আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
66 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (29 points)
আমার এক পরিচিত আপুর প্রশ্ন,
"আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ! আমার স্বামী সৌদি প্রবাসী।উনি প্রতি ২বছর পরপর ১ মাসের জন্য বাংলাদেশে আসে। এর মধ্যে প্রতিবারেই অশান্তি,গালাগালি, মারামারি করে।

তাই আমি গত ৩১-১২-২১ইং তারিখে তার সাথে ভালো ভাবে সংসার করার নিয়তে তার কাছ থেকে একটি কাগজ লিখিত নেই। এই কাগজে আমি তাকে তার বাজে অভ্যাস গুলো ছাড়ার শর্ত দেই। অন্যথায় তার কাছ থেকে এক তালাকে বায়েন এর অনুমতি চেয়ে নেই‌। তখন সে এই কাগজের সবগুলো শর্ত পড়ে এ কাগজে সাইন করেছিল। সাইন দেওয়ার সময় সে আমাকে লিখিত ও মৌখিক অনুমতি প্রদান করেছিল।উপরে উল্লেখিত কাগজটিতে সবগুলো শর্ত ও তার সাইন দেওয়া আছে।

কিন্তু সে পরবর্তীতে এই কাগজের একটি শর্তও পূরণ করেনি। বরং তার মাঝে আগের সকল বাজে অভ্যাস রয়ে গিয়েছে। গতমাসে সে বাংলাদেশে আসে। ২দিন আগে তার সাথে অনেক বেশি ঝগড়াঝাটি হওয়ার এক পর্যায়ে তাকে ভয় দেখানোর জন্য বলি যে " আপনি যে তালাকের অনুমতি দিয়ে পেপারে সাইন করেছিলেন সেটা আমি নিজের উপর নিয়ে নিলাম"।

মহোদয় মুফতি সাহেব হুজুরের কাছে আমার জানার বিষয় হল, এখন এই কথা বলার দ্বারা কি আমাদের মাঝে এক তালাকে বায়েন পতিত হয়ে গিয়েছে?

কোরআন হাদিসের আলোকে উত্তর প্রদান করিলে ভালো হবে।
তালাক হয়ে গেলে কি তার কাছে ফেরত যাওয়ার কোনো উপায় আছে কি?!

জাযাকাল্লাহ খইরন!

নিবেদিকা

                                           বিনতে কামাল

                                           কুমিল্লা, মেঘনা

                                           ২৩-১১-২৪ ইং"

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

তালাক দেওয়ার অধিকার শুধু স্বামীর। তবে যদি স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অধিকার দিয়ে দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে স্ত্রী সে তার নিজের নফসের উপর তালাক দিতে পারবে। এভাবে বললে (আমি আমার নিজের উপর তালাক দিলাম) তালাক হবে। অন্যথায় স্ত্রী যদি স্বামীকে বলে যে, ‘আমি তোমাকে তালাক দিলাম’। তাহলে এতে কোনো তালাক পতিত হয় না। তাই এমতাবস্থায় স্ত্রীর তালাকের নিয়ত ধর্তব্য হবে না।

এক তালাকে বায়েনে হওয়ার পর স্ত্রী কে পুনরায় ফিরিয়ে আনতে নতুন করে মোহরানা ধার্য করে বিবাহ করতে হয়। কিন্তু পূর্বের মোহরানা যদি বাকি থাকে সেটা কে প্রথমে পরিশোধ করতে হবে। পূর্বের মহরানা বাতিল হবে না। বিয়ের সময় সাক্ষী রাখতে হবে।

মনে রাখা উচিত যে, তালাক দেওয়ার অধিকার শুধু স্বামীর। হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ سَيِّدِي زَوَّجَنِي أَمَتَهُ وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنِي وَبَيْنَهَا قَالَ فَصَعِدَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الْمِنْبَرَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَا بَالُ أَحَدِكُمْ يُزَوِّجُ عَبْدَهُ أَمَتَهُ ثُمَّ يُرِيدُ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَهُمَا إِنَّمَا الطَّلَاقُ لِمَنْ أَخَذَ بِالسَّاقِ

ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকটে এসে বললো, হে আল্লাহর রসূল! আমার মনিব তাঁর বাদীকে আমার সাথে বিবাহ দিয়েছে। এখন সে আমার আর আমার স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়। রাবী বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে আরোহণ করলেন, অতঃপর বললেন, হে লোকসকল! তোমাদের কারো এরূপ আচরণ কেন করো যে, সে তার গোলামের সাথে তার বাদীর বিবাহ দেয়, অতঃপর তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে চায়? নারীর ঊরু স্পর্শ করা যার জন্য বৈধ, তালাকের অধিকার তার। [সুনানে ইবনে মাজাহ ২০৮১]

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .

আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বিষয় এমন যেগুলির যথার্থ তো যথার্থই এমনকি সেগুলোর কৌতুকের ব্যবহারও যথার্থ: বিবাহ, তালাক, রাজআত। - ইবনু মাজাহ ২০৩৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১৮৫

আল্লামা হাসক্বফী রা বলেনঃ

(وَ) شُرِطَ (حُضُورُ) شَاهِدَيْنِ(حُرَّيْنِ) أَوْ حُرٌّ وَحُرَّتَيْن (مُكَلَّفَيْنِ سَامِعَيْنِ قَوْلَهُمَا مَعًا)

দুজন স্বাধীন পুরুষ অথবা একজন স্বাধীন পুরুষ ও দুজন স্বাধীন মহিলা সাক্ষী হিসেবে  উপস্থিত থাকতে হবে,যারা শরীয়তের বিধি-বিধান পালনে দায়বদ্ধ থাকবে,এবং একসাথে উভয় (স্বামী-স্ত্রী) র ইজাব-কবুল শ্রবণ করবে। (আদ্দুরুল মুখতার-৩/২২)

ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে....

(ومنها) سماع الشاهدين كلامهما معا هكذا في فتح القدير فلا ينعقد بشهادة نائمين إذا لم يسمعا كلام العاقدين،

দুনু সাক্ষীকে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ইজাব-কবুল শুনতে হবে,(ফাতহুল ক্বাদীর) সুতরাং না শুনার ধরুণ ঘুমন্ত ব্যক্তির সাক্ষ্য দ্বারা বিবাহ সংগঠিত হবে না। (১/২৬৮;)

এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/2679

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে স্ত্রীর উক্ত কথা বলার দ্বারা এক তালাক পতিত হবে। কারণ, তালাকের ক্ষেত্রে হাসি-ঠাট্টা বা ভয় দেখানোর জন্যও যদি তালাক দেয় তবুও তালাক পতিত হবে।  তবে হ্যাঁ, স্ত্রীকে এক তালাকে বায়েন পর বা স্ত্রী নিজের উপর তালাকে বায়েন গ্রহণ করার পর ইদ্দতের আগেই স্বামী-স্ত্রী চাইলে পুনরায় নতুন করে মহর নির্ধারণ করে  আযাদ, প্রাপ্ত বয়স্ক বিবেকবান দু’জন মুসলিম পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলা স্বাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করতে পারবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...