আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
7,384 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম,
১. আমি কি আমার ফুফাকে বাবা সম্মোধন করে ডাকতে পারবো?

উল্লেখ্য যে আমি উনাকে পিতার মত হিসেবে পরিচয় দিচ্ছি না শুধু সম্মান করে বাবা বলে সম্বোধন করে ডাকছি।
আমার ফুফার কোনো নিজের সন্তান নেই, একটা ছেলেকে লালন পালন করেন। ফুফার খুব ইচ্ছা যেন কেউ উনাকে বাবা বলে ডাকবে।    
২. যেহেতু ফুফা নন মাহরাম,  উনার সামনে কতটুকু পর্দা করে যাওয়া জায়েয আছে?

1 Answer

0 votes
by (589,140 points)
বিসমিহি তা'আলা

জবাবঃ-

আমাদের সমাজে অন্যকে বাবা-মা ডাকার সবচেয়ে পরিচিত ক্ষেত্র হলো,শাশুড়-শাশুড়ি।আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে শাশুড়-শাশুড়ীকে কে বাবা-মা বলে সম্বোধন করা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো যে,

এভাবে শাশুর শাশুড়ি বা অন্যকাউকে বাবা-মা বলে সম্বোধন করা কি জায়েয? তাছাড়া শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, আলেম, মুরব্বী, বয়স্ক ব্যক্তি, শিক্ষক, সম্মানিত নেতা ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গকে ‘পিতা’ বা ’বাবা’ বলে  সসম্বোধন করা হয়।এটাও কি জায়েয?

শশুরকে ‘বাবা’ আর শাশুড়িকে ‘মা’ বলা নাজায়েয হবে না।তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই মূলত এমনটা বলা হয়।

কুরআনে আল্লাহ তা'আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদেরকে আমাদের মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যদিও তারা আমাদের জন্মদাত্রী মা নন। এবং ইবরাহীম আ. কে আমাদের পিতা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যদিও তিনি আমাদের জন্মদাতা পিতা নন।

যেমন অাল্লাহ তা'আলা বলেন,

ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻪُ ﺃُﻣَّﻬَﺎﺗُﻬُﻢْ
নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা।(সূরা আহযাবঃ৬নং আয়াতের কিয়দাংশ)

আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন,

ﻭَﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻖَّ ﺟِﻬَﺎﺩِﻩِ ﻫُﻮَ ﺍﺟْﺘَﺒَﺎﻛُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺝٍ ﻣِّﻠَّﺔَ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ ﻫُﻮَ ﺳَﻤَّﺎﻛُﻢُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤﻴﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻞُ ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬَﺍ ﻟِﻴَﻜُﻮﻥَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺷَﻬِﻴﺪًﺍ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻭَﺗَﻜُﻮﻧُﻮﺍ ﺷُﻬَﺪَﺍﺀ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻓَﺄَﻗِﻴﻤُﻮﺍ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺁﺗُﻮﺍ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮﺍ ﺑِﺎﻟﻠَّﻪِ ﻫُﻮَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻛُﻢْ ﻓَﻨِﻌْﻢَ ﺍﻟْﻤَﻮْﻟَﻰ ﻭَﻧِﻌْﻢَ ﺍﻟﻨَّﺼِﻴﺮُ

তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী।(সূরা হজ্ব-৭৮)

অনুরূপভাবে ছোটদের প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে ‘ছেলে’ বা বৎস বলার প্রচলিনও রয়েছে।এবং এটি দূষণীয়ও নয়।
যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে,

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনাস রা. কে বলেন,

يَا بُنَيَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُونُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ.

হে আমার বৎস! তুমি যখন বাড়িতে প্রবেশ করবে, তখন বাড়ির লোকদেরকে সালাম দিবে।এটা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারবর্গের জন্য রহমত স্বরূপ।” (সুনানে তিরমিযি-২৬৯৮)

সম্মান প্রদর্শন পূর্বক কাউকে বাবা বা মা বলে সম্বোধন করা জায়েয আছে।তবে কাউকে বাস্তবে বাবা-মার স্থান দিয়ে দেয়া বা নিজ পিতা-মাত ব্যতীত নিজেকে অন্যকারো সন্তান বলে পরিচয় দেয়া, আইডি কার্ড বা পাসপোর্টে নাম দেয়া কখনো জায়েয হবে না।এটা সম্পূর্ণই না জায়েয।

যেমন হযরত সা'দ রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি-

عَنْ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ»

" যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। "।

(সহীহ বোখারী, হাদীস নং- ৬৭৬৬)

হাদীসের সারমর্মঃ

যে ব্যক্তি নিজের জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে মেনে নয় বা অন্য কারও সাথে জন্মগত সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে কুফুরী করল।
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আপনি আপনার ফুফাকে সম্মাণ প্রদর্শন পূর্বক বাবা বলে সম্বোধন করে পারবেন।

(২)

ফুফা গায়রে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। উনি অপরিচিত মানুষের মত।সুতরাং একজন অপরিচিত মানুষের সামনে যেভাবে শরয়ী পর্দা করতে হয় ঠিক সেভাবে উনার সাথে পর্দা করতে হবে।তথা প্রয়োজন ব্যতীত উনার সম্মুখে আসা যাবে না।বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিলে হেজাব পরিহিত অবস্থায় উনার সামনে আসতে হবে।

অাল্লাহ-ই ভালো জানেন।

উত্তর লিখনে

মুফতী ইমদাদুল হক

ইফতা বিভাগ, Iom.

পরিচালক

ইসলামিক রিচার্স কাউন্সিল বাংলাদেশ


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (0 points)
সৎ বাবা কে কি নিজের বাবা বলে পরিচয় দেয়া যাবে? এটি কি ইসলামের দৃষ্টি তে হারাম?
আরেকটি প্রশ্ন হলো, আমার মা'র অনেক আগে ডিভোর্স হয়ে যায় এবং তিনি নতুন বিয়ে করেন ১৫ বছর পর, আমার জন্ম দাতা বাবা আমার সাথে যোগাযোগ করতে চান, তবে আমার মা ভাবেন আমি এই বিষয় টা জানিনা। তিনি আমাকে বলেন ওটা ফালতু, ধান্দাবাজ লোক, আমার সব জায়গায় আমার সৎ বাবারই নাম দেয়া আছে। এখন আমার করনীয় কি?
বাবার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা নাকি মায়ের কথা সুনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া। যদিও আমি জানিনা উনি কেমন মানুষ।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...