্থাৎ ওয়াজিবের ব্যাপারে যেমন জবাবদিহী করতে হবে, তেমনি সুন্নতে মুআক্কাদার ক্ষেত্রে জবাবদিহী করতে হবে। তবে ওয়াজিব তরককারীর জন্য সুনিশ্চিত শাস্তি পেতে হবে, আর সুন্নতে মুআক্কাদা ছেড়ে দিলে কখনো মাফ পেয়ে যেতেও পারে। তবে শাস্তিও পেতে পারে।

ফরজ নামাযের আগে পরের সুন্নতে মুআক্কাদার অত্যধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত। এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরাম লিখেন যে,

ﺭﺟﻞ ﺗﺮﻙ ﺳﻨﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﺍﻥ ﻟﻢ ﻳﺮ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺣﻘﺎ ﻓﻘﺪ ﻛﻔﺮ، ﻷﻧﻪ ﺗﺮﻛﻬﺎ ﺍﺳﺘﺨﻔﺎﻓﺎ ( ﺭﺩ ﺍﻟﻤﺤﺘﺎﺭ - 2/492 ، ﺑﺪﺍﺋﻊ ﺍﻟﺼﻨﺎﺋﻊ - 1/644

যদি কেউ সুন্নতকে হক মনে না করে এটাকে ছেড়ে দেয়, তাহলে এ কর্ম তাকে কুফরী পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

বিস্তারিত জানুনঃ 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার বোন যদি মাঝে মধ্যে ২/১ দিন সুন্নাতে মুয়াক্কাদা ছেড়ে দেয়,সেক্ষেত্রে তার গুনাহ হবেনা।

তবে নিয়মিত ছেড়ে দেয়া যাবেনা।

এক্ষেত্রে সমাধান হলো আপনার বোন মাটিতে যেভাবে সুবিধা হয়,সেভাবে বসে সুন্নাত নামাজ আদায় করবে। প্রয়োজনে চার যানু হয়ে (বাবু মেরে) বসবে বা দুই পা সামনের দিকে টেনে দিয়ে বসতে পারে। 

রুকু সেজদাহ ইশারার দ্বারা সামান্য মাথা ঝুকিয়ে আদায় করবে। তবে রুকুর তুলনায় সেজদায় মাথা একটু বেশি ঝুকাবে।

(০২)
সতর্কতা মূলত কোমর পর্যন্ত ধুয়ে ফেলার পরামর্শ থাকবে, প্রয়োজনে গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন।

(০৩)
স্কার্টে যে ব্লাডের দাগ ছিলো,তাহা এক দিরহাম (বর্তমান আমাদের দেশের ৫ টাকার কয়ে সমপরিমাণ) থেকে কম হলে সেই সালাত গুলি পুনরায় আদায় করতে হবেনা।

তবে ব্লাডের দাগ এক দিরহাম বা তার চেয়ে বেশি লাগলে সেক্ষেত্রে সেই সালাত গুলি পুনরায় আদায় করবেন।

(০৪)
এক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনে যদি  ৩ বার ধুয়ে প্রত্যেকবার নিংড়িয়ে নেয়,৩ বার ধোয়ার ক্ষেত্রে ওয়াশিং মেশিনে যদি তিনবার নতুন পানি আসে,সেক্ষেত্রে কাপড় পাক হবে।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...