আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
30 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (47 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

১) কেও যদি তার মৃত মায়ের নামে সাদাকাহ করতে চায়, সেক্ষেত্রে সে কি কাওকে উমরাহ করানো উত্তম হবে নাকি মসজিদে দান করে দিলে উত্তম হবে??


২) আমার হাসব্যান্ড এবং তার কয়েকজন বন্ধু মিলে ব্যবসায় শুরু করেছেন। উনারা, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি গুলো তে সোলার অর্থাৎ সৌরবিদ্যুৎ বসান।

এইসব প্রজেক্ট পাওয়ার জন্য তাদের মধ্য থেকে একজন মার্কেটিং ( বলা যায় মধ্যস্থতা ) করেন।
কোনো এক বা দুইটি প্রজেক্ট পাওয়ার জন্য কিছু টাকা দেন।
( কমিশিন বা ঘোষ স্বরূপ )

- প্রফিট এর একটা পার্সেন্ট যখন আমার হাসব্যান্ড ও পাবেন , উনার টাকা টা কি হালাল হবে??

- অথবা উনারা সবাইই যদি চান ওই প্রজেক্ট এর লাভ টুকু কেও গ্রহণ করবেন না, সেক্ষেত্রে কি সবটুকু টাকা দান করে দিবেন??

- প্রতি মাসে মাসিক বেতন হিসেবে যে টাকা পাচ্ছেন এইটা কি হালাল হবে না?

- শুধু মাত্র ওই প্রজেক্ট এর প্রফিট নির্দিষ্ট পরিমাণে বের করতে না পারলে আনুমানিক হিসেবে লভ্যাংশ সাদাকাহ করে দিলে তা কি সঠিক হবে??


জাজাকাল্লাহ।

1 Answer

0 votes
by (60,240 points)
edited by

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

মৃত ব্যাক্তির জন্য কুরআন শরিফ তেলাওয়াত করে ঈসালে ছওয়াব করা জায়েজ আছে। এতে কোনো সমস্যা নেই।  

ঈসাল মানে হল পৌঁছানো। আর সওয়াব মানেতো সওয়াব, পূণ্য। তাহলে ঈসালে সওয়াব মানে হল, সওয়াব পৌঁছানো।প্রচলিতভাবে “ঈসালে সওয়াব” বলা হয়, মৃত ব্যক্তির জন্য দুনিয়ায় কোন আমল করে সওয়াব পৌঁছানোকে বলা হয়।

পবিত্র কুরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেনঃ 

الْمَالُ وَالْبَنُونَ زِينَةُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَالْبَاقِيَاتُ الصَّالِحَاتُ خَيْرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابًا وَخَيْرٌ أَمَلًا [١٨:٤٦]

ধন ঐশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ আপনার পালনকর্তার কাছে প্রতিদান প্রাপ্তি ও আশা লাভের জন্যে উত্তম। [সূরা কাহাফ-৪৬]

স্থায়ী সৎকর্ম কী? এক হাদীসে রাসূল সাঃ ব্যাখ্যা করেনঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন তার নেক আমল করার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি পথ ছাড়া। একটি হল, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয় হল ইলম, যদ্বারা মানুষ উপকার পায়, এবং তৃতীয় হল, নেক সন্তানের দুআ। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস  নং-৮৮৪৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৮৮০, মুসলিম, হাদীস নং-১৬৩১]

উপরোক্ত দলীল প্রমাণাদীর মাধ্যমে আশা করি বিষয়টি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, মৃতের জন্য ঈসালে সওয়াব করা কুরআন ও হাদীস এবং ইজমায়ে উম্মাহ দ্বারা প্রমাণিত।

তাই ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেসব কাজ করা যায়ঃ

. মৃতের নামে সদকা করা।

. কুরবানী করা।

. মৃতের জন্য কুরআন তিলাওয়াত করা।

. মৃতের জন্য দুআ করা।

. ইস্তিগফার করা।

. হজ্ব ও উমরা করা।

ইত্যাদি পূণ্যের কাজ করে মৃত ব্যক্তির জন্য ঈসালে সওয়াব করা যায়। যা কুরআন ও হাদীসের মাধ্যমে সুষ্পষ্টরূপে প্রমাণিত।

https://ifatwa.info/22448/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছ যে,

ইমাম মালিক রাহ থেকে বর্ণিত রয়েছে,

ﻭﺳﺌﻞ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﻣﺎﻟﻚ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻦ ﺃﺟﺮ ﺍﻟﺴﻤﺴﺎﺭ ﻓﻘﺎﻝ : ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﺬﻟﻚ

ইমাম মালিক রাহ কে দালালী ব্যবসা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন এতে কোনো সমস্যা নেই।(আল-মুদাওয়ানাতুল কুবরাঃ ৩/৪৬৬)

ইমাম বোখারী রাহ বলেনঃ

" ﺑَﺎﺏ ﺃَﺟْﺮِ ﺍﻟﺴَّﻤْﺴَﺮَﺓِ . ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮَ ﺍﺑْﻦُ ﺳِﻴﺮِﻳﻦَ ﻭَﻋَﻄَﺎﺀٌ ﻭَﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢُ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﺑِﺄَﺟْﺮِ ﺍﻟﺴِّﻤْﺴَﺎﺭِ ﺑَﺄْﺳًﺎ .ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﻋَﺒَّﺎﺱٍ : ﻻ ﺑَﺄْﺱَ ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮﻝَ : ﺑِﻊْ ﻫَﺬَﺍ ﺍﻟﺜَّﻮْﺏَ ﻓَﻤَﺎ ﺯَﺍﺩَ ﻋَﻠَﻰ ﻛَﺬَﺍ ﻭَﻛَﺬَﺍ ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻚَ .

ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦُ ﺳِﻴﺮِﻳﻦَ : ﺇِﺫَﺍ ﻗَﺎﻝَ ﺑِﻌْﻪُ ﺑِﻜَﺬَﺍ ﻓَﻤَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣِﻦْ ﺭِﺑْﺢٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻚَ ، ﺃَﻭْ ﺑَﻴْﻨِﻲ ﻭَﺑَﻴْﻨَﻚَ ﻓَﻠَﺎ ﺑَﺄْﺱَ ﺑِﻪِ .ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ( ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻋِﻨْﺪَ ﺷُﺮُﻭﻃِﻬِﻢ)

তরজমাঃইবনে সিরীন, আত্বা,ইবরাহিম,হাসান, রাহ এর মত যুগশ্রেষ্ট ইমামগণ দালালী ব্যবসায় শরয়ী কোনো সমস্যা মনে করেন না।ইবনে আব্বাস রাহ,বলেনঃকোনো অসুবিধা নেই এরকম কোনো চুক্তিতে যে, কেউ কাউকে বলল,তুমি এই মাল এত টাকায় বিক্রি কর,এর(পুর্ব নির্ধারিত মূল্যর) চেয়ে বেশী যা লাভ হবে তা তোমার।ইবনে সিরীন রাহ বলেনঃযখন কেউ কাউকে বললঃতুমি এই মাল এত টাকায় বিক্রি কর, যা লাভ হবে অথবা এর চেয়ে বেশী যা লাভ হবে, তা তোমার অথবা তা আমার এবং তোমার মধ্যে বন্টিত হবে।এরকম চুক্তিতে কোনো সমস্যা নেই।নবী কারীম সাঃ বলেনঃ-মুসলমানগন তাদের  কৃতচুক্তির আওতাধীন।অর্থাৎ শরীয়ত বিরোধী চুক্তি না হলে তা অবশ্যই পূরণীয় এবং পূরণ করতে হবে,এবং দালালীও একটি চুক্তি বিধায় তা বৈধ ও পূরণীয় ।(সহীহ বোখারী-৩/৯২, হাদীস নং ২২৭৪ এর শিরোনাম) বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/44

বাধ্য হয়ে ঘুষ দেয়া জায়েজ আছে। কিন্তু ঘুষ নেয়া কখনোই জায়েজ নয়।

 

কয়েকটি শর্তে আপনাদের উপার্জন বৈধ হতে পারে। যথা-

. ঘুষ দিয়ে উক্ত কাজ করা ছাড়া অন্য কোন কাজ করার সুযোগ না থাকে।

. যথার্থ ও সঠিকভাবে উক্ত কাজ করার যোগ্যতা ও মানসিকতা থাকে।

৩. মূল বিলের চেয়ে বেশি বিল সরকারী তহবিল থেকে গ্রহণ না করা হয়।

উপরোক্ত তিনটি শর্ত সাপেক্ষে বাধ্য হয়ে ঘুষ দিয়ে কাজ নিয়ে সঠিকভাবে তা আঞ্জাম দেয়া জায়েজ। এবং তার উপার্জন করাও জায়েজ।

যারা ঘুষ নিচ্ছেন তারা হারাম কাজ করছেন। কিন্তু যারা বাধ্য হয়ে দিচ্ছেন তাদের উপার্জন হারাম বলা হবে না।

কিন্তু ঘুষ ছাড়া অন্য কাজ করার সুযোগ থাকে, কিংবা যোগ্যতা না থাকা ও যথার্থভাবে তা আঞ্জাম না দেয়া হয়, কিংবা মিথ্যা বিল লেখার চুক্তি করা হয়, তাহলে উক্ত কাজ ও তার উপার্জন হালাল হবে না।

وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِّنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢:١٨٨

তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কর্তৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না। [সূরা বাকারা-১৮৮]

ধোকা এবং প্রতারণা সম্পর্কে হাদীসে ধমকি বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : ( مَنْ حَمَلَ عَلَيْنَا السِّلَاحَ ، فَلَيْسَ مِنَّا ، وَمَنْ غَشَّنَا ، فَلَيْسَ مِنَّا ) ،

রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন- যে ব্যক্তি আমরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অস্র ধরলো, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।এবং যে কাউকে ধোকা দিলো সেও আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম- হাদীস নং-১৪৬)

ভিন্ন এক সুত্রে বর্ণিত আছে,হযরত আবু-হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত,

عن أبي هريرة رضي الله عنه – أيضاً - ، وفيه : ( مَنْ غَشَّ ، فَلَيْسَ مِنِّي

ভাবার্থঃ যে কাউকে ধোকা দিলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। (সহীহ মুসলিম- হাদীস নং-১৪৭)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১. উভয়টিই ঈসালে সাওয়াব হিসেবে করা যায়। কোন কোন আলেমের মতে উমরা উত্তম এবং কোন কোন আলেমের মতে মসজিদে দান করা উত্তম। সুতরাং আপনি যেটি মুনাসিব মনে করেন, আপনার মায়ের জন্য ঈসালে সাওয়াব হিসেবে করতে পারেন।

২. প্রশ্নে উল্লেখ রয়েছে যে, প্রজেক্ট পাওয়ার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুষ দিতে হয়, টাকা পয়সার লেনদেন করতে হয়। জেনেশুনে কোম্পানীর জন্য ক্ষতিকর বা অকল্যাণকর কোন পার্টি বা টিমকে যারা কোম্পনীর পক্ষ থেকে কাজ দিবে তারা গুনাহগার হবে। তবে আপনার স্বামী ও তার বন্ধুরা যেই বিজনেস করছে, তারা যদি পূর্ণ সততার সাথে সার্ভিস প্রদাণ করে থাকে, কোন প্রতারণা না করে থাকে তাহলে তাদের জন্য উক্ত প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্য প্রফিট গ্রহণ করা জায়েয হবে। আপনার স্বামীর বেতনও হালাল হবে ইনশাআল্লাহ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...