আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
55 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (10 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিবেন দয়া করে।

১.বাসার আশেপাশে গান বাজে।আমি ইচ্ছাকৃতভাবে গান শুনিনা।কিন্তু এত উচ্চস্বরে গান বাজে যে তা কানে আসে।কিছু কিছু গানের সুরে মন খারাপ হয়ে যায়।ব্যাপারটা এমন না যে সেই গান আমি আগে শুনেছি।কিন্তু সুর শুনে কষ্ট অনুভূত হয়।আমি সাথে সাথে আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকি।আমি না সেদিকে মনোযোগ না দেয়ার চেষ্টা করি।এতে কি আমার গুনাহ হবে?

২.আমার মনে হয় যে আমি পূর্ণ মনোযোগের সাথে নামায পড়তে পারি না।চেষ্টা করি তাও দেখা যায় দুনিয়াবি চিন্তা এসে যায়।অনেক টাইম নিয়েই নামায পড়ার ট্রাই করি।কিন্তু তাও দেখা যায় মনোযোগ বিচ্ছিন্ন। অন্য চিন্তা আসছে।আমার নামায কি কবুল হবে?তওবা করলে আল্লাহ কবুল করবেন না?আমি হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।কিন্তু তাও মনোযোগ সহকারে পড়তে পাচ্ছি না।আল্লাহ কি আমাকে পছন্দ করেন না?

৩.যারা মুসলিম ছিলো এবং মারা গিয়েছে।কিন্তু নামায পড়েনি কখনো।তাদের জন্য যদি আমরা দু'আ করি আল্লাহ কি তাদের জান্নাত দিবেন?

৪.তাহাজ্জুদের আগে ওযু করার পর তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায পড়া যাবে?আসর,মাগরিব ও ফজরের সময় ওযুর পর কি তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায পড়া যাবে?
৫.ইশরাক চাশত না পড়লে কি গুনাহ হবে?

৬.যারা আগে নামায পড়েনি তারা তারা আগের নামায কাযা করার ক্ষেত্রে কি করবে?বর্তমান নামাযের ক্ষেত্রে শুধু ফরযগুলো ও আগের নামাযের ফরযগুলো আদায় করবে নাকি বর্তমান নামাযের ফরয ও সুন্নত নামায +আগের নামাযের ফরযগুলো আদায় করবে?বর্তমান সুন্নত নামাযগুলো পড়ার পর আগের নামায গুলো আদায় করা কষ্টকর হয়ে যায়।এক্ষেত্রে করণীয় কি?

৭.নামাযে সূরা ফাতিহার পর কি একাধিক সূরা পড়া যাবে?কেউ যদি লম্বা সূরাগুলোর কয়েক আয়াত পড়তে চায় সূরা ফাতিহার পরে,সেটা কি পড়া যাবে?

৮.চার রাকাআত সুন্নত ও ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে কি চার রাকাআতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে?

৯.মনে মনে সন্দেহ করা,দোষারোপ করা কি কুধারণা?নাকি প্রকাশ করলে কুধারণা হবে?এ থেকে বেঁচে থাকার উপায় কি?

১০.আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা কারা?

১১.বাসার সবাই একসাথে উঠে তাহাজ্জুদ পড়লে কি একাকী নির্জনে তাহাজ্জুদ পড়ার সেইম সওয়াব হবে?

১২.নবীজির প্রতিদিনের সুন্নাহগুলো লিপিবদ্ধ আছে এমন কোনো বই থাকলে সাজেস্ট করবেন দয়া করে।যাতে সেই বই পড়ে কেউ সুন্নাহ অনুযায়ী তার জীবন সাজাতে পারে।

১৩.আমার হার্টের সমস্যা আছে।সিজদাহ থেকে হাতে ভর দিয়ে উঠতে প্রবলেম হয়।পালপিটিশন শুরু হয়।আমি হাতে আর হাটুতে ভর দিয়ে উঠি।এক্ষেত্রে কি নামায হবে না?

১৪.সূরা শুআরার ৮৩-৮৭ আয়াতে ইবরাহীম (আ) যে দু'আ গুলো করেছেন এবং নুহ (আ) সমকামিতা থেকে বাঁচতে যে দু'আ করেছেন আমরা কি সেগুলো পড়তে পারব?

১৫.বাবা মা যদি একসাথে ফ্যামিলি ফটো তুলতে চায় যা শুধু মোবাইলেই থাকবে।এক্ষেত্রে কি ছবি তোলা যাবে?

১৬. ওয়েডিং ফটোগ্রাফি যদি কোনো মেয়ে ফটোগ্রাফার করে,প্রিন্ট করা হবে না।তাহলে কি তোলা যাবে?

১৭.নিজে ছবি তুলি না।অকারণে ছবি তোলা নাজায়েজ এটা মানি।কিন্তু কেউ (বাবা,ভাই)যদি ছবি তুলে চায় তাহলে কি দেয়া যাবে ছবি তুলে?আমার গুনাহ হবে এতে?


উত্তর গুলো দিলে খুবই কৃতজ্ঞ থাকব।

1 Answer

0 votes
by (573,060 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
প্রশ্নের বিবরণ মতে এক্ষেত্রে আপনার গুনাহ হবেনা। 

(০২)
হতাশ হবেননা,আল্লাহ তায়ালা আপনাকে পছন্দ করেন,ইনশাআল্লাহ। 

আপনি পূর্ণ মনোযোগ সহকারে নামাজ আদায়ের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন,সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন,ইনশাআল্লাহ আপনার নামাজ কবুল হবে।

(০৩)
মুমিনদের কেহ জাহান্নামে গেলেও একদিন না একদিন শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবেই।

হাদীস শরীফে আছে,

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “(পরকালে) আল্লাহ বলবেন, সেই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের কর, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে গমের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। আর সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে অণু পরিমাণ মঙ্গল। (ঈমান) আছে।” (আহমাদ ৩/২৭৬, তিরমিযী ২৫৯৩ নং হাদীস)

তবে কাফের বেঈমানরা চিরদিন জাহান্নামে আযাবের মধ্যে বসবাস করবে। তাদের শাস্তি ক্ষমা করা হবে না, লাঘব করা হবে না এবং তারা বা জাহান্নাম ধ্বংস হয়ে যাবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, যারা (কাফের) অবিশ্বাস করে ও আমার নিদর্শনকে মিথ্যাজ্ঞান করে, তারাই অগ্নিবাসী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (বাক্বারাহঃ ৩৯)

وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থাৎ, যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারাই দোযখবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (আরাফঃ ৩৬)

إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ

অর্থাৎ, অবশ্যই যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা বেহেশ্তেও প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না সুচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করে। এরূপে আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (আরাফঃ ৪০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আল্লাহ তায়ালা তাদেরকেও জান্নাতে দিবেন।
তবে তারা নিজেদের কৃতকর্মের শাস্তি ভোগের পর জান্নাতে যাবে।

হ্যাঁ, যদি আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে বিনা হিসাবে জান্নাতে দেন,তাহলে তাহা ভিন্ন কথা।
সেক্ষেত্রে তাদের জাহান্নামে যেতে হবেনা।

(০৪)
তাহাজ্জুদের আগে ওযু করার পর তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায পড়া যাবে।
আবার তাহাজ্জুদ নামাজের ক্ষেত্রে তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায এর নিয়তও করা যাবে।
মানে একই দুই নিয়তে এক নফল নামাজ আদায় করা যাবে।

আছরের সময় ওযুর পর তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায পড়া যাবে।
তবে মাগরিব ও ফজরের সময় ফরজ নামাজের আগে তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ পড়া যাবেনা।

হ্যাঁ, ফজরের সুন্নাত আদায়ের সময় সুম্মাত আদায়ের নিয়তের পাশাপাশি তাহিয়্যাতুল ওযুর নামাজ এর নিয়ত সেক্ষেত্রে উভয় নামাজই আদায় হয়ে যাবে।

৫.ইশরাক চাশত না পড়লে গুনাহ হবেনা।

৬.যারা আগে নামায পড়েনি, তারা
যেদিন থেকে বালেগ/বালেগাহ হয়েছেন,সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রবল ধারণার ভিত্তিতে কাজা নামাজের হিসাব করবেন।
সেক্ষেত্রে চেষ্টার পরে অনুমানে কিছু ভুল হলে আশা করি আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন।

তারা এভাবে কাজা নামাজের নিয়ত করবেনঃ-
"আমার জিম্মায় যত ফজরের নামায কাযা রয়েছে, সে অনাদায়কৃত নামায সমূহের মধ্য থেকে প্রথম ফজরের নামাযকে এখন কাযা আদায় করছি”

আরো জানুনঃ- 

বর্তমান নামাযের ফরয ও সুন্নত নামায +আগের নামাযের ফরযগুলো আদায় করবে।
পাশাপাশি আগের প্রতিদিনের আনাদায়ী বিতত নামাজেরও কাজা আদায় করতে হবে।

নামায গুলো আদায় করা কষ্টকর হলেও আদায় করতেই হবে। 
জীবদ্দশায় উক্ত নামাজ আদায় করা ব্যাতিত কোনো উপায় নেই।

৭.নামাযে সূরা ফাতিহার পর একাধিক সূরা পড়া যাবে।
কেউ যদি লম্বা সূরাগুলোর কয়েক আয়াত পড়তে চায় সূরা ফাতিহার পরে,সেটা পড়া যাবে।

৮.চার রাকাআত বিশিষ্ট সুন্নত নামাজের ক্ষেত্রে চার রাকাআতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।

তিন/চার রাকাআত বিশিষ্ট ফরজ নামাজের ক্ষেত্রে তিন/চার রাকাআতেই সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবেনা।

শুধুমাত্র ১ম দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।

৯.মনে মনে সন্দেহ করা,দোষারোপ করা  কুধারণা।

এ থেকে বেঁচে থাকার জন্য কাহারো সম্পর্কে খারাপ ধারনা পোষন করা যাবেনা।

১০.আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দা কারা,এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

হজরত উসামা ইবনু শারিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবি কারিম (সা.)-এর কাছে এমনভাবে বসে ছিলাম মনে হয় আমাদের মাথার ওপর পাখি বসে আছে। আমাদের কেউই কোনো কথা বলছিল না। হঠাৎ কিছু মানুষ এলো এবং বলল, আল্লাহর কাছে কোন বান্দা সবচেয়ে প্রিয়? রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যে সবচেয়ে বেশি চরিত্রবান (সে-ই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় বান্দা)। (সিলসিলা সহিহা, ১৩)।

১১.বাসার সবাই একসাথে উঠে তাহাজ্জুদ পড়লেও একাকী নির্জনে তাহাজ্জুদ পড়ার সেইম সওয়াব হবে,ইনশাআল্লাহ । 
তবে কাহারো মনে যেনো ইবাদতে রিয়া তথা লোক দেখানোর বিষয় না থাকে।

১২.
এ সংক্রান্ত জানুনঃ- 

১৩.
এক্ষেত্রে নামায হবে। কোনো সমস্যা নেই।


১৪.
 আমরা সেই দোয়া গুলি পড়তে পারবো। 

১৫.
আপনি যেহেতু মেয়ে,সুতরাং কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ সেই ছবি দেখার কোনো আশংকা না থাকলে সেই ছবি তোলা যাবে।

তবে অনেক উলামায়ের কেরাম এ থেকেও নিষেধ করে থাকেন।

১৬. 
কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ যদি সেই ফটোগ্রাফ দেখার কোনো আশংকা না থাকে,আর প্রিন্ট যদি না করা হয়, প্রচার প্রসার না করা হয়,অন্য কাউকে না দেয়া হয়,সেক্ষেত্রে সেই ফটো তোলা যাবে।

তবে অনেক উলামায়ের কেরাম এ থেকেও নিষেধ করে থাকেন।

১৭.
ছবিটি প্রিন্ট করা না হলে এবং কোনো গায়রে মাহরাম পুরুষ সেই ছবি দেখার কোনো আশংকা না থাকলে ছবি তুলে দেয়া যাবে।

তবে অনেক উলামায়ের কেরাম এ থেকেও নিষেধ করে থাকেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...