আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
62 views
in খাদ্য ও পানীয় (Food & Drink) by (50 points)

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ উস্তাদ। দস্তরখান নিয়ে কিছু প্রশ্ন আছে।জানানোর অনুরোধ। 

১)https://www.ourislam24.com/2017/06/13/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A4-%E0%A6%A6%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%95%E0%A6%BF-%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D

 

এ পোস্টে বলা হয়েছে প্লেটে খেলেই যথেষ্ট। কাপড়নবিছানোর দরকার নেই।বিষয় টা বুঝতে পারছি না। খাবার খাওয়ার সুন্নাহ আসলে কি?বিস্তারিত জানানোর অনুরোধ। 

 

২)

মাদ্রাসায় ছোট্ট ছোট্ট ত্বলিবুল ইলমদের জন্য খাবারের জন্য যখন ডাকা হয়। অদ্ভুত একটি বাক্য বলা হয়। 'এসো, এসো, সবাই চটজলদি
দস্তরখানের আমলে শরীক হও'

দস্তরখানের আমল! সুবহানাল্লাহ কি সুন্দর শব্দগুচ্ছ!

ছোট্ট শব্দগুচ্ছটা-ই বলে দেয়, মু'মিনের জন্য খাবার খাওয়া কিন্তু স্রেফ উদর পুর্তি নয়। এটাও একটি ইবাদাত! এটাও একটি আমাল!


'দস্তরখানের আমল' এর সুন্নাহসমূহ:

১। জুতা খুলে নেওয়া

২। উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া।

৩। জমিনের(যেকোনো সমতল) ওপর দস্তরখান বিছিয়ে বসা এবং বসা বরাবর খাবারের প্লেট রাখা।

উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে চেয়ার টেবিলে খাওয়ার ব্যাপক প্রচলন ঘটায় এতে شبه بالكفار বা বিধর্মীদের বৈশিষ্ট্যের অনুকরণের। এই দৃষ্টিকোণ থেকে চেয়ার টেবিলে খাওয়া নিষিদ্ধ না-হলেও যেহেতু চেয়ার টেবিলে খাওয়াতে অনেকগুলো সুন্নাত ও আদব বর্জিত হয়, তাই তা পরিত্যাজ্য।

৪। খাওয়ার সময় এক পা উঁচু রাখবে এবং অপর পা (হাঁটু) বিছিয়ে তার ওপর বসবে; অথবা উভয় পা (হাঁটু) জমিনের ওপর বিছিয়ে (আত্তাহিয়্যাতু পড়ার মতো) সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বসবে।

৫। হেলান দিয়ে বসে না খাওয়া।

৬। একসাথে অনেকে খেতে বসলে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে যেই ব্যক্তি সবচেয়ে বড়, তাঁর দ্বারা খাওয়া শুরু করা।

৭। খাবারের শুরুতে উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়া।

অথবা, যদি খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া ভুলে যায়, তা হলে যখন মনে হবে তখন সাথে সাথে নিম্নোক্ত দুআ পড়ে নেবে-

بِسْمِ اللَّهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَه

৮। ডান হাত দিয়ে খাওয়া।

৯। তিন আঙুলের (বৃদ্ধা, তর্জনী ও মধ্যমা) দ্বারা খাওয়া সুন্নাত। প্রয়োজনে তিনের অধিকও ব্যবহার করা যেতে পারে।

১০। খুব গরম খাবার না খাওয়া।

১১। গরম খাবার বা পানীয়তে ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা না করে খাওয়া।

১২। নিজের সামনে থেকে খাওয়া শুরু করা। মাঝখান থেকে না।

১৩। যে পরিমাণ বা যেরকম খাবারই হোক, আল্লাহ তাআলার নেয়ামত মনে করে খাওয়া।

১৪। খাদ্যের সমালোচনা না করা।

১৫। খাদ্যের কোন অংশ পড়ে গেলে
উঠিয়ে প্রয়োজনে পরিস্কার করে খাওয়া।

১৬। কয়েকজন মিলে খাবার খেতে বসলে নিজের খাওয়া শেষ হলেও অপরের খাবার শেষ না হওয়া পর্যন্ত বসে থাকা।

১৭। খাওয়ার শেষে পাত্র সমূহ আঙ্গুল দ্বারা ভালোভাবে পরিষ্কার করে খাওয়া।

১৮। আঙুল চাটার সুন্নাত তারতিব হলো। প্রথমে মধ্যমা, তর্জনী, বৃদ্ধা, অনামিকা, তারপর কনিষ্ঠা।

১৯। খাবার খেয়ে উভয় হাত ধোয়া।

২০। কুলি করে মুখ পরিষ্কার করা।

২১। খাওয়া শেষ হলে নিম্নোক্ত দুআ পড়া-

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ 

অর্থ : সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে (খানা) খাওয়ালেন এবং পান করালেন এবং যিনি আমাদেরকে মুসলমান বানিয়েছেন।

২২। প্রথমে দস্তরখান উঠানো এরপর নিজে ওঠা সুন্নাত।

২৩। দস্তরখান উঠানোর দুআ পড়া-

الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ غَيْرَ مَكْفِي وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنَى عَنْهُ رَبَّنَا .

অর্থ : সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এমন প্রশংসা, যা (পরিমাণে অনেক) বেশি, অত্যন্ত পবিত্র ও বরকতময়। হে আমাদের রব, আমরা ওই খানাকে যথেষ্ট মনে করে বা সম্পূর্ণ বিদায় জানিয়ে বা অপ্রয়োজনীয় মনে করে উঠে যাচ্ছি না।

.
মোট ২৩ টি সুন্নাহ! ৩ দফা খেতে বসলে একদিনেই মোট ৬৯ টি সুন্নাহ মানা সম্ভব।

দিনে অন্তত ৬৯ বার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় মানুষটির প্রতি মুহাব্বাতের প্রকাশ! সুবহানাল্লাহ।

কে আছেন এমন বোকা যে এই সুযোগ থেকে মাহরুম হতে চান?

প্রয়োজনে খেতে বসার আগে খাতা কলম সামনে নিয়ে বসবো। দু'আ মুখস্থ না থাকলে দেখে দেখে পড়বো৷ মাত্র ৩/৪ দিন এভাবে মেহনত করে দেখুন৷ আপনাআপনি সবগুলো সুন্নাহ আয়ত্ত্বে চলে আসবে ইন শা আল্লহ। সর্বোপরি, সব অসম্ভব ই সম্ভব ইন শা আল্লহ, যদি ক্বলব সত্যি-ই আশিক হয় তাঁর ﷺ জন্য।

اللهم صل وسلم على نبينا محمد

 

এই লেখা পড়েছিলাম। এখানে কোন দস্তরখানের আমলের কথা বলা হয়েছে?এই আমল কিভাবে করতে হয় জানাবেন প্লিজ। 

1 Answer

0 votes
by (573,660 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
দস্তরখানে খাবার খাওয়া নবিজির শিক্ষা, খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত। 

এ সুন্নত আদায়ের জন্য আরেকটি সহায়ক আদব হল দস্তরখান। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

 مَا أَكَلَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ عَلَى خِوَانٍ، وَلاَ فِي سُكْرُجَةٍ، وَلاَ خُبِزَ لَهُ مُرَقّقٌ، قُلْتُ لِقَتَادَةَ : عَلاَمَ يَأْكُلُونَ؟ قَالَ : عَلَى السّفَر. 

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ‘খিওয়ান’-এর উপর (টেবিল বা টেবিলের মত উঁচু কিছুতে) খাবার রেখে খাননি এবং ‘সুকরুজা’তেও (ছোট ছোট পাত্রবিশেষ) নয়। তাঁর জন্য কখনো পাতলা রুটিও তৈরি করা হয়নি। (কাতাদা থেকে বর্ণনাকারী) ইউনুস কাতাদাকে জিজ্ঞেস করলেন, তাহলে তাঁরা কীসের উপর খেতেন? তিনি বললেন, ‘সুফরা’র উপর। 
(সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৪১৫) 

(قَالَ: عَلَى السُّفَرِ) 
‘‘দস্তরখানের উপর’’ টেবিল ব্যতীত অন্য যে কোন বস্তু তা চামড়া বা অন্য যাই হোক যাতে খাবার রাখা হয় তাকে سُفْرةِ তথা দস্তরখান বলা হয়। অতএব দস্তুরখানের উপর খাবার পাত্র রেখে খাবার খাওয়া সুন্নাত। আর টেবিলে খাবার খাওয়া রসূলের সুন্নাত নয় তবে তা বৈধ। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

সে যুগে ‘সুফরা’ ছিল চামড়ার। তাতে আংটা থাকত। খুলে বিছালে দস্তরখান, গুটিয়ে ফেললে সফরের পাথেয় রাখার মত ছোট ব্যাগ। ‘সুফরা’তে সাধারণত শুকনা খাবার রেখে খাওয়া হত। এই ধরনের দস্তরখান না হোক অন্য কোনো ধরনের দস্তরখান হলেও ব্যবহার করার চেষ্টা করব। 

খানা যে বস্তুর উপর রেখে খাওয়া হয় তাকেই দস্তরখান বলে।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 

مُحَمَّدُ بْنُ سَلاَمٍ أَخْبَرَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ أَنَسٍ قَالَ أَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَ خَيْبَرَ وَالْمَدِينَةِ ثَلاَثًا يُبْنٰى عَلَيْهِ بِصَفِيَّةَ بِنْتِ حُيَيٍّ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِينَ إِلٰى وَلِيمَتِه„ فَمَا كَانَ فِيهَا مِنْ خُبْزٍ وَلاَ لَحْمٍ أَمَرَ بِالأَنْطَاعِ فَأُلْقِيَ فِيهَا مِنَ التَّمْرِ وَالأَقِطِ وَالسَّمْنِ فَكَانَتْ وَلِيمَتَه“ فَقَالَ الْمُسْلِمُونَ إِحْد‘ى أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ أَوْ مِمَّا مَلَكَتْ يَمِينُه“ فَقَالُوا إِنْ حَجَبَهَا فَهِيَ مِنْ أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ وَإِنْ لَمْ يَحْجُبْهَا فَهِيَ مِمَّا مَلَكَتْ يَمِينُه“ فَلَمَّا ارْتَحَلَ وَطّٰى لَهَا خَلْفَه“ وَمَدَّ الْحِجَابَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ النَّاسِ.

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিন মদিনা এবং খায়বরের মধ্যবর্তী কোন স্থানে অবস্থান করেন। সেখানে তিনি সফিয়্যাহ বিনতে হুইয়াই (রাঃ)-এর সঙ্গে মিলিত হন। এরপর আমি মুসলিমদেরকে ওয়ালীমার জন্য দাওয়াত করি, তাতে রুটি ও গোশত ছিল না। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চামড়ার দস্তরখান বিছাবার জন্য আদেশ করলেন এবং তাতে খেজুর, পনির এবং মাখন রাখা হল। এটাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওয়ালীমা। মুসলিমেরা একে অপরকে বলতে লাগল, সফীয়্যাহ কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী হিসাবে গণ্য হবেন, না ক্রীতদাসী হিসাবে। সকলে বলল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে পর্দার ভিতরে রাখেন তাহলে তিনি উম্মাহাতুল মু’মিনীনদের মধ্যে গণ্য হবেন। আর যদি পর্দায় না রাখেন, তাহলে ক্রীতদাসী হিসাবে গণ্য হবে। এরপর যখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হলেন, তাকে উটের পিঠে তাঁর পেছনে বসালেন এবং তার জন্য লোকদের থেকে পর্দার ব্যবস্থা করলেন। [বুখারী ৫১৫৯,৩৭১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৮২)

ابْنُ أَبِي مَرْيَمَ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ أَخْبَرَنِي حُمَيْدٌ أَنَّه“ سَمِعَ أَنَسًا يَقُوْلُ قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَبْنِي بِصَفِيَّةَ فَدَعَوْتُ الْمُسْلِمِينَ إِلٰى وَلِيمَتِه„ أَمَرَ بِالأَنْطَاعِ فَبُسِطَتْ فَأُلْقِيَ عَلَيْهَا التَّمْرُ وَالأَقِطُ وَالسَّمْنُ وَقَالَ عَمْرٌو عَنْ أَنَسٍ بَنٰى بِهَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ صَنَعَ حَيْسًا فِي نِطَعٍ.

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফীয়্যাহর সঙ্গে বাসর করার জন্য অবস্থান করলেন। আমি তাঁর ওলীমার জন্য মুসলিমদের দাওয়াত করলাম। তাঁর নির্দেশে দস্তরখান বিছানো হলো। তারপর তার উপর খেজুর, পনির ও ঘি ঢালা হলো। ‘আমর আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে বাসর করলেন এবং চামড়ার দস্তরখানে ‘হায়স’ ঘি, খেজুর ইত্যাদি মিশিয়ে বানানো খাবার) তৈরী করলেন। [বুখারী ৫৩৮৭,৩৭১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৯৮৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৮৮২)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দস্তরখানা ব্যবহার করতেন। কোনও খাবার পড়ে গেলে তা তুলে খাওয়াও মহানবী (সা.)-এর সুন্নত।- (বুখারি, হাদিস: ৫৪১৫)।

আমি যদি দস্তরখান ছাড়া খাই তাহলে খাবার নিচে পড়ে ময়লা লেগে যাবে; তা আবার পরিষ্কার করে তারপর খেতে হবে। কিন্তু যদি দস্তরখান বিছিয়ে নেই তাহলে দস্তরখান থেকে তুলেই খেতে পারব। 

তেমনি শুকনো খাবার দস্তরখানে রাখাও যাবে। আর মনে রাখতে হবে, দস্তরখান যেন হয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। দস্তরখান কখনোই নোংড়া করে রাখব না। অনেককে দেখা যায়, দস্তরখানে কাঁটা, হাড্ডি ইত্যাদি ফেলে। দস্তরখান তো এগুলো ফেলার জন্য নয়। এগুলো ফেলার জন্য আলাদা কোনো পাত্র থাকলে ভালো হয়। সুতরাং আমরা দস্তরখানে কাঁটা, হাড্ডি ইত্যাদি ফেলব না। তেমনি দস্তরখান ময়লা করেও রাখব না। সাথে সাথে খেয়াল রাখব কাঁটা বা হাড্ডি পানির মধ্যে ফেলব না। কারণ তা আরেক প্রাণীর খাবার। আরেকটি বিষয়। হাত ধোয়ার পাত্র বিশেষ করে চিলম্চি কখনো দস্তরখানের উপর না রাখার চেষ্টা করব। 

কোনো কোনো বুযুর্গ এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যে বিষয়টি জরুরি তা হল, চিলম্চি সবসময় পরিষ্কার রাখা। হাত ধোওয়ার পর চিলম্চি দৃষ্টির আড়ালে রাখলে ভালো। আর হাত ধোওয়ার আমল দস্তরখানে খাবার পরিবেশন করার আগে সেরে ফেললে ভালো। যাতে বেখেয়ালীতে হাত ধোওয়ার সময় খাবার পাত্রে পানির ছিটা না পড়ে। মোটকথা, আমি দস্তরখানে খাব; টেবিলে নয়। কারণ নবীজী কখনো টেবিলে খাননি। হাঁ, কোনো সময় যদি এমন অবস্থা বা পরিবেশ হয়, টেবিলে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই তখন টেবিলে খেতে পারি। টেবিলে খাওয়া অনুত্তম হলেও নাজায়েয নয়। তবে টেবিলে খাওয়াকেই অভ্যাসে পরিণত করব না। ওযর হলে ভিন্ন বিষয়।

মূলতঃ খানা যে বস্তুর উপর রেখে খাওয়া হয় তাকেই দস্তরখান বলে। সুতরাং আমরা যে পাত্রে বা প্লেটে খানা খাই, সেটাই মূল দস্তরখান।

খাবার পড়ে গেলে তুলে খাওয়া নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নত। 

এ সুন্নত আদায়ের জন্য সহায়ক আদব হল দস্তরখান। 

হযরত জাবির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কারো লোকমা পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে নেয়। তারপর তাতে যে আবর্জনা স্পর্শ করেছে তা যেন দূরীভূত করে এবং খাদ্যটুকু খেয়ে ফেলে। শয়তানের জন্য সেটি ফেলে না রাখে। আর তার আঙ্গুল চেটে না খাওয়া পর্যন্ত সে যেন তার হাত রুমাল দিয়ে মুছে না ফেলে। কেননা সে জানে না খাদ্যের কোন অংশে বারাকাত রয়েছে। 
(মুসলিম।)

দস্তরখান বিছিয়ে খানা খাওয়া আদব-শৃংখলার অংশ হবে কোন সন্দেহ নেই। 

দস্তরখানের সবচেয়ে বড় ফায়দা হল, এতে খাবার পড়ে নোংরা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না, পড়লে তুলে খাওয়া যায়। খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে খাওয়ার সুন্নাত আদায় করা যায়।

কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমরা দস্তরখান বিছিয়ে খাবার খাই ঠিকই; কিন্তু দস্তরখানটি পরিষ্কার রাখি না। ফলে তাতে খাবার পড়লে তুলে খেতে রুচি হয় না। দস্তরখানকে কাটা, হাড্ডি ইত্যাদি রাখার পাত্র বানালে একসময় তা এমন অপরিষ্কার হয়ে যায় যে, তাতে খাবার পড়ে গেলে তুলে খেতে আর রুচি হয় না।
(কিছু তথ্য সংগৃহীত।)

ﻭاﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﺗﻄﻠﻖ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﻣﺎ ﻳﻮﺿﻊ ﻋﻠﻴﻪ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻷﻧﻬﺎ ﺇﻣﺎ ﻣﻦ ﻣﺎﺩ ﻳﻤﻴﺪ ﺇﺫا ﺗﺤﺮﻙ ﺃﻭ ﺃﻃﻌﻢ ﻭﻻ ﻳﺨﺘﺺ ﺫﻟﻚ ﺑﺼﻔﺔ ﻣﺨﺼﻮﺻﺔ ﻭﻗﺪ ﺗﻄﻠﻖ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻭﻳﺮاﺩ ﺑﻬﺎ ﻧﻔﺲ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﺃﻭ ﺑﻘﻴﺘﻪ ﺃﻭ ﺇﻧﺎﺅﻩ ﻭﻗﺪ ﻧﻘﻞ ﻋﻦ اﻟﺒﺨﺎﺭﻱ ﺃﻧﻪ ﻗﺎﻝ ﺇﺫا ﺃﻛﻞ اﻟﻄﻌﺎﻡ ﻋﻠﻰ ﺷﻲء ﺛﻢ ﺭﻓﻊ ﻗﻴﻞ ﺭﻓﻌﺖ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ
সারমর্মঃ-
যার উপর খাবার রাখা হয়,সেটাই দস্তরখান।
(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী খ:৯,পৃ:৫৮০,মিরকাত)

ﻗﻠﺖ ﻭاﻟﺘﺤﻘﻴﻖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺃﻥ اﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻫﻲ ﻣﺎ ﻳﺒﺴﻂ ﻟﻠﻄﻌﺎﻡ ﺳﻮاء ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺛﻮﺏ ﺃﻭ ﺟﻠﺪ ﺃﻭ ﺣﺼﻴﺮ ﺃﻭ ﺧﺸﺐ ﺃﻭ ﻏﻴﺮ ﺫﻟﻚ ﻓﺎﻟﻤﺎﺋﺪﺓ ﻋﺎﻡ ﻟﻬﺎ ﺃﻧﻮاﻉ ﻣﻨﻬﺎ اﻟﺴﻔﺮﺓ ﻭﻣﻨﻬﺎ اﻟﺨﻮاﻥ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻓﺎﻟﺨﻮاﻥ ﺑﻀﻢ اﻟﺨﺎء ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻦ ﺧﺸﺐ ﻭﺗﻜﻮﻥ ﺗﺤﺘﻪ ﻗﻮاﺋﻢ ﻣﻦ ﻛﻞ ﺟﺎﻧﺐ
সারমর্মঃ-
যেটাকে খাবারের জন্য বিছানো হয়,সেটাই দস্তরখান। চাই তাহা কাপড়ের হোক,চাই তাহা চামড়া,চাটাই ইত্যাদির হোক।
("আওনুল মা'বূদ শরহে আবু দাঊদ"

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০২)
এখানে প্রচলিত কাপড় ইত্যাদির দস্তরখানা,যার উপর প্লেট রেখে খাওয়া হয়,সেটি বুঝানো হয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...