আসসালামু আ'লাইকুম
আমি কিছু সমস্যার সমাধান খুঁজছি। দয়া করে উত্তর দিবেন।
আমার বিবাহিত জীবন দুই বছর+। স্বামী সবকিছু জেনে বিয়ে করেছে। আমাদের ১ বছরের একটা কন্যা আছে। আমি এবং আমার স্বামী দুইজনই জেনারেল শিক্ষিত, দ্বীনে ফেরা। ইসলাম প্রাকটিস করি। কিন্তু আমার স্বামীর পরিবার সম্পূর্ণ বিপরীত। সমস্যা এখানেই। আমি মাহরাম নন-মাহারাম মেইনটেইন করি বিয়ের আগে থেকেই আলহামদুলিল্লাহ। তো পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে কিংবা তাদের সামনে যেতে আমার আমার ইতস্তত বোধ হয়। মনে হয় আগুনের মধ্যে আছি।
যাই হোক বিয়ের পর আমার স্বামীর পরিবার থেকে আমার ব্যপারে দুইটা অভিযোগ।
১. আমি কোনো নন-মাহারাম পুরুষ মানুষের সাথে সৌজন্যে সাক্ষাত করিনা, আসা যাওয়ার সময় কথা বলিনা। তারা আসলে তাদের সামনে গিয়ে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করিনা। চলে আসার সময় বলিনা যে, চলে গেলাম, আপনারা আমাদের বাসাতে যেয়ে ঘুরে এসেন ইত্যাদি।
২. আমার মেহমানদের সেবা যত্নে ঘাটতি আছে, মানুষের সাথে মেলামেশাতে ঘাটতি আছে। অর্থাৎ পুরুষ মানুষের থেকে আড়ালে থাকি। আমি নন-মাহারাম পুরুষদের খাবার বেড়ে দিইনা। একগ্লাস পানি পর্যন্ত ঢেলে খাওয়াই না।
উল্লেখিত দুইটা কাজই আমি মহিলাদের সাথে করি কিন্তু নন-মাহারামদের সাথে নয়। নন-মাহারাম পুরুষদের সাথে আমি ফ্রি না। কিন্তু অনেক সময় বাধ্য হয়ে কথা বলতে হয়েছিল। আমি দরজার পর্দার ওপাশ থেকে কথা বললেও তাদের সমস্যা। তাদের সামনে কেন গেলাম না এটা নিয়ে। খাবার বেড়ে দিতে হয়েছিল স্বামীর চাপে। খাবার বাড়ার সময় খেয়াল করছিলাম আমার হাতের দিকে নজর কারণ ভুলবশত হাতমোজা পরেছিলাম না আসতাগফিরুল্লাহ। আর কখনো দিই নাই এরপর। আমি বলি পুরুষদের খাবার তাদের মাহরাম মহিলা কিংবা পুরুষ দিবে। কিন্তু তা তারা মানতে নারাজ।
তাদের কথা পর্দা করেও অনেক কাজ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ অমুক চাকরি করে, তমুক পুরুষ মানুষের সাথে গল্প করে, পর্দাতো কত মানুষের দেখেছি এমন দেখিনি, অসামাজিক, জঙ্গল, মানুষকে খেতে দেওয়ার ভয়ে পর্দা করে ইত্যাদি।
হুম আমি উপরে উল্লেখিত কাজগুলো বাদে অন্যান্য কাজ করি যেমন তাদের জন্য খাবার পাকানোতে শাশুড়িকে সহযোগিতা, খাবার টেবিলে খাবার, পানি গুছিয়ে দেওয়া। শুধুমাত্র তারা খাবার খেতে আসার আগ দিয়ে আমি চলে আসি রুমে।
আর যাদের সাথে উল্লেখিত কাজগুলো করতে বলা হচ্ছে তারা তো দ্বীনদার নয়ই বরং তাদের বেশির ভাগেরি নারীঘটিত কেলেঙ্কারি আছে ও পর্ণাসক্ত, মাদকাসক্ত। ইভেন একজন তো আমার উপর পুরুষ ঘটিত মিথ্যা অপবাদ রটানোর চেষ্টা করেছিল আউজুবিল্লাহ। অথচ আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। আবার আমি প্রসূতি অবস্থায় হসপিটালের কাছে স্বামীর এক আত্মীয়ের বাসায় থাকাকালীন একজন কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই তিন বার আমার রুমে প্রবেশ করেছিলেন কিন্তু তিনি জানতেন আমি পর্দা করি এবং আগে কখনো তিনি এভাবে রুমে আসেনি। আল্লাহ এই পাপী বান্দাদের ভালোবাসেন তাই বেপর্দা থেকে হেফাজত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। আবার এই লোক আমার বাবার সাথেও খারাপ ব্যবহার করেছে যে আমাদের বাবার বাড়ি থেকে আসবাবপত্র দেইনি তাই। আমার স্বামীও বলেন খুশি করে কিছু দিলে সেটা নাকি যৌতুক না।
এছাড়াও তারা আমাকেও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মানসিক অত্যাচার (যেমন বাবার বাড়ি থেকে কিছু দেয়নি, বাবা গহণা কম দিয়েছে ইত্যাদি), বুলিং, খোটা দেওয়া ইত্যাদি করে। আমাকে শুনিয়ে একা একাই বলতে থাকে যারা পর্দা করে তারাই বেশি খারাপ, ঘোমটার নিচে খেমটা নাচে ইত্যাদি। পুরুষদের একগ্লাস পানি ঢেলে খাওয়ালে কি পাপ হয়ে যাবে। ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু আমি তখন তাদের এসবের তেমন কোনো প্রতিবাদ করিনি। হয়তো কথার মোড় ঘুরিয়েছি অন্যদিকে।
এছাড়া বলে তুমি কী মনে করো তুমি এরকম (উল্লেখিত) করলে তুমি ভালো থাকবা। মানে তারা আমাকে ভালো থাকতে দিবেনা।
এগুলো মহিলারা আমার সাথে করে। আর মহিলা পুরুষ উভয় আমার স্বামীর সাথে করে।
আমার স্বামী বলেন, তাদের সাথে গল্প করতেও বলছিনা, নিকাব খুলতেও বলছিনা। সব সমস্যা তোমার। তুমি যদি তাদের কথা মতো না চলো তাহলে তোমার সাথে সম্পর্ক বহাল রাখা সম্ভব না, সংসার করা সম্ভব না। আর যদি তাদের কথামত চলো তবে আমার চেয়ে ভালো স্বামী আর কেউ হবে না। আমার বোন আমার বউয়ের উপর ছড়ি ঘুরাবে। আর তোমার উপর স্বামীর আনুগত্য করা ফরজ। তোমার জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক নষ্ট করে আমি জাহান্নামী হতে পারবোনা। তাদের কোনো কথা তোমার কাছে খারাপ লাগলেও আমাকে বলা যাবেনা।
***আমি জানতে উল্লেখিত অবস্থায় আমার করণীয় কী? আসলেই কী সমস্যা আমার! পর্দা করা মানে কী শুধুমাত্র এক টুকরা কাপড় গায়ে জড়ানো, নিকাব পরা! কন্ঠের পর্দার ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ কী? উক্ত নন-মাহারাম আত্মীয়দের হক ও মেহমানদারি এর ব্যপারে ইসলামিক নিয়ম কী?
আমার মনে হয় আমার স্বামী আমার উপর জুলুম করছে তাদের মন জুগিয়ে চলতে গিয়ে। কারণ এর আগেও সে আমাকে সহশিক্ষাতে জোর করে ভর্তি করিয়েছে কারণ তার বোন দুলাভাই চেয়েছে তাই। কিন্তু আমি চাইনি। পরে প্রেগনেন্সির কারণে কন্টিনিউ হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। দশবার কষ্ট পেয়ে যদি একবার তাকে বলি তাদের এই কথাতে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। সে সান্ত্বনা দেয়ই না, উল্টে আরো দুদিন, সাত করে কথা বলেনা।
আজকে স্বামী আমার মাকে ফোনে রাগ করে বলছে আপনার মেয়েকে আপনারা এসে নিয়ে যান আপনার মেয়ের সাথে সংসার করা সম্ভব না। পরে জিজ্ঞেস করলে বলে যে রাগে বলেছি, কোনো নিয়ত করে বলিনি।
**এই কথাতে কী তালাক পতিত হয়েছে কী?
একসাথে তিনটা প্রশ্ন হয়ে যাওয়াই আফওয়ান।