بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়।
কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে সে একদিকে যেমন গুনাহগার
হবে অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যাবে। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হল, তালাকের শব্দ কিংবা
এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা।
অবশ্য অতীব প্রয়োজনে তালাক প্রদানে
বাধ্য হলে স্ত্রীর পবিত্র অবস্থায় শুধু এক তালাক দিয়ে ক্ষান্ত হওয়া উচিত। এভাবে
বলবে যে, ‘তোমাকে
তালাক দিলাম।’ তালাকের সাথে ‘বায়েন’ শব্দ কিংবা ৩ সংখ্যা ব্যবহার করবে না। কেউ ‘বায়েন’
শব্দ বলে ফেললে (চাই তা এক বা দুই তালাক হোক না কেন) নতুন করে শরীয়তসম্মত পন্থায়
বিবাহ দোহরানো ছাড়া স্ত্রীর সাথে পুনরায় মিলনের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।
https://ifatwa.info/4167/ নং আমরা উল্লেখ করেছি যে, স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তালাক লেখা,বা উচ্চারণ করার দ্বারাই
স্ত্রীর উপর তালাক পতিত হয়ে যায়।এজন্য তালাক শব্দটি স্ত্রীর নিজে শোনা যেমন জরুরী নয়,
তেমনি সংবাদ স্ত্রীর কাছে পৌছানোও জরুরী নয়। এমনিতেই তালাক পতিত হয়ে
যায়। বাকি স্ত্রীকে জানিয়ে দেয়া জরুরী যেন স্ত্রী ইদ্দত পালন করে স্বাধীন হয়ে যেতে
পারে।
সে হিসেবে মুঠোফোনে তালাক এসএমএস করে,বা মুখে দিলেও তা পতিত হয়ে যায়। কারণ স্ত্রী উদ্দেশ্য করে
মুখে তালাক বললেই যেখানে তালাক হয়ে যায়, সেখানে মুঠোফোনে বলার
দ্বারা তালাক পতিত হতে কোন প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি হচ্ছে না। তালাকতো স্বামীর মুখে বলার
দ্বারাই হয়ে যাচ্ছে। সেটি মুঠোফোনের মাধ্যমে পৌছুক বা না পৌছুক এর সাথে তালাক পতিত
হওয়া ও পতিত না হবার কোন সম্পর্কই নেই। তাই আলাদাভাবে মুঠোফোনের দ্বারা তালাক পতিত
হবার কোন তফাৎ নেই। আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ:
الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত
এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক,
বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}
ইসলাম বলেছে, কমপক্ষে দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার
সাক্ষী থাকতে হবে। তাছাড়া প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে বিয়ে করলে বিয়ে হবে না। বিয়ের আকদের সময় দুইজন পুরুষ
ভা একজন পুরুষ দুইজন মহিলা সাক্ষী রাখতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
واستشهدوا شهيدين من الرجالكم فإن لم يكونا رجليين فرجل
وامرأتان
তোমরা দুইজন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে রাখো।
যদি দুইজন পুরুষ না হয়,তাহলে একজন পুরুষ দুইজন
মহিলা সাক্ষী হিসেবে থাকতে হবে।
নবী ﷺ বলেছেন,
لا نكاح إلا بوليّ وشاهدين
অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই। (আহমাদ, বুলূগুল মারাম- হা/৯৭৬,
বিয়ে অধ্যায়)
অপর হাদিসে রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,الْبَغَايَا اللاَّتِي يُنْكِحْنَ أَنْفُسَهُنَّ
بِغَيْرِ بَيِّنَةٍ তারা হলো ব্যভিচারিনী যারা সাক্ষী ছাড়া নিজেরাই নিজেদের বিবাহ করে নেয়। (তিরমিযি
১১০৩)
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সাক্ষী এমন দুইজন পুরুষ (স্বাধীন) সাক্ষী
বা একজন পুরুষ (স্বাধীন) ও দুইজন মহিলা সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল
বলার উভয় বক্তব্য উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ-দুররুল মুখতার ৩/৯ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া
১/২৬৮)
★ সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন !
যদি আপনার স্বামী আপনাকে তালাক শব্দ উল্লেখ করে এক
তালাকে রজঈ বা দুই তালাকে রজঈ প্রদান করে থাকে সেক্ষেত্রে আপনারা একে অপরের সাথে সংসার
করতে পারবেন, বিয়ে করারও প্রয়োজন নেই। বরং ইদ্দতের মধ্যে শুধু একে অপরে পরস্পর স্পর্শ
করবে অথবা নির্জনে স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণ করবে তাহলে রজআত হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার
স্বামী যদি আপনাকে ১ তালাকে বায়েন প্রদান করে তাহলে নতুন করে বিবাহ করতে হবে। অনথায়
সংসার করা জায়েয নেই। আর যদি আপনার স্বামী আপনাকে তিন তালাক প্রদান করে থাকে তাহলে
আপনাদের মাঝে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ হয়ে যাবে, পরস্পরে সংসার করা জায়েয হবে না।