আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
51 views
in সালাত(Prayer) by (19 points)
টাইটেলের প্রেক্ষিতে একটি বক্তব্য নিচে পেশ করা হলো। নিচের কথা গুলো কি সঠিক? সঠিক না হলে কি কি ভুল আছে? এবং সঠিক হলে কি কি তথ্য সংযুক্ত করা যায় যেন মানুষকে বোঝানো যায়।
হানাফি ফিকহের ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছুটা দেরিতে পড়া হয়। অনেকে বলেন যে তারা ভুল। বাস্তবতা হচ্ছে, কেউই ভুল না, সবাই নিজ নিজ স্থান থেকে সঠিক হতে পারে। অনেক সময় একাধিক মতামতও সঠিক হতে পারে।

আজকে দেখবো হানাফি ফিকহের ক্ষেত্রে বিষয়টা কী?
“আমল সমূহের মধ্যে কোন আমল সর্বাধিক উত্তম? তিনি উত্তরে বলেন, আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করা।” (১)
হানাফি ফিকহতে কোথাও বলা নেই যে আওয়াল ওয়াক্ত বাদ দিয়ে পরে নামাজ পড়তে হবে। বরং হানাফিতে ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই নামাজের কথা আছে। তবে আওয়াল ওয়াক্ত নামাজ না পরলে যে অনুত্তম হবে এমন কোন দলিল নেই। এটাতে খারাপও বলা হয়নি। অন্যদিকে আওয়াল ওয়াক্তে নামাজের বিষয় মূলত সাধারণ ক্ষেত্রে উত্তম বলা হয়েছে। যেমন মক্কা বিজয়ের পরে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সবার প্রথমে বললেন, সকলের জন্যে সাধারণ ক্ষমা। কিন্তু আসলেই কি তা সকলের জন্যে ছিলো? না, এটা মূলত সাধারণ অর্থে কথা, কিছু ব্যক্তির জন্যে বিশেষ ক্ষমতার ঘোষণা ছিলো। নির্দিষ্ট ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুর আদেশ ছিলো। মূলত এটি হচ্ছে সাধারণ অর্থে ব্যবহার। কুরআন হাদিস ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে হানাফি ফিকহের নীতি অনুসরণ করেন যারা, তারা এই হাদিসকে সাধারণ অর্থে নিয়েছেন। কেন সাধারণ অর্থে? কেননা হাদিস থেকেই আমরা জানতে পারি, আল্লাহর রাসূল একবার বলছেন সব সময় আওয়াল ওয়াক্তের নামাজের কথা, কিন্তু এশার নামাজের ক্ষেত্রে বলেছেন যে ওয়াক্তের শেষে এশার নামাজ বেশি উত্তম। (২) এশার নামাজের ক্ষেত্রে আমরা বিপরীত বিষয় দেখতে পারছি। মানে আওয়াল ওয়াক্তের কথা বলা হলেও সেটা সাধারণ অর্থে।

এবার সমস্যাটা হচ্ছে জামাতে নামাজ পড়া। জামাতে নামাজের সওয়াল ও ফলাফল যে কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সার্চ করলেই পাবেন বহু হাদিস এই বিষয়ে। এবার আরো দরকারি বিষয় হচ্ছে জামাতে যত বেশি মানুষ হবে, তত বেশি সওয়াব। “যে জামায়াতে মুসল্লী সংখ্যা যত বেশি, সেখানে সালাত আদায়েও সাওয়াব তত বেশি।” (৩) অনেক আগে একবার দেখেছিলাম মসজিদে বড় জামাত ছেড়ে ৫/৬ জন মিলে ছোট জামাত করছে ওয়াক্ত হবার সাথে সাথেই। তাদের মতে, আগে সময় হলেই পড়তে হবে, তাতে ফজিলত বেশি। অথচ তারা আরো বড় নেয়ামত মিস করে ফেললো, বড় জামাতে নামাজ না পড়ে।

আমরা বুঝলাম, আওয়াল ওয়াক্ত কথাটা সাধারণ অর্থে, বিশেষ বিষয় সামনে আসলে অন্য উপায় অধিক উত্তম হতে পারে। যেমন, এশার নামাজ এবং বড় জামাতে নামাজ পড়া।
এমনিতে নিজে একলা একলা বা ছোট জামাতে কেউ নামাজ পড়ে, তাহলে তার জন্যে ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই নামাজ পড়া উচিত। কিন্তু একটি দেশে সকল পেশার মানুষের সময়ের কথা মাথায় রেখে একটি কমন টাইম বের করতে হয়, যখন বেশিরভাগ মানুষ নামাজ পড়তে পারবে এবং জামাত বড় হবে। জামাত বড় হওয়ার অধিক উত্তম নামাজ আগে পড়ার থেকে। ইসলামের শিক্ষা থেকে দেখতে এতাই পাই এক সাথে ছোট বড় সবাই মিলে নামাজ পড়া। যত বড় জামাত তত বড় ঐক্য। মূলত এই কারণে সবার কমন সময়কে প্রাধান্য দেওয়ার মত দেয় হানাফি আলেমরা। যেমন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ শাসনের পরে কর্ম বিরতি হয় দুপুর ১টা থেকে ৩০ মিনিট বা ৪৫ মিনিট। অথবা কারো ১ঃ১৫ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। অর্থাৎ দ্রুত খেয়ে নামাজ জামাতে পড়ার সুযোগ থাকে। জামাত বড় হয়। সকল অফিস, স্কুল, প্রতিষ্ঠান, সব কিছু এমনকি মানুষের খাওয়া দাওয়ার অভ্যাসও এই ১টা থেকে ২টার মধ্যে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জামাতে বেশি লোক হওয়া। তাই অল্প লোক নিয়ে জামাত আওয়াল ওয়াক্তে করার থেকে অধিক মানুষ একসাথে মধ্যেম সময় জামাত আদায় করা বেশি সুন্নাহ ভিত্তিক উত্তম।

অন্যদিকে ফজরের নামাজের ক্ষেত্রেও একই বিষয়। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্যে সহজ হয়ে ফজর কিছুটা দেরিতে শুরু হলে। সময় হওয়ার সাথে সাথেই ফজরের জামাত শুরু হলে অনেকেই হারিয়ে যায়। জামাতের ১৫-২০ মিনিট আগে উঠতে হয়। অনেকের জামাত ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জন্যে জামাত দেরিতে করা হয়। কিন্তু রমজান মাসে দেরি করে জামাত হলে অনেকের জামাত মিস হতে পারে। কেননা সবাই ওয়াক্ত হওয়ার এক ঘণ্টা আগে উঠে খাওয়া দাওয়া করে। এর পরে তারা ক্লান্ত থাকে, তাদের বিশ্রাম দরকার হয়। ওয়াক্ত শুরু হওয়ার অনেক পরে জামাত হলে অনেকেই ঘুমিয়ে যেতে পারে। তাই রমজান মাসে আওয়াল ওয়াক্তে জামাত শুরু করার পক্ষে হানাফি আলেমদের মতামত।

পাশাপাশি এই দিকেও কিছু হাদিস আছে। যদিও দুই পক্ষেরই হাদিস আছে।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “তোমরা ফজরের নামায ফর্সা করে পড়ো। কারণ, তাতে সওয়াব অধিক।” (৪)

তোমরা ভোরের আলো পরিস্কার হওয়ার পর ফজরের সালাত পড়,কেননা এতে সওয়াব বেশী করে পাওয়া যায়।(তিরমিযি শরীফ-১৫৪)

এটাও জানা যায় যে, তারা ফজরের নামাজে ৬০ থেকে ১০০ আয়াত তিলাওয়াত করতেন। মানে তারা শুরু করতেন অন্ধকার থাকতে এবং লম্বা আয়াত পড়তে পড়তে আলো দেখা যেতো। এই ক্ষেত্রে দুই রকম মতামত নেওয়া হয়েছে। অন্ধকারকে অনেকে একদম ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে সাথেই নামাজের কথা বলেছেন। তাদের কথার সাথেও মিলে। কেননা এত আয়াত পড়তে পড়তে অনেক সময় লাগে।
এই ক্ষেত্রে হানাফি হাদিসে একটি অংশ সম্পূর্ণ হাদিসের সাথে আমল হয় এবং আরেকটি দিক আংশিকভাবে পালন হয়। কীভাবে?
বাংলাদেশের হানাফি ফিকহ মেনে চলা মসজিদ কমিটির টাইম জামাত শুরু ওয়াক্ত শুরু হওয়ার বেশ কিছু সময় পরে হলেও, অন্ধকার থাকতেই শুরু হয়। এমনকি যে চারিদিকে আলো আছে। চারদিকে তখন অন্ধকার। তাই নামাজ পড়ার সময় অন্ধকার থাকে। আর নামাজ শেষ হতে হতে চারদিকে আলো দেখা যায়।

অন্যদিকে যারা একদম ওয়াক্তের শুরুতেই ফজরের নামাজ শুরু করে, তাদেরও হাদিসে অংশ পালন করা হয়। অন্ধকার থাকতে নামাজ শুরু করে এবং অন্ধকার থাকতে নামাজ শেষ হয়। এই ক্ষেত্রে মা আয়েশার হাদিসে আছে, ফজরের নামাজ শেষ হলেও অন্ধকার থাকতো এবং কেউ কাউকে মুখ দেখতে পারতো না।
এই হাদিসে আমল তাদের ক্ষেত্রে হচ্ছে। তবে তাদের ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ১০০ আয়াত তিলাওয়াতের বিষয় ছুটে যায় অন্যদের মতো। এবং তাদের ক্ষেত্রে নামাজ শেষ হতে হতে আলো হয়ে যাওয়ার যে হাদিসে আমল সেটাও ছুটে যায়। এবং একই সাথে রমজান ছাড়া সাধারণ দিনে আগে জামাত করতে অনেকের জামাত ছুটে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
দিন শেষে আপনি যেভাবেই পালন করেন না কেন, কিছু না কিছু হাদিসের আমল বাদ যাবেই, আবার সবাই কোন না কোন হাদিসে আমল ধরে রেখেছে।

তবে উত্তম হবে যদি ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথেই জামাত শুরু করা এবং ৬০-১০০ আয়াত খুব ধীরে ধীরে পাঠ করা। এবং নামাজ শেষ হতে হতে চারপাশে আলো হয়ে যায়। এতে করে কারো জামাত ছুটে যাবে না। সব হাদিসে আমল পালন হবে। শুধু সমস্যা হবে, বর্তমানের মুসলিমরা এত সময় ধৈর্য রাখতে পারে না। শারীরিকভাবে দুর্বল। এত সময় দাঁড়িয়ে থাকতেও পারে না। আল্লাহ সাহায্য করুন।

1 Answer

0 votes
by (586,860 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/109303/ নং ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ- 

সালাতের মুস্তাহাব সময়

ফজরের সালাত পুরষদের জন্য ফর্সা করে পড়া মুস্তাহাব। আর মহিলাদের জন্যে একটু অন্ধকারে পড়া মুস্তাহাব।

রাফি’ ইবনে খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসুলুল্লাহ (সা. ) বলেছেন,

"أَصْبِحُوا بِالصُّبْحِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لأُجُورِكُمْ ". أَوْ" أَعْظَمُ لِلأَجْر" .

ভোরের আলো প্রকাশিত হলে ফজর সালাত আদায় করবে। কারণ এতে তোমাদের জন্য অত্যাধিক সওয়াব বা অতি উত্তম বিনিময় রয়েছে।’’ আবু দাউদ 424

ফজরের এই সময়টুকু দুই ভাগে ভাগ করা যায়। শরিয়তের পরিভাষায় প্রথম ভাগকে ‘গালাস’ আর দ্বিতীয় ভাগকে ‘ইসফার’ বলে। রাসূল সা.  অধিকাংশ সময় দ্বিতীয় অংশ তথা ইসফারে ফজরের সালাত আদায় করতেন। ফিকাহবিদগণ বলেনপ্রথম ভাগ তথা ‘গালাস’ এর সময় মহিলাদের আর দ্বিতীয় ভাগ তথা ‘ইসফার’ এর সময় পুরুষদের ফজর সালাত আদায় করা উত্তম। দুররুল মুখতার ০১/২৬৩আল- বাহরুর রায়েক ০১/২৪৪

,

গ্রীষ্মকালে যোহরকে শীতল করে পড়া মুস্তাহাব

আবু হুরায়রা (রাঃ) ও ‘আবদুল্লাহ্ ইবনে 'উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আল্লাহ্র রাসূল (সা. ) বলেছেন,

إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا عَنِ الصَّلاَةِ، فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ.

যখন গরমের প্রচণ্ডতা বৃদ্ধি পায়তখন গরম কমলে সালাত আদায় করবে। কেননাগরমের প্রচণ্ডতা জাহান্নামের নিঃশ্বাসের অংশ।’’ সহীহ বুখারী-533

,

গরম কালে জোহরের নামাজ দেড়িতে পড়া মুস্তাহাব।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، وَأَبِي، سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا عَنِ الصَّلاَةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ " . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ وَأَبِي ذَرٍّ وَابْنِ عُمَرَ وَالْمُغِيرَةِ وَالْقَاسِمِ بْنِ صَفْوَانَ عَنْ أَبِيهِ وَأَبِي مُوسَى وَابْنِ عَبَّاسٍ وَأَنَسٍ . قَالَ وَرُوِيَ عَنْ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي هَذَا وَلاَ يَصِحُّ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ أَبِي هُرَيْرَةَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَقَدِ اخْتَارَ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ تَأْخِيرَ صَلاَةِ الظُّهْرِ فِي شِدَّةِ الْحَرِّ وَهُوَ قَوْلُ ابْنِ الْمُبَارَكِ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ . قَالَ الشَّافِعِيُّ إِنَّمَا الإِبْرَادُ بِصَلاَةِ الظُّهْرِ إِذَا كَانَ مَسْجِدًا يَنْتَابُ أَهْلُهُ مِنَ الْبُعْدِ فَأَمَّا الْمُصَلِّي وَحْدَهُ وَالَّذِي يُصَلِّي فِي مَسْجِدِ قَوْمِهِ فَالَّذِي أُحِبُّ لَهُ أَنْ لاَ يُؤَخِّرَ الصَّلاَةَ فِي شِدَّةِ الْحَرِّ . قَالَ أَبُو عِيسَى وَمَعْنَى مَنْ ذَهَبَ إِلَى تَأْخِيرِ الظُّهْرِ فِي شِدَّةِ الْحَرِّ هُوَ أَوْلَى وَأَشْبَهُ بِالاِتِّبَاعِ وَأَمَّا مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ الشَّافِعِيُّ أَنَّ الرُّخْصَةَ لِمَنْ يَنْتَابُ مِنَ الْبُعْدِ وَالْمَشَقَّةِ عَلَى النَّاسِ فَإِنَّ فِي حَدِيثِ أَبِي ذَرٍّ مَا يَدُلُّ عَلَى خِلاَفِ مَا قَالَ الشَّافِعِيُّ . قَالَ أَبُو ذَرٍّ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي سَفَرٍ فَأَذَّنَ بِلاَلٌ بِصَلاَةِ الظُّهْرِ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " يَا بِلاَلُ أَبْرِدْ ثُمَّ أَبْرِدْ " . فَلَوْ كَانَ الأَمْرُ عَلَى مَا ذَهَبَ إِلَيْهِ الشَّافِعِيُّ لَمْ يَكُنْ لِلإِبْرَادِ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ مَعْنًى لاِجْتِمَاعِهِمْ فِي السَّفَرِ وَكَانُوا لاَ يَحْتَاجُونَ أَنْ يَنْتَابُوا مِنَ الْبُعْدِ .

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন (সূর্যের) উত্তাপ বেড়ে যায়, তখন তোমরা ঠাণ্ডা করে নামায আদায় কর (বিলম্ব করে নামায আদায় কর)। কেননা প্রচণ্ড উত্তাপ জাহান্নামের নিঃশ্বাস হতে হয়। —সহীহ। ইবনু মাজাহ– (৬৭৮), বুখারী ও মুসলিম।

এ অনুচ্ছেদে আবু সাঈদ, আবু যার, ইবনু উমার, মুগীরা, কাসিম ইবনু সাফওয়ান তার পিতার সূত্রে, আবু মূসা, ইবনু আব্বাস ও আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসও রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু ’আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে উমর (রাঃ)-এর একটি বর্ণনাও রয়েছে। কিন্তু এ বর্ণনাটি সহীহ নয়। আবু ঈসা বলেনঃ আবু হুরাইরা বর্ণিত হাদীসটি হাসান সহীহ।

বিশেষজ্ঞদের একদল গরমের মওসুমে যুহরের নামায বিলম্বে আদায় করা পছন্দ করেছেন। ইবনুল মুবারাক, আহমাদ ও ইসহাক এই মতের সমর্থক। ইমাম শাফিঈ বলেন, লোকেরা যখন দূরদূরান্ত হতে মসজিদে আসে তখন যুহরের নামায ঠাণ্ডার সময় আদায় করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু যে ব্যক্তি একাকি নামায আদায় করে অথবা নিজের গোত্রের মসজিদে নামায আদায় করে- খুব গরমের সময়েও আমি তার জন্য প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় করা উত্তম মনে করি। আবু ঈসা বলেনঃ অত্যধিক গরমের সময়ে যারা বিলম্বে যুহরের নামায আদায়ের কথা বলেন, তাদের মত অনুসরণযোগ্য। কিন্তু আবু যার (রাঃ)-এর হাদীস ইমাম শাফিঈর বক্তব্যের (দূর হতে আসা মুসল্লীর কারণে যুহরের নামায ঠাণ্ডার সময়ে আদায়ের নির্দেশ রয়েছে, কেননা তাতে তাদের কষ্ট কম হবে) পরিপন্থী। আবু যার (রাঃ) বলেনঃ “আমরা কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। বিলাল (রাঃ) যুহরের নামাযের আযান দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ হে বিলাল! শীতল কর (গরমের তীব্রতা কমতে দাও)। তারপর শীতল করা হল (বিলম্বে নামায আদায় করা হল)।”

ইমাম শাফিঈর বক্তব্য অনুযায়ী শীতল করার অর্থ যদি তাই হত তবে এ সময়ে শীতল করার কোন অর্থই হয় না। কেননা সফরের অবস্থায় সবাই একই স্থানে সমবেত ছিল, দূর হতে কারো আসার কোন প্রশ্নই ছিল না।

(তিরমিজি ১৫৭)


আসরকে দেরী করে পড়া মুস্তাহাব

আলী ইবনে শায়বান (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,

قَدِمْنَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْمَدِينَةَ فَكَانَ يُؤَخِّرُ الْعَصْرَ مَا دَامَتِ الشَّمْسُ بَيْضَاءَ نَقِيَّةً .

একদা আমরা মদীনা হয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে গেলাম। সে সময় তিনি সূর্যের রং উজ্জ্বল থাকা পর্যন্ত আসরের সালাত বিলম্ব করে আদায় করলেন।’’ আবু দাউদ ৪০৮

,

মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাড়াতাড়ি আসরের সালাত পড়া মুস্তাহাব

বুরায়দাহ আল-আসলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমরা রাসুলুল্লাহ (সা. ) এর সাথে এক যুদ্ধে যোগদান করেছিলাম। তিনি সা.  বলেন,

بَكِّرُوا بِالصَّلاَةِ فِي الْيَوْمِ الْغَيْمِ فَإِنَّهُ مَنْ فَاتَتْهُ صَلاَةُ الْعَصْرِ حَبِطَ عَمَلُهُ

তোমরা মেঘাচ্ছন্ন দিনে তাড়াতাড়ি (প্রথম ওয়াক্তে) সালাত আদায় করবে। কারণ যার আসরের সালাত ছুটে যায় তার আমল বিনষ্ট হয়ে যায়।’’ ইবনে মাজাহ 694

,

মাগরিবের সালাতের মুস্তাহাব সময়

মারসাদ ইবনে ‘আবদুল্লাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিতরাসূল সা. বলেন,

لاَ تَزَالُ أُمَّتِي بِخَيْرٍأَوْ قَالَ عَلَى الْفِطْرَةِ مَا لَمْ يُؤَخِّرُوا الْمَغْرِبَ إِلَى أَنْ تَشْتَبِكَ النُّجُومُ

আমার উম্মাত ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে অথবা মূল অবস্থায় থাকবে যতদিন তারা মাগরিবের সালাত আদায়ে তারকা উজ্জ্বল হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করবে না।’’ আবু দাউদ 418

,

এশার সালাতের মুস্তাহাব সময়

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিততিনি বলেননবী (সা. ) বলেছেন,

لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ أَنْ يُؤَخِّرُوا الْعِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ أَوْ نِصْفِهِ

যদি আমি আমার উম্মাতের জন্য কষ্টকর হবে বলে মনে না করতামতাহলে তাদেরকে এশার সালাত রাতের এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধরাত পর্যন্ত দেরি করে আদায়ের নির্দেশ দিতাম।’’ তিরমিযী 167


عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لأَمَرْتُهُمْ أَنْ يُؤَخِّرُوا العِشَاءَ إِلَى ثُلُثِ اللَّيْلِ أَوْ نِصْفِهِ.

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, উম্মতের কষ্ট হওয়ার ভয় যদি আমার না হত তাহলে আমি তাদেরকে আদেশ করতাম, তারা যেন ইশার নামায রাতের এক তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক পর্যন্ত বিলম্বিত করে। {সুনানে তিরমিজী-১/২৩, হাদীস নং-১৬৭}

আরো জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
মূলত সব নামাজের মুস্তাহাব ওয়াক্ত এক নয়।
একেক নামাজের মুস্তাহাব ওয়াক্ত একেক রকম। যাহা মূলত হাদীস দ্বারাই প্রমানিত। 

সুতরাং হানাফিরা এভাবে মুস্তাহাব ওয়াক্তে নামাজ আদায় করে হাদীসের খেলাফ কাজ করেনি।

তবে যারা সব নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে পড়েন,তারা ভুলের উপর নয়।
তারাও সঠিক সময়েই নামাজ আদায় করছেন।

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...