আসসালামু আলাইকুম। আমরা তিন ভাই-বোন।আমিই সবার ছোট (বোন)।আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে তিন বছর হলো। এরপর থেকেই বাসায় বিভিন্ন ধরণের ঝামেলা হতে শুরু করে। বিস্তারিত বলছি-
মেয়ের বাবা ইমাম ভালো সমন্ধ। বিয়ে হয়েছিল সুন্নতি নিয়ম মেনে।মেয়েদের বাড়ি থেকে একটা সুতোও নেয়া হয়নি।সর্বপ্রথম সমস্যা হয় বিয়ের পরে ভাবির বাবার মানুষজনকে কাপড় চোপড় দেয়া নিয়ে। ভাবিরা ৪ বোন সবারই বাচ্চা-কাচ্চা আছে। সবাই মিলে প্রায় ৩৫-৩০ জন মানুষকে কাপড় দিতে হবে,যদি সবাইকে দেয়া হয়। আমরা মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মানুষ। আম্মু চেয়েছিল সবাইকে না দিয়ে মানে বাচ্চাদের না দিয়ে ভাবির মা-বাবা,বোন,নানী এমন কিছু মানুষকে দিতে তাও প্রায় ১০-১২ জন হয়।এটা নিয়ে ঝামেলা করে ভাবি,সেদিন মার্কেট থেকে আসার পর ভাবিকে আমার আব্বু ডাকলে তিনি কোনো জবাব দেননি মানে কথা বলেননি। এই বিষয় চুকে যাওয়ার পর মানে বিয়ের ৩-৪ মাস পর আমার আম্মু-আব্বু বাড়িতে যান দাদীর দেখা শোনা করার জন্য। তখন আমরা বাসায় ছিলাম তিনজন, আমার বড় ভাই,ভাবি এবং আমি। আমি বরাবরই ভাবির সাথে ভালো ব্যবহার করতাম, কাজে সহযোগিতা করতাম। এমনি একদিন ভাবির বড় বোন ভাবিকে কল দেয়, আমি ভাবির পাশেই ছিলাম ফোন লাউডস্পিকারে দেয়া ছিল তাই আমি কথা শুনতে পাচ্ছিলাম কথোপকথন ছিল কিছুটা এমন-
ভাবি- আফরা (আমার ছন্দনাম) তো ঘুম থেকে উঠে দেরি করে, আমাদের মিহাও (ছন্দনাম -ভাবির বড় বোনের মেয়ে) অনেক ঘুম যায়। অনেক দুজনকে একসাথে রেখে দেখা উচিত দুজনে কেমন ঘুম যেতে পারে।
ভাবির বড় বোন- কেন আফরা দেরি করে উঠে কেন?উঠাই দিতে পারিস না?কাজ করতে বলবি। ঘুমাবে কেন।
তখন আমি কিছুই বলিনি। তবে বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের সংসারের ব্যাপারে অনেক কিছুর ব্যাপারেই ভাবির বড় বোন এমন সব কথা বলেন। অনেকদিন পরে তার বড় বোন আমাদের বাসায় বেড়াতে এসে আমাকে অভিযোগ করেন বিয়ের সময় আমরা মেকআপ কম দিয়েছি,অনেক কিছুই দেইনি। এটা মিথ্যা ছিলো না, কিন্তু আমাদের পরিবারে আমি একমাত্র মেয়ে হওয়া সত্বেও পাউডার ছাড়া কোনো কিছুই কখনো কিনিনি।তাই মেকআপ সম্পর্কে বা বিয়ের লাগেজে কি দিতে হয় তেমন কোনো ধারণা আমাদের ছিল না।বিয়ের আগে অনলাইন থেকে একটা লিস্ট দেখে সব কিছু কিনেছিলাম।বুঝিয়ে বলার পরও ভাবি এবং ভাবির বাড়ির সবাই এটা নিয়ে কথা শোনায় এখনো। আবার ভাবির লিভার পেইন উঠার পর ভাবির মা আমাদের বাসায় ছিলেন, আমার আম্মুকে ভাবির মেঝো বোন এবং ছোট বোন বারবার কল দিয়ে বলছিলো, "লিভার পেইন মাত্র উঠছে আন্টি এখনই হাসপাতালে নিয়েন না,তাহলে বলবে সিজার করাইতে,একটু ধৈর্য ধরেন,আমরাদের সিজার হইছে আমরা বুঝি এটা কেমন কষ্ট, ছোট বোনকে সিজার করাইয়েন না আন্টি।একটু ওয়েট করেন।(তখন ভাবির পেইন অন্য সময়ের তুলনায় অনেক কম ছিল মানে একদম প্রথম দিকে ছিল।)"
আম্মু তাদের সাথে কথা বলার সাথে সাথে হসপিটালের নার্সদের সাথেও কথা বলছিলেন।এরমধ্যেই ভাবির মায়ের সাথে যখন ভাবির বড় বোন কথা বলছিলেন আমি শুনলাম তার বড় বোন বলছেন, "আমার বোনকে তারা মেরে ফেলবে নাকি?হসপিটালে নিচ্ছে না কেন এখনো?!"
অথচ আমার আম্মু তার বোনেদের কথা শুনেই অপেক্ষারত ছিলেন। যাইহোক, এমন সমস্যা তো ছিলই সাথে সমস্যা ছিল ভাবি চুরি করে বেশ ভালো অংকের টাকা তার মা-বাবার কাছে দিতেন।এটা আমি নিজ চোখেও দেখেছি।তার বাবা এসেছিলেন আমাদের বাসায় তখন টাকা দেন আমার ভাবি লুকিয়ে,কিন্তু আমি দেখে ফেলি।পরে জিজ্ঞাসা করার পর আমার ভাই বলেন এটা ভাবির বোনের টাকা অথচ এটা মিথ্যা ছিল।কারণ আমার ভাবিই সবচেয়ে দূরে থাকেন।তার বাকি ৩ বোন ঘনঘন আসা-যাওয়া করেন তাদের বাড়িতে, কারণ তারা অনেক কাছে ছিলেন। অন্যদিকে ভাবি প্রতিমাসে ১ বার গিয়ে ১-২ সপ্তাহ থাকেন।
আমার আব্বুর দোকান আছে।আমার আব্বু ভাইয়ার বিয়ের আগে হার্ট অ্যাটাক করেন।তাই চিকিৎসা করার পর, সকাল থেকে দুপুর আব্বু দোকানে বসতেন,দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত আমার ভাইয়া বসতেন। এখন আমার ভাই দাবি করেছেন যে, যেহেতু সে দোকানে বসেছিল ইনকাম তার ছিল,তার ইনকামের টাকা দিয়েই আমরা সব করেছি।বলাবাহুল্য, আমার ভাই দোকানে বসেছিলেন ১-১.৫ বছর পর্যন্ত।তারই এক সময় তাকে কিডনাপ করা হয় উইদাউট এনি রিজন। তার নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়,তার পিছনে খরচ হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। আমার আব্বু-আম্মু তখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসা যাওয়া করতেন,একদন্ড স্হির ছিলেন না। পাগলপ্রায় ছিলেন তারা।পরে ভাইয়া ছাড়া পান (এই বিষয়টা বিয়ের আগের)।
আমার আব্বু এখন আর দোকানে বসেন না, ভাইয়া দোকানে ছেলে রেখেছে সেই এখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থাকে,ভাইয়া দুপুরে যায়,রাতেও ভাইয়ার সাথে দোকানে ছেলেটি থাকে।কিছুদিন আগে আমার ভাই সেই টাকা ফিরত দিতে চান (মামলার জম্য খরচকৃত টাকা),(আমার ভাই আলাদা একটা দোকান নিয়েছিলেন সেসময়)তখন আমার মেঝো ভাই বলেন,"তুই টাকা দিতে পারলেও,যে পরিশ্রম আম্মু-আব্বু করছেন সেটা ফেরত দিতে পারবি?পারবি না তাহলে এই টাকার কথা এখানে আসছেই বা কেনো?"
এমন সমস্যা তো চলছেই, সাথে আমার ভাবি আমাকে পছন্দ করেন না,তার ধারণা আমরা বড় ভাইকে কোনো টাকা-পয়সা দিবো না,সব আমার জন্য এবং আমার মেঝো ভাইকে দিবেন আম্মু-আব্বু। অথচ আমার মেঝো ভাই টিউশন করে খাওয়া খরচ নিজে চালায়,মাঝে মধ্যে টাকা লাগে ইউনিভার্সিটিতে তখন বাসা থেকে নেন।আমার ভাবি বড় ভাইয়াকেও বলেন তোমাকে কোনো টাকা দিবে না। এটা আমি নিজে শুনেছি। আমি কি খাচ্ছি তরকারি কতুটুকু নিচ্ছি কি নিচ্ছি আনার ভাবি সেটা খুবই সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করেন,কেনোদিন যদি ভাত নেয়ার সময় তিনি টেবিলের কাছে না থাকেন তাহলে রুমে এসে দেখে যান আমি কি খাচ্ছি। এতটাই সেনসিটিভ বিষয়! আমার সামনে পরীক্ষা তাই বাসার কাজে আগের মতো তেমন সাহায্য করতে পারিনা।তবে বাসার কাজে আম্মু ভাবিকে সাহায্য করেন। আমি আবার সময় পেলে বাবুকে রাখি।এটাও একটা বিষয়। আর আমার আম্মুও একটু বেশিই সেনসিটিভ... মানে যেহেতু আগেরকালকার মানুষ, চিন্তা ধারাও কিছুটা তেমনই...তবে আম্মু কখনো ভাবির উপরে কিছুই চাপিয়ে দেননি বা ভাবিকে দিতেই যে সব কাজ করান এমনও কেনে বিষয় নেই।আমাকে কাজ করতে বলেন আমি করে দেই।কিন্তু ভাবির কথা আমাকেই সব কাজ করতে হবে।ভাবি সবকিছুতে যেন আমার দোষটাকে ফুটিয়ে তুলতে চান। যেমন: বাবুকে এটা কে শিখাছে? আমি শিখাইছি। বাবুকে মোবাইল কে দেখাইছে?আমি দেখাইছি।অথচ বাবুর বয়স যখন ৯-১০ মাস তখন কিছুদিন আমি একটা ছড়া দেখিয়েছিলাম।এরপর আমি আর কখনো মোবাইল দেখাইনি ওকে। বাকিদেরও নিষেধ করেছিলাম।কিন্তু এখন ভাবিরাই দেখান আমি দেখাই না!
আমার আম্মু রেগুলার এসব সহ্য করতে না পেরে বলেছেন আলাদা হয়ে যাবেন।কিন্তু আমার আব্বু শুনেন না...
প্রশ্ন ০১: যেহেতু দোকান আমার বাবার,বাবা এখনো ভাইয়ের নামে দোকান দেননি তাহলে ইনকাম কি সত্যিই তার?
প্রশ্ন ০২: বাসার এই অশান্তিতে আমাদের কি করা উচিত?
প্রশ্ন ০৩: ভাবি যে,চুরি করে টাকা পাঠায় এটা কি আদোও শরিয়তসম্মত? আমার ভাইয়া অবশ্য এটা জানে। কিন্তু আব্বু-আম্মুর আড়ালে এটা করা কতুটুকু সঠিক?
প্রশ্ন ০৪: আমি মোটামুটি বিষয়টা তুলে ধরেছি। এমতবস্থায় আমাদের কি আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত?আলাদা না হলে কি করা উচিত?
প্রশ্ন ০৫: আমাদের ৪ তলা বাড়ি করেছেন। বাড়ি আমার আম্মু নামে।তাই স্বর্ণ বা যা কিছু কিনা হয়েছে তাতে এই ভাড়ার টাকাও সামিল আছে।এগুলো কি এখন ভাইয়ার বলে গণ্য হবে?